তিনি বিজ্ঞানী Georges Lemaitre এর কাছে অনুতপ্ত হযন এবং নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ভুল দাবি করেন।
এখন বিজ্ঞানী মহলে এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হয়েই চলেছে আজ অদ্যাবধি।
এতোটুকু বলে সাজিদ থামল। আমরা এক নিঃশ্বাসে বিজ্ঞানের একটি মজার অধ্যায় থেকে ভ্রমণ করে এলাম। এবার সাজিত আমাদের মধ্যে যে এগনোষ্টিক, যে বিশ্বাস করে যে, কোরআন মুহাম্মদ সা. এর নিজের কথা, তার দিকে ফিরলো।
বলল, -‘রোহান, বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে তোর এসব অবশ্যই জানা থাকার কথা, তাই না?’
রোহান বললো, -‘হ্যাঁ, জানি।’
মাত্র গত শতাব্দীতে বসে আইনস্টাইনও যে মহাবিশ্ব নিয়ে ভুল জানতেন, তা তো তুই জানিস, তাই না?’
-‘হ্যাঁ।’
-‘বিজ্ঞানী Georges Lemaitre আর বিজ্ঞানী হাবলের আগে এই জিনিস তাবৎ দুনিয়ার কেউই জানত না, ঠিক না?’
-‘হ্যাঁ।’ -রোহানের স্বীকারোক্তি।
সাজিদ বলল, -‘আচ্ছা রোহান, আমি যদি বলি তাদের অনেক অনেক অনেক আগে, তাদের প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে একজন ব্যক্তি সব কথা বলেছে, তুই বিলিভ করবি?’
রোহান চিতকার করে বললো, -‘Impossible, Quite Impossible’
সাজিদ তখন বলল, -‘শোন রোহান, কোরআনের সূরা আয-যারিয়াত এর ৪৭ নাম্বার আয়াতে আছে ‘আমরা নিজ হাতে আসমানকে সৃষ্টি করেছি এবং এটাকে সম্প্রসারিত করে চলেছি।’
এখানে আয়াতের শেষে আসমানের সম্প্রসারণ বুঝাতে যে ‘মূসিঊন’ শব্দ আছে সেটি একটি সক্রিয় বিশেষণ। চলমান ক্রিয়া নির্দেশক, যা নির্দেশ করে কোন কাজ অধিক কাল থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে অবধি চলছে এবং ভবিষ্যতেও তা হয়ে চলবে। অর্থাৎ আল্লাহ বলেছেন, -তিনি মহাবিশ্বকে (এখানে আসমান = মহাবিশ্ব) নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং সেটাকে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করে চলেছেন। ঠিক এই কথাগুলো বিজ্ঞানী Georges Lemaitre এবং বিজ্ঞানী হাবল আমাদের গত শতাব্দীতে জানিয়েছেন। বলতো, আজ থেকে চোদ্দশ বছর আগে মরুভূমিতে উট চরানো এক বালক এমন একটি কথা কিভাবে বললো, যা আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে মাত্র ১৯২৯ সালে? এই কথা না বাইবেলে ছিল, না ইঞ্জিলে। না ছিল কোন গ্রীক পুরাণে, না ছিল মিথোলজিতে। মহাকাশের এমন একটি রহস্যময় ব্যাপার মক্কার একজন নিরক্ষর, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন লোক মুহাম্মদ সা. কোথায় পেলেন? বল তো?’
অন্যান্য সময় হলে রোহান বলতো, মোহাম্মদ বাইবেল থেকে চুরি করেছে, নয়তো বলতো কোন গ্রিক পুরাণ থেকে মেরে দিয়েছে। কিন্তু সাজিদের বিস্তারিত গল্প শোনার পর তার এই দাবি যে ধোপে টিকবে না, সে সেটা বুঝতে পারলো।
সাজিদ বলল, -‘এটা কি সম্ভব নিরক্ষর মুহাম্মদ সা. এর দ্বারা যদি কোনো ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ তাতে না থাকে?’
রোহান মাথা নিচু করে বললো, -‘নাহ।’
সাজিদ বললো, -‘তাহলে প্রমাণ হলো কোরআন মুহাম্মদ সা. এর লেখা নয়, এটি একটি ঐশ্বরিক কিতাব, যা নাজিল হয়েছে মুহাম্মদ সা. এর উপর।’
রোহান কিছু বলল না। তাকে কিছুটা চিন্তিত দেখালো। সম্ভবত সে বুঝতে পেরেছে যে, চোরের দশদিন, গেরস্থের একদিন।
(এটি ‘সাজিদ’ সিরিজের ১৫ তম পর্ব। সাজিদ একটি কাল্পনিক চরিত্র। এই চরিত্রটি কাল্পনিক নানান ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে নাস্তিক তথা ইসলাম ধর্ম বিদ্বেষীদের যুক্তিগুলোকে দর্শন, যুক্তি, বিজ্ঞান আর বস্তবতার আলোকে খণ্ডন করে। )
কোরআন কি বলে সূর্য পানির নিচে ডুবে যায়?
কোরআন কি বলে সূর্য পানির নিচে ডুবে যায়?
সাজিদের খুব মন খারাপ। আমি রুমে ঢুকেই দেখলাম, সে তার খাটের উপর শক্তমুখ করে বসে আছে।
আমি বললাম, -‘ক্লাস থেকে কবে এলি?’
সে কোন উত্তর দিল না। আমি কাঁধ থেকে সাড়ে ১০ কেজি ওজনের ব্যাক্তি নামিয়ে রাখলাম টেবিলের উপর। তার দিকে ফিরে বললাম, -‘কি হয়েছে রে? মুখের অবস্থা তো নেপচুনের উপগ্রহ ট্রাইটন এর মত করে রেখেছিস।’
সে বলল, -‘ট্রাইটন দেখতে কি রকম?’
-‘আমি শুনেছি ট্রাইটন দেখতে নাকি বাংলা পাচের মতো।’
আমি জানি, সাজিদ এক্ষুনি একটা ছোটখাটো লেকচার দিতে শুরু করবে। সে আমাকে ট্রাইটন এর অবস্থান, আকার-আকৃতি, ট্রাইটন এর ভূপৃষ্ঠে নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ, সূর্য আর নেপচুন থেকে ট্রাইটন এর দূরত্ব কত তা যথাযথ বিবরণ এবং তথ্যাদি দিয়ে প্রমাণ করে দেখাবে যে, ট্রাইটন দেখতে মোটেও বাংলা পাচের মতো নয়।
এই মুহূর্তে তার লেকচার বা বকবকানি কোনটাই শোনার আমার ইচ্ছে নেই। তাই যে করেই হোক, তাকে দ্রুত থামিয়ে দিতে হবে। আমি আবার বললাম, -‘ক্লাসে গিয়েছিলি?’
-‘হু।’
-‘কোন সমস্যা হয়েছে নাকি? মন খারাপ?’
সে আবার চুপ মেরে গেল। এই হল একটা সমস্যা। সাজিদ যেটা বলতে চাইবে না, পৃথিবী যদি উলটপালট হয়েও যায়, তবুও সে মুখ খুলে সেটা কাউকে বলবে না ।
সে বলল, -‘কিচেনে যা। ভাত বসিয়েছি, দেখে আয় কি অবস্থা।’
আমি আকাশ থেকে পড়ার মত করে বললাম, -‘ভাত বসিয়েছিস মানে? বুয়া আসেনি?’
-‘না।’
-‘কেন?।’
-‘অসুস্থ বলল।’
-‘তাহলে আজ খাব কি?’
সাজিদ জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। সেদিকে তাকিয়ে বলল, -‘ভাত বসিয়েছি। কলে যথেষ্ট পরিমাণে পানি আছে। পানি দিয়ে ভাত গিলা হবে।’
সিরিয়াস সময়গুলোতেও তার এ রকম রসিকতা আমার একেবারেই ভালো লাগে না। অগত্যা কিচেনের দিকে হাঁটা ধরলাম। যেটা ভেবেছিস ঠিক সেটা নয়, ভাত বসানোর পাশাপাশি সে ডিম সেদ্ধ করে রেখেছে। আমার পেছনে পেছনে সাজিত আসলো। এসে ভাত নামিয়ে কড়াইতে তেল, তেলে কিছু পেঁয়াজ কুচি, হালকা গুঁড়ো মরিচ, ১ চিমটি নুন দিয়ে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করে তাতে ডিম দুটো ছেড়ে দিল। পাশে পর্যবেক্ষকের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছি। মনে হচ্ছে সাজিদ কোন রান্না প্রতিযোগিতার প্রতিযোগী আর আমি চিফ জাস্টিস। অল্প কিছুক্ষণ পরেই ডিম দুটো বর্ণ লালচে হয়ে উঠলো। মাছকে হালকা ভাঁজলে যে রকম দেখায়, সেরকম সুন্দর একটি পোড়া গন্ধ বেরিয়েছে ।