নিপুন দা বলল, -‘ও তাই বুঝি? তা বুঝাই দেন দেখি মহাজ্ঞানী সাজিদ ভাই। হা হা হা।’
সাজিদ বলল, –
‘প্রথমত,
সূরা আয যুমারের ৫ নং আয়াত। বলা হচ্ছে, “তিনি রাত দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা। ”
এই আয়াতে রাত দিন দ্বারা এবং দিন রাত দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়া বুঝাতে যে আরবি শব্দ ব্যবহার হয়েছে তা হল “ كوريا”। এই শব্দটির একদম সঠিক অর্থ হল প্যাঁচানো / জড়ানো।
ক্লাসিক্যাল আরবি ডিকশনারিতে এর অর্থের ব্যাখ্যাতে বলা হয়েছে, এটি ঠিক এমন -কোন পাগড়ির মধ্যে একটি কাপড় অন্য একটি কাপড়ের মধ্যে যেভাবে পেঁচিয়ে ঢোকানো হয়। একটি অন্যটির মধ্যে পেঁচিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। জীবনে কখনো পাগড়ী দেখলে বা পাগড়ী বেঁধে থাকলে ব্যাপারটা ভালো বুঝার কথা।
আল্লাহ বলেছেন, তিনি রাত দ্বারা দিনকে এবং দিন দ্বারা রাতকে ঠিক সেভাবেই আচ্ছাদিত করেন।
এখন রাতকে দিন দ্বারা এবং দিনকে রাত দ্বারা এভাবে আচ্ছাদিত করা তখনই সম্ভব, যখন পৃথিবীর আকার গোল হবে।
আমরা দেখি কিভাবে দিনরাত্রি হয়। প্রথমে ভোর, এরপর আস্তে আস্তে দুপুর, এরপর বিকেল, এরপর গোধূলী, এরপর সন্ধ্যা, এরপর একসময় দিন রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে যায় যে ভাবে আস্তে আস্তে পাগড়ির একটা অংশ অন্য অংশের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
যদি পৃথিবী সমতল হতো, এটা লম্বা কাঠ বা তক্তার মত, তাহলে কি এভাবে দিনরাত্রি হতো? না। তখন এই দিন, আবার চোখের পলকে রাত নেমে পড়তো।
তাহলে সূরা যুমারের এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আল্লাহ রাতকে দিন এবং দিনকে রাতে আচ্ছাদিত করার যে প্রক্রিয়া বলেছেন সেটা তখনই সম্ভব, যখন পৃথিবী গোলাকার হবে। তাহলে কোরান ইন্ডিরেক্টলি ইঙ্গিত করেছে যে পৃথিবী গোলাকার।
দ্বিতীয়তঃ,
সূরা আর রহমানের ১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনিই দুই অস্তাচল আর দুই উদয়াচলের মালিক।
এখানে অস্তাচল আর উদয়চল বলতে সূর্যের উদয়-অস্তের কথা বলা হচ্ছে।
আমরা জানি, পৃথিবীতে একদিনে দুইবার সূর্যোদয় আর দুইবার সূর্যাস্ত ঘটে থাকে। আমরা বাংলাদেশে যখন সূর্যকে পূর্ব দিকে উদিত হতে দেখি, তখন আমেরিকানরা দেখে যে সেখানে সূর্যটা পশ্চিমে ডুবে যাচ্ছে। তাহলে আমাদের এখানে যখন সকাল, তাদের কাছে তা সন্ধ্যা। আবার, আমরা যখন সূর্যকে পশ্চিমে ডুবে যেতে দেখি, তারা তখন সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হতে দেখে। তার মানে, পৃথিবীতে মোট দু’বার সকাল-সন্ধ্যা পরিলক্ষিত হয়। এখন দুবার সূর্যাস্ত আর দুবার সূর্যোদয় তখনই সম্ভব যখন পৃথিবীর আকার গোল হবে। পৃথিবীর আকার যদি সমতল বা চ্যাপ্টা হত, তাহলে পৃথিবীতে একবারই সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় ঘটতো। তক্তা সদৃশ্ পৃথিবীর একপাশে সূর্য উঠে অন্যপাশে ডুবে যেত। কিন্তু সেরকম হয় না। কারণ, পৃথিবী গোলাকার ।
এইজন্য পৃথিবীতে আমরা দুইবার সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখতে পাই।
আল্লাহ কোরআনে একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, -‘তিনিই মালিক দুই অস্তাচল আর উদয়াচলের।’ তাহলে তিনি নিশ্চয় জানেন, পৃথিবী গোলাকার। তাই তিনি দুই সূর্যাস্ত আর দুই সূর্যোদয়ের কথা বলেছেন। তিনি যদি পৃথিবীকে ফ্ল্যাট তথা সমতলই বলবেন, তাহলে অবশ্যই তিনি এক অস্তাচল আর উদয়াচলের কথাই বলতেন। কিন্তু তিনি তা বলেননি। তার মানে, কোরআন ইঙ্গিত করছে যে, পৃথিবী গোলাকার।
এতোটুকু বলে সাজিদ থামল। বিপুল চুপ করে আছে। নিপুণ দা’ও চুপ। তাদের হয়তো আর কিছু বলার নেই এই মুহূর্তে। সৌরভ বললো, -‘সবই বুঝলাম। কিন্তু পৃথিবীর ভূমিকে বিছানা বলার কি দরকার? এত জটিল করে।’
সাজিদ হাসলো। বললো, -‘সৌরভ আমি যখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, তখন নিপুন দা আমাকে একটি লাভ লেটার দিয়েছিল বিপাশা দি কে দেবার জন্য। কি নিপুন দা, দেওনি?’
নিপুন দা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলল, -‘হ্যাঁ। কিন্তু এখানে বলছো কেন এসব?’
-‘জানো নিপুনদা, আমি সেই চিঠিটা বিপাশা দি কে দেবার আগে খুলে একবার পড়ে নিয়েছিলাম। হা হা হা হা। কি রোমান্টিক প্রেমপত্র ছিল সেটা। হা হা হা।’
নিপুন দা হাসছে, লজ্জাও পাচ্ছে। আমরাও হাসছি। সাজিদ বলল, -‘জানো সৌরভ, সেই চিঠির শুরুতে বিপাশা দি’র রূপের বর্ণনা দিতে গিয়ে নিপুন দা লিখেছে, ‘তোমার ওই চাঁদ মুখখানা না দেখলে আমার দিনটাই পানসে লাগে।’
আমরা সবাই হো হো করে হাসছি। সাজিদ আবার বলল, -‘আচ্ছা সৌরভ, নিপুন দা যে বিপাশার দি’র মুখকে চাঁদমুখ বলেছে, এখানে নিপুন দা কি বুঝিয়েছে যে, বিপাশা দি’র মুখ দেখতে চাঁদের আকৃতি মতো? আই মিন গোলাকার?’
সৌরভ বললো, -‘না, উনি বিপাশা দি’র রূপ বুঝিয়েছেন এটা দিয়ে।’
-‘এক্সাক্টলি। নিপুন দা সেদিন ‘চাঁদমুখ’ দিয়ে আসলে বিপাশা দি’র রূপ বুঝিয়েছেন, বিপাশা দি’র মুখের আকৃতি না। এটাকে বলে উপমা। ঠিক সেরকম আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানার উপমা দিয়ে বুঝিয়েছেন, তিনি আমাদের জন্য কত উপযোগী করেই না এটা তৈরি করেছেন। এটা দিয়ে তিনি পৃথিবীর আকৃতি বা আমার বা তোমার বেডরুমের বিছানা বুঝান নি, বুঝেছো?’
সৌরভ একদম চুপ মেরে গেল। সে নিশ্চয়ই বুঝেছে। বিপূলও চুপচাপ।
সাজিদ নিপুন দা’র কাছে গিয়ে বললো, -‘স্যরি দা ভাই, ওই চিঠিটা তোমার পারমিশন ছাড়াই পড়েছিলাম বলে। কি করব বল? তোমাদের মত সিনিয়ারদের থেকেই তো এক্সপেরিয়েন্স নিতে হবে। তাই না? হা হা হা।’