সাজিদ আমার দিকে ফিরল। ফিরে বলল, -‘স্রষ্টা কি মিথ্যা কথা বলতে পারে? ওয়াদা ভঙ্গ করতে পারে? ঘুমাতে পারে? খেতে পারে?’
আমি বললাম, -‘আসলেই তো।’
সাজিদ বলল, -‘এগুলো স্রষ্টা পারে না বা করেন না। কারণ এগুলো স্রষ্টার গুণ এর সাথে কন্ট্রাডিক্টরি। কিন্তু এগুলো করে না বলে কি তিনি সর্বশক্তিমান নন? না। তিনি এগুলো করেন না কারন, এগুলো তার মোরালিটি সাথে যায় না।’
এবার লোকটি প্রশ্ন করল, -‘কিন্তু, এমন জিনিস তিনি বানাতে পারবেন না কেন, যেটাতে তিনি তুলতে পারবেন না?’
সাজিদ বলল, -‘কারন, স্রষ্টা যদি এমন জিনিস বানান, যেটা স্রষ্টা তিনি তুলতে পারবেন না- তবে জিনিসটাকে অবশ্যই তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী হতে হবে। স্রষ্টা যে মুহূর্তে এরকম জিনিস বানাবেন, সে মুহূর্তেই তিনি স্রষ্টা হবার অধিকার হারাবেন। তখন স্রষ্টা হয়ে যাবে তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী ঐ জিনিসটি। কিন্তু এটাতো স্রষ্টার নীতিবিরুদ্ধ। তিনি এটা কিভাবে করবেন?’
লোকটা বলল, -‘তাহলে এমন জিনিস কি থাকা উচিত নয়, যেটা স্রষ্টা বানাতে পারলেও, তুলতে পারবে না?’
-‘এমন জিনিস অবশ্যই থাকতে পারে, তবে যেটা থাকা উচিত নয়, তা হলো এমন প্রশ্ন।’
-‘কেন?’
এবার সাজিদ বলল, -‘যদি আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করি, নীল রঙের স্বাদ কেমন? কি বলবেন? বা, ৯ সংখ্যাটির ওজন কত মিলিগ্রাম, কি বলবেন?’
লোকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো মনে হল। বলল, -‘নীল রঙের আবার স্বাদ কি? ৯ সংখ্যাটির ওজনই হবে কি করে?’
সাজিদ হাসলো। বললো, -‘নীল রঙের স্বাদ কিংবা ৯ সংখ্যাটির ওজন আছে কি নেই তা পরের ব্যাপার। থকেতেও পারে, নাও থাকতে পারে। তবে যেটা থাকা উচিত নয় সেটা হল, নিল রং এবং নয় সংখ্যাকে নিয়ে এই ধরনের প্রশ্ন।’
সাজিদ বলল, -‘ফাইনালি আপনাকে একটি প্রশ্ন করি। আপনার কাছে দুটি অপশন। হয় ‘হ্যাঁ’ বলবেন, নয়তো ‘না’। আমি আবার বলছি, হয় ‘হ্যাঁ’ বলবেন নয়তো ‘না’।’
লোকটা বলল, -‘আচ্ছা।’
-‘আপনি কি আপনার বউকে পেটানো বন্ধ করেছেন?’
লোকটি কিছুক্ষণ চুপ মেরে চিল। এরপর বলল, -‘হ্যাঁ’
এরপর সাজিদ বলল, -‘তার মানে আপনি একসময় বউ পেটাতেন?’
লোকটা চোখ বড় বড় করে বলল, -‘আরে, না, না।’
এবার সাজিদ বলল, -‘হ্যাঁ না হলে কি? ‘না’?’
লোকটা এবার ‘না’ বলল।
সাজিদ হাসতে লাগলো। বলল, -‘তার মানে আপনি এখনো বউ পেটান?’
লোকটা এবার রেগে গেলো। বলল, -‘আপনি ফাউল প্রশ্ন করছেন। আমি কোনদিনও বউ পেটায় নি। এটা আমার নীতিবিরুদ্ধ।’
সাজিদ বলল, -‘আপনিও স্রষ্টাকে নিয়ে একি ফাউল প্রশ্ন করেছেন। এটা স্রষ্টার নীতিবিরুদ্ধ।
আমার প্রশ্নের উত্তরে আপনি যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তাহলে স্বীকার করে নিচ্ছেন যে- আপনি একসময় বউ পেটাতেন। যদি ‘না’ বলেন, তাহলে স্বীকার করে নিচ্ছেন আপনি এখনো বউ পেটান। আপনি না ‘হ্যাঁ’ বলতে পারছেন, না পারছেন ‘না’ বলতে। কিন্তু, আদতে আপনি বউ পেটান না। এটা আপনার নীতিবিরুদ্ধ। সুতরাং, এমতাবস্তায় আপনাকে এরকম প্রশ্ন করাই উচিত না। এটা লজিকাল ফ্যালাসির মধ্যে পড়ে যায়। ঠিক সেরকম স্রষ্টাকে ঘিরেও এরকম প্রশ্ন থাকা উচিত নয়। কারণ, এই প্রশ্নটি নিজেই নিজের আত্মবিরোধী।
নীল রঙের স্বাদ কেমন, বা ৯ সংখ্যাটির ওজন কত মিলিগ্রাম, এরকম প্রশ্ন যেমন লজিকাল ফ্যালাসি এবং এই ধরনের প্রশ্ন যেমন থাকা উচিত নয়, তেমনি ‘স্রষ্টা’ এমনকিছু বানাতে পারবে কিনা যেটা স্রষ্টা উঠাতে পারবে না। এটাও একটা লজিকাল ফ্যালাসি। কু-যুক্তি। এরকম প্রশ্ন থাকা উচিত নয়।
সেদিন লোকটি খুব শকড হলেন। ভেবেছিলেন হয়তো এই প্রশ্নটি শুনেই ডিগবাজি খাবে। কিন্তু বেচারাকে এরকম ধোলাই করবে বুঝতে পারেনি। সেদিন উনার চেহারাটা হয়েছিল দেখার মত। বউ পেটানোর লজিকটা মনে হয় উনার খুব গায়ে লেগেছে।
স্রষ্টা কেন মন্দ কাজের দায় নেন না?
ক্লাশে নতুন একজন স্যার এসেছেন। নাম- মফিজুর রহমান।
হ্যাংলা-পাতলা গড়ন। বাতাস আসলেই যেনো ঢলে পড়বে মতন অবস্থা শরীরের। ভদ্রলোকের চেহারার চেয়ে চোখ দুটি অস্বাভাবিক রকম বড়। দেখলেই মনে হয় যেন বড় বড় সাইজের দুটি জলপাই, কেউ খোদাই করে বসিয়ে দিয়েছে।
ভদ্রলোক খুবই ভালো মানুষ। উনার সমস্যা একটিই- ক্লাসে উনি যতোটা না বায়োলজি পড়ান, তারচেয়ে বেশি দর্শন চর্চা করেন। ধর্ম কোথা থেকে আসলো, ঠিক কবে থেকে মানুষ ধার্মিক হওয়া শুরু করলো, ‘ধর্ম আদতে কি’ আর, ‘কি নয়’ তার গল্প করেন।
.
আজকে উনার চতুর্থ ক্লাশ। পড়াবেন Analytical techniques & bio-informatics। চতুর্থ সেমিষ্টারে এটা পড়ানো হয়।
স্যার এসে প্রথমে বললেন, -’Good morning, guys….’
সবাই সমস্বরে বললো, -’Good morning, sir…’
এরপর স্যার জিজ্ঞেস করলেন, -’সবাই কেমন আছো?’
স্যারের আরো একটি ভালো দিক হলো- উনি ক্লাশে এলে এভাবেই সবার কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন। সাধারণত হায়ার লেভেলে যেটা সব শিক্ষক করেন না। তারা রোবটের মতো ক্লাশে আসেন, যন্ত্রের মতো করে লেকচারটা পড়িয়ে বেরিয়ে যান। সেদিক থেকে মফিজুর রহমান নামের এই ভদ্রলোক অনেকটা অন্যরকম।
আবারো সবাই সমস্বরে উত্তর দিলো। কিন্তু গোলমাল বাঁধলো এক জায়গায়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন উত্তর দিয়েছে এভাবে-’আলহামমমমদুলিল্লাহ ভালো।’