বলাবাহুল্য, যখন মুহাম্মদ সা. ২৫ বছরের একজন টগবগে তরুণ, ঠিক সেই সময়ে তিনি বিয়ে করলেন চল্লিশোর্ধ একজন মহিলাকে, যিনি কিনা আবার একজন বিধবা ছিলেন। যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন মুহাম্মদ সা. আর কোন বিয়ে করেননি। তুমি হয়তো বলবে, খাদিজার রা. এর প্রচুর ধন সম্পত্তি ছিল। পাছে এগুলো হারানোর ভয়ে হয়তো তিনি আর বিয়ে করেননি। তোমার জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, এটা ইতিহাস সম্মত যে সম্পদশালী খাদিজার রা. নিজে মুহাম্মদ সা. কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, মুহাম্মদ সা. নিজে দেন নি। তারউপর খাদিজা রা. নিজেই যেখানে একজন বিধবা ছিলেন, সেখানে মোহাম্মদ সা.ও যদি সেই অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করতে চাইতেন, তাতে বাধা দেওয়ার অধিকার খাদিজা রা. এর থাকার কথা না।
তাহলে এখান থেকে আমরা কি বুঝলাম? আমরা বুঝলাম যে, মুহাম্মদ সা. যৌনকাতরতা থেকে কিশোরী আয়েশা রা. বিয়ে করেননি।
নিলয় দা প্রশ্ন করলো, -‘তাহলে কিশোরী আয়েশাকে বিয়ে করার হেতু কি?’
সাজিদ বলল, -‘Let me finish …… আয়েশা রা. কে বিয়ে করার একটা হুকুম রাসূল সা. আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছিলেন। কারণ জ্ঞানে-গুনে আয়েশা রা. ছিলেন তৎকালীন আরব কন্যাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তার সেই প্রজ্ঞা, সেই জ্ঞান, সে বিচক্ষণতা যাতে পুরোপুরিভাবে ইসলামের কল্যাণার্থে ব্যবহার হতে পারে, তারজন্যই হয়তো এই হুকুম।’
স্পোর্টস চ্যানেল শাহরিয়ার এতক্ষণ চুপ করেছিল। এবার সে বলল, -‘সাজিদ, রাসূল সা. বিয়ে করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম প্রাপ্ত, এই কথার ভিত্তি কি?’
সাজিদ শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল, -‘নবীদের স্বপ্নও একপ্রকার ওহি। এটা জানিস তো?’
-‘বুখারির হাদিসে আছে, রাসূল সা. হযরত আয়েশা রা. কে একবার বললেন, (হে আয়েশা) আমি তোমাকে দুই বার স্বপ্নে দেখেছিলাম। একটি রেশমের উপরে একটি কারো একজনের মুখচিহ্ন। আমি যখন রেশনের উপর থেকে আবরণ সরালাম, আমি দেখলাম সেটা তোমার মুখাবয়ব। তখন কেউ একজন আমাকে বলল, -(হে মুহাম্মদ) এটা তোমার স্ত্রী। আমি বললাম, যদি এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়, তাহলে এটাই হবে।’
বুখারি এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আয়েশা রা. যে নবী মুহাম্মদ স. এর স্ত্রী হবে সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সম্মতি।’
শাহরিয়ার আবার বলল, -‘কিন্তু তুই যে বললি, তার জ্ঞান-প্রজ্ঞা ইসলামের কল্যাণার্থে ব্যবহারের জন্যই এই হুকুম, তার দলিল কি?’
সাজিদ বলল, -‘এটাতো সর্বজনবিদিত সত্য কথা। সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রা. এর পর সবচেয়ে বেশি হাদীস মুখস্ত করে রেখেছিলেন, তিনি হযরত আয়েশা রা.। শুধু তাই নয়, কোরআনের অগাধ পাণ্ডিত্য। এমনকি বড় বড় সাহাবীরা পর্যন্ত তার কাছে ফতোয়ার জন্য আসতো। তার ফিক্বহী জ্ঞান ছিল অসামান্য।
আবু মুসা আল-আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন –‘এমন কখনো হয়নি (ফিক্বহী বিষয়ে) আমরা কোন কিছু সমাধানের জন্য আয়েশা রা. এর কাছে গেলাম কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর পাইনি।’
অর্থাৎ, আয়েশা রা. এর এই যে জ্ঞান-প্রজ্ঞা, এর জন্য তিনি আল্লাহ কর্তৃক উম্মুল মুমিনীন হিসেবে সিলেক্টেড হয়ে যান।
এছাড়াও, তৎকালীন আরবে খুব ছোট বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত। তখন তার প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। এটা ঠিক যুগের সাথে সাথে সেটা পাল্টেছে। এখন মেয়েদের অনেক চিন্তা। ক্যারিয়ার গড়ো, পড়াশোনা কর, বিদেশ যাও, উচ্চ ডিগ্রির সার্টিফিকেট নাও।
তখন আরবের মেয়েদের চাকরি করার দরকার হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ার রীতি তখনও ছিল না। ঘরোয়া পরিবেশে তারা ধর্মীয় জ্ঞানার্জন করতো। এর জন্য খুব ছোট বয়সে তাদের বিয়ের রীতি ছিল।
তবে মেয়েদের ছোট বয়সে যে বিয়ের রীতি ছিল, তা আয়েশা রা. এর জীবনের আরেকটি ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। মুহাম্মদ সা. এর সাথে বিয়ের আগে, আয়েশা রাঃ এর আরেক জনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়। তার নাম ছিল জুবায়ের। কিন্তু, আবু বকর রা. ইসলাম গ্রহন করায় বিয়েটা ভেঙে যায়। এর থেকে কি প্রমান হয় না, তখন মেয়েদের ছোট বয়সেই বিয়ের প্রচলন ছিল ? তাছাড়া, তখনকার মক্কার কোন বিধর্মীরা এই বিয়ে নিয়ে আপত্তি তোলেনি। তারাও জানত, এটা খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।
নিলয় দা বলল, -‘মোহাম্মদ তো এসেছিলেন রীতি ভেঙে রীতি গড়ার জন্য। তিনি এই অদ্ভুত রীতি ভাঙলেন না কেন?’
সাজিদ বলল, -‘দাদা, ঠিক বলেছ। মুহাম্মদ সা. এসেছিলেন রীতি ভেঙে রীতি গড়ার জন্য। কিন্তু তিনি সেসব রীতি ভাঙার জন্য এসেছিলেন, যা অনৈতিক। যেমন, কোন শিশুকে জীবন্ত দাফন। তিনি আরবের সেসব কালচার পাল্টে দিয়েছেন, যা জাহেলিয়াতের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু, ছোট বয়সে বিয়ে সেরকম কোনো ব্যাপার নয়। বিজ্ঞান আমাদের বলে, মেয়েরা পুরুষের চেয়ে দশগুণ তাড়াতাড়ি ম্যাচিওর হয়। সেটা ফিজিক্যালি এবং মেন্টালি দুইভাবেই। তাছাড়া, তখনকার আরবের ছোট বয়সে বিয়ে হবার পরও মেয়েরা খুব নরমালে সন্তান জন্ম দিতো। এটা কোন সমস্যা ছিল না। সেটা চেঞ্জ করার দরকার ছিল না। যা দরকার ছিল তা তিনি করেছেন। তুমি কি আশা কর যে, মুহাম্মদ সা. কেন তৎকালীন আরবদের উটের ব্যবসা তুলে দিয়ে, তাদের শেয়ার ব্যবসা শেখালেন না, কেন তিনি খেজুরের ব্যবসা তুলে দিয়ে সেখানে চকলেট আর রসমালাইয়ের ব্যবসার প্রচলন করলেন না? তুমি হয়তো ভাবছো, তৎকালীন আরবের বালকদের উট চরানো থেকে মুক্তি দিয়ে কেন তাদের হাতে একটি কম্পিউটার এবং একটি করে ফেসবুক একাউন্ট খুলে দিলেন না?’