রুপম বলল, -‘তো এইটা নিয়ে কি সমস্যা?’
সাজিদ আবার বলতে লাগলো, -‘বিবর্তনবাদ তখনই সত্যি হবে, যখন এরকম সত্যিকারের মিসিং লিঙ্ক পাওয়া যাবে। পৃথিবীতে কোটি কোটি প্রাণী রয়েছে। সেই হিসাবে বিবর্তনবাদ সত্য হলে, কোটি কোটি প্রাণের বিলিয়ন বিলিয়ন এরকম মিসিং লিঙ্ক পাওয়া যাওয়ার কথা। কিন্তু মজার ব্যাপার, এরকম কোন মিসিং লিঙ্ক আজ অবধি পাওয়া যায়নি। গত দেড়শ বছর ধরে অনেক অনেক ফসিল পাওয়া গেছে কিন্তু সেগুলোর কোনটির মিসিং লিঙ্ক নয়। বিবর্তনবাদীরা তর্কের সময় এই মিসিং লিঙ্কের ব্যাপারটা খুব কৌশলে এড়িয়ে যায়। কেউ কেউ বলে, আরো সময় লাগবে। বিজ্ঞান একদিন ঠিক পেয়ে যাবে, ইত্যাদি।
কিন্তু ২০০৯ সালে বিবর্তনবাদীরা একটা মিসিং লিঙ্ক পেয়ে গেল যা প্রমাণ করে যে, মানুষ শিম্পাঞ্জী গোত্রের কাছাকাছি কোন প্রাণী থেকেই বিবর্তিত। এটার নাম দেওয়া হল-Ida।
বিবর্তনবাদ দুনিয়ায় রাতারাতি তো ঈদের আমেজ নেমে আসলো। তারা এটাকে বলল, -‘The eighth wonder of the world’
কেউ কেউ তো বলছিল, -‘আজ থেকে কেউ যদি বলে বিবর্তনবাদের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই, তারা যেন Ida কে প্রমাণ হিসেবে হাজির করে। বিবর্তনবাদীদের অনেকেই এটাকে ‘Our Monalisa’ বলেও আখ্যায়িত করেছিল। হিস্ট্রি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ডিসকভারি চ্যানেলে এটাকে ফলাও করে প্রচার করা হলো। সারা বিবর্তনবাদ দুনিয়ায় তখন সাজ সাজ রব।
কিন্তু, বিবর্তনবাদীদের কান্নায় ভাসিয়ে ২০১০ সালের মার্চে টেক্সাস ইউনিভার্সিটি, ডিউক ইউনিভার্সিটি আর ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো’র গবেষক বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দেখালেন যে, Ida কোন মিসিং লিঙ্ক নয়। এটা Lomour নামক একটি প্রাণীর ফসিল। তাদের এই রিসার্চ পেপার যখন বিভিন্ন নামিদামি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশ করা হলো, রাতারাতি বিবর্তনবাদ জগতে শোক নেমে আসে। বল রুপম, এইটা কি জালিয়াতি নয়? একটা আলাদা প্রাণীর ফসিলকে মিসিং লিঙ্ক বলে সাধারণ মানুষকে ধোকা দেওয়া কি চিটিং নয়?’
এরচেয়েও জঘন্য কাহিনী আছে এই বিবর্তনবাদীদের। ১৯১২ সালে Piltdown Man নামে ইংল্যান্ডে সাসেক্সে একটি জীবাশ্ম পাওয়া যায় মাটি খুঁড়ে। এটিকেও রাতারাতি ‘বানর এবং মানুষের’ মিসিং লিঙ্ক বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। এটাকে তো ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য রেখে দেওয়া হয়। বানর এবং মানুষের এই মিসিং লিঙ্ক দেখতে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসতো।
কিন্তু ১৯৫৩ সালে কার্বন টেস্ট করে প্রমান করা হয় যে, এটি মোটেও কোনো মিসিং লিঙ্ক নয়। এটাকে কয়েকশো বিলিয়ন বছর আগের বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গবেষণায় দেখা যায়, এই খুলিটি মাত্র ৬০০ বছর আগের আর এর মাড়ির দাতগুলো ওরাং ওটাং নামের অন্য প্রাণীর। রাতারাতি বিবরতন মহলে শোক নেমে আসে।
বুঝতে পারছিস রুপম, বিবর্তনবাদকে জোর করে প্রমান করার জন্য কত রকম জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে?
একটা ভুয়া জিনিষকে কিভাবে বছরের পর বছর ধরে প্রমাণ হিসেবে গিলানো হয়েছে। নেট ঘাটলে এরকম জোড়াতালি দেওয়া অনেক মিসিং লিঙ্ক এর খবর তুই এখনো পাবি। মোদ্দাকথা, এ নাস্তিকতা, এই বিবর্তনবাদ টিকে আছে কেবল পশ্চিমা বস্তুবাদীদের ক্ষমতা আর টাকার জোরে।
এ বিবর্তনবাদই তাদের সর্বশেষ সম্বল ধর্মকে বাতিল করে দেওয়ার। তাই এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, দাঁড় করানোর জন্য, মানুষকে গিলানোর জন্য, তাদের যা যা করতে হয় তারা করবে। যত জালিয়াতির আশ্রয় নিতে হয় তারা নিবে।
এরপরও কি বলবি তোর নাস্তিকতা সাধু? সৎ? প্রতারনাবিহীন নির্ভেজাল জিনিস?
রুপম কিছু না বলে চুপ করে আছে। হাসনাত বলে উঠলো, -‘ইশ ! এতক্ষণ তো নাস্তিকতাকে নির্ভেজাল, সৎ, সাধু, কোন দুই নাম্বারি নেই, কোন ফ্রডবাজি নেই বলে লেকচার দিচ্ছিলি। এখন কিছু বল?’
এশার আযান পড়লো। আমরা নামাযে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। আমাদের সাথে রাকিব আর হাসনাতও আছে অল্প। অল্প একটু পথ হাটার পরে আমি হঠাৎ থেমে গেলাম। সাজিদ বলল, -‘তোর আবার কি হলো রে?’
আমি রাগি চেহারায় বড় বড় চোখ করে বললাম, -‘তুই ব্যাটা হাসনাতকে তখন ওইভাবে ঝাড়ি দিয়েছিলি কেন?’
সাজিদ হাসনাতের দিকে তাকালো। মুচকি হেসে বলল, ‘শেক্সপিয়র বলেছেন, Sometimes I have to be cruel just to be kind’………
আমরা সবাই হা হা হা করে হেসে ফেললাম।
রাসূল (সা.) আর আয়েশা (রা.) এর বিয়ে নিয়ে কথিত নাস্তিকদের কানাঘুষা
আমরা চারজন বসে টিএসসিতে আড্ডা দিচ্ছিলাম। রাকিব, শাহরিয়ার, সাজিদ আর আমি। আমাদের মধ্যে শাহরিয়ার হল খেলাপ্রেমিক। ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার চরম ভক্ত। কেউ পুরো সপ্তাহের কোন ম্যাচ না দেখে শাহরিয়ার কাছে আধঘন্টা বসলেই হবে। শাহরিয়ার পুরো সপ্তাহের খেলার আদ্যোপান্ত তাকে কাগজে-কলমে বুঝিয়ে দেবে। ইপিএলে কোন দলে আছে, ম্যানচেস্টার সিটির দায়িত্ব নিয়ে পেপ গার্দিওলা কিরকম দলটাকে পাল্টে দিল,
সিরিএ-তে জুভের অবস্থান কোথায়, ইব্রাকে ছেড়ে দিয়ে ফ্রেঞ্চ লীগে পিএসজির অবস্থান কেমন, বুন্দেসলীগাতে বায়ার্ন আর ডর্টমুন্ড কি করছে, লা-লিগাতে বার্সা-রিয়ালের দৌড়ে কে এগিয়ে, রোনাল্ডোর ফ্রম নাই কেন, মেসিকে ছাড়া বার্সা সামনের ম্যাচ গুলোর উতরে যেতে পারবে কিনা, নেইমার সেরা না বেল সুয়ারেজ নাকি বেনজেমা ইত্যাদি ইত্যাদি বিশ্লেষণের জন্য শাহরিয়ারের জুড়ি নেই। এত কঠিন কঠিন স্প্যানিশ, জার্মেইন, ফ্রেঞ্চ আর ইতালির নামগুলো সে কিভাবে যে মনে রাখে আল্লাহ মালুম। খেলার খবর বলতে শুরু করলে তার কোন থামাথামি নেই। ননস্টপ বলে যেতে পারে। এজন্য আমরা বন্ধু মহলে শাহরিয়ার ‘স্পোর্টস চ্যানেল’ নামে পরিচিত।