আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের কাজগুলো কবুল করুন। আমীন।
আরিফ আজাদ
.
লেখক–পরিচিতি
আরিফ আজাদ। জন্মেছেন চট্টগ্রাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সময় থেকেই লেখালেখির হাতেখড়ি। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা করতেই বেশি পছন্দ করেন। ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায় প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা কুড়ান। বিশ্বাসের কথাগুলোকে শব্দে রূপ দিতে তার জুড়ি নেই। অবিশ্বাসের দেয়ালে অনুপম স্পর্শে বিশ্বাসের ছোঁয়া দিতে তার মুন্সিয়ানা রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় লেখকের পাঠকনন্দিত বই আরজ আলী সমীপে। এছাড়াও সম্পাদনা করেছেন প্রত্যাবর্তন এবং মা, মা, মা এবং বাবার মতো জনপ্রিয় বইগুলো। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হলো লেখকের তৃতীয় মৌলিক গ্রন্থ, জনপ্রিয় সাজিদ সিরিজের দ্বিতীয় বই।
কুরআন কি নারীদের শস্যক্ষেত্র বলেছে?
অনেকদিন পর শাহবাগে হঠাৎ নীলু দার সাথে দেখা। প্রথমে খেয়াল করিনি। পেছন থেকে এসে আমার মাথায় টোকা দিয়ে বললেন, কী খবর কবি সাহেব? পেছন ফিরতেই দেখি হাতে একগাদা বই নিয়ে নীলু দা দাঁড়িয়ে আছেন। চোখে মোটা ফ্রেমের কালো চশমা লাগিয়েছেন বলে দেখতে একদম স্কুল মাস্টারের মতো লাগছে। খয়েরি রঙের টি-শার্ট গায়ে। আমি খুবই অপ্রস্তুত ছিলাম। বললাম, আরে দাদাভাই যে! কেমন আছ?
ভালো। তুই কেমন?
ভালো।
কুশলাদি বিনিময় করতে করতে আমরা একটি ফাঁকা স্থানে এসে দাঁড়ালাম। নীলু দা। জিজ্ঞেস করল, সাজিদ কোথায়?
এই মুহূর্তে সাজিদ কোথায় তা আমিও জানি না। একটু আগেও সে আমার সাথে ছিল। আমি মোবাইলে টাকা রিচার্জ করে এসে দেখি সে উধাও। কখন থেকে ফোন করেই যাচ্ছি! যদিও জানি, সে আমার ফোন ওঠাবে না, তবুও ব্যর্থ চেষ্টা করে যাওয়া আরকি! কতক্ষণই বা এরকম কাঠফাঁটা রোদে দাঁড়িয়ে থাকা যায়?
নীলু দার প্রশ্নের জবাবে বললাম, আছে হয়তো এদিকে কোথাও।
বলতে-না-বলতেই সাজিদ আমাদের সামনে এসে উপস্থিত। যেরকম বাতাসের মতোই উবে গিয়েছিল, সেরকম বাতাসের মতোই এসে হাজির হয়েছে। মাঝে মাঝে তাকে আমার ভারি অদ্ভুত লাগে। এই মুহূর্তে মন চাচ্ছে তাকে কানের নিচে দুচারটা দিয়ে জিজ্ঞেস করি—ফোনটা ওঠালে কী অপরাধ হতো?
কোনোরকমে রাগ সংবরণ করে বললাম, ফোন উঠাসনি কেন?
সে আমার কথা গ্রাহ্য করেছে বলে মনে হলো না। হাত বাড়িয়ে নীলু দার সাথে হ্যান্ডশেক-পর্ব সেরে নিল। আমার রাগ আরও বেড়ে গেল। পৃথিবীতে আমি সবকিছু সহ্য করতে পারি; কিন্তু কেউ আমাকে পাত্তা না দিলে, সামনাসামনি আমাকে ইগনোর করলে আমি সেটি একদমই মেনে নিতে পারি না।নীলুদা না-থাকলে হয়তো এই মুহূর্তে তার গায়ে এক ঘুসি লাগিয়ে দিতাম; কিন্তু সিনিয়র একজন সামনে আছেন বলে ধৈর্যের সর্বোচ্চ পরীক্ষা দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলাম, এতক্ষণ তুই ফোন উঠাসনি কেন?
পাশ দিয়ে একজন চা-বিক্রেতা যাচ্ছিল। সাজিদ তাকে থামিয়ে নীলু দার দিকে ফিরে বলল, চা খাবে নীলু দা?
খাওয়া যায় নীলু দার সম্মতি।
এরপর সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুই খাবি?
রাগে আমার গা ঘিনঘিন করছিল তখন। ব্যাটা! নীলু দার মতো লোকের সামনে অপমান করার পরেও জিজ্ঞেস করছে চা গিলব কিনা! আহাম্মক কোথাকার!
রাগ চেপে বললাম, না, খাব না।
আমার ব্যাপারে আর বেশি আগ্রহ না দেখিয়ে সাজিদ আর নীলু দা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একটি বেঞ্চিতে গিয়ে বসল। তাদের পেছন পেছন আমিও গেলাম।
কোথায় ছিলে এতদিন? সাজিদ নীলু দার কাছে জানতে চাইল।
ছিলাম শহরেই।
আত্মগোপনে?
নীলু দা এমনিতেই সদাহাস্য মানুষ। যেকোনো কিছুতে হো হো করে হাসতে পারে। সাজিদের কথা শুনে হাসতে হাসতেই বলল, তুই কি আমাকে চোর-ডাকাত টাইপ কিছু ভাবিস নাকি রে?
না। তবে যেভাবে তুমি একেবারে সবকিছু থেকে ইস্তফা দিয়ে বেখবরে চলে গেলে, তাই ভাবলাম আত্মগোপনে আছ কি না।
দুজনের মধ্যে কথোপকথন চলছিল। মুখ গোমড়া করে আমি নীলু দার পাশে বসে আছি। একপর্যায়ে নীলু দা বলল, তবে ভালোই হয়েছে তোর সাথে দেখা হয়ে। কিছুদিন ধরে মনে মনে আমি তোকেই খুঁজছিলাম।
সাজিদ বলল, তুমি খুঁজছিলে আমাকে! অবাক করা ব্যাপার!
বিস্মিত হলি বলে মনে হলো বলল নীলু দা।
বিস্মিত হবারই তো কথা। তোমার মতো লিজেন্ডারি পারসন আমার খোঁজ করছে, এই খুশিতে তো আমার বাকবাকুম বাকবাকুম করতে মন চাইছে। নীলু দা চোখ রাঙিয়ে বলল, মজা করবি না একদম। আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলেছি। তোর কাছে একটি ব্যাপার জানার ছিল আমার।
এবার সাজিদ বেশ আগ্রহ দেখিয়ে জানতে চাইল, ব্যাপার কী?
নীলু দা গা ঝেড়ে উঠে বলল, তুই তো জানিস, আমি উইমেন রাইটস নিয়ে কাজ করি। নারীর অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, নিরাপত্তা ইত্যাদি নিয়ে কাজ করাই আমার প্যাশন বলতে পারিস।
সাজিদ বলল, তা তো আমি জানিই। নতুন করে বলার কী দরকার?
দরকার আছে। যেখানেই আমরা নারীর অমর্যাদা আর অসম্মান দেখব, আমাদের উচিত সেখানেই প্রতিবাদ করা, রাইট?
হুম।
সেই অসম্মানটা ধর্মের নামে হোক বা অধর্মের নামে, আমাদের প্রতিবাদ সব জায়গাতেই জারি থাকা উচিত। তাই নয় কি?
সাজিদ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।
তাহলে বল, একটি ধর্মগ্রন্থ যদি নারীদের শস্যক্ষেতের সাথে তুলনা করে এবং যদি বলে যে তাদের যেমন ইচ্ছে ব্যবহার করতে, তখন ব্যাপারটি কেমন দেখায়?