আহসান আঙ্কেল আরও কিছু-একটা বলতে যাচ্ছিলেন। তিনি কিছু বলার আগেই সাজিদ বলে উঠল—আঙ্কেল, Encyclopedia Judaica-তে কী বলা আছে আপনি জানেন?
আহসান আঙ্কেল বললেন, কী বলা আছে?
বলা আছে–It is related that a renowned traditionalist of Jewish origin, from the Qurayza tribe, and another Jewish scholar, who converted to Islam, told that Caliph Omar Ibn Abd al- c Aziz (717-20) that the Jews were well informed that Ismail was the one who was bound, but that they concealed this out of jealousy.[৮]
অর্থাৎ ইহুদীরাও খুব ভালোভাবে জানত যে, সেদিনকার ঘটনায় ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাথে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম-ই ছিলেন, ইসহাক আলাইহিস সালাম নয়; কিন্তু ঈর্ষান্বিত ইহুদীরা এটা খুব সুকৌশলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
আমি বললাম, এটা স্বীকার করে নিলে তাদের ক্ষতি কী?
সাজিদ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরাও খুব ভালোভাবে জানত যে, শেষ যামানায় একজন ঈশ্বরের দূত আসবে। তারা আশা করে রেখেছিল, সেই দূত হবে ইসহাক আলাইহিস সালামের বংশধরদের মধ্য থেকে। কারণ, ইসহাক আলাইহিস সালাম ছিলেন সারা আলাইহাস সালামের গর্ভের, যিনি একজন স্বাধীন নারী ছিলেন। পক্ষান্তরে, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম জন্মেছেন হাজেরা আলাইহাস সালামের গর্ভে, যিনি ছিলেন একজন দাসী। অর্থাৎ একজন দাসীর পেটে জন্ম নেওয়া সন্তানের বংশে ঈশ্বর এরকম একজন সম্মানিত দূত পাঠাবে, এটি অহংকারী ইহুদী-খ্রিষ্টানরা মেনে নিতে পারেনি, তাই।
এতটুকু বলে সাজিদ তার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, আঙ্কেল, আমার আরেকটি ক্লাস আছে। আজকে উঠতে হবে যে।
টেবিলে রাখা বইগুলো সাজিদ হাতে তুলে নিচ্ছে। দেখলাম বইগুলোর মধ্যে মাওলানা আকরাম খাঁ রচিত মোস্তফা চরিত বইটিও রয়েছে। আমি টান দিয়ে সেটা ওর হাত থেকে নিয়ে নিলাম। এত ভালো মানের সীরাত এভাবে হাতছাড়া করা যায় না।
সাজিদ আহসান আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বলল, আঙ্কেল, আজ তাহলে আসি?
আহসান আঙ্কেল আরেকবার হাত বাড়িয়ে দিলেন তার দিকে। হ্যান্ডশেক করা হলে আহসান আঙ্কেল সাজিদের চোখে চোখ রেখে বললেন, Live long my son।
সাজিদ মুচকি হাসল। তার ক্লাসের তাড়া আছে। সালাম দিয়ে সে ক্লাসের উদ্দেশ্যে ছুটল। সাজিদ চলে যাবার পরে আমি আহসান আঙ্কেলের দিকে তাকালাম। মনে হচ্ছে, এই লোকটার বয়স হওয়া উচিত ছিল ৩০ বছর; কিন্তু লোকটা ইতোমধ্যেই ৫০ এর কোঠা পার করে ফেলেছে। তার চেহারা থেকে বিরক্তির আভাটুকু চলে গেছে। বিরক্তির বদলে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে এক চিলতে হাসি।
————-
১ জেনেসিস, ২২: ২
২ জেনেসিস : ১৬:৩
৩ জেনেসিস: ২৫:৯
৪ সূরা সাফফাত, ৩৭ : ৯৯-১১২
৫ সূরা আম্বিয়া, ২১ : ৮৫
৬ সূরা যারিআত, ৫১ : ২৮
৭ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড : ০১; পৃষ্ঠা : ১৫৭
৮ Encyclopedia Judaica, Volume : 09
০৩. ইসলাম কি অমুসলিমদের অধিকার নিশ্চিত করে?
ভ্যাকেশনের সময়টাতে আমরা সাধারণত ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। ঘোরাঘুরির প্রতি আমার আগ্রহ বা কৌতূহল—কোনোটাই কোনোকালে ছিল না। ক্লাস, ল্যাব, এক্সাম— এসবের ভিড়ে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকতাম কবে একদিন ছুটি পাব আর পুরোদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেবো। করতামও তাই। ছুটির দিন মানেই আরামসে ঘুম; কিন্তু এই অভ্যাসের যবনিকাপতন ঘটে সাজিদের হাতে। যখন থেকে তার সাথে পরিচয়, ঠিক তখন থেকেই তার মধ্যে দুটি নেশা প্রবলভাবে দেখে আসছি। একটি হচ্ছে বই পড়া আর অন্যটা ঘোরাঘুরি।
ট্রাভেলিং বিষয়ক বাংলা এবং ইংরেজিতে যতগুলো বই আছে মোটামুটি সবগুলো তার পড়া। সে শিডিউল করে রেখেছে, ফাইনাল সেমিস্টারের পরে আমাকে নিয়ে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম যাবে। আমস্টারডামের কোথায় কোথায় ঘুরব তারও একটি শর্ট লিস্ট রেডি করে রেখেছে সে।
সেই শিডিউলে আছে Anne Frank House, যে গৃহটির ওপর নির্মিত হয়েছে বিখ্যাত মুভি The Diary of a Young Girl, পৃথিবীর একমাত্র ভাসন্ত ফুলের মার্কেট Bloemenmarkt, Tuschinski Theater, Dam Square-সহ আরও বিভিন্ন বিখ্যাত জায়গা। সাজিদের ভাষ্যমতে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই পৃথিবীকে এত সুন্দর করে সাজিয়েছেন—যাতে মানুষ তার অবসরে এইসব সৌন্দর্য অবলোকন করে নৈসর্গিক আনন্দ লাভ করতে পারে। অন্যথায় একটি ছোট্ট ফুলের পাঁপড়ির মধ্যে এরকম অঢেল লাবণ্য আর কারুকাজ দেওয়ার কোনো দরকার ছিল না।
আমাদের কাছে সৌন্দর্যের সর্বোচ্চ মাপকাঠি হচ্ছে জান্নাত। সাজিদ বলে, সৌন্দর্যের এই পরম মাত্রা বুঝাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা খুবই কমন কিছু জিনিস উপমা হিশেবে ব্যবহার করেছেন। যেমন—ঝরনা, বাগান ইত্যাদি, যা আমাদের হাতের নাগালের মধ্যেই। আমরা হরহামেশাই চাইলে দুনিয়ায় এসব দেখতে পারি। এসব উপমা দেওয়ার কারণ হতে পারে এই—আল্লাহ চাইছেন আমরা এসব দেখে, এসবের সৌন্দর্য দেখে বিমুগ্ধ হই এবং ভাবি—আহ! এগুলোই এত মনোহর! জান্নাতের নহর আর বাগান না জানি কত সুন্দর! আল্লাহ চান মানুষ ভ্রমণ করুক। দেখুক। বুঝুক। অনুধাবন করুক।
এই সব আলাপ সামনে এলে সাজিদ ট্রাভেলিং ইস্যুতে বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি কপচানোর সাথে সাথে ভ্রমণ বিষয়ক কুরআনের আয়াতগুলোও শুনিয়ে দেয়। আমরা যারা ভ্রমণকে নেহায়েত সময় আর অর্থ নষ্ট ভেবে ছুটির দিনে রুমের দরজা-জানালা বন্ধ করে অঘোর ঘুমে মজে থাকি, তাদের তখন চেহারা মলিন করে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।