৪৬
কে ধরেছে, কে মেরেছে, কে দিয়েছে গাল।
খোকার গুণের বালাই নিয়ে মরে যেন সে কাল॥
৪৭
কাজল বলে আজল আমি রাঙামুখে যাই–
কালো মুখে গেলে আমার হতমান হয়॥
৪৮
খোকো আমার কী দিয়ে ভাত খাবে।
নদীর কূলে চিংড়িমাছ বাড়ির বেগুন দিয়ে॥
৪৯
খোকো যাবে রথে চড়ে, বেঙ হবে সারথি।
মাটির পুতুল নটর-পটর, পিঁপড়ে ধরে ছাতি।
ছাতির উপর কোম্পানি কোন্ সাহেবের ধন তুমি॥
৫০
খোকো যাবে মাছ ধরিতে গায়ে নাগিবে কাদা।
কলুবাড়ি গিয়ে তেল নেও গে, দাম দেবে তোমার দাদা॥
৫১
খোকো যাবে মাছ ধরিতে ক্ষীরনদীর বিল।
মাছ নয় গুগুলির পেছে উড়ছে দুটো চিল॥
৫২
খোকো যাবে মোষ চরাতে, খেয়ে যাবে কী।
আমার শিকের উপর গমের রুটি তবলা-ভরা ঘি॥
৫৩
খোকো ঘুমো ঘুমো।
তালতলাতে বাঘ ডাকছে দারুণ হুমো॥
৫৪
ঘুমতা ঘুমায় ঘুমতা ঘুমায় গাছের বাকলা।
ষষ্ঠীতলায় ঘুম যায় মস্ত হাতি ঘোড়া॥
ছাইগাদায় ঘুম যায় খেঁকি কুকুর।
খাটপালঙ্গে ঘুম যায় ষষ্ঠীঠাকুর।
আমার কোলে ঘুম যায় খোকোমণি॥
৫৫
আতা গাছে তোতা পাখি, দালিম গাছে মউ।
কথা কও না কেন বউ?–
কথা কব কী ছলে?
কথা কইতে গা জ্বলে॥
৫৬
ও পারে তিল গাছটি
তিল ঝুর ঝুর করে।
তারি তলায় মা আামার
লক্ষ্মী প্রদীপ জ্বালে॥
মা আমার জটাধারী
ঘর নিকুচ্ছেন।
বাবা আমার বুড়োশিব
নৌকা সাজাচ্ছেন॥
ভাই আমার রাজ্যেশ্বর
ঘড়া ডুবাচ্ছেন।
ঐ আসছে প্যাখ্না বিবি
প্যাক্ প্যাক্ প্যাক্
ও দাদা দেখ্ দেখ্ দেখ্॥
৫৭
খোকো আমার ধন ছেলে
পথে বসে বসে কান্ছিলে॥
রাঙা গায়ে ধুলো মাখছিলে
মা ব’লে ধন ডাকছিলে॥
৫৮
খোকা খোকা ডাক পাড়ি।
খোকা গিয়েছে কার বাড়ি॥
আন্ গো তোরা লাল ছড়ি।
খোকাকে মেরে খুন করি॥
৫৯
ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি আমাদের বাড়ি যেয়ো।
খাট নেই, পালঙ্গ নেই, খোকার চোখে বোসো॥
খোকার মা বাড়ি নেই, শুয়ে ঘুম যেয়ো।
মাচার নীচে দুধ আছে, টেনেটুনে খেয়ো॥
নিশির কাপড় খসিয়ে দেব, বাঘের নাচন চেয়ো।
বাটা ভরে পান দেব, দুয়োরে বসে খেয়ো।
খিড়কি দুয়োর কেটে দেব, ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ যেয়ো॥
৬০
খুকিমণি দুধের ফেনি বওগাছের মউ।
হাড়ি-ডুগ্ডুগানি উঠান-ঝাড়নি মণ্ডা-খেকোর বউ॥
৬১
নিদ পাড়ে, নিদ পাড়ে গাছের পাতাড়ি।
ষষ্ঠীতলায় নিদ পাড়ে বুড়ো মাথারি॥
খেড়ো ঘরে নিদ পাড়ে কালা কুকুর।
আমাদের বাড়ি নিদ পাড়ে খোকা ঠাকুর॥
৬২
হরম বিবির খড়ম পায়।
লাল বিবির জুতো পায়॥
চল্ লো বিবি ঢাকা যাই
ঢাকা গিয়ে ফল খাই।
সে ফলের বোঁটা নাই॥
৬৩
ঢাকিরা ঢাক বাজায় খালে আর বিলে।
সুন্দরীরে বিয়া দিলাম ডাকাতের মেলে॥
ডাকাত আলো মা।
পাট কাপড় দিয়ে বেড়ে নিলে
দেখতে দিলে না॥
আগে যদি জানতাম ডুলি ধরে কানতাম॥
৬৪
ইটা কমলের মা লো ভিটা ছেড়ে দে।
তোর ছাওয়ালের বিয়া, বাদ্য এনে দে॥
ছোটো বেলায় খেলাইছিলাম ঘুটি মুছি দিয়া।
মা গালাইছিলেন খুব্রি বলিয়া॥
এখন কেন কাঁদো মা গো ডুলির খুরা ধরে।
পরের পুতে নিয়ে যাবে ডুম্ডুমি বাজিয়ে॥
৬৫
কে রে, কে রে, কে রে!
তপ্ত দুধে চিনির পানা
মণ্ডা ফেলে দে রে॥
৬৬
আয় রে পাখি টিয়ে!
খোকা আমাদের পান খেয়েছে
নজর বাঁধা দিয়ে॥
৬৭
আয় রে পাখি লটকুনা!
ভেজে দিব তোরে বর-বটনা॥
খাবি আর কল্কলাবি।
খোকাকে নিয়ে ঘুম পাড়াবি॥
৬৮
ষষ্ঠী বাছা পানের গোছা
তুলে নাড়া রে।
যে আবাগী দেখতে নারে
পাড়া ছেড়ে যা রে॥
৬৯
ধুলায় ধূসর নন্দকিশোর,
ধুলা মেখেছে গায়।
ধুলা ঝেড়ে কোলে করো
সোনার জাদুরায়॥
৭০
খোকা আমাদের কই–
জলে ভাসে খই।
শুকোলো বাটার পান
অম্বল হল দই॥
৭১
খোকো খোকো ডাক পাড়ি।
খোকো বলে মা শাক তুলি॥
মরুক মরুক শাক তোলা।
খোকো খাবে দুধকলা॥
৭২
আমার খোকো যাবে গাই চরাতে
গায়ের নাম হাসি।
আমি সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে দেব
মোহন-চুড়া বাঁশি॥
৭৩
খোকোর আমার নিদন্তের হাসি
আমি বড়োই ভালোবাসি॥
৭৪
খোকো যাবে নায়ে
লাল জুতুয়া পায়ে।
পাঁচ-শো টাকার মল্মলি থান
সোনার চাদর গায়ে॥
তোমরা কে বলিবে কালো।
পাটনা থেকে হলুদ এনে
গা ক’রে দিব আলো॥
৭৫
খোকো ঘুমালে দিব দান
পাব ফুলের ডালি।
কোন্ ঘাটে ফুল তুলেছে
ওরে বনমালী।
চাঁদমুখেতে রোদ লেগেছে,
তুলে ধরো ডালি॥
খোকো আমাদের ধন।
বাড়িতে নটের বন।
বাহির-বাড়ি ঘর করেছি,
সোনার সিংহাসন॥
৭৬
আয় ঘুম আয় কলাবাগান দিয়ে–
হৈঁড়ে-পানা মেঘ করেছে।
লখার মা নথ পরেছে কপাল ফুটো ক’রে।
আমানি খেতে দাঁত ভেঙেছে।
সিঁদুর পরবে কিসে॥
৭৭
খোকোমণির বিয়ে দেব হটমালার দেশে।
তারা গাই বলদে চষে।
তারা হীরেয় দাঁত ঘষে।
রুই মাছ পালঙের শাক ভারে ভারে আসে॥
খোকোর দিদি কোণায় বসে আছে।
কেউ দুটি চাইতে গেলে, বলে, আর কি আমার আছে॥
৭৮
এত টকা নিলে বাবা ছাঁদ্লাতলায় বসে।
এখন কেন কাঁদ বাবা গামছা মুখে দিয়ে॥
আমরা যাব পরের ঘরে পর-অধীন হয়ে।
পরের বেটী মুখ করবে মুখ নাড়া দিয়ে।
দুই চক্ষের জল পড়বে বসুধারা দিয়ে॥
৭৯
ও পারে দুটো শিয়াল চন্দন মেখেছে।
কে দেখেছে, কে দেখেছে, দাদা দেখেছে॥
দাদার হাতের লাল নাঠিখান ফেলে মেরেছে।
দুই দিকে দুই কাৎলা মাছ ভেসে উঠেছে॥
একটা নিলে কিঁয়ের মা একটা নিলে কিঁয়ে।
ঢোকুম্ কুম্ বাজনা বাজে, অকার মার বিয়ে॥
৮০
ওই আসছে খোঁড়া জামাই ডিং ডিং বাজিয়ে।
ক্ষীরের হাঁড়িতে দই প’ল, ছাই খাক্ সে॥
হাঁড়ায় আছে কাৎলা মাছ, ধরে আন্ গে।
দুই দিকে দুই কাৎলা মাছ ভেসে উঠেছে॥
একটি নিলেন গুরুঠাকুর একটি নিলে টিয়ে।
টিয়ের মার বিয়ে লাল গামছা দিয়ে॥
লাল গামছায় হল নাকো, তসর এনে দে।
তসর করে মসর-মসর, শাড়ি এনে দে।
শাড়ির ভারে উঠতে নারি, শালারা কাঁদে॥