নিপুন দা সাজিদকে ধরতে যাচ্ছিল আর সে অমনি দিল এক দৌড়………….
[তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয় যে, আল্লাহ সত্যি সত্যিই পৃথিবীকে কার্পেটের মতো করে তৈরি করেছেন, তা হলেও কোনো ভুল হবে না। কারণ, কার্পেট যে শুধু সমতল জিনিসে করা হয়, তা নয়। গোলাকার জিনিসও কার্পেট করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ফুটবলের কথা চিন্তা করুন। ফুটবল একটি গোলাকার জিনিস। এর উপরিভাগ কিরকম? কার্পেটের মতো করে আচ্ছাদিত। সো, আল্লাহ যদি বলেন, তিনি ভূমিকে কার্পেটের মতো করে বিছিয়েছেন, তাহলে ধরা যায় যে, ফুটবলের মত গোলাকার ভূমিকে কার্পেটের মত বিছিয়েছেন।
তাছাড়া, সূরা আল ইনশিক্কাকের ৩ নম্বর আয়াতে আছে, – ‘যেদিন পৃথিবীকে সমতল করা হবে…’
এখানে বলা হচ্ছে কিয়ামত দিবসের কথা। সেদিন পৃথিবীকে আল্লাহ সমতল করবেন। তাহলে, তিনি যদি এখনই পৃথিবীকে সমতল করে তৈরি করতেন, আবার কিয়ামত দিবসে এটাকে সমতল করার কথা আসে কিভাবে?]
কোরআন, আকাশ, ছাদ এবং একজন ব্যক্তির মিথ্যাচার
কোরআন, আকাশ, ছাদ এবং একজন ব্যক্তির মিথ্যাচার
মফিজুর রহমান স্যার সাজিদের দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তাকানোর ভঙ্গি এ রকম, -‘বাছা ! আজকে তোমায় পেয়েছি। আজ তোমার বারোটা যদি না বাজিয়েছি, আমার নাম মফিজ না।’
সাজিদ মাথা নিচু করে ক্লাসের বাইরে দাড়িয়ে আছে। ২০ মিনিট দেরি করে ফেলেছে ক্লাসে আসতে। বিশ্ববিদ্যালয় ২০ মিনিট দেরি করে ক্লাসে আসা এমন কোনো গুরুতর পাপ কাজ নয় যে, এর জন্য তার দিকে এভাবে তাকাতে হবে।
সাজিদ সবিনয়ে বলল, -‘স্যার আসবো?’
মফিজুর রহমান স্যার অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বললেন, -‘হু’
এভাবে বললেন যেন সাজিদকে দু চার কথা শুনিয়ে দরজা থেকে খেদিয়ে পাঠিয়ে দিতে পারলেই ওনার গা জুড়োয়।
সাজিদ ক্লাস রুমে এসে বসল। লেকচারের বেশ অর্ধেকটা শেষ হয়ে গেছে। মফিজুর রহমান স্যার আর পাঁচ মিনিটের লেকচার দিয়ে ক্লাস সমাপ্ত করলেন।
সাজিদ কপালে যে আজ খুবই খারাপি আছে, সেটা সে প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছে।
মফিজুর রহমান সাজিদকে দাড় করালেন।
খুব স্বাভাবিক চেহারায় হাসি হাসি মুখ করে বললেন, -‘সাজিদ, কেমন আছো?’
সাজিদ প্রায় ভুত দেখার মত চমকে উঠলো। এই মুহূর্তে সে যদি সত্যি সত্যি ডুমুরের ফুল অথবা ঘোড়ার ডিম জাতীয় কিছু দেখতো, হয়তো এতটা চমকাতো না। মিরাকল জিনিসটায় তার বিশ্বাস আছে। তবে মফিজুর রহমান স্যারের এই আচরণ তার কাছে তার চেয়েও বেশি কিছু মনে হচ্ছে।
এই ভদ্রলোক এত সুন্দর করে এরকম হাসি মুখ নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে পারে, এটাই এতদিন একটা রহস্য ছিল।
সাজিদ নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে বললো, -‘জ্বি স্যার, ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?’
তিনি আবার একটি মুচকি হাসি দিলেন। সাজিদ পুনঃরায় অবাক হলো। মনে হচ্ছে সে কোন দিবাস্বপ্নে বিভোর আছে।
স্বপ্নের একটা ক্রাইটেরিয়া হচ্ছে, স্বপ্নে বেশিরভাগ সময় নেগেটিভ জিনিসকে পজিটিভ আর পজেটিভ জিনিসকে নেগেটিভ ভাবে দেখা যায়। মফিজুর রহমান স্যারকে নিয়ে তার মাত্রাতিরিক্ত নেগেটিভ চিন্তা থেকে হয়তো এরকম হচ্ছে। একটু পরে সে হয়তো দেখবে, এই ভদ্রলোক তার দিকে রাগী রাগী চেহারায় তাকিয়ে আছে এবং বলছে এই ছেলে এত দেরি করে ক্লাসে কেন এসেছ? তুমি জানো আমি তোমার নামে ডীন স্যারের কাছে কমপ্লেন করে দিতে পারি? আর কোনদিন যদি দেরি করেছো……..’
সাজিদের চিন্তায় ছেদ পড়ল। তার সামনে দাঁড়ানো হালকা-পাতলা গড়নের মফিজুর রহমান নামের ভদ্রলোকটি বললেন, -‘আমিও খুব ভালো আছি।’
ভদ্রলোকের মুখের হাসির রেখাটা তখনও স্পষ্ট।
মফিজুর রহমান সাজিদকে বললেন, ‘আচ্ছা বাবা আইনস্টাইন, তুমি কি বিশ্বাস কর আকাশ বলে কিছু আছে?’
সাজিদ এবার নিশ্চিত হলো যে এটা কোন স্বপ্নদৃশ্য নয়। মফিজুর রহমান স্যার তাচ্ছিল্যভরে সাজিদকে ‘আইনস্টাইন’ বলে ডাকে। সাজিদকে যখন ‘আইনস্টাইন’ বলে, তখন ক্লাসের অনেকে খলখল করে হেসে উঠে। এই মুহূর্তে সাজিদ একটি চাপা হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছে। তাহলে এটা কোন স্বপ্ন দৃশ্য নয়। বাস্তব।
সাজিদ বলল, -‘জ্বি স্যার। বিশ্বাস করি।’
ভদ্রলোক আরেকটি মুচকি হাসি দিলেন। উনি আজকে হাসতে হাসতে দিন পার করে দেবার পণ করেছেন কিনা, কে জানে।
তিনি বললেন, -‘বাবা আইন্সটাইন- আদতে আকাশ বলে কিছু নেই। আমরা যেটাকে আকাশ বলি, সেটা হচ্ছে আমাদের দৃষ্টির প্রান্তসীমা। মাথার উপরে নীল রঙের যে জিনিসটি দেখতে পাও সেটাকে মূলত বায়ুমণ্ডলের কারণেই নীল দেখায়। চাঁদের বায়ুমণ্ডল নেই বলে চাঁদে আকাশকে কালো দেখায়। বুঝতে পেরেছেন মহামতি আইনস্টাইন?’
স্যারের কথা শুনে ক্লাসে কিছু অংশ আবার হাসাহাসি শুরু করল।
স্যার আবার বললেন, -‘তাহলে বুঝলে তো, আকাশ বলে যে কিছুই নাই?’
সাজিদ কিছু বললো না। চুপ করে আছে।
স্যার বললেন, -‘গত রাতে হয়েছে কি জানো? নেট সার্চ দিয়ে একটি ব্লগ সাইটের ঠিকানা পেলাম। মুক্তমনা ব্লক নামে। অভিজিৎ নামে এক ব্লগার লেখা পেলাম সেখানে। খুব ভালো লিখে দেখলাম। যাহোক অভিজিৎ নামের এই লোকটা কোরআনের কিছু বাণী উদ্ধৃত করে দেখালো কত উদ্ভট এইসব জিনিস। সেখানে আকাশ নিয়ে কি বলা আছে শুনতে চাও?’