মানে হলো, প্রার্থনাগুলো তখনই ফলপ্রসূ হয় যখন সেগুলোতে ঈশ্বরের মনোনীত দূতের নামের মাধ্যমে করা হয়।
অষ্টম সূত্রে নিউটন বলেছেন, We are to return thanks to father alone for creating us & giving us food, raiment & other blessing of this life and whatsoever we are to thank him for or desire that he would do for us we ask of him immediately in the name of Christ.
অর্থ হলো, আমরা কেবল ঈশ্বরের কাছেই কৃতজ্ঞ; কারণ, তিনিই আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আমাদের খাদ্যের জোগান দিয়েছেন, পরনের বস্ত্র এবং জীবনের অন্যান্য কল্যাণ প্রদান করেন তিনিই। যিশুর নামের বদৌলতে আমরা ঈশ্বরের কাছে যা-ই চাই, তিনি আমাদের তা দিয়ে থাকেন।
নবম সূত্রে বলেছেন, We need not pray to Christ to intercede for us. If we pray the Father aright, hell intercede.
অর্থ, মধ্যস্থতা বা সুপারিশের জন্য যিশুর প্রার্থনা করার কোনো দরকার নেই। আমরা যদি সঠিকভাবে ঈশ্বরের প্রার্থনা করি, তাহলে যিশু এমনিতেই আমাদের জন্য ঈশ্বরের কাছে সুপারিশ করবেন।
দশম সূত্রে আইজ্যাক নিউটন বলেছেন, It is not necessary to salvation to direct our prayers to any other than the Father in the name of the son.
অর্থাৎ তিনি বলেছেন, পরিত্রাণের জন্য যিশুর নাম নিয়ে ঈশ্বর ছাড়া অন্য কারও কাছে প্রার্থনা করার কোনো দরকার নেই।
এগারোতম সূত্রে বলেছেন, To give the name of God to angels or kings is not against the first commandment. To give the worship of the God of the Jews to angels or kings is against it. The meaning of the commandment is- Thou shalt worship no other Gods but me.
অর্থাৎ কোনো ফেরেশতা বা রাজা বাদশাহকে ঈশ্বরের গুণবাচক উপাধিতে ভূষিত করলে সেটি প্রথম আদেশের বিপরীতে চলে যায় না; কিন্তু কোন ফেরেশতা বা রাজা বাদশাহকে যদি ঈশ্বরের মতো ইবাদত করা হয়, তখনই সেটি প্রথম আদেশের বিরুদ্ধে চলে যায়। প্রথম আদেশ হলো, তোমরা আমি ছাড়া অন্য কারও পূজা কোরো না।
বারোতম সূত্রে বলেছেন, To us there is but one God the Father of whom are all things (And we of him); And one Lord Jesus Christ by whom are all things & we by him. That is, we are to worship the Father alone as God Almighty [১]
অর্থাৎ আমাদের কাছে ঈশ্বর হলেন এক এবং একক। তিনি আমাদের এবং অন্য সকল বস্তুর প্রভু, এমনকি তিনি যিশুরও প্রভু।
সাজিদ একনাগাড়ে নিউটনের বারো সূত্র বলা শেষ করল। আমি বললাম, লোকটি তো ক্রিশ্চিয়ানিটির ধারণাই পাল্টে দিতে চেয়েছে।
সাজিদ বলল, তা নয়; বরং বলা উচিত তিনি ক্রিশ্চিয়ানিটির সত্য রূপ বের করে আনতে চেয়েছেন। তিনি কখনোই যিশুকে ঈশ্বর হিশেবে মানতেন না; বরং তিনি বলতেন যে, যিশু কেবল ঈশ্বরের একজন দূত। তিনি তিন ঈশ্বর তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন না। তিনি বলতেন ঈশ্বর কেবল একজন এবং আমাদের তার কাছেই প্রার্থনা করা উচিত। তিনি আরও বিশ্বাস করতেন মুক্তি মিলবে কেবল সেই এক এবং অদ্বিতীয় ঈশ্বরের আরাধনাতে। বলা যায়, ত্রিত্ববাদের ধারণার মূলেই আঘাত করেছিলেন তিনি। সাজিদের কথাগুলো আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলাম। শুনছিল ডেভিডও। সাজিদ বলল, কাহিনির কিন্তু এখানেই শেষ নয়, ডেভিড।
ডেভিড বলল, দাঁড়াও দাঁড়াও। তুমি আবার বলে বসো না যে—বিজ্ঞানী নিউটন ইলুমিনাতির সদস্য ছিলেন।
আমি আর সাজিদ এবার খলখলিয়ে হেসে উঠলাম। হাসি থামিয়ে সাজিদ বলল, না, তা বলছি না। আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে, যিশুকে নিয়ে বিজ্ঞানী নিউটনের যে-ধারণা ছিল, ইসলামে যিশুর অবস্থানও অনেকটাই সে-রকম।
মানে?, প্রশ্ন করল ডেভিড।
মানে, আমরাও বিশ্বাস করি স্রষ্টা কেবল একজন। আমরা বিশ্বাস করি যিশু কখনোই স্রষ্টার পুত্র ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন স্রষ্টার মনোনীত একজন রাসূল তথা বার্তাবাহক। আমরাও বিশ্বাস করি যাবতীয় প্রার্থনা তথা ইবাদত একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলারই প্রাপ্য। নিউটনের ঈশ্বর-ধারণার সাথে আমাদের ধারণার খুব কম পার্থক্যই রয়েছে।
সাজিদের কথা শুনে ডেভিড বিড়বিড় করে বলে উঠল, হলি কাউ!
ডেভিডের মুখে হলি কাউ শব্দদ্বয় শুনে আমি আর সাজিদ আবারও হেসে উঠলাম। আমার ধারণা এবারের বাংলাদেশ সফরের কথা ডেভিড সারা জীবন মনে রাখবে।
————-
১ Transcription & Commentry Isaac Newtons Twelve articles on God & Christ, Keynes MS 8, Kings College, Cambridge.
১৬. পরমাণুর চেয়েও ছোট
আমাদের এবারের বুধবারের আড্ডায় এসে হাজির হয়েছে মিলন, পঙ্কজ, নবীন, সবুজ আর সৌমিত্র। মিলন হলো ঢাবি ক্যাম্পাসের মেসি। ফুটবল নিয়ে তার কারিকুরি দেখলে মনে হবে এই ছেলের ডিএনএ-জুড়ে কোডিং-এর বদলে খালি ফুটবলই আছে। পঙ্কজকে আমরা চিনি গায়ক হিশেবে। সারা দিন গুনগুন করে গান করে সে। রবি ঠাকুর বলতেই অজ্ঞান সে। নবীন আমাদের সবার জুনিয়র। হালকা-পাতলা গড়নের এই ছেলেটি তার ছোট্ট পেটের মধ্যে দুনিয়ার সব তথ্য। ভরে রাখে। তাকে ছোটখাটো একটি এনসাইক্লোপিডিয়া বললে খুব একটি বাড়াবাড়ি হবে না। সবুজ তার নামের মতোই সতেজ। সবসময় মুখে এক চিলতে হাসি জিইয়ে রাখে। চরম দুঃখের মুহূর্তগুলোতেও সে হো হো করে হাসতে পারে। সেকেন্ড ইয়ারে ড্রপ খাওয়ার পরেও সে হাসতে হাসতে বলেছিল, জানিস, আমি না এক বছর ড্রপ খেয়েছি। তার হাসিখুশি স্বভাবের সাথে পরিচয় না থাকলে সেদিন হয়তো তাকে আমি ম্যান্টালি ডিসঅর্ডারড ভেবে বসতাম। সবুজের একটি ডাকনাম আছে অবশ্য। তাকে আমরা সবাই এডিসন বলে ডাকি। একবার সে মেয়েদের হলে গিয়ে একটি লাইট ঠিক করে দিয়েছিল। সেই থেকেই ওর নাম হয়ে গেছে বিজ্ঞানী এডিসন। আমাদের আজকের আড্ডার সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি হলেন সৌমিত্র দা। ডিবেট ক্লাবে আমি আর সৌমিত্র দা সবসময় এক পক্ষে থাকতাম। আমাকে একেবারে শুরু থেকেই প্রস্তুত করে নিতেন তিনি। বিতর্কের ছলাকলা সব আমি তার কাছ থেকেই শিখেছি।