বইতে যদি কোনোরকম অসঙ্গতি ব্লা ভুল চোখে পড়ে, তা সহৃদয় পাঠককে আমাদের জানানোর অনুরোধ রইল। আমরা অবশ্যই সেটা শুধরে নেব, ইন শা আল্লাহ।
সত্যবিশ্বাসের সাথে সকলের পথচলা সুন্দর হোক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সবাইকে সিরাতুল মুসতাকীমের পথে অটল ও অবিচল রাখুন। আমীন।
প্রকাশক
সমকালীন প্রকাশন
.
লেখকের কথা
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার, যিনি আমাকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন। দরুদ ও সালাম প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যাকে বিশ্বজাহানের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছে। শান্তি বর্ষিত হোক তার পরিবার-পরিজন এবং তার সাহাবীদের ওপর যারা ইসলামের জন্য ত্যাগ করেছেন নিজেদের সর্বস্ব। রাযিয়াল্লাহু আনহুম।
এখন চলছে এক উত্তাল সময়। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মানুষের চিন্তা, চেতনা আর আদর্শ পৌঁছে যাচ্ছে সর্বত্র। একজন যা ভাবছে তা মুহূর্তেই জেনে যাচ্ছে অন্যরা। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের অবাধ সুযোগ এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা যেন ব্যাপারটিকে আরও মোহনিয়া করে তুলেছে।
প্রযুক্তির এই ধারা-ই কাজে লাগিয়েছে ধর্মবিদ্বেষী একদল মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ার অবাধ ব্যবহারের এই সুযোগে ইসলাম, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ইন্টারনেটে তারা এমন সব কথা ছড়াতে লাগল যা মুখ বুজে সহ্য করা যেকোনো ইমানদার ব্যক্তির জন্য ছিল অত্যন্ত কঠিন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল অসচেতন মুসলিম তরুণ, যাদের ধর্ম নিয়ে খুব বেশি জানাশোনা ও পড়াশোনা নেই। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের এসকল তরুণদের টার্গেট করে তারা বিভিন্ন ব্লগে ও ফেইসবুকে ছড়াতে থাকে প্রোপাগান্ডা যার সবটাই-জুড়ে থাকে কেবল ইসলাম-বিদ্বেষ। ইসলামের নবী ও তার স্ত্রীগণ এবং অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। যুবক-যুবতীদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করিয়ে তাদের ধর্ম থেকে বিমুখ এবং দূরে সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তারা আপ্রাণ কাজ করে যাচ্ছে। দুঃখের সাথে বলতে হয়, তাদের এই প্রচেষ্টায় তারা অনেকটাই সফল হতে পেরেছে। তাদের ছড়ানো নীল-জগতের বিষে বিষাক্ত হতে থাকে বেশকিছু বিশ্বাসী তরণের অন্তর। ধর্ম নিয়ে তাদের মনে ঢুকে পড়ে সীমাহীন সন্দেহ আর অবিশ্বাস। স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের সত্যতাসহ নানান ব্যাপারে তারা দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগতে থাকে।
চারদিকের এরকম অন্ধকার, অস্থিরতা আর অবিশ্বাসের বিষবাষ্প দেখতে দেখতে বিষিয়ে উঠছিল মন। চোখের সামনে পাল্টে যেতে থাকা মানুষগুলো দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। কেমন যেন অদ্ভুত এক অন্ধকার এসে গ্রাস করে নিচ্ছিল সুন্দর এই উপত্যকা।
এরকম অস্থির সময়ে একদিন ঠিক করেই ফেললাম, কলমের জবাব কলমেই হোক। লেখার বদলে লেখা আসুক। যুক্তির বিপরীতে যুক্তি। যে-কলম দিয়ে তারা বিশ্বাসী হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে চলছে, সেই কলমের প্রতিবাদে প্রয়োজন আরও শক্তিশালী কলম। যে-কলম বিশ্বাসের কথা বলবে। যে-কলম রচনা করবে বিশ্বাসী প্রাণের সুর।
আমার মনে আছে, এরকম দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে, জোসনা প্লাবিত এক রাতে লিখে ফেলেছিলাম সাজিদ সিরিজের একদম প্রথম গল্পটা। ওই গল্পে একটি নতুন ধারার সূচনা করেছিলাম আমি। তখনো জানতাম না যে, এই ধারা একদিন বিপ্লব হয়ে উঠবে। আলহামদু লিল্লাহ।
ইসলাম-বিদ্বেষীদের প্রশ্নগুলোকে একত্র করে, তাদের যুক্তিগুলোকে একাধারে সাজিয়ে নিয়ে আমি চেষ্টা করেছি তার বিপরীতে আমাদের যুক্তিগুলোকে উপস্থাপন করতে। এই কাজটা করতে গিয়ে আমি গৎবাঁধা কোনো প্রবন্ধ রচনা করিনি। আমি সবসময় চাইতাম যে, আমি যা-ই লিখব, তা যেন সকল শ্রেণির মানুষের কাছে বোধগম্য হয়। তারা যেন পড়ামাত্রই আমার কথা বুঝে নিতে পারে। আমি আমার লেখাতে, আমার যুক্তি, উপমা কিংবা উদাহরণে কোনোরকম দূর্বোধ্যতা রাখতে চাইনি। আমি তাদের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছি ধর্ম নিয়ে যাদের খুব বেশি জানাশোনা নেই; কিন্তু ধর্মবিদ্বেষীদের ছড়ানো প্রোপাগান্ডায় নিজের বিশ্বাস নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছে। আমি তাদের সহজ এবং সরল ভাষায় বোঝাতে চেয়েছি যে, ধর্মের বিপরীতে ধেয়ে আসা যুক্তিগুলো কতোটা ভঙ্গুর। প্রশ্নগুলো কতটা অবান্তর। আমি তাদের কাছে ইসলামের মাহাত্ম্য তুলে ধরতে চেয়েছি। কুরআনের অনন্যতা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়তের সত্যতার ব্যাপারে অখণ্ডনীয় যে-সব প্রমাণ রয়েছে, সেগুলোকে এক জায়গায় করে ধীরে ধীরে তাদের অন্তরে প্রবাহিত করে দিতে চেয়েছি বিশ্বাসের ফল্গুধারা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই কাজে আমাকে সাহায্য করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ।
জোসনা প্লাবিত রাতের সেই একটি গল্প থেকে ধীরে ধীরে সাজিদ সিরিজ মলাটবদ্ধ হয়ে যায়। চারদিক থেকে প্রচুর মানুষের ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং পরামর্শে ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায় সাজিদ সিরিজের প্রথম বই প্রকাশিত হয় প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ নামে। সেই যে শুরু, সেই ধারা এখনো চলছে, আলহামদু লিল্লাহ।