যৌবনে তিনি তাসে আসক্ত ছিলেন। তাসে নাশ এই আপ্তবাক্যের প্রভাবে তাঁর মা তাঁকে তাস খেলতে নিষেধ করেন। এই নিষেধের পরে তিনি জীবনে আর তাস স্পর্শও করেননি। এ-কথা আমি তাঁরই মুখে একদিন কথাপ্রসঙ্গে শুনেছিলাম।
সাহিত্যিক হিসেবে মহৎ জীবনের চরিত্র ও কৃতির আলোচনা মাধ্যমে নৈতিকচেতনা, আদর্শানুগত্য ও মহম্ভব জাগানোর সচেতন প্রয়াস ছিল তার। সৈয়দ আমীর আলী, স্যার সৈয়দ আহমদ প্রভৃতি তার প্রমাণ। তাঁর ভাষায় ও ভঙ্গিতে এক দুর্লভ লাবণ্য ও আকর্ষণ-শক্তি ছিল। বক্তা হিসেবে তিনি যেমন শ্রোতাকে অভিভূত রাখতে পারতেন, আলাপচারী হিসেবে যেমন উপস্থিত ব্যক্তিকে একটানা পাঁচ-সাত ঘণ্টা ধরে রাখতে পারতেন, লেখক হিসেবেও তিনি পাঠককে সহজেই মুগ্ধ করতে জানতেন। অনর্গল অনবরত রসিয়ে রসিয়ে অক্লান্তভাবে কথা বলার সে কী আশ্চর্য সামর্থ্য ছিল তাঁর। এজন্যেই তাঁর সঙ্গ-সুখ ত্যাগ করা দুঃসাধ্য ছিল তাঁর বন্ধু-বান্ধবের পক্ষে। তাঁর সম্পাদিত বুলবুল পত্রিকা এবং রচিত পাকিস্তান গ্রন্থ তাঁর সাহিত্যপ্ৰাণতার ও রাজনীতি প্রীতির নিদর্শন। তাঁর দেখবার দৃষ্টিও ছিল তীক্ষ্ণ। অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি তাঁর প্রতিবেশের সবকিছু খুঁটিয়ে দেখবার অদ্ভুত শক্তি রাখতেন। এ সূত্রে কলম্বোর চিঠি ও জেনেভার চিঠি স্মতব্য। রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বমুহূর্ত অবধি তিনি একটি তাজা তরুণ প্রাণ বয়ে বেড়াতেন। রসিকের দৃষ্টি নিয়ে তিনি জীবন ও জগৎকে, প্রতিবেশ ও প্রতিবেশীকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তাঁর চারদিককার ভবন থেকে তিনি জীবনরস গ্রহণ করেছেন অবাধে এবং দিয়েছেন অকাতরে সবাইকে যারা তাঁকে বেষ্টন করে থাকতেন। তিনি এভাবে অন্তরে-বাইরে এক আনন্দলোক সৃষ্টি করে জীবনকে উপভোগ করতে ও করাতে চেয়েছেন। জীবনে তিনি চাকরি করেননি। তাই তার সময় ছিল অঢেল, প্রয়োজন ছিল সামান্য, লোভ ছিল অজ্ঞাত, ঔদাসীন্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল ঔদার্য, সবটা মিলে এক নির্ভাবনার জীবন। তিনি ভালোবাসতে জানতেন। জীবনভরে ভালোবাসা দিয়েছেন এবং ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। তাঁর জীবনে প্রীতির লেনদেনই ছিল মুখ্য। রাজনীতিক জীবনে তার প্রতিপত্তি ও সাফল্য আসে এই স্বতঃস্ফূর্তপ্রীতির পথেই।