সাজিদ চরিত্রটাকে নিয়ে পাঠকদের মনে ভালোবাসার কমতি নেই, আলহামদুলিল্লাহ। আমি এমন এমন রিভিউ-ও পেয়েছি এই বইয়ের, যেগুলো আমাকে কাঁদিয়ে ছেড়েছে। একজন যুবক যখন আমি সাজিদ হতে চাই বলে তার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, আমার চোখ দুটো তখন অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। যখন আমাকে এসে বলা হয় যে, তার জীবনের পরিবর্তনে, দ্বীনে ফিরে আসার পেছনে এই বইটি নিয়ামক হিশেবে কাজ করেছে; তখন আমার হৃদয়-মন অস্ফুটে আলহামদু লিল্লাহ বলে ওঠে। আমি শুকরিয়া জানাই সেই মহান অধিপতির, যিনি এই কাজ সহজ করে দিয়েছেন আমার জন্যে। আলহামদু লিল্লাহ্।
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-প্রকাশ হওয়ার পরে সবার একটাই প্রশ্ন ছিলো আমার কাছে, সাজিদ-০২ কবে আসবে?
যখন আমি এই সিরিজ লিখছিলাম, তখন ভাবতেও পারিনি যে এই লেখাগুলো কখনো মলাটবদ্ধ হতে পারে। আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই কাজটির জন্য আমাকে এতো সম্মানিত করবেন। আলহামদু লিল্লাহি আলা কুল্লি হাল। সাজিদ সিরিজের পরবর্তী বইয়ের জন্য এত এত পাঠকদের অনুরোধ দেখে আমি সত্যিই বিস্মিত এবং আপ্লুত হয়েছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সাহায্য আর ভালোবাসা যে কীরকম হতে পারে, তা আমি খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। আলহামদু লিল্লাহ।
সাজিদ এক মলাটেই শেষ হয়ে যাক, সেটা আমি নিজেও কখনো চাইনি। কারণ, প্রতিপক্ষের যে পরিমাণ বিদ্বেষ, মিথ্যাচার আর প্রোপাগান্ডা, তা কখনোই এক মলাটে নিয়ে এসে শেষ করে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই সাজিদ সিরিজ এগিয়ে নিতে আমার ভেতরেও সবসময় একটি প্রণোদনা কাজ করত। এরই ধারাবাহিকতায় সাজিদ সিরিজের দ্বিতীয় বই নামে পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পেরে আমি আনন্দিত। আলহামদু লিল্লাহ। অসংখ্য শুকরিয়া মহান রবের দরবারে।
সাজিদ সিরিজের প্রথম খন্ডের ব্যাপক জনপ্রিয়তার ফলে দ্বিতীয় খণ্ড রচনার কাজটা ছিল খুবই চ্যালেঞ্জের। দ্বিতীয় মলাটে সাজিদকে কীভাবে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি সেটা ছিল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রথমত একটি চ্যালেঞ্জ, দ্বিতীয়ত আগের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে সাজিদকে নতুনভাবে প্রকাশ করতে বেশ দীর্ঘ একটা সময় নিয়েছি। তাই, মাঝখানের সময়টাতে সাজিদ আসেনি দেখে যারা আমার ওপরে অভিমান করে আছেন, তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের এই অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্যে হৃদয়ের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা।
নিয়ে কিছু বলতে চাই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অশেষ রহমতে এই খণ্ডে আমি এমনকিছু টপিক নিয়ে কাজ করতে পেরেছি যেগুলো নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন ছিল দীর্ঘদিনের। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার অধম বান্দার জন্য সেই কাজটাকে সহজ করে দিয়েছেন আলহামদু লিল্লাহ।
এবারের বইটিকে নাস্তিকতা বিরোধী বললে মোটাদাগে ভুল করা হবে। কারণ, এবারের বইতে আমি যেমন নাস্তিকদের প্রশ্নের জবাব রেখেছি, রেখেছি খ্রিষ্টান মিশনারিদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবও। এর পাশাপাশি কুরআনের অলৌকিক কিছু ব্যাপার, ভাষাতাত্ত্বিক কিছু মিরাকল নিয়ে আলোচনাও স্থান পেয়েছে এবারের বইতে। আমার মনে হয়েছে, গৎবাঁধাভাবে নাস্তিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলে পাঠকদের মনে এক ধরনের একঘেয়েমি সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্য আনতেই আমি বইটি এভাবে সাজিয়েছি। তাছাড়া, আমি বিশ্বাস করি কুরআনের এ সব বিষয়াদি মানুষের জানা উচিত। তবেই মানুষের মধ্যে কুরআনের প্রতি গভীর ভালোবাসা জন্মাবে। তারা কেবল পড়ার জন্যে নয়, জানা এবং বোঝার জন্যে তখন কুরআন পড়বে, ইন শা আল্লাহ।
আগের মতোই এবারের বইটি লিখতে গিয়েও অনেক ভাইয়েরা আমাকে সহায়তা করেছেন বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত আর পরামর্শ দিয়ে। তাদের সকলের কাছেই আমি কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ। বইটি লিখতে গিয়ে আমি শরণাপন্ন হয়েছি বিভিন্ন স্কলার,
শাইখ এবং দাঈ ইলাল্লাহ ভাইদের ইংরেজিতে মজুদ থাকা রিসোর্সের। বিশেষ করে ভাই আবু জাকারিয়া, উস্তায হামযা জর্জিস এবং ইকরা টিমের। মুশফিকুর রহমান মিনার ভাই এবং জোবায়ের আল মাহমুদ ভাইয়ের কাছেও কৃতজ্ঞতা তাদের সার্বক্ষণিক সাহায্য এবং পরামর্শের জন্য। আল্লাহ যেন তাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করেন।
সবশেষে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দরবারে আমি আবারও শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। সাজিদ সিরিজের দ্বিতীয় বই তিনি যেন কবুল করে নেন। এই বইতে যা কিছু ভালো আর কল্যাণের, তার সবটুকু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পক্ষ থেকে। আর, এই বইতে যা কিছু ভুল ও অকল্যাণকর, তার সব-ই আমার পক্ষ থেকে।
পাঠকের কাছে সবিনয় অনুরোধ, বইটি নিয়ে যদি আপনার কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ থাকে, তা আমার বরাবর কিংবা প্রকাশনী বরাবর জানাবেন। কল্যাণের উদ্দেশ্যে দেওয়া আপনাদের সবরকম পরামর্শকে সাদরে গ্রহণ করা হবে, ইন। শা আল্লাহ। বইটি যদি আপনি কল্যাণকর মনে করে থাকেন, তাহলে দয়া করে আপনার কাছে রেখে দেবেন না; আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার কোনো এক শুষ্ক হৃদয়ের বান্দার কাছে হস্তান্তর করে দেবেন। যদি এই বই তার শুকিয়ে যাওয়া হৃদয়ে কল্যাণের বারিধারা ফেরাতে পারে, অন্তরের অনুর্বর মাটিতে এই বই যদি এক পশলা বৃষ্টির কারণ হতে পারে, তাহলে সেই কাজের নেকি সমানভাবে আপনি এবং আমিও পেয়ে যাব, ইন শা আল্লাহ।