রাকিব হলো আগাগোড়া ‘পলিটিক্স স্পেশালিস্ট’।
দুনিয়ার রাজনীতি কখন কোথায় কিভাবে মোড় নিচ্ছে, তার সমস্ত রকম আপডেট থাকে রাকিব এর কাছে। গলির মুখ থেকে ট্রাম্পের বেঁচে আসা থেকে শুরু করে হিলারির ম্যালেরিয়া পর্যন্ত সব খবর তার নখ দর্পনে। তবে ইদানিং সে ব্যস্ত পাক-ভারতের যুদ্ধ নিয়ে। কাশ্মীরের উরিতে হামলা নিয়ে পাক-ভারতের মধ্যে যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব বিরাজ করছে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই যাচ্ছে সে। রাকিবের মনে হচ্ছে, ঊরি’র হামলাটা আসলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির একটি ‘ব্লাইন্ড গেম’। তার মতে ঊরিতে যারা হামলা করছে, তারা যদি সত্যি পাকিস্তানি হবে, তাহলে নিহত হামলাকারীদের মিডিয়ার সামনে না এনে রাতারাতি কবরস্থ করে ফেলা হলো কেন? সেই হামলাকারীদের ছবি আর পরিচয় মিডিয়ার সামনে এনে পাকিস্তানকে এক ঘরে করে দেবার একটি দারুন চান্স ছিল ভারতের হাতে। কিন্তু ভারত তা করল না কেন? কেন তারা রাতারাতি লাশগুলো সেনাক্যাম্পে দাফন করে ফেললো কেন? কেন পাকিস্তানের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হলো না ইত্যাদি পয়েন্ট ধরে রাকিবের মনে সন্দেহ আছে।
যুদ্ধ যদি সত্যিই লেগেই যায়, কোন পক্ষ বেনিফিট হবে, কার কত সামরিক শক্তি, কে কোন দিক থেকে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ চালাবে সেগুলোর পয়েন্ট বাই পয়েন্ট ব্যাখ্যা দিচ্ছে সে।
আলোচনার মাঝখানে হঠাত নিলয় দা’র আগমন। আমাদের চেয়ে সিনিয়র মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র ছিলো।
আমাদের চেয়ে ঢের সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও আমাদের সাথে তার বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এত সিনিয়র লেভেলের কেউ।
তার হাতে একটি পত্রিকা। পত্রিকা হাতে নিলয় দা আমাদের পাশে এসে বেঞ্চিতে বসলো।
নিলায় দাকে দেখে সাজিদ আরেক কাপ রঙ চা’র অর্ডার করলো।
চা চলে এলে নিলয় দা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, -‘বাকস্বাধীনতার মূল্য পৃথিবীর কোথাও নেই, বুঝলি? কোথাও নেই।’
কথাগুলো এমনভাবে বলল যে নিলয় দাকে খুব মর্মাহত দেখালো। নিলয়দা কোন পয়েন্টে থেকে কথাগুলো বলল তা আমাদের কারো মাথাতে আসে নি তখনও। রাকিব বলে উঠল, -‘নিলয়দা কি পশ্চিমবঙ্গের ধর্মীয় কটূক্তির দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া তারক বিশ্বাসের কথা বললে?’
নিলয়দা রাকিবের কথার প্রত্যুত্তরে কোন কিছু বলল না। তার মানে রাকিব এর ধারণা ঠিক। অন্য সময় হলে রাকিবের এরকম উপস্থিত বুদ্ধির বহর দেখে নিলয়দা তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলতো ‘সাবাস’। কিন্তু আজ খুব ফ্রাস্ট্রেটেড থাকায় নিলয়দা খুব অফ মুডে আছে বলে মনে হচ্ছে।
ব্যাপারটা খুব শরটলি ব্যাখ্যা করলো রাকিব। পশ্চিমবঙ্গের একজন নাস্তিক তরুণ মহানবী সা. কে নিয়ে কটুক্তি করার ফলে সাইবার আইনে গ্রেফতার হয়েছে পরশুদিন। এটাকে নিলয়দা বলছে বাকস্বাধীনতার ওপর আঘাত।
সাজিদ তার চায়ের শেষ চুমুকটি দিয়ে বলল, -‘এতে দোষের তো কিছু দেখছি না দাদা। ছেলেটা দোষ করেছে, সে তার শাস্তি পাচ্ছে। What’s wrong?’
নিলয় দা মুখের রং পরিবর্তন করে বড় বড় চোখে সাজিদের দিকে তাঁকালো। বললো, -‘একজন পঞ্চাশোর্ধ বুড়ো লোক ৯ বছর বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করলে দোষ নেই, তা নিয়ে কথা বললেই দোষ হয়ে যায়।
সাজিদ বললো, -‘কথা বললে তো দোষ নেই দাদা। কিন্তু অশ্লীল ভাষায় কটুক্তি করাটা দোষের। একটি ধর্মের পবিত্র নবীকে নিয়ে এরকম খিস্তি করাটা মূল্যবোধ বিরোধী তো বটেই, এটা সংবিধান বিরোধীও।’
-‘গুষ্টি কিলাই তোমার এরকম মূল্যবোধ আর সংবিধানের।’
সাজিদ বুঝলো নিলয়দা খুব ক্ষেপে আছে। তাকে সহজে বোঝানো যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
সাজিদ বলল, -‘দাদা মনে আছে তোমার, আমি তখন সবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তোমার সাথে প্রথম পরিচয় হয় তখন। এক সন্ধ্যায় হুমায়ূন আহমেদের মেয়ের বয়সি শাওনকে বিয়ে করার ব্যাপারটা নিয়ে যখন আমি আপত্তি তুলে ছিলাম, তুমি কি বলেছিলে? তুমি বলেছিলে, বিয়ে হল একটি বৈধ সমাজিক বন্ধন। যখন তাতে দুটি পক্ষের সম্মতি থাকে, তখন সে তার বয়স, সামাজিক স্ট্যাটাস কোন কিছুই ম্যাটার করে না। হুমায়ূন আহমেদের বেলায় যে কথাগুলো প্রযোজ্য, সে কথাগুলো মুহাম্মদ সা. এর বেলায় কেন প্রযোজ্য হবে না?’
নিলয়দা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। এরপর বলল, -‘তাই বলে বলতে চাচ্ছিস, ৯ বছরের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে করা বৈধ হয়ে যাবে?’
সাজিদ হাসলো। বললো, -‘দাদা আমি মোটেও তা বলছি না। আমি প্রথমে বোঝাতে চাইলাম যে, বিয়ে একটা সামাজিক বন্ধন।’
-‘তো? সামাজিক বন্ধন ধরে রাখতে ৯ বছরের কিশোরী বিয়ে করতে হবে নাকি?’
সাজিদ উঠে দাঁড়ালো। আমি জানি এখন সে লেকচার শুরু করবে। রাসূল সাঃ এবং আয়েশা রা. এর বিয়ে নিয়ে একি নাতিদীর্ঘ লেকচার দেওয়ার জন্য সে মেন্টালি প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যা ভাবলাম তাই। সাজিদ বলতে শুরু করল-
‘দাদা প্রথমে বলে রাখি, যারাই রাসূল সা. আর আয়েশা রা. এর বিয়ে নিয়ে আপত্তি তুলে, তাদের প্রথম দাবি মোহাম্মদ সা. নাকি যৌন লালসা কাতর ছিলেন। সে জন্য তিনি নাকি কিশোরী আয়েশা রা. কে বিয়ে করেছিলেন।
তাদের এই দাবি যে কতটা বাতুলতা আর ভিত্তিহীন, তা ইতিহাস থেকে আমরা দেখব। আমরা জানি, মুহাম্মদ সা. বিয়ে করেছিলেন ২৫ বছর বয়সে। হযরত খাদিজা রাঃ কে।