বিমল দার কথা শুনে শাবির সাজিদের দিকে ফিরে বলল, সাজিদ, তোর কী মনে হয়, এগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ নয়?
অবশ্যই মানবতাবিরোধী অপরাধ, সাজিদের সরল স্বীকারোক্তি।
এরপরেও কি বলবি তোদের নবী ঠিক কাজ করেছে?
এবার সাজিদ চুপ করে গেল। বিমল দা বলল, Hell be back with his witty logics now, Ha-ha-ha…
সাজিদ বিমল দার কথায় কর্ণপাত করল বলে মনে হলো না। সে শাবিরের দিকে তাকিয়ে বলল, শাবির, দেখা যাচ্ছে তুই আমার মতামত শুনতে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছিস। যদি ধৈর্য ধরে শোনার মতো অবস্থায় থাকিস, তাহলে আমি আমার মতামত তুলে ধরতে পারি।
বিমল দা সিগারেটে শেষ-টান দিয়ে দূরে ছুড়ে মারল শেষ অংশটুকু। এরপর বিদ্রুপের সুরে বলল, শুধু শাবির কেন ব্রো? আমরাও তোমার বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় আছি।
শাবির বলল, অবশ্যই, আমরা শুনতে আগ্রহী।
দুজনের আগ্রহ দেখে সাজিদ বলতে আরম্ভ করল, আচ্ছা বিমল দা, খুব সংক্ষেপে কিছু কথা বলব। একটু মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।
বিমল দা বলল, হুম।
ধরো, তুমি, আমি, আরিফ আর শাবির, আমরা চারজন মিলে একটি রাষ্ট্র গঠন করলাম।
হুম।
আরও ধরো, আমরা এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হিশেবে তোমাকে নির্বাচিত করলাম। ঠিক আছে?
বিমল দা মাথা নেড়ে বললেন, কিয়া বাত হ্যায়! আমি রাষ্ট্রপতিও হয়ে গেলাম? সে যা-ই হোক, ধরে নিলাম—আমি এখন রাষ্ট্রপতি। তারপর?
সাজিদ বলল, এখন তুমি যেহেতু আমাদের ভূখণ্ডের রাষ্ট্রনায়ক, তাহলে আমাদের করণীয় কী?
বিমল দার উত্তর, তোদের করণীয় হচ্ছে, তোরা যেহেতু আমাকে নেতা নির্বাচন করেছিস, সেহেতু আমার সিদ্ধান্ত মেনে চলা। আমার তৈরি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা করা এবং তা মেনে চলা।
তোমার তৈরি আইন মানে? সাজিদের প্রশ্ন।
আমার তৈরি আইন মানে হচ্ছে রাষ্ট্রের তৈরি আইন।
ও আচ্ছা, সে আইনে রাষ্ট্রদ্রোহিতার কোনো ধারা থাকবে? সাজিদের পাল্টা প্রশ্ন।
বিমল দার উত্তর, অবশ্যই থাকবে। থাকতে হবে।
কীরকম?
কেউ যখন যে-রাষ্ট্রে বাস করে সেই রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের আইন ও সরকার ইত্যাদির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেগুলো কেমন হতে পারে?
বিমল দা ভাবতে লাগল। সাজিদ আবারও বলল, বিমল দা, তুমি চাইলে বাংলাদেশ সংবিধানের সাহায্য নিতে পারো।
সাজিদের কথা শুনে হাসি দিল বিমল দা। ঝটপট সমাধান পেয়ে হয়তো-বা খুশি হয়েছে। সাথে সাথেই গুগল সার্চ করে বিমল দা বাংলাদেশ সংবিধানের দণ্ডবিধির ধারাগুলো পড়া শুরু করল। দুবার আগাগোড়া চোখ বুলিয়ে এবার রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিধান খুঁজে পেল। বিমল দা সরাসরি বাংলাদেশ সংবিধানের পেনাল কোড ১৮৬০ এর ১২১ ধারা থেকে পড়া শুরু করল : ১২১ ধারায় আছে, Whoever wages war against Bangladesh, or attempts to wage such war, or abets the waging of such war, shall be punished with death, or (imprisonment) for life, and shall also be liable to fine
অর্থাৎ বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ১২১ ধারায় বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কেউ যদি যুদ্ধ পরিচালনা করে অথবা যুদ্ধ পরিচালনার চেষ্টা করে, নতুবা এরকম যুদ্ধ পরিচালনায় যদি অন্যপক্ষকে সাহায্যও করে, তাহলে সে (বা তারা ) মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে, সাথে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।
১২১ ধারার (ক) নম্বর ধারায় আছে, Whoever within or without Bangladesh conspires to commit any of the offences punishable by section 121, or to deprive Bangladesh of the sovereignty of her territories or of any part thereof, or conspires to overawe, by means of criminal force or the show of criminal force, the Government, shall be punished with imprisonment for life] or with imprisonment of either description which may extend to ten years, and shall also be liable to fine
অর্থাৎ কেউ বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে ১২১ ধারায় কোনো অপরাধের ষড়যন্ত্র করলে অথবা বাংলাদেশের বা বাংলাদেশের কোনো অংশের সার্বভৌমত্ব খর্ব করার ষড়যন্ত্র করলে অথবা অপরাধমূলক শক্তি প্রয়োগ বা প্রদর্শন করে বৈধ সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করলে তার শাস্তি হবে যাবজ্জীবন বা অনূর্ধ্ব ১০ বছর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডও।
১২২ নম্বর ধারায় আছে, Whoever collects men, arms or ammunition or otherwise prepares to wage war with the intention of either waging or being prepared to wage war against Bangladesh, shall be punished with (imprisonment] for life or imprisonment of either description for a term not exceeding ten years, and shall also be liable to fine.
অর্থাৎ কেউ যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে সৈন্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ সংগ্রহ করে, তাহলে সে (বা তারা) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অনূর্ধ্ব ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
বিমল দার পড়া শেষ হলে সাজিদ বলল, তাহলে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনে রাষ্ট্রদ্রোহিতার জন্য যে-শাস্তির কথা উল্লেখ আছে তা এরকম :
এক, কেউ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করলে বা করার চেষ্টা করলে বা (এরকম কাজে লিপ্ত বাইরের) কাউকে সাহায্যও করলে, তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন এবং অর্থদণ্ড।