সাজিব এক নাগাড়ে এতসব কথা বলে গেল। স্যারের মুখটা কিছুটা পানসে দেখা গেল। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ চার মাস ধরে, এরকম সুযোগের অপেক্ষা করছিলে তুমি, মিঃ আইনস্টাইন?’
আমরা সবাই হেসে দিলাম। সাজিদ ও মুচকি হাসলো বড় অদ্ভুত সে হাসি।
কোরআন মতে পৃথিবী কি সমতল না গোলাকার
কোরআন মতে পৃথিবী কি সমতল না গোলাকার
খুবই সিরিয়াস একই ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ঠিক আলোচনা নয়, আদতে হাসাহাসি হচ্ছে।
যারা হাসাহাসি করছে তাদের সবাই খুবই স্মার্ট। শুধু স্মার্টই নয়, ওভার স্মার্টও বলা যায়।
এরা কথায় কথায় বলে, আমরা বিজ্ঞান ছাড়া কিছু বুঝিনা। এরা উঠতে-বসতে, হাঁটতে-চলতে সবকিছুতেই বিজ্ঞানের প্রমাণ খুঁজে।
কেউ যখন তাদের বলে, বিজ্ঞানের এইটা এরকম নয়, ঐরকম, তখন তারা তেরেমেরে এসে বলবে, -‘বাপু, তুমি কি বিজ্ঞানী? বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা আছে? ক’ ক্লাশ বিজ্ঞান পড়েছ যে বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলতে আসছো? যাও, আগে পড়ো, পরে লেকচার দিবা।
আবার এই তারাই অনলাইনে কিছু ছাইপাশ পড়া মুক্তমনা তথা নাস্তিকদের লেখা পড়ে সেটাকে এত পরিমান বিশ্বাস করে যে, নিজের বাবা-মাকেও এরা এতো বিশ্বাস করে না।
এইসব নাস্তিকগুলোর অধিকাংশই এমন, যারা আরবিতে কোরআন পড়তে জানে না। কিছু ইংরেজি অনুবাদ এবং বাংলা অনুবাদের খিস্তি উড়িয়ে বলে, কুরআনের এইটা ভুল, ওইটা ভুল। কোরআনের এইটা অবৈজ্ঞানিক, ওইটা অবৈজ্ঞানিক।
লেখা পড়ে মনে হবে, এরা একজন বড় বড় মুফতি ছিল একসময়। কুরআনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এত সব ভুলভাল দেখে তারা আজকে নাস্তিক হয়ে গেছে।
এরা আরবিতে কোরআন পড়াতো দূরে, অধিকাংশই ২৯ টি হরফ ঠিকমতো বলতেও পারবে না।
এই মুহূর্তে হাসাহাসি হচ্ছে কুরআনের পৃথিবীর আকার নিয়ে।
হাসাহাসি করছে বিপুল, সৌরভ আর নিপুন দা।
বিপুলকে আগে জুমার নামাজে দেখতাম। এখন সে নাকি ধর্ম কর্ম করছে না। বিপ্লব নিয়ে আছে। কমিউনিজম বিপ্লব। বিশ্ববিদ্যালয় আসলে ছেলেদের মধ্যে এমনিতেই রক্ত গরম রক্ত গরম টাইপ একটা ভাব থাকে। এই ভাবের সাথে যখন দু চারখানা মার্কস আর লেলিনের কিতাব যুক্ত হয়, তাহলেতো কথাই নেই। স্বপ্নের মধ্যেও তখন হেলাল হাফিজের পঙক্তি ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ জপতে থাকে। বিপুলেরও একই অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কি না কি পড়েছে, এখন ঈশ্বরকে অলীক কল্পনা মনে করা শুরু করেছে। অবশ্যই এর পিছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন নিপুন দা। ইনি কট্টর বাম। আমাকেও কয়েকবার আরজ আলী মাতুব্বরের বই-টই পড়তে দিয়েছিল। আমি পড়ে হাসিমুখে ফেরত দিয়েছিলাম। আমার কাছ থেকে বই নেওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলেন, -‘কী? কী বুঝলে ভাইয়া?’
আমি ফিক করে হেসে বললাম, -‘বুঝলাম যে, লোকটার মেন্টাল ট্রিটমেন্ট দরকার ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় তিনি বিনা চিকিৎসায় গত হয়েছেন।’
আমার মুখ থেকে এরকম কথা শুনে নিপুন দা চমকে গেলেন। এখন বুঝতে পারছি ইনিই বিপুল আর সৌরভের ব্রেইনওয়াশ করেছেন।
এরা এখন যা পড়ে হাসাহাসি করছে, তা একজন ব্লগারের লেখা। ব্লগারটা হিন্দু পরিবারের। হিন্দু পরিবারের হলেও উনি নিজের ধর্ম ত্যাগ করে একসময় নাস্তিকতা চর্চা শুরু করেন। পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার।
এই ব্লগার লিখেছেন, -‘মোহাম্মদের আল্লাহ কি জানতো না যে, পৃথিবী গোলাকার, সমতল নয়? তাহলে মোহাম্মদের আল্লাহ পৃথিবীকে সমতল বলল কেন? আসলে, কোরআন কোন ঈশ্বরের বাণী-টানী না। এটা স্রেফ মুহাম্মদের নিজের বানানো।
১৫০০ বছর আগে মানুষ বিশ্বাস করতো যে পৃথিবী হল সমতল। মুহাম্মদ তখন যা বিশ্বাস করত, তাই তা লিখে দিয়েছে আর বলে দিছে এইটা আসছে আল্লাহর কাছ থেইকা। হা হা হা। বোকা মুমিনগুলা এটারে আল্লাহর বাণী মনে কইরা বাকুম বাকুম করতাছে।’ (নাউজুবিল্লাহ)
প্রমান হিসেবে উল্লেখ করল এই আয়াতগুলো –‘তিনি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিছানা স্বরূপ।’- সূরা নূহ ১৯
[And Allah has made the earth for you as a carpet (spread out)]
‘তিনিই তোমাদের জন্য জমিনকে করেছেন বিছানা স্বরূপ। আর তাতে তোমাদের জন্য করেছেন চলার পথ।’ সূরা তোয়াহা ৫৩
[He who has made for you the earth like a carpet spread out; has enabled to go about therein by roads (and channels)]
‘অতঃপর তিনি তার জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।’
-আন নাজিরাত ৩০
আমি আর সাজিদ পাশাপাশি বসে আছি। আমার তো গা জ্বলে যাচ্ছে এদের বিদ্রূপ ঠাট্টা দেখে। সাজিদ একদম শান্তভাবে বসে বসে এসব শুনছে। কি করে যে পারছে কে জানে।
নিপুন দা বলল, -‘কি সাজিদ মিয়া, তোমার কি কিছু বলার আছে এই ব্যাপারে?’
সাজিদ হাসলো। সচরাচর যেমন হাসে। এরপর বললো, -‘দাদা তোমরা বলে যাও। আমি না হয় আজ শুনেই যাই।’
-‘না, না। তোমাকেও বলতে হবে। বলতে হবে তুমি কি বিশ্বাস কর, পৃথিবীটা কার্পেটের মতো সমতল? নাকি বিশ্বাস কর পৃথিবীটা গোলাকার?’ –নিপুন দা বলল।
সাজিদ বলল, -‘আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীটা গোলাকার।’
-‘হা হা হা। তাহলে তো কোরানের সাথে বিপরীত হয়ে গেল। কোরআন বলছে পৃথিবীরে কার্পেটের মতো সমতল করে বিছানো হয়েছে। ইউ বিলিভ ইট?’
সাজিদ কিছু বললো না। একটু ঝেড়ে কেশে নিলো। এরপর বলল, -‘দাদা, অনেকক্ষণ ধরেই খেয়াল করছি তোমরা বলছো ‘সমতল সমতল’। আচ্ছা, কুরআনের ঠিক কোন জায়গায় বলা হয়েছে পৃথিবীটা সমতল?’