তাহলে এর পেছনের রহস্য কী?
কোনো রহস্য-টহস্য নেই আসলে। তৎকালে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশ্বাসযোগ্যতা, সত্যবাদিতা, কর্মনিষ্ঠা ও সুন্দর আচরণের কথা মক্কার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই সংবাদ মক্কার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদের কানেও চলে যায়। অনেকদিন থেকে তিনি তার ব্যবসায় পরিচালনার জন্যে এরকম একজন সৎ, বিচক্ষণ, সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ ও কর্মনিষ্ঠ লোক খুঁজছিলেন। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে এরকম প্রশংসা শুনে তিনি তাকে একটু যাচাই করে নিতে চাইলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি তাকে কিছু কাজ দিয়ে বণিকদের সাথে সিরিয়ায় পাঠালেন। সাথে বিশেষ এক সহচর নিযুক্ত করলেন, যাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পুরো সফরে খুব কাছ থেকে ভালোভাবে, অবজার্ভ করা যায়। তার ব্যাপারে লোকমুখে যে সুনাম, যে প্রশংসা চাউর হয়ে আছে, তা আদৌ সত্য কি না, সেটি যাতে হাতেনাতে প্রমাণিত হয়। যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিরিয়া-সফর থেকে ফিরলেন, সেবার ব্যবসায় প্রচুর মুনাফা হয় এবং তিনি তার হিশাবপত্রেও ছিলেন একেবারেই নির্ভুল, স্বচ্ছ এবং সৎ। খাদিজার নিযুক্ত করা সহচরও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে খুব ইতিবাচক ফলাফল প্রদান করলেন। সব দেখেশুনে খাদিজা রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহার মনে হলো যে, এই তরুণকে চাইলেই বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া যায় এবং তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ব্যাপারে অভিভাবক হিশেবে তার চাচা আবু তালিবকে সাব্যস্ত করেন। পরবর্তীতে আবু তালিবের সম্মতিতে খাদিজার সাথে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এটাই হচ্ছে পুরো এবং প্রকৃত ঘটনা। এবার বলুন তো, এই ঘটনার কোথাও কি সম্পত্তির প্রতি লোভ আছে? অর্থের প্রতি লোভ আছে? নাকি ব্যবসায়ে মালিকানা হস্তগত করার কোনো পূর্বপরিকল্পনা বা দুরভিসন্ধি আছে?
রমেশ আচার্য নামের লোকটি পায়ের ওপর পা তুলে বলল, ইফ দ্যা কেইস ইজ দিস, দ্যান ইটস ওকে।
সাজিদ বলতে লাগল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহুবিবাহের প্রসঙ্গ টেনে মূলত নাস্তিকরা যা বোঝাতে চায় তা হলো, তিনি নাকি নারীলোভী ছিলেন। অথচ আপনি যদি ইতিহাসের পাতা খুলে দেখেন, তাহলে দেখবেন যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার যৌবন, পড়ন্ত যৌবন এবং বার্ধক্যেরও কিছুটা সময় পার করেছেন তার প্রথম স্ত্রী খাদিজার সাথেই। প্রথম স্ত্রী যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর কাউকে বিয়ে করেননি। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বয়স যখন পঞ্চাশ বছর, যখন তার যৌবন শেষ হয়ে শরীরে বার্ধক্য নেমে আসে তখন তার প্রিয় সহধর্মিনী খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যু হয়।
নাস্তিকরা যাকে নারীলোভী আখ্যায়িত করতে চায়, সে-ই তিনিই নাকি ভরা যৌবনের সবটুকু সময় অর্থাৎ-পঁচিশটি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন একজন স্ত্রীর সাথেই। নাস্তিকদের দাবি যদি সত্যি হতো, তাহলে এই পঁচিশ বছরে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তত পাঁচ-পাঁচটি স্ত্রী থাকা উচিত ছিল; কিন্তু ইতিহাসে এরকম কোনো প্রমাণ নেই। এ থেকে কী প্রমাণিত হয়? এ থেকে প্রমাণিত হয় যে নাস্তিকদের যুক্তিটি অত্যন্ত দুর্বল এবং অযৌক্তিক।
তাহলে বাদবাকি বিয়েগুলো? সেগুলোর ব্যাপারে কী বলবে তুমি? বলে উঠলেন মি. ড্যানিয়েল।
বলছি। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন চল্লিশ বছর বয়সে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন, তখন তিনি মক্কায় আস্তে আস্তে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। যখন তার দাওয়াত ধীরে ধীরে বিশাল আকার ধারণ করতে লাগল, যখন চারদিক থেকে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত মানুষেরা তার কাফেলায় এসে শামিল হতে লাগল, ব্যাপারটি তখন আরবের গোত্রপ্রধানদের নজরে এলো। তারা ভাবল, না, এই লোককে তো দমন করতে হবে। তারা ইসলামধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে আসা মানুষগুলোর ওপরে চালাতে লাগল অমানুষিক অত্যাচার, নির্যাতন। নির্যাতনের সেই মাত্রা এতটাই ভয়াবহ এবং পৈশাচিক ছিল; যা বর্ণনাতীত। বুকের ওপর পাথর তুলে দেওয়া, তপ্ত মরুভূমিতে বেঁধে রাখাসহ নানাবিধ অত্যাচার। তবুও দমে যাননি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সঙ্গীরা। এরকম অমানুষিক নির্যাতনের মুখেও মানুষ দলে দলে ইসলামধর্মে যোগ দিতে শুরু করল। কুরাইশদের পরিকল্পনা কোনো কাজে আসলো। তারা ভাবল, না, এভাবে তো এদের দমানো যাবে না। তাহলে কী করা যায়?
এবার নতুন প্রস্তাব পাস হলো। কুরাইশ গোত্রপ্রধান, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, মুহাম্মাদ, তুমি কী চাও বলো? তুমি যদি চাও তাহলে তোমাকে আমরা আমাদের রাজা বানিয়ে নেব। আরব মুলুকের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারীদের এনে তোমার পায়ের কাছে রেখে যাব। তবুও তুমি নতুন যে-ধর্মের কথা মানুষকে বলে বেড়াচ্ছ, সেটি বন্ধ করে দাও।