শাকিব আর শাহরিয়ার হা হা হা হা করে হাসতে লাগলো। সাজিদ বলল, -‘মানুষ মাত্রই তার সমাজের সুস্থ নিয়মগুলোর সাথে মিলিয়ে চলতে বাধ্য। মুহাম্মদ সা.ও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। তাছাড়া এত অল্প বয়সে বিয়ে কেবল ১৫০০ বছর আগে ছিল তা নয়, শিল্প বিপ্লবের পরেও অনেক উন্নত দেশে বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের সর্বনিম্ন বয়স সীমা ১০ এর নিচে ছিল। তাছাড়া, ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি, মুহাম্মদ সা. এর আরো ৫০০ বছর পরে ইংল্যান্ডের রাজা জন ৪৪ বছর বয়সে ১২ বছর বয়সী রানী ইসাবেলাকে বিয়ে করেছিলেন। এ ব্যাপারগুলো তখনকার সমাজে, যুগে খুব স্বাভাবিক ছিল, যেমন স্বাভাবিক সঙ্গম করে সন্তান উতপাদন করা। তাছাড়া, উপমহাদেশেও যে খুব ছোট বয়সে বিয়ে রীতি ছিল, তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘হৈমন্তী’ থেকেই আমরা দেখতে পাই। লেখক সেখানে দেখিয়েছেন, তখনকার সময় ৮-১১ বছরের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে হত। হৈমন্তীর বিয়ের স্বাভাবিক বয়স পেরিয়ে যাওয়ায়, অর্থাৎ, ১৭ হয়ে যাওয়ায় তার শাশুড়ি সেটা সবার কাছ থেকে লুকোতে চাইছিলেন। হৈমন্তীকেও মিথ্যে বলার জন্য শিখিয়ে দিয়েছিলেন। এখান থেকে বোঝা যায়, রবীন্দ্রনাথের সময়েও ৮ থেকে ১১ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ে ছিল একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
সেই গল্পে আমরা ‘পণ’ প্রথার কুফল সম্পর্কে একটি আভাস পেলেও, কোথাও কিন্তু বিয়ের বয়স নিয়ে উচ্চবাক্য দেখেনি। বরং, হৈমন্তীর বয়স বেশি হয়ে যাওয়াতেই কিছুটা আপত্তি দেখা গেছে। এখান থেকে বুঝতে পারি, রবীন্দ্র আমলেও ছোট বয়সে বিয়ের প্রচলন ভারতবর্ষেই মজুদ ছিল।
সাজিদের এই লেকচারে নিলয় দা সন্তুষ্ট না। বললো। -‘দেখো ভাই, যতই ত্যানা পেচাও, একজন বৃদ্ধ লোক ৯ বছর বয়সি কিশোরীকে বিয়ে করেছে, এটাকে তুমি কোন ভাবেই ডিফেন্ড করতে পারোনা। সে প্রফেট হোক আর যাই-ই হোক।’
আমি ভাবলাম, এইবার সাজিদ পরাজিত হবে। হাল ছেড়ে দিয়ে হতাশ গলায় বলবে, -নাহ ! আর পারলাম না দাদা।’
কিন্তু না। সাজিদের মধ্যে আমি তেমন কিছুই দেখলাম না। সে খুব স্বাভাবিক মুচকি একটি হাসির রেখা তার ঠোঁটে। সে আর এক কাপ চায়ের অর্ডার করলো।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, -‘দাদা, ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদ পেয়েছে শুনলাম।’
নিলয় দা বললো, -‘হুম, সাহিত্য সম্পাদক।’
সাজিদ বলল, -‘নতুন একটি আইন হল শুনলাম। বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবার নিয়ে কেউ কটুক্তি করলে ধরা হবে নাকি?’
-‘হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করলেই তো সেটা সহ্য করা হবে না।’
-‘তা ঠিক। বঙ্গবন্ধু তো তোমাদের আইডল।’
নিলয় দা বলল, -‘আমাদের আইডল কিরে? বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির আইডল।’
-‘আচ্ছা দাদা, তুমি জানো বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীর নাম কি ছিল?’
নিলয় দা অবাক হবার ভঙ্গি করে বলল, -‘কি সব বলছিস তুই? জানবো না কেন? বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা বেগম।’
সাজিদ বলল, -‘দাদা, তুমি জানো, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা’র জন্ম কোন সালে ?’
নিলয় দা কিছুক্ষণ ভাবলেন। বললেন, -‘ভুলে গেছি রে ! বিসিএস এর জন্য যখন প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম, তখন পড়েছিলাম।’
সাজিদ তার ফোন বের করে সেখান থেকে উইকিপিডিয়ার ‘বেগম ফজিলাতুন্নেসা’ লিখে সার্চ দিল। উইকিপিডিয়া রেজাল্ট দেখাল, বেগম ফজিলাতুন্নেসার ১৯৩০ সালে। সাজিদ সেটা নিলয় দা’কে দেখালো।
নিলয় দা বলল, -‘হুম, মনে পড়েছে। কিন্তু তাতে কি হয়েছে? হঠাৎ এই ব্যাপারে চলে গেলি কেন?’
সাজিদ বলল, -‘দাদা, তুমি জানো, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা’র সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কত সালে বিয়ে হয়?
নিলয়দা ‘না’ সুচক মাথা নাড়ল। সাজিদ আবার উইকি থেকে দেখলো। বঙ্গবন্ধুর সাথে বেগম ফজিলাতুন্নেছা’র বিয়ে হয় ১৯৩৮ সালে।
সাজিদ বলল। -‘দাদা, ১৯৩৮ থেকে ১৯৩০ বাদ দিলে কত থাকে?’
নিলয় দা বলল, -‘জি দাদা, একদম ঠিক বলেছ। ১৯৩৮ থেকে ১৯৩০ বাদ দিলে থাকে ৮ বছর। ঠিক ৮ বছর বয়সের বেগম ফজিলাতুন্নেসার সাথে বঙ্গবন্ধুর বিয়ে হয়। আচ্ছা দাদা, আমি কি এটাকে বাল্যবিবাহ বলতে পারব? বলতে পারব, শেখ মুজিব একজন যৌনকাতর পুরুষ ছিলেন যার ফলে তিনি মাত্র ৮ বছর বয়সের ফজিলাতুন্নেসাকে বিয়ে করেছেন? আমি এরকম বললে আমার বিরুদ্ধে কি মামলা হওয়া উচিত দাদা?
বলতো, একবিংশ শতাব্দীর শেখ মুজিবুর রহমান যেটা পেরেছেন, মাত্র ৮ বছর বয়সী একজন কিশোরীকে বিয়ে করে এতগুলো সন্তান জন্ম দিতে পারলে ১৫০০ বছর আগের মোহাম্মদ সা. কেন পারবে না? কেন তাকে ধর্ষক, যৌন কাতর, যৌন লিপ্সু ডাকা হবে? তাকে এবং আয়েশা রা. কে নিয়ে অশ্লীল কথা লিখে কেউ আইনের জালে ফাঁসলে তার জন্য কেন তোমার মন কাঁদবে যেখানে তুমি শেখ মুজিবের জন্য তৈরি করে রেখেছে সাইবার আইন।’
আকাশ থেকে পড়লে যা হয়, নিলয় দা’র অবস্থাও তখন তেমন। নিলয় দা এরকম একটা জবাব পাবেন তা হয়তো কল্পনাও করেননি।
-চায়ের বিল দেওয়ার জন্য সাজিদ এগিয়ে গেল। গম্ভীর, রাজনীতিপ্রিয় রাকিব এসে বলল, -‘দোস্ত, পরানটা ঠান্ডা করে দিয়েছিস একদম। বিলটা আমাকে দিতে দে, প্লিজ?’
সাজিদ মুচকি হাসলো।
রেফারেন্সঃ
1/ Jala-Ul Afhaam by Imam Ibnul Qaiyum
2/ Sahih Al bukhari, Volume 5, book 58, hadith 234