সাজিদের কথা শুনে শাবির চুপ করে আছে। সাজিদ বলে যেতে লাগল, বনু কুরাইজা যে অপরাধী ছিল, তার অনেক ঐতিহাসিক প্রমাণ বিদ্যমান আছে। সহীহ বুখারী-তে ইবনু উমারের বরাতে বলা হয়েছে, Bani An-Nadir and Bani Quraiza fought (against the Prophet violating their peace treaty), so the Prophet exiled Bani An-Nadir and allowed Bani Quraiza to remain at their places (in Medina) taking nothing from them till THEY FOUGHT AGAINST THE PROPHET AGAIN.[১]
এখান থেকে স্পষ্ট যে, বনু কুরাইজা চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। সুনানু আবি দাউদে ইবনু উমারের বরাতে বলা হচ্ছে, The Jews Al Nadir and Quraizah fought with the Apostle of Allah, so the Apostle of Allah expelled Banu Al Nadir and allowed the Quraizah to stay and favored them. The Quraizah thereafter fought (with the Prophet).[২]
এখান থেকেও স্পষ্ট যে, বনু কুরাইজা সম্প্রদায় নিরপরাধ ছিল না। তারা চুক্তি ভঙ্গ করেছিল এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছিল। তাহলে, তুই যে বলছিলি— নিরপরাধ বনু কুরাইজা-নিরপরাধ বনু কুরাইজা, এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। তারা নিরপরাধ ছিল না, অপরাধী ছিল। সংবিধান লঙ্ঘন করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো অপরাধ।
তাহলে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে গিয়ে, তাকে উৎখাত করে নিজেদের স্বায়ত্তশাসন চালু করতে বা অন্য কোনো শত্রুপক্ষকে বিজয়ী করতে যখন কেউ রাষ্ট্রদ্রোহ করে, পেনাল কোড- ১৮৬০ অনুযায়ী তার কী শাস্তি হওয়া উচিত?
আমি বললাম, মৃত্যুদণ্ড…।
এক্সাক্টলি, সাজিদের জবাব।
এতক্ষণ পরে বিমল দা বলে উঠল, তা বুঝলাম; কিন্তু মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দিলেও তো পারত, তাই না? সাজিদ হাসল। তারপরে বলল, মজার ব্যাপার হলো কী জানোনা, হত্যার এই নির্দেশ কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেননি।
অদ্ভুত কিছু শুনলে মানুষ যেরকম চমকে ওঠে, আমিও সেরকম চমকে উঠলাম অনেকটা। চোখ বড় বড় করে সাজিদের দিকে তাকিয়ে রইলাম। শাবির বলল, মানে কী? হত্যার নির্দেশ নবী মুহাম্মাদ না দিলে তাহলে দিল কে?
সাজিদ বলল, বনু কুরাইজা সম্প্রদায়কে হত্যার নির্দেশ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেননি। দিয়েছিলেন সাদ রাযিয়াল্লাহু আনহু। বনু কুরাইজাদের সামনে অপশান রাখা হয়, তারা কি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রায় মানবে, নাকি তাদের পূর্বসূরি, যিনি একসময় ইহুদী ছিলেন, সেই সাদ রাযিয়াল্লাহু আনহুর রায় মানবে। ইহুদীরা সম্মিলিতভাবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বাদ দিয়ে সাদ রাযিয়াল্লাহু আনহুকে বাছাই করেছিল এবং সাদ রাযিয়াল্লাহু আনহুর দেওয়া রায় অনুসারেই কিন্তু তাদের হত্যা করা হয়। তাদের হত্যার রায়টি আলটিমেটলি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে আসেনি।
শাবির কাচুমাচু করে বলল, তবুও, এটি একটি অমানবিক কাজ।
কোনটি অমানবিক? সাজিদের জিজ্ঞাসা।
এভাবে একসাথে এতগুলো ইহুদী-হত্যার নির্দেশ দেওয়াটা।
সাজিদ হেসে বলল, অমানবিক হবে কেন? এই আইন তো স্বয়ং ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থের-ই আইন। তাদের ধর্মগ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে এই আইনের কথা উল্লেখ করা আছে।
সাজিদের এই কথা শুনে এবার অবাক হলো বিমল দা। বলল, বুঝতে পারলাম না ঠিক।
সাজিদ বলল, সাদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বনু কুরাইজাদের হত্যার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেটি মূলত ইহুদী ধর্মগ্রন্থ ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি আইন। চুক্তিভঙ্গের অপরাধের জন্য এরকম আইনের শাস্তির কথা ওল্ড টেস্টামেন্টেই উল্লেখ করা আছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কীরকম?
সাজিদের প্রামাণ্য জবাব, ওল্ড টেস্টামেন্টের Deuteronomy অধ্যায়ে আছে : Thou shalt smite every male thereof with the edge of the sword : But the women, and the little ones, and the cattle, and all that is in the city, even all the spoil thereof, shalt thou take unto thyself; and thou shalt eat the spoil of thine enemies, which the LORD thy God hath given thee. [৩]
এখানে স্পষ্ট করেই বলা আছে, চুক্তিভঙ্গের জন্য প্রত্যেক পুরুষকে হত্যা করো….। সাদ রাযিয়াল্লাহু আনহু সেদিন যেটি করেছিলেন, সেটি বাইবেলেরই আইন। তাহলে, ইহুদীদের আইন তো ইহুদীদের ওপরেই আরোপ করা হয়েছে। এতে তো কারও বিরোধ থাকার কথা না…।
সবাই চুপ করে আছে। একটু পরে বিমল দা বলল, কিন্তু, বনু কুরাইজার সকল পুরুষ হত্যা করা হলো, ব্যাপারটি কেমন না? একটি গোত্রের সকল পুরুষ তো আর অপরাধ করে না। এমন অনেক পুরুষ কি সেই গোত্রে ছিল না—যারা হয়তো যুদ্ধ করেনি বা যুদ্ধ করার মতো অবস্থায়ও ছিল না? তাহলে তাদেরও কেন হত্যা করা হলো?
সাজিদ একটু থামল। এরপর বলল, ওইদিন বনু কুরাইজার সকল পুরুষ হত্যা করা হয়নি; বরং সকল যোদ্ধা (যারা যুদ্ধ করতে সক্ষম) হত্যা করা হয়েছিল। সেদিনকার ঘটনার বর্ণনায় যে-সকল হাদীস পাওয়া যায়, সবগুলোতে রাজুল তথা পুরুষ শব্দের পরিবর্তে মোকাতেল তথা যোদ্ধ শব্দ ব্যবহার করা হয়।