ক্ষিতিমোহনবাবু ইহুদি ছিলেন না বলে, নিজের সুবিধেটা উত্তরের মারফতে গুছিয়ে নিতে পারেননি ইহুদি পারে।
এ গল্পটা মনে রাখবেন। কাজে লাগবে। অন্তত চা-টা পাঁপর-ভাজাটা আসবে নিশ্চয়ই।
সঙ্গে সঙ্গে ইহুদি, স্কুটম্যান সাইক চালাতে আরম্ভ করে দেবেন। সে আবার কী? এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজ, অর্থাৎ এক চিন্তার খেই ধরে অন্য চিন্তা, সেটা থেকে আবার অন্য চিন্তা, এইরকম করে করে মোকামে পৌঁছে যাবেন। এখনও বুঝতে পারলেন না। তবে একটা গল্প দিয়েই বোঝাই।
সেই যে বাঁদর ছেলে কিছুতেই শটকে শিখবে না, এ ছেলে তেমনি পেটুক যা-কিছু শিখতে দেওয়া হয়, পৌঁছে যাবেই যাবে মিষ্টি-সন্দেশে। তাকে একং দশং শিখতে দেওয়া হয়েছে। বলছে,
একং, দশং, শতং, সহস্র, অযুত, লক্ষ্মী, সরস্বতী–
(মন্তব্য : লক্ষ না বলে বলে ফেলেছে লক্ষ্মী এবং তিনি যখন দেবী তখন তার এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজ থেকে চলে গেছে আরেক দেবী সরস্বতীতে; তার পর বলছে,)
লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক, অগ্রহায়ণ–।
(মন্তব্য: কার্তিক মাসও বটে, তাই এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজে চলে গেল অগ্রহায়ণ পৌষে)।
অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাগ, ছেলে-পিলে—
(মন্তব্য : মাঘ-কে আমরা মাগই উচ্চারণ করে থাকি। তার থেকে ছেলে-পিলে)
পিলে, জ্বর, শর্দি, কাশী–
কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন, গয়া, পুরী—
পুরী, সন্দেশ, রসগোল্লা, মিহিদানা, বোঁদে, খাজা, লেডিকিনি
ব্যস! পুরী তো খাদ্য, এবং ভালো খাদ্য। অতএব তার এসোসিয়েশনে বাদবাকি উত্তম উত্তম আহারাদি! পৌঁছে গেল মোকামে।
এই এসোসিয়েশন অব আইডিয়াজ থেকে গল্পের যেই ধরে নেওয়া যায়।
ইহুদির কথা যখন উঠেছে তখন ইহুদির কসি, স্কটম্যানের কসি, তাবৎ কসির গল্প আরম্ভ করে দিতে পারেন।
এগুলোকে আবার সাইক্লও বলা হয়। এটা হল কসির সাই– অর্থাৎ দুনিয়ার যতরকম হাড়কিপটেমির গল্প এই সাইক্রে ঢুকে যাবে। ঠিক সেইরকম আরও গণ্ডায় গণ্ডায় সাই আছে। স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর উপর অত্যাচার, স্ত্রীকে লুকিয়ে পরস্ত্রীর সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি, ট্রেন লেটের সাইক্ল, ডেলি পেসেঞ্জারের সাইক্ল, চালাকির সাইক্ল–
চালাকির সাইক্ল এদেশে গোপালর্ভাড় সাইক্লই বলা হয়। অর্থাৎ চালাকির যে-কোনও গল্প আপনি গোপালের নামে চালিয়ে যেতে পারেন, কেউ কিছু বলবে না। ইংরেজিতে এটাকে ব্ল্যাঙ্কেট অমনিবাস গল্পগুষ্ঠিও বলা চলে।
গোপালের অপজিট নাম্বার অর্থাৎ তারই মতো চালাক ছোকরা প্রায় সব দেশেই আছে। প্রাচীন অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির রাজদরবারে ছিলেন মিকশ, কিন্তু দুঃখের বিষয় তার অধিকাংশ গল্পই সমাজে কঙ্কে পায় না, ভিয়েনার ভাষায় গেজেলশাফেইষ নয় (সমাজে অচল)। সেদিক দিয়েও গোপালের সঙ্গে তার গলাগলি।
কিন্তু এ সংসারে বুদ্ধিমানের চেয়ে আহাম্মুকের সংখ্যাই বেশি, তাই আহাম্মকির সাইই পাবেন, দুনিয়ার সর্বত্র। অধুনা কেন্দ্রের এক প্রাক্তন মন্ত্রীকে কেন্দ্র করে একটি বিরাট সাইজ তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। এর জুড়ি ভিয়েনাতে গ্রাফ ফ ববে, পশ্চিম ভারতে শেখ চিল্পি (আমার ঠিক মনে নেই, তবে বোধ করি শ্রীযুক্ত সীতা শান্তার হিন্দুস্তানি উপকথাতে এর গল্প আছে), এবং সুইটজারল্যান্ডে পলডি।
পলডির গল্প অফুরন্ত। আমি গত দশ বছর ধরে একখানা সুইস পত্রিকার গ্রাহক। প্রতি সপ্তাহে পলডি নিয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্র থাকে। চলেছে তো চলেছে। এখনও তার শেষ নেই। কখনও যে হবে মনে হয় না।
কিছুমাত্র না ভেবে গোটা কয়েক বলি :
বন্ধু; জানো পলডি, অসিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। ১৭৭০-এ ওটা আবিষ্কৃত হয়।
পলডি : তার আগে মানুষ বাঁচত কী করে?
কিংবা
পলডি : (আমেরিকান টুরিস্টকে এক কাসল দেখিয়ে) ওই ওখানে আমার জন্ম হয়। আপনার জন্ম হয় কোনখানে?
টুরিস্ট : হাসপাতালে।
পলডি : সর্বনাশ! কী হয়েছিল আপনার?
কিংবা
বাড়িউলি : সে কী মি. পলডি? দশ টাকার মনিঅর্ডার, আর আপনি দিলেন পাঁচ টাকা বকশিশ!
পলডি : হেঁ হেঁ, ওই তো বোঝ না আর কিপ্টেমি কর। ঘন ঘন আসবে যে!
কিংবা
পলডি ঘোড়ার রেসে গিয়ে শুধোচ্ছেন : ঘোড়াগুলো এরকম পাগল-পারা ছুটছে কেন?
বন্ধু : কী আশ্চর্য, পলডি তা-ও জানো না! যেটা ফার্স্ট হবে সেটা প্রাইজ পাবে যে।
পলডি : তা হলে অন্যগুলো ছুটছে কেন?
এর থেকে আপনি রেসের গল্পের মাধ্যমে কুট্টি সাইক্লে অনায়াসে চলে যেতে পারেন। যেমন, কুট্টি রেসে গিয়ে বেট করেছে এক অতি নিকৃষ্ট ঘোড়া। এসেছে সর্বশেষে। তার এক বন্ধু আরেক কুট্টি ঠাট্টা করে বললে, কী ঘোড়া (উচ্চারণ অবশ্য গোরা- আমি বোঝার সুবিধের জন্য সেগুলো বাদ দিয়েই লিখছি) লাগাইলায় মিয়া! আইলো সক্কলের পিছনে?
কুট্টি দমবার পাত্র নয়। বললে, কন্ কী কত্তা! দ্যাখলেন না, যেন বাঘের বাচ্চা বেবাকগুলিরে খ্যাদাইয়া লইয়া গেল!
কুট্টি সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুব-পশ্চিম উভয় বাঙলার রসিকমণ্ডলীই একদা সুপরিচিত ছিলেন। নবীনদের জানাই, এরা ঢাকা শহরের খানদানি গাড়োয়ান-গোষ্ঠী। মোগল সৈন্যবাহিনীর শেষ ঘোড়সওয়ার বা ক্যাভালরি। রিক্শার অভিসম্পাতে এরা অধুনা লুপ্তপ্রায়। বহুদেশ ভ্রমণ করার পর আমি নির্ভয়ে বলতে পারি, অশিক্ষিত জনের ভিতর এদের মতো witty (হাজির-জবাব এবং সুরসিক বাতুর) নাগরিক আমি হিল্লি-দিল্লি কলোন-বুলোন কোথাও দেখিনি।