লোকটা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো
সাজিদ আবার বলতে শুরু করল, -‘স্যার আমরা সহজ সমীকরণ পদ্ধতিতে দেখব স্রষ্টাকে সৃষ্টির প্রয়োজন আছে কিনা, মানে স্রষ্টার সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারে কিনা।
সকল সৃষ্টির একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে এবং শেষ আছে……….. ধরি এটা সমীকরণ (১)
মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টি……… এটা সমীকরণ (২)
এখন সমীকরণ ১ আর ২ থেকে পাই-
সকল সৃষ্টির শুরু এবং শেষ আছে। মহাবিশ্ব একটি সৃষ্টি, তাই এটারও একটা শুরু এবং শেষ আছে।
তাহলে, আমরা দেখলাম উপরের দুটি শর্ত পরস্পর মিলে গেল এবং তাতে থার্মোডায়নামিক্সের তাপ ও গতিসূত্রের কোন ব্যাঘাত ঘটেনি।
-‘হু’
-‘আমার তৃতীয় সমীকরণ হচ্ছে -স্রষ্টা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।’
তাহলে খেয়াল করুন, আমার প্রথম সত্যের সাথে কিন্তু তৃতীয় শর্ত ম্যাচ হচ্ছে না। আর প্রথম শর্ত ছিল -সকল সৃষ্টির শুরু আর শেষ আছে। কিন্তু তৃতীয় শর্তে কথা বলছি স্রষ্টা নিয়ে। তিনি সৃষ্টি নন, তিনি স্রষ্টা। তাই এখানে প্রথম শর্ত খাটে না। তাপ গতি সূত্রটি এখানে আর খাটছে না। তার মানে, স্রষ্টার শুরুও নেই, শেষও নেই। অর্থাৎ, তাকে নতুন করে সৃষ্টির প্রয়োজন নাই। তার মানে স্রষ্টার আরেকজন স্রষ্টা থাকারও প্রয়োজন নাই। তিনি অনাদি, অনন্ত।
এইটুকু বলে সাজিদ থামল। হুমায়ুন আজাদ নামের লোকটি কপালের ভাঁজ দীর্ঘ করে বললেন, -‘কি ভং চং বুঝালি এগুলো? কিসব সমীকরণ টমিকরন? এসব কি? সোজা শাপ্টা বল। আমাকে অঙ্ক শিখাচ্ছিস? Law of Causality সম্পর্কে ধারণা আছে? Law of Causality মতে, সবকিছুর পেছনেও একটা কারন থাকতে হবে।’
সাজিদ বলল, -‘স্যার, উত্তেজিত হবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে অঙ্ক শিখাতে যাব কোন সাহসে? আমি শুধু আমার মতো ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেছি।’
-‘কচু করেছিস তুই। Law of Causality দিয়ে ব্যাখ্যা কর।’ –লোকটা উচ্চস্বরে বলল।
-‘স্যার, Law of Causality বলবত হয় তখনই, যখন থেকে Time, Space এবং Matter জন্ম লাভ করে, ঠিক না? কারণ আইনস্টাইনের থিওরী অফ রিলেটিভিটিও স্বীকার করে যে, Time জিনিসটা নিজেই Space আর Matter এর সাথে কানেক্টেড। Cause এর ধারণা তখনই আসবে যখন Time-Space-Matter এই ব্যাপার গুলো তৈরি হবে। তাহলে, যিনিই এই Time-Space-Matter এর স্রষ্টা তাকে কি করে আমরা Time-Space-Matter এর বাটখারা তে বসিয়ে Law of Causality দিয়ে বিচার করব? স্যার এটা তো লজিক বিরুদ্ধ, বিজ্ঞান বিরুদ্ধ।’
লোকটা চুপ করে আছে। কিছু হয়তো বলতে যাচ্ছিল। এর মধ্যেই আবার সাজিদ বলল, -‘স্যার আপনি Law of Causality’র যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, সেটা ভুল।’
লোকটা আবার রেগে গেল। রেগেমেগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলল, -‘এই ছোকরা ! আমি ভুল বলেছি মানে কি? তুই কি বলতে চাস আমি বিজ্ঞান বুঝিনা?’
সাজিব বলল, -‘না না স্যার, একদম তাই বলিনি। আমার ভুল হয়েছে। আসলে বলা উচিত ছিল যে- Law of Causality সংজ্ঞা বলতে গিয়ে আপনি ছোট্ট একটা জিনিস মিস করেছেন।’
লোকটির চেহারা এবার একটু স্বাভাবিক হল। বলল, -‘কি মিস করেছি?’
-‘আপনি বলেছেন Law of Causality মতে, সবকিছুরই একটি Cause থাকে। আসলে এটা স্যার সেরকম নয়। Law of Causality হচ্ছে Everything which has a beginning has a cause. অর্থাৎ, এমন সবকিছু, যেগুলোর একটা নির্দিষ্ট শুরু আছে কেবল তাদেরই cause থাকে। স্রষ্টার কোন শুরু নেই, তাই স্রষ্টাকে Law of Causality দিয়ে মাপা যুক্তি এবং বিজ্ঞান বিরুদ্ধ।’
লোকটার মুখটা কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেল। বলল। -‘তুই কি ভেবেছিস, এরকম ভারি ভারি কিছু শব্দ ব্যবহার করে কথা বললে আমি তোর যুক্তি মেনে নিব? অসম্ভব।’
সাজিদ এবার মুচকি হাসলো। হেসে বলল, -‘স্যার, আপনার হাতে একটি বই দেখছি। ওইটা কি বই?’
-‘এটা আমার লেখা বই –‘আমার অবিশ্বাস’।’
-‘স্যার ঐটা আমাকে দিবেন একটু?’
-‘এই নে ধর।’
সাজিদ বইটা হাতে নিয়ে উল্টালো। উল্টাতে উল্টাতে বলল, -‘স্যার, এই বইয়ের কোন লাইনে আপনি আছেন?’
লোকটা ভুরু কুঁচকে বলল, -‘মানে?’
-‘বলছি এই বইয়ের কোন অধ্যা, য় কোন পৃষ্ঠায়, কোন লাইনে আপনি আছেন?’
-‘তুই অদ্ভুত কথা বলছিস। আমি বইয়ে থাকবো কেন?’
-‘কেন থাকবেন না? আপনি এর স্রষ্টা না?’
-‘হ্যাঁ।’
-‘এই বইটা কালি আর কাগজ দিয়ে তৈরি। আপনিও কি কালি আর কাগজ দিয়ে তৈরি, স্যার?’
-‘খুবই স্টুপিড টাইপ প্রশ্ন। আমি এই বই এর স্রষ্টা। এই বই তৈরি সংজ্ঞা দিয়ে কি আমাকে ব্যাখ্যা করা যাবে?’
সাজিদ আবার হেসে দিল। বলল, -‘না স্যার এই বই তৈরির যে সংজ্ঞা, সে সংজ্ঞা দিয়ে মোটেও আপনাকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। ঠিক সেভাবে এই মহাবিশ্ব যিনি তৈরি করেছেন, তাঁকেও তাঁর সৃষ্টির Time-Space-Matter- Cause এসব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না।
আপনি কালি কলম বা কাগজের তৈরি নন, তার উর্ধে। কিন্তু আপনি Time-Space-Matter- Cause এর উর্ধ্বে নন। আপনাকে এগুলো দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু, সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন এমন একজন, যিনি নিজেই Time-Space-Matter- Cause এর সৃষ্টিকর্তা। তাই তাকে Time-Space-Matter- Cause দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। তিনি এসব এর উর্দ্ধে। অর্থাৎ তার কোন Time-Space-Matter- Cause নাই। অর্থাৎ, তার কোন শুরু-শেষ নাই। অর্থাৎ, তার কোন সৃষ্টিকর্তা নাই।