হিটলার আরও লিখেছেন, It is the strongest and the best who must triumph and that they have right to endure. হিটলার বলতে চেয়েছেন সবলরাই প্রকৃতিতে টিকে থাকবে এবং এটাই হওয়া উচিত। অন্যদিকে, দুর্বলদের ক্ষেত্রে কী হবে সে ব্যাপারে বলতে গিয়ে হিটলার লিখেছেন He who doesnt wish to fight in this world, where permanent struggle is the law of life, hasnt the right to exist.
খুবই স্পষ্ট কথা। হিটলার বলেছে, সংগ্রামই যেখানে law of life, সেখানে যারা এই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করবে না, তাদের প্রকৃতিতে টিকে থাকার কোনো অধিকার নেই।
হিটলারের উদ্ধৃত কথাগুলো ডারউইনের ন্যাচারাল সিলেকশানের সাথে খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ। এমনকি, হিটলার Evolutionary higher stage এর কথাও উল্লেখ করেছেন।
হিটলার ভাবত ইহুদীরা যেহেতু ম্লেচ্ছ এবং প্রকৃতিতে সংগ্রাম করে টিকে থাকার যোগ্য নয়, তাই সে প্রায় ষাট লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করে বসে।
সৌরভ খুব অবাক হলো। সে এতদিন ভাবত হিটলার একজন গোঁড়া খ্রিষ্টান হয়ে পড়েছিল, যার কারণে সে ইহুদীদের প্রতি চরম বিদ্বেষী হয়ে ওঠে; কিন্তু ঘটনার পরম্পরা যে এত গভীরে সে আসলে কখনো ভাবতেও পারেনি। সৌরভ ভাবল, আচ্ছা, হিটলার কি সত্যিই ডারউইনিয়ান এভুলুশান পড়েই এতদূর এগিয়েছে? সে ডায়েরিটার পরের পৃষ্ঠা উল্টাল। পরের পাতাগুলোও বেশ ভর্তি। সে খুব মনোযোগ দিয়ে আবার পড়া শুরু করে দেয় :
এখানে কেবল হিটলারের ঘটনা দিয়ে ইতি টেনে দিলে ব্যাপারটির প্রতি অন্যায় করা হবে। শুধু হিটলারকেই নয়, ডারউইন প্রভাব ফেলেছিলেন আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির ওপরেও। এই তালিকায় আছে কার্ল মার্ক্স, লেলিন এবং স্ট্যালিন।
কার্ল মার্ক্সকে সমাজতন্ত্রের জনক হিশেবে গণ্য করা হয়। সমাজতন্ত্র হিশেবে আমাদের যা বলা হয় বা যা শেখানো হয় তা হলো, সমাজতন্ত্র সমাজের শ্রেণি-বৈষম্য নিয়ে কাজ করে। আদতে, এখানেও একটি শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। সমাজতন্ত্রের আগাগোড়াজুড়ে রয়েছে ডারউইনিজম। আর ডারউইনিজম সম্পর্কিত নাস্তিকতার সাথে। সুতরাং, সমাজতন্ত্রকে বলতে গেলে নাস্তিকতার প্রতিরূপ হিশেবে কল্পনা করা যায়।
যাই হোক, কার্ল মার্ক্সের সাথে ডারউইনিজমের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় আসা যাক। মূলত, কমিউনিজম তথা সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা হলেন দুজন। কার্ল মার্ক্স এবং ফ্রেডরিক এঙ্গেলস। কমিউনিজমের ওপরে কার্ল মার্ক্সের লিখিত বিখ্যাত একটি বই আছে। এটিকে সমাজতন্ত্রের বাইবেল বলা যেতে পারে। বইটির নাম Das Capital. খুবই মজার ব্যাপার হচ্ছে, কার্ল মার্ক্স নিজে এই বইটি উৎসর্গ করেছিলেন বিবর্তনবাদের জনক চার্লস ডারউইনকে। ডারউইনকে দুজনে এত বেশিই পরিমাণে পছন্দ করতেন যে, ডারউইনের প্রথম বই Origin of species বের হলে ফ্রেডরিক এঙ্গেলস এক চিঠিতে কার্ল মার্ক্সকে লেখেন, Darwin, whom I am just now reading, is splendid.[২]
এঙ্গেলসের চিঠির প্রত্যুত্তরে মার্ক্স লিখেছেন, This is the book which contains the basis of natural history of our view.[৩]
মার্ক্স বলেছেন যে, তারা ন্যাচারাল হিস্ট্রি সম্পর্কে যে-ধারণা পোষণ করে থাকে, সেটার পূর্ণ প্রতিফলন আছে ডারউইনের বইতে। সুতরাং, ডারউইনিজম আর মার্ক্সিজম তথা সমাজতন্ত্র যে—মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কাহিনির এখানেই অবশ্য শেষ নয়। লেসাবেল নামের এক বন্ধুকে কার্ল মার্ক্স চিঠিতে Foto 362a, Darwins book is very important and serves me as a basis in natural science for the class strugle in history.[৪]
শ্রেণি-সংগ্রামের যে-ভিত্তি এবং প্রকৃতির সবখানে যে সেটি বলবৎ, ডারউইনের রচনাবলি পড়ার পরে সেটি কার্ল মার্ক্স আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করেন। এই কথার সত্যতা পাওয়া যায় কার্ল মার্ক্সের বধু এঙ্গেলস লিখিত একটি বইয়ে। এঙ্গেলস ডারউইন এবং কার্ল মার্ক্সকে একই সমান্তরালে এনে লেখেন, Just as Darwin discovered the law of Evolution in organic nature, so Marx discovered the law of nature in human history. [৫]
অর্থাৎ ডারউইন উদ্ভিদ এবং প্রাণীর অর্গানিক ফিল্ডের যে ল আবিষ্কার করেছেন, মার্ক্স সে রকম ল আবিষ্কার করেছেন মানবজাতির ইতিহাসের। আরও সহজভাবে, ডারউইন যে-শ্রেণি-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে উদ্ভিদ এবং প্রাণিজগতের আবির্ভাবের কথা বলেছেন, ঠিক সেই একই শ্রেণি-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে মানবজাতির ইতিহাসের বিবর্তনের কথা বলেছেন মার্ক্স।
ডারউইনিজম এবং কমিউনিজমের মধ্যকার সুগভীর সম্পর্ক বোঝাতে কার্ল মার্ক্সের একটি জীবনীতে লেখা হয়েছে, Darwinism presented a whole string of truth supporting Marxism and proving and developing the truth of it. The spread of Darwinist evolutionary ideas created a fertile ground for Marxist ideas as a whole to be taken on board by the working class… Marx, Engels, and Lenin attached great value to the ideas of Darwin and pointed to their scientific importance and in this way the spread of these ideas was accelerated.[৬]