সে যাহোক, আয়াতটিতে বলা হল, -‘যদি পারো আসমান ও জমিনের সীমানায় প্রবেশ করতে, তবে কর।’
এটি একটি কন্ডিশন ও (শর্তবাচক) বাক্য। এ বাক্যে শর্ত দেওয়ার জন্য If (যদি) ব্যবহার করা হয়েছে।
খালু, আপনি যদি অ্যারাবিক ডিকশনারি দেখেন, তাহলে দেখবেন আরবিতে ‘যদি’ শব্দের জন্য দুটি শব্দ আছে। একটি হল ‘লাও’ অন্যটি হলো ‘ইন’। দুটোর অর্থই ‘যদি’। কিন্তু এই দুটোর মধ্যে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। পার্থক্যটি হল -আরবিতে শর্তবাচক বাক্যে ‘লাও’ তখনই ব্যবহার করা হয়, যখন সেই শর্ত কোনোভাবেই পূরণ সম্ভব হবে না। কিন্তু শর্ত বাচক বাক্যে ‘যদি’ শব্দের জন্য ‘ইন’ ব্যবহার করা হয়, তখন নিশ্চয়ই এই শর্তটা পূরণ সম্ভব।
আশ্চর্যজনক ব্যাপার, কোরআনের সূরা আর রহমান এর ৩৩ নম্বর আয়াতে ‘লাও’ ব্যবহার না করে ‘ইন’ ব্যবহার করা হয়েছে। মানে কোন একদিন জ্বিন এবং মানুষেরা মহাকাশ ভ্রমণে সফল হবেই। আজকে কি মানুষ মহাকাশ জয় করে নি? মানুষ চাঁদে যায়নি? মঙ্গলে যাচ্ছে না ?
দেখুন, চৌদ্দশ বছর আগে যখন মানুষের ধারণা ছিল একটি ষাঁড় তার দুই শিং এর মধ্যে পৃথিবীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক তখন কোরআন ঘোষণা করছে, মহাকাশ ভ্রমনের কথা। সাথে বলেও দিচ্ছে, একদিন তা আমরা পারবো। আরবের নিরক্ষর মুহাম্মদ সা. কিভাবে এই কথা বলতে পারে?’
এম এম আলী ওরফে মোহাম্মদ মহব্বত আলী নামের এই ভদ্রলোকের চেহারা থেকে ‘আমি নাস্তিক, আমি একেবারে নির্ভুল’ টাইপ ভাবটা একেবারে উধাও হয়ে গেল। এখন তাকে যুদ্ধাহত এক ক্লান্ত সৈনিকের মত দেখাচ্ছে।
সাজিদ বলল, -‘খালু, খুব অল্প পরিমাণ বললাম। এরকম আরো শ’খানেক যুক্তি দিতে পারব যা দিয়ে প্রমাণ করে দেওয়া যায়, কোরআন মুহাম্মদ সা. এর নকল করে লেখা কোন কিতাব নয়। এটি স্রষ্টার পক্ষ থেকে আসা একটি ঐশী গ্রন্থ। যদি বলেন, মোহাম্মদ সা. নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য এই কিতাবে লিখছে, আপনাকে বলতে হয়, এই কিতাবের জন্যই মুহাম্মদ সা. কে বরণ করতে হয়েছে অবর্ণনীয় কষ্ট, যন্ত্রণা। তাকে বলা হয়েছিল, তিনি যা প্রচার করেছেন তা থেকে বিরত হলে তাকে মক্কার রাজত্ব দেওয়া হবে। তিনি তা গ্রহণ করেননি। খালু, নিজের ভাল তো পাগলেও বুঝে। মুহাম্মদ সা. বুঝলাম না কেন? এইসবই কি প্রমাণ করে না কোরআনের ঐশী সত্যতা?’
লোকটা কোন কথাই বলছে না। সিগারেটের প্যাকেটে আর কোন সিগারেট নেই। আমরা ঊঠে দাড়ালাম। বের হতে যাবো, অমনি সাজিদ ঘাড় ফিরে লোকটাকে বলল, -‘খালু একটি ছোট প্রশ্ন ছিল।’
-‘বলো।’
-‘আপনার বাগানে লাল রঙের ফুল গাছ নেই কেন?’
লোকটি বলল, -‘আমি রেড কালার ব্লাইন্ড। লাল রং দেখি না।’
সাজিদ আমার দিকে ফিরল। অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, -‘জ্যোতিষী আরিফ আজাদ, ইউ আর কারেক্ট।’
কুরআন কি মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিজের কথা?
কুরআন কি মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিজের কথা?
সাজিদ একটি মজার গল্প বলতে শুরু করলো। গল্প বলার আগে কয়েকবার ঝেড়ে কেশে নিল সে।
সাজিদ যখন কোন গল্প বলতে শুরু করে, তখন সে গল্পটির একটি সুন্দর নাম দেয়। এখন সে যে গল্পটি বলতে শুরু করেছে, সেটার নাম ‘নিউটন-আইনস্টাইন সমঝোতা এবং বোকা আইনস্টাইনের বিজ্ঞানী হাবলুর কাছে নতিস্বীকার।’
এখানে নিউটন আর আইনস্টাইনকে তো চিনিই, কিন্তু বিজ্ঞানী হাবলুটা যে আসলে কে, সেটা ঠিক বুঝলাম না। প্রথমে না বুঝলেও কিছু করার নেই। গল্প শুরু না হলে সাজিদকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। এটা তার গল্প ক্লাসের প্রাথমিক শর্ত।
শুধু যে এটা বুঝি নি তা নয়। আরেকটি ব্যাপার বুঝলাম না। গল্পের নামে বলা হল ‘নিউটন-আইনস্টাইন এর সমঝোতা’ বিজ্ঞানী নিউটনের সাথে তো বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কোনদিন সাক্ষাৎও হলো না। দুজন সম্পূর্ন দুই প্রজন্মের। তাদের মধ্যে তাহলে সমঝোতাই কিভাবে হল? মনের মধ্যে প্রশ্ন দুটো কুটকুটানি শুরু করে দিলো। না পারছি চেপে রাখতে, না পারছি উগড়ে দিতে।
সাজিদ গল্প বলা শুরু করলো। সাজিদের গল্প ক্লাসে উপস্থিত আছি আমি, রাব্বি, রোহান, মোস্তফা আর সবুজ। আমাদের মধ্যে রোহান নাস্তিক টাইপের। পুরোপুরি নাস্তিক নয়, এগনোষ্টিক বলা যেতে পারে। তার ধারণা, মুহাম্মদ সা. নিজের কথাগুলোকে ঈশ্বরের বাণী বলে চালিয়ে দিয়েছে।
যাহোক, আজকে কুরআনের বিশুদ্ধতা প্রমাণের জন্য তারা বসে নি। গল্প শুনতে বসেছে। এই সপ্তাহে সাজিদ গল্প বলবে। এর পরের সপ্তাহে আরেকজন। তার পরের সপ্তাহে আরেকজন, এভাবে।
সাজিদ বলতে শুরু করল, –
‘আজকে বলবো মহাকাশ নিয়ে গল্প। মহাকাশ নিয়ে বলার আগে বলে নিই, তখনও অ্যাস্ট্রোনমি তথা জ্যোতিবিদ্যা পদার্থবিদ্যার আওতাভুক্ত হয়নি। অন্তত মহাকাশ নিয়ে বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক রকম মত পার্থক্য। এই জিনিসটা পদার্থবিদ্যার আওতায় আসার আগে এটা ফিলোসফির বিষয় ছিল। কারো ধারণা ছিল মহাকাশ অসীম, মানে মহাকাশের কোন শেষ নেই। কারো ধারণা ছিল মহাকাশ অসীম নয়, মহাকাশ সসীম। এটি একটি নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
এ দুয়ের বাইরে গিয়ে আরেকদল মনে করত, মহাকাশ অসীম, তবে স্থির। অর্থাৎ, এর নির্দিষ্ট সীমা নেই ঠিক, কিন্তু এটি স্থির।