যদি কোন বুদ্ধিমান স্রষ্টা আমাদের সৃষ্টি করতো, তাহলে এই বিশাল পরিমাণ অকেজো অপ্রয়োজনীয় DNA তিনি আমাদের শরীরে রাখতেন না। কিন্তু কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বার হাতছাড়া, প্রকৃতির অন্ধ প্রক্রিয়ায় আমরা অন্য একটি প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে বলেই এ বিশাল অপ্রয়োজনীয় কিছু DNA আমাদের শরীরে এখনো বিদ্যমান।
বিবর্তনবাদীদের গুরু, বিখ্যাত বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স তো এই Junk DNA কে বিবর্তনবাদের পক্ষে বড়সড় প্রমান দাবি করে করে একটি বিশাল সাইজের বইও লিখে ফেলেন। বইটির নাম ‘The selfish Gene’।
কিন্তু বিজ্ঞান ওই Junk DNA তে আর বসে নেই।
বর্তমানে এপিজেনেটিক্সের গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, এতদিন যে DNA কে Junk বলে বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ করে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তার কোন কিছুই Junk নয়। আমাদের শরীরে কোন রয়েছে নানা রকম বায়োকেমিক্যাল ফাংশন। যেগুলোকে নাস্তিক বিবর্তনবাদীরা এতদিন অকেজো, বাতিল, অপ্রয়োজনীয় বলে বিবর্তনের পক্ষে বড় প্রমাণ বলে লাফিয়েছে, সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে- এসব DNA মোটেও অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়। মানবদেহে এদের রয়েছে নানান ফাংশন। তারা বলতো, প্রকৃতির অন্ধ প্রক্রিয়ায় মানুষ অন্য প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে বলেই এরকম অকেজো নন ফাংশনাল DNA শরীরে রয়ে গেছে। যদি কোন সৃষ্টিকর্তা বিশেষভাবে মানুষকে সৃষ্টি করত, তাহলে এরকম অপ্রয়োজনীয় জিনিস আমাদের শরীরে থাকত না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এসব DNA মোটেও নন ফাংশনাল নয়। আমাদের শরীরে এদের অনেক কাজ রয়েছে। তাহলে বিবর্তনবাদীরা এখন কি বলবে, তারা তো বলেছিল ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলেই এগুলো বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ। কিন্তু এগুলোর প্রয়োজন যখন জানা গেল, তখনো কি তারা একই কথা বলবে? ডকিন্স কি তার ‘The selfish Gene’ বইটা সংশোধন করবে? বিবর্তনবাদীরা কি তাদের ভুল শুধরে নিয়ে ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবে? বল দোস্ত, এইটা কি দুই নাম্বারি না?
সাজিদ থামল। রুপম বলল, -‘বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে রকম দু-একটি ধারণা পাল্টাতে পারে। এটা কি চিটিং করা হয়?
সাজিদ বলল, -‘না। কিন্তু বিজ্ঞান কোনো ব্যাপারে ফাইনাল কিছু জানানোর আগে তাকে কোন নির্দিষ্ট কিছু এর পক্ষে প্রমাণ বলে চালিয়ে দেওয়া, প্রতিপক্ষকে এটা দিয়ে এক হাত নেওয়া এবং এটা পক্ষে কিতাবাদি লিখে ফেলাটা চিটিং এবং নাস্তিকরা তাই করে।’
সাজিদ বলল, -‘শুধু Junk DNA নয়। আমাদের শরীরে যে অ্যাপেন্ডিক্স আছে, সেটা নিয়েও কত কাহিনী তারা করেছে। তারা বলেছে, অ্যাপেন্ডিক্স আমাদের শরীরের অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ। আমাদের শরীরের কোন কাজ নেই। যদি কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বা আমাদের সৃষ্টি করত, তাহলে অ্যাপেন্ডিক্স এর মত অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ আমাদের শরীরে রাখত না। আমরা শিম্পাঞ্জি জাতীয় এক প্রকার এপ থেকে প্রকৃতি অন্ধ প্রক্রিয়ায় বিবর্তিত বলেই এরকম অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ আমাদের শরীরে রয়ে গেছে। এটার কোনো কাজ নেই।
এটাকে তারা বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ বলে চালিয়ে দিত।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, অ্যাপেন্ডিক্স মোটেও কোনো অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ নয়। আমাদের শরীরে যাতে রোগজীবাণু, ভাইরাস ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য যে টিস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেটাত নাম লিম্ফ টিস্যু। এই টিস্যু আমাদের শরীরে অনেকটা সৈনিক তথা প্রহরীর মতো কাজ করে। আর, আমাদের বৃহদন্ত্রের মুখের প্রচুর লিম্ফ টিস্যু ধারনকারী যে অঙ্গটি আছে, তার নাম অ্যাপেনডিক্স।
যে অ্যাপেনডিক্সকে একসময় অকেজো ভাবা হতো, বিজ্ঞান এখন তার অনেক ফাংশনের কথা আমাদের জানাচ্ছে। বিবর্তনবাদীরা কি আমাদের এব্যাপারে কোনকিছু নসিহত করতে পারে? এখন কি বলবে অ্যাপেন্ডিক্স অকেজো? বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ?
রুপম চুপ করে আছে। সাজিদ বলল, -‘এতো গেল মাত্র দুটি ঘটনা। তুই কি ‘মিসিং লিঙ্ক’ এর ব্যাপার জানিস রুপম?
আমার পাশ থেকে রাকিব বলে উঠল, -‘মিসিং লিঙ্ক আবার কি জিনিস?’
সাজিদ রাকিবের দিকে তাকাল। বলল, -‘বিবর্তনবাদীরা বলে থাকে একটা প্রাণী থেকে ধীরে ধীরে অন্য একটা প্রাণী বিবর্তিত হয়। তারা বলে থাকে, -শিম্পাঞ্জি থেকে আমরা, মানে মানুষ এসেছে বিবর্তন প্রক্রিয়ায়। যদি এরকম হয়, তাহলে শিম্পাঞ্জি থেকে কিন্তু এক লাফে মানুষ চলে আসে নি।
অনেক অনেক ধাপে শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষ এসেছে। ধর, ১ সংখ্যাটা বিবর্তিত হয়ে ১০ এ যাবে। এখন ১ সংখ্যাটা কিন্তু এক লাফে ১০ হয়ে যাবে না। তাকে অনেক গুলো মধ্যবর্তী পর্যায় (২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯) অতিক্রম করে ১০ হতে হবে। এই যে ১০ এ আসতে সে অনেকগুলো ধাপ (২, ৪, ৭, ৮, ৯) অতিক্রম করল, এ ধাপগুলি হল ১ এবং ১০ এর মিসিং লিঙ্ক।’
রাকিব বলল, -‘ও আচ্ছা, বুঝলাম। শিম্পাঞ্জি যখন মানুষের বিবর্তিত হবে, প্রাথমিক পর্যায়ে তার মধ্যে কিছু মানুষের কিছু শিম্পাঞ্জির বৈশিষ্ট্য আসবে। এই বৈশিষ্ট্য সম্বলিত পর্যায়টাই মিসিং লিঙ্ক, তাই না?’
-‘হুম। ধর, মৎসকন্যা। তার অর্ধেক শরীর মাছ, অর্ধেক শরীর মানুষ। তাহলে তাকে মানুষের একটি মধ্যবর্তী পর্যায়ে হিসেবে ধরা যায়। এখন কেউ যদি দাবী করে যে, মাছ থেকে মানুষ এসেছে, তাহলে তাকে ঠিক মৎস্য কন্যার মত কিছু একটা প্রমাণ করতে হবে। এটাই হল মিসিং লিঙ্ক।