২
কে মেরেছে, কে ধরেছে সোনার গতরে।
আধ কাঠা চাল দেব গালের ভিতরে।
কে মেরেছে, কে ধরেছে, কে দিয়েছে গাল।
তার সঙ্গে গোসা করে ভাত খাও নি কাল॥
কে মেরেছে, কে ধরেছে, কে দিয়েছে গাল।
তার সঙ্গে কোঁদল করে আসব আমি কাল॥
মারি নাইকো, ধরি নাইকো, বলি নাইকো দূর।
সবেমাত্র বলেছি গোপাল চরাও গে বাছুর॥
৩
পুঁটু নাচে কোন্খানে।
শতদলের মাঝখানে।
সেখানে পুঁটু কী করে।
চুল ঝাড়ে আর ফুল পাড়ে।
ডুব দিয়ে দিয়ে মাছ ধরে॥
৪
ধন ধোনা ধন ধোনা।
চোত-বোশেখের বেনা॥
ধন বর্ষাকালের ছাতা।
জাড় কালের কাঁথা॥
ধন চুল বাঁধবার দড়ি।
হুড়কো দেবার নড়ি॥
পেতে শুতে বিছানা নেই।
ধন ধুলোয় গড়াগড়ি॥
ধন পরানের পেটে।
কোন্ পরানে বলব রে ধন
যাও কাদাতে হেঁটে॥
ধন ধোনা ধন ধন।
এমন ধন যার ঘরে নাই তার বৃথায় জীবন॥
৫
ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি আমার বাড়ি যেয়ো।
সরু সুতোর কাপড় দেব, ভাত রেঁধে খেয়ো॥
আমার বাড়ির জাদুকে আমার বাড়ি সাজে।
লোকের বাড়ি গেলে জাদু কোঁদলখানি বাজে॥
হোক কোঁদল ভাঙুক খাড়ু।
দু হাতে কিনে দেব ঝালের নাড়ু॥
ঝালের নাড়ু বাছা আমার না খেলে না ছুঁলে।
পাড়ার ছেলেগুলো কেড়ে এসে খেলে॥
গোয়াল থেকে কিনে দেব দুদ্ওলা গাই।
বাছার বালাই নিয়ে আমি মরে যাই॥
দুদ্ওলা গাইটে পালে হল হারা।
ঘরে আছে আওটা দুধ আর চাঁপাকলা।
তাই দিয়ে জাদুকে ভোলা রে ভোলা॥
৬
ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি ঘুমের বাড়ি যেয়ো।
বাটা ভরে পান দেব, গাল ভরে খেয়ো॥
শান-বাঁধানো ঘাট দেব, বেসম মেখে নেয়ো।
শীতলপাটি পেড়ে দেব, পড়ে ঘুম যেয়ো॥
আঁব-কাঁটালের বাগান দেব, ছায়ায় ছায়ায় যাবে।
চার চার বেয়ারা দেব, কাঁধে করে নেবে॥
দুই দুই বাঁদি দেব, পায়ে তেল দেবে।
উল্কি ধানের মুড়কি দেব নারেঙ্গা ধানের খই।
গাছ-পাকা রম্ভা দেব হাঁড়ি-ভরা দই॥
৭
ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি আমার বাড়ি এসো।
শেজ নেই, মাদুর নেই, পুঁটুর চোখে বোসো॥
বাটা ভরে পান দেব, গাল ভরে খেয়ো।
খিড়কি দুয়ার খুলে দেব, ফুড়ুৎ করে যেয়ো॥
৮
ও পাড়াতে যেয়ো না, বঁধু এসেছে।
বঁধুর পাতের ভাত খেয়ো না, ভাব লেগেছে॥
ভাব ভাব কদমের ফুল ফুটে রয়েছে।
ঢাকনখুলে দেখো বড়ো বউর খোকা হয়েছে॥
৯
পানকৌড়ি পনকৌড়ি ডাঙায় ওঠো’সে।
তোমার শাশুড়ি বলে গেছে বেগুন কোটো’সে॥
ও বেগুন কুটো না, বীচ রেখেছে।
ও ঘরেতে যেয়ো না, বঁধু এয়েছে॥
বঁধুর পান খেয়ো না, ঝগড়া করেছে।
দাদাকে দেখে কদম-পানা ফুটে উঠেছে॥
১০
পানকৌড়ি পানকৌড়ি ডাঙায় ওঠো’সে।
তোমার শাশুড়ি বলে গেছেন আলু কোটো’সে॥
কী করে কুটব, চাকা চাকা ক’রে॥
ও দুয়োরে যেয়ো না, বঁধু এসেছে।
বঁধুর পান খেয়ো না, ভাব লেগেছে।
ভাব ভাব কদমের ফুল ফুটে উঠেছে॥
১১
ঘুঘু মেতি সই
পুত কই।
হাটে গেছে॥
হাট কই।
পুড়ে গেছে॥
ছাই কই।
গোয়ালে আছে॥
সোনা-কুড়ে পড়বি না ছাই-কুড়ে পড়বি?
১২
ওরে আমার ধন ছেলে
পথে বসে বসে কান্ছিলে॥
মা ব’লে ব’লে ডাকছিলে।
ধুলো-কাদা কত মাক্ছিলে॥
সে যদি তোমার মা হ’ত
ধুলো-কাদা ঝেড়ে কোলে নিত॥
১৩
পুঁটুমণি গো মেয়ে
বর দিব চেয়ে॥
কোন্ গাঁয়ের বর।
নিমাই সরকারের বেটা, পালকি বের কর্॥
বের করেছি, বের করেছি ফুলের ঝারা দিয়ে।
পুঁটুমণিকে নিয়ে যাব বকুলতলা দিয়ে॥
১৪
ধুলোর দোসর নন্দকিশোর ধুলো মাখা গায়।
ধুলো ঝেড়ে করব কোলে আয় নন্দরায়॥
১৫
ধুলোর দোসর নন্দকিশোর গা করেছ খড়ি।
কলুবাড়ি যাও, তেল আনো গে, আমি দিব তার কড়ি॥
১৬
আয় রে চাঁদা, আগড় বাঁধা, দুয়ারে বাঁধা হাতি।
চোখ ঢুল্ঢুল্্ নয়নতারা দেখ্সে চাঁদের বাজি॥
১৭
বড়োবউ গো ছোটোবউ গো জলকে যাবি গো।
জলের মধ্যে ফুল ফুটেছে দেখতে পাবি গো॥
কেষ্ট বেড়ান কূলে কূলে, তাঁত নিবি গো।
তারি জন্যে মার খেয়েছি, পিঠ দেখো গো॥
বড়োবউ গো ছোটোবউ গো আরেক কথা শুন্সে॥
রাধার ঘরে চোর ঢুকেছে চুড়োবাঁধা মিন্সে॥
ঘটি নেয় না, বাটি নেয় না, নেয় না সোনার ঝারি।
যে ঘরেতে রাঙা বউ সেই ঘরেতে চুরি॥
১৮
খোকা গেছে মাছ ধরতে, দেব্তা এল জল।
ও দেব্তা তোর পায়ে ধরি খোকন আসুক ঘর॥
কাজ নাইকো মাছে, আগুন লাগুক মাছে।
খোকনের পায়ে কাদা লাগে পাছে॥
১৯
এ পারেতে বেনা, ও পারেতে বেনা।
মাছ ধরেছি চুনোচানা॥
হাঁড়ির ভিতর ধনে।
গৌরী বেটী কনে॥
নোকে বেটা বর।
টাঁকশালেতে চাকরি করে ঘুঘুডাঙায় ঘর॥
ঘুঘুডাঙায় ঘুঘু মরে চাল-ভাজা খেয়ে।
ঘুঘুর মরণ দেখতে যাব এয়োশাঁখা পরে॥
শাঁখাটি ভাঙল। ঘুঘুটি ম’ল॥
২০
কাঁদুনে রে কাঁদুনে কুলতলাতে বাসা।
পরের ছেলে কাঁদবে ব’লে মনে করেছ আশা॥
হাত ভাঙব, পা ভাঙব, করব নদী পার।
সারারাত কেঁদো না রে, জাদু, ঘুমো একবার॥
২১
তালগাছেতে হুতুম্থুমো কান আছে পাঁদারু।
মেঘ ডাকছে ব’লে বুক করছে গুরু গুরু॥
তোমাদের কিসের আনাগোনা।
উড়ে মেড়ার বাপ আসছে দিদিন্ ধিনা ধিনা॥
২২
দোল দোল দোলানি।
কানে দেব চৌদানি॥
কোমরে দেব ভেড়ার টোপ।
ফেটে মরবে পাড়ার লোক॥
মেয়ে নয়কো, সাত বেটা।
গড়িয়ে দেব কোমর-পাটা॥
দেখ্ শত্তুর চেয়ে।
আমার কত সাধের মেয়ে॥
২৩
ইকড়ি মিকড়ি চাম-চিকড়ি, চাম কাটে মজুমদার।
ধেয়ে এল দামুদর॥
দামুদর ছুতরের পো।
হিঙুল গাছে বেঁধে থো॥
হিঙুল করে কড়মড়।
দাদা দিলে জগন্নাথ॥
জগন্নাথের হাঁড়িকুঁড়ি।
দুয়োরে বসে চাল কাঁড়ি॥
চাল কাঁড়তে হল বেলা।
ভাত খাওসে দুপুরবেলা॥
ভাতে পড়ল মাছি।
কোদাল দিয়ে চাঁচি॥
কোদাল হল ভোঁতা।
খা ছুতরের মাথা॥