3/ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ –শেখ মুজিবুর রহমান
4/ Wikipedia
বিঃদ্রঃ (শেখ মুজিব বা উনার স্ত্রীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা আমার মোটিভ নয়। একটি যুক্তির খাতিরে উনাকে উদাহরণ হিসেবে তানা হয়েছে। কেউ এটাকে পলিটিক্যালি বা পারসোনাল এ্যাটাক মনে করে ভুল করবেন না। )
শূন্যস্থান থেকে স্রষ্টার দূরত্ব
সাজিদের কাছে একটি মেইল এসেছে সকালবেলা। মেইলটি পাঠিয়েছে তার নাস্তিক বিপ্লব ধর। বিপ্লব দা’কে আমিও চিনি। সদা হাস্য এই লোকটার মাঝে মাঝেই টি.এস.সিতে দেখা হতো। দেখা হলেই উনি একটি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করতেন, ‘তুই কি এখন রাতের বেলা ভুত দেখিস?’
বিপ্লব দা মনে হয় হাসিটি প্রস্তুত করেই রাখতো। দেখা হওয়া মাত্রই প্রদর্শন। বিপ্লব দা’কে চিনতাম সাজিদের মাধ্যমে। সাজিদ আর বিপ্লব দা একই ডিপার্টমেন্টের। বিপ্লব দা সাজিদের চেয়ে দু ব্যাচ সিনিয়র।
সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যে প্রথম নাস্তিক হয়ে গিয়েছিলো, তার পুরো ক্রেডিটটাই বিপ্লব দা’র। বিপ্লব দা তাকে বিভিন্ন নাস্তিক, এগনোষ্টিকদের বই-টই পড়িয়ে নাস্তিক বানিয়ে ফেলেছিল। সাজিদ এখন আর নাস্তিক নেই।
আমি ক্লাশ শেষ করে রুমে ডুকে দেখলাম সাজিদ বরাবরের মতোই কম্পিউটার গুতাচ্ছে।
আমাকে দেখা মাত্রই বলল, ‘তোর দাওয়াত আছে।’
-‘কোথায়?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম।
সাজিদ বলল, -‘বিপ্লব দা দেখা করতে বলেছেন।’
আমার সাথে উনার কোন লেনদেন নেই। আমাকে এভাবে দেখা করার হেতু কি বুঝলাম না। সাজিদ বলল, ‘ঘাবড়ে গেলি নাকি? তোকে একা না আমাকেও।’
এই বলে সাজিদ দা’র মেইলটি ওপেনকরে দেখাল। মেইলটি হুবহু এরকম, –
‘সাজিদ
আমি তোমাকে একজন প্রগতিশীল, উদারমন সম্পন্ন, মুক্তমনা ভাবতাম। পড়াশুনা করে তুমি কথিত ধর্মীয় গোঁড়ামি আর অন্ধ বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসেছিলে। কিন্তু তুমি যে আবার সি অন্ধ বিশ্বাসের জগতে ফিরে যাবে – সেটা কল্পনাও করি নি আমি। আজ বিকেলে বাসায় এসো। তোমার সাথে আলাপ আছে।’
আমরা খাওয়া দাওয়া করে, দুপুরের নামাজ পড়ে বিপ্লব দা’র সাথে করার জন্য বের হলাম। বিপ্লব দা আগে থাকতেন বনানী, এখন থাকেন কাঁটাবন। জ্যাম ট্যাম কাটিয়ে আমরা যখন বিপ্লব দা’র বাসায় পৌছাই, তখন আসরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। বিপ্লব দা’র সাথে হ্যান্ডসেক করে আমরা বসলাম না। সাজিদ বলল, ‘দাদা আলাপ একটু পরে হবে। আসরের নামাজটা পড়ে আসি আগে।’
বিপ্লব দা না করলেন না। আমরা বেরিয়ে গেলাম। পার্শ্ববর্তী মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে ব্যাক করলাম উনার বাসায়।
বিপ্লব দা ইতিমধ্যেই কফি তৈরি করে রেখেছেন। খুবই উন্নতমানের কফি। কফির গন্ধটা পুরো ঘরময় ছড়িয়ে পড়ল মুহূর্তেই। সাজিদ কফি হাতে নিতে নিতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘বিপ্লব দা’র এর কফি বিশ্ববিখ্যাত। ভূ-মধ্য সাগরীয় অঞ্চলের কফি। এইটা কানাডা ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। বিপ্লব দা কানাডা থেকে অর্ডার করিয়ে আনেন।’
কফির কাপে চুমুক দিয়ে মনে হল আসলেই সত্যি। এত ভালো কফি হতে পারে ভাবাই যায় না।
সাজিদ এবার বিপ্লব দা’র দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আলাপ শুরু হোক।’
বিপ্লব দা’র মুখে সদা হাসি ভাবটা আজকে নেই। উনার পরম শিষ্যের এরকম অধঃপতনে সম্ভবত উনার মন কিছুটা বিষণ্ণ। তিনি বললেন, ‘তোমার সিদ্ধান্তের প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। তবে, তোমাকে একটি বিষয়ে বলার জন্যই আসতে বলেছি। হয়তো তুমি ব্যাপারটি জেনে থাকবে -তবুও।’
সাজিদ কফির কাজে চুমুক দিয়ে বলল, ‘জানা বিষয়টাও আপনার মুখ থেকে শুনলে মনে হয় নতুন জানছি। আমি আপনাকে কতটা পছন্দ করি তা তো আপনি জানেনই।’
বিপ্লব দা কোন ভুমিকায় গেলেন না। সরাসরি বললেন, ‘ওই যে, তোমার সৃষ্টিকর্তা, উনার ব্যাপারে বলতে চাই। তুমি বিজ্ঞানের ছাত্র, তুমি হয়তো এ ব্যাপারে জানো। সম্প্রতি বিজ্ঞান প্রমান করেছে, এই মহাবিশ্ব সৃষ্টিকর্তার কোন দরকার নেই। মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে শূন্য থেকেই। আগে তোমরা, মানে বিশ্বাসীর বলতে, একটা সামান্য সূচও যখন কোন কারিগর ছাড়া এমনি এমনি তৈরি হতে পারে না, তাহলে এই গোটা মহাবিশ্ব কিভাবে তৈরি হবে আপনা আপনি? কিন্তু বিজ্ঞান এখন বলছে, এই মহাবিশ্ব শূন্য থেকে আপনা আপনিই তৈরি হয়েছে। কারো সাহায্য ছাড়াই।’
এই কথাগুলো বিপ্লব দা এক নাগাড়ে বলে গেলেন। মনে হয় তিনি কোন নিঃশ্বাসই নেন নি এতক্ষন।
সাজিদ বলল, ‘অদ্ভুত তো। তাহলে তো আমাকে নাস্তিক হয়ে যেতে হবে দেখছি। হা হা হা হা।’
সাজিদ চমৎকার একটা হাসি দিল। সাজিদ এইভাবে হাসতে পারে, তা আমি আজই প্রথম দেখলাম। বিপ্লব দা সেদিকে মনোযোগ দিয়েছেন বলে মনে হল না। উনি মোটামুটি একটা লেকচার শুরু করেছেন। আমি আর সাজিদ খুব মনযোগী ছাত্রের মতো উনার বৈজ্ঞানিক কথাবার্তা শুনছিলাম। তিনি যা বুঝালেন, বাঁ বললেন, তার সার সংক্ষেপ এরকম।
‘পদার্থ বিজ্ঞানে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে কোয়ান্টাম মেকানিক্স। এই কোয়ান্টাম মেকানিক্সে একটি থিউরি আছে, সেটি হল, কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন। এই কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশনের মুল কথা হল, মহাবিশ্বে পরম শূন্য স্থান বলে আদতে কিছু নেই। মানে, আমরা যেটাকে Nothing বলে জেনে এসেছি, বিজ্ঞান বলছে, আদতে Nothing বলতে কিছুই নেই। প্রকৃতি শূন্য স্থান পছন্দ করে না। তাই যখন কোন শূন্যস্থান (Nothing) তৈরি হয়, সেখানে এক সেকেন্ডের বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে কনা এবং প্রতিকনা (Matter & anti-matter) তৈরি হচ্ছে, এবং একটির সাথে অন্যটির ঘর্ষণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।