২৪
উলু কেতু দুলু কেতু নলের বাঁশি।
নল ভেঙেছে একাদশী॥
একা নল পঞ্চদল।
কে যাবি রে কামার-সাগর॥
কামার মাগী কের্কেরানি যেন পাটরানী॥
আক-বন ডাব-বন।
কুড়ি কিষ্টি বেড়াবন॥
কার পেটের দুয়ো।
কার পেটের সুয়ো॥
ব’লে গেছে চড়ুই রাজা
চোরের পেটে চাল-কড়াই-ভাজা॥
কাঠবেড়ালি মদ্দা মাগী কাপড় কেচে দে।
হারদোচ খেলাতে ডুলকি কিনে দে॥
ডুলকির ভিতর পাকা পান।
ছি, হিঁদুর সোয়ামি মোচর্মান॥
এক পাথর কলাপোড়া এক পাথর ঝোল।
নাচে আমার খুকুমণি, বাজা তোরা ঢোল॥
২৫
উলুকুটু ধুলুকুটু নলের বাঁশি।
নল ভেঙেছে একাদশী॥
একা নল পঞ্চদল।
মা দিয়েছে কামারশাল॥
কামার মাগীর ঘুর্ঘুরুনি।
অর্পণ দর্পণ। কুড়ি গুষ্টি ব্রাহ্মণ॥
২৬
রানু কেন কেঁদেছে।
ভিজে কাঠে রেঁধেছে॥
কাল যাব আমি গঞ্জের হাট।
কিনে আনব শুকনো কাঠ॥
তোমার কান্না কেন শুনি।
তোমার শিকেয় তোলা ননি।
তুমি খাও না সারা দিনই॥
২৭
খোকোমণি দুধের ফেনি ডাবলোর ঘি।
খোকোর বিয়ের সময় করব আমি কী॥
সাত মাগী দাসী দেব পায়ে তেল দিতে।
সাত মিন্সে কাহার দেব দুলান দুলাতে॥
সরু ধানের চিঁড়ে দেব নাগর খেলাতে।
রসকরা নাড়ু দেব শাশুড়ি ভুলাতে॥
২৮
খোকো আমাদের সোনা
চার পুখুরের কোণা।
বাড়িতে সেকরা ডেকে মোহর কেটে
গড়িয়ে দেব দানা।
তোমরা কেউ কোরো না মানা॥
২৯
খোকো আমাদের লক্ষ্মী।
গলায় দেব তক্তি॥
কাঁকালে দেব হেলে।
পাক দিয়ে দিয়ে নিয়ে বেড়াব আমাদের ছেলে॥
হিল্লা দিয়ে বেড়াবে যেন বড়ো মানুষের হলে॥
৩০
ধন ধন ধনিয়ে কাপড় দেব বুনিয়ে।
তাতে দেব হীরের টোপ।
ফেটে মরবে পাড়ার লোক॥
৩১
আলতানুড়ি গাছের গুঁড়ি জোড়-পুতুলের বিয়ে।
এত টাকা নিলে বাবা দূরে দিলে বিয়ে।
এখন কেন কান্ছ বাবা গামছা মুড়ি দিয়ে॥
আগে কাঁদে মা বাপ, পাছে কাঁদে পর।
পাড়াপড়সি নিয়ে গেল শ্বশুরদের ঘর॥
শ্বশুরদের ঘরখানি বেতের ছাউনি।
তাতে বসে পান খান দুর্গা ভবানী॥
হেঁই দুর্গা, হেঁই দুর্গা, তোমার মেয়ের বিয়ে।
তোমার মেয়ের বিয়ে দাও ফুলের মালা দিয়ে।
ফুলের মালা গোঁদের ডালা কোন্ সোহাগির বউ।
হীরেদাদার মড়্ মড়ে থান, ঠাকুরদাদার বউ॥
এক বাড়িতে দই দিব্য এক বাড়িতে চিঁড়ে।
এমন ক’রে ভোজন কোরো গোক্ষুনাথের কিরে॥
৩২
হ্যাদে রে কলমি লতা
এতকাল ছিলে কোথা॥
এতকাল ছিলাম বনে।
বনেতে বাগদি ম’ল, আমারে যেতে হল॥
তুমি নেও কলসী কাঁকে, আমি নিই বন্দু হাতে।
চলো যাই রাজপথে–ছেলের মা গয়না গাঁথে॥
ছেলেটি তুড়ুক নাচে॥
৩৩
খোকা যাবে নায়ে, রোদ লাগিবে গায়ে।
লক্ষটাকার মল্মলি থান সোনার চাদর গায়ে॥
তাতে নাল গোলাপের ফুল।
যত বাঙালের মেয়ে দেখে ব্যাকুল॥
সয়দাবাদের ময়দা, কাশিমবাজারের ঘি।
একটু বিলম্ব করো, খোকাকে লুচি ভেজে দি॥
উলোর ভুঁয়ের ময়দারে ময়দাবাদের ঘি।
শান্তিপুরের কড়াই এনে নুচি ভেজে দি॥
৩৪
সুড়্সুড়ুনি গুড়্গুড়ুনি নদী এল বান।
শিবঠাকুর বিয়ে কল্লেন, তিন কন্যে দান॥
এক কন্যে রাঁধেন বাড়েন, এক কন্যে খান।
এক কন্যে না পেয়ে বাপের বাড়ি যান॥
বাপেদের তেল আমলা, মালীদের ফুল–
এমন ক’রে চুল বাঁধব হাজার টাকা মূল॥
হাজারে বাজারে পড়ে পেলাম খাঁড়া।
সেই খাঁড়া দিয়ে কাটলাম নাল কচুর দাঁটা॥
৩৫
খোকাবাবু চৌধুরী
গাঁ পেয়েছে আগুড়ি।
মাছ পেয়েছে পবা॥
আমার খোকামণির বউ ডাকছে।
ভাত খাওসে বাবা॥
৩৬
একবার নাচো চাঁদের কোণা।
আমি মুরলী বাঁধিয়ে দেব যত লাগে সোনা।
আবার তোমার নাচন আমি জানি, জানে না ব্রজাঙ্গনা॥
৩৭
শিব নাচে, ব্রহ্মা নাচে, আর নাচে ইন্দ্র।
গোকুলে গোয়ালা নাচে পাইয়ে গোবিন্দ॥
ক্ষীর-খিরসে ক্ষীরের নাড়ু, মর্তমানের কলা।
নুটিয়ে নুটিয়ে খায় যত গোপের বালা॥
নন্দের মন্দিরে গোয়ালা এল ধেয়ে।
তাদের হাতে নড়ি, কাঁধে ভাঁড়, নাচে থেয়ে থেয়ে॥
৩৮
খোকা নাচে কোন্খানে।
শতদলের মাঝখানে॥
সেখানে খোকা চুল ঝাড়ে–
থোকা থোকা ফুল পড়ে।
তাই নিয়ে খোকা খেলা করে॥
৩৯
অন্নপূর্ণা দুধের সর।
কাল যাব লো পরের ঘর॥
পরের বেটা মারলে চড়।
কানতে কানতে খুড়োর ঘর।
খুড়ো দিলে বুড়ো বর॥
হেঁই খুড়ো তোর পায়ে ধরি
রেখে আায় গে মায়ের বাড়ি॥
মায়ে দিল সরু শাঁখা
বাপে দিল শাড়ি।
ঝপ্ ক’রে মা বিদেয় কর্–
রথ আসছে বাড়ি॥
আগে আয় রে চৌপল–
পিছে যায় রে ডুলি।
দাঁড়া রে কাহার মিন্সে
মাকে স্থির করি॥
মা বড়ো নির্বুদ্ধি কেঁদে কেন মর।
আপুনি ভাবিয়ে দেখো কার ঘর কর॥
৪০
খোকা নাচে বুকের মাঝে।
নাক নিয়ে গেল বোয়াল মাছে॥
ওরে বোয়াল ফিরে আয়।
খোকার নাচন দেখে যা॥
৪১
মাসি পিসি বনকাপাসি, বনের মধ্যে টিয়ে।
মাসি গিয়েছে বৃন্দাবন দেখে আসি গিয়ে॥
কিসের মাসি, কিসের পিসি, কিসের বৃন্দাবন।
আজ হতে জানলাম মা বড়ো ধন॥
মাকে দিলাম শাঁখা শাড়ি, বাপকে দিলাম নীলে ঘোড়া।
ভাইয়ের দিলাম বিয়ে॥
কলসীতে তেল নেইকো, কিবা সাধের বিয়ে।
কলসীতে তেল নেইকো, নাচব থিয়ে থিয়ে॥
৪২
মাসি পিসি বনকাপাসি, বনের মধ্যে ঘর।
কখনো বললি নে মাসি কড়ার নাড়ু ধর্॥
৪৩
খোকো মানিক ধন।
বাড়ি-কাছে ফুলের বাগান তাতে বৃন্দাবন॥
৪৪
কিসের লেগে কাঁদ খোকো কিসের লেগে কাঁদ।
কিবা নেই আমার ঘরে।
আমি সোনার বাঁশি বাঁধিয়ে দেব
মুক্তা থরে থরে॥
৪৫
ওরে আমার সোনা
এতখানি রাতে কেন বেহন-ধান ভানা।
বাড়িতে মানুষ এসেছে তিনজনা।
বাম মাছ রেঁধেলি শোলমাছের পোনা॥