আর যদি এত বেশি লেখা ছাপবার মতো জায়গা না থাকে আপনার কাগজে, তা হলে যে কোনো একটা লেখা ‘সওগাত-এর সম্পাদককে hand-over করলে আমি বিশেষ অনুগৃহীত হব। ‘সওগাত’-এ লেখা দিচ্ছি দু-একটা করে। যা ভালো বুঝেন জানাবেন।
গল্পটি সম্বন্ধে আপনার কিছু জিজ্ঞাসা বা বক্তব্য থাকলে জানালেই আমি ধন্যবাদের সহিত তৎক্ষণাৎ তার উত্তর দিব, কারণ, এখনও অনেক সময় রয়েছে।
আমাদের এখানে সময়ের money-value; সুতরাং লেখা সর্বাঙ্গসুন্দর হতেই পারে না। Undisturbed time মোটেই পাই না। আমি কোনো কিছুরই কপি বা duplicate রাখতে পারি না। সেটি সম্পূর্ণ অসম্ভব।
By the by আপনারা যে ‘ক্ষমা’ বাদ দিয়ে কবিতাটির ‘মুক্তি’ নাম দিয়েছেন, তাতে আমি খুব সন্তুষ্ট হয়েছি। এই রকম দোষগুলি সংশোধন করে নেবেন। বড্ড ছাপার ভুল থাকে, একটু সাবধান হওয়া যায় না কি? আমি ভালো, আপনাদের কুশল সংবাদ দিবেন।
নিবেদন ইতি –
খাদেম
নজরুল ইসলাম
হবীবুল্লাহ বাহার-কে
হুগলি,
৬-১০-২৫
সকাল
স্নেহাস্পদেষু,
বাহার! তোমার দুখানা চিঠি পেলাম আজকেরটা নিয়ে। উত্তর দিতে পারিনি – তার কারণ আমি বারো তেরো দিন হতে বড্ড অসুস্থ। দেশ-উদ্ধার-কল্পে পাড়া-গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে পচা পাটের জল আর মশার কামড় খেয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে বাড়ি ফিরি। মধ্যে একদিন অবস্থা যায়-যায় হয়ে উঠেছিল, একদিন ভীষণ রক্তবমন হতে থাকে হঠাৎ, সে দিন সাত-আট আগে।
রক্তবমন বন্ধ হয়েছে, কিন্তু বড়ো দুর্বল – এখনও শয্যাগত। জ্বর আসছিল রোজ, আজ ছেড়েছে। এত রক্ত পড়ত এক একবার, যে নালা দিয়ে জলের মতো বয়ে যেত, যাক, বিপদের ক্ষণ কেটে গেছে। তাছাড়া আমিও এত সহজে – বিছানায় শুয়ে মরতে রাজি নই। আমার অদৃষ্টেও তা লেখা নেই।
নাহার যে কলকাতা এসেছিল তা তো জানতুম না। মা-র সঙ্গে কয়েকদিনই দেখা হয়েছিল, কই তিনিও কিছু বলেননি। তবে আমারও ঝড়ের মতো যাওয়া আসা, হয়তো তিনি বলবার অবসর পাননি।
নাহারকে তার ভাবীও দেখতে চান। ওদের আলাপ হলে খুশি হতাম। যাক, দেখা হয়তো হবেই – অবশ্য নাহার যদি খুব দূরদেশে গিয়ে না পড়ে।
নাহারকে আমাদের প্রাণভরা স্নেহ ও শুভকামনা দিয়ো, তুমিও নিয়ো। আজকাল লিখছে না কেন? আমার হয়ে বকে দিয়ো ওকে। আমাদের মেয়েদের প্রতিভা এমনি করেই বিনষ্ট তলোয়ার। দিনরাত খাপে পোরা থাকলে মরচে ধরে যায়।
আমার শারদীয় সংখ্যা ‘বিজলী’র কবিতাটা (আমার কৈফিয়ত) পড়নি কি? পড়ো ওটা জোগাড় করে।
আমার নতুন কবিতার বই ‘ছায়ানট’ বেরিয়েছে, দিন পনেরো হল। বোধহয় দেখনি। আমি আপাতত আটখানা ‘ছায়ানট’ ও দশখানা করে ‘বিষের বাঁশী’ ও ‘ভাঙ্গার গান’ পাঠিয়ে দেব তোমায় কালকের মধ্যে। ‘অগ্নি-বীণা’ তৃতীয় সংস্করণ মাসখানেক হল বেরিয়েছে তা কলকাতা থেকে আনিয়ে পাঠিয়ে দেব শীগগির।
বিনি সুতোর কথা আমার বিনিগোচর। আমি ও সম্বন্ধে কিছু জানিনে ভাই। ও সম্বন্ধে মাকে জিজ্ঞেস করে পাঠিয়ো। কাপড়ের দরকার বিশেষ অনুভব করিনি, জানিনে কী দরকার। সকলকে দর্জ্জামত সালাম দোওয়া দেবে –
শুভার্থী –
নুরুদা
মোহাম্মদ আফজলউল হক-কে
Kandirpar
Coomilla
15th Chaitra
ভাই ডাবজল!
‘মোসলেম ভারত’ কি ডিগবাজি খেল নাকি?৩ খবর কী? ‘ব্যথার দান’ কেমন কাটছে?৪ কত কাটল? অন্যান্য কাগজে সমালোচনা বা বিজ্ঞাপন বেরুল না কেন? ‘সার্ভেন্ট’৫ আর ‘মোহাম্মদী’৬-র সমালোচনা আর ‘বিজলী’৭ ও বাংলার কথা’-য়৮ বিজ্ঞাপন দেখেছি মাত্র। ‘আরবি ছন্দ’ দেখেছেন?৯ কে কী বললে? আপনার মুমূর্ষু অবস্থা দেখেই ওটা ‘প্রবাসী’তে দিয়েছি। তার জন্য দুঃখিত হয়েছেন না-কি? আর সব খবর কী? ‘মোসলেম ভারত’-এর অবস্থা জানবার জন্য বড্ড উদ্বিগ্ন। এতদিন চট্টগ্রাম বা অন্য কোথাও যেতে পারিনি ; তার কারণ এ-বাড়িতে১০ অন্তত দুজন করে অনবরত শয্যাগত রোগশয্যায়। এখন আবার বসন্ত হয়েছে মেয়েদের। এসব ছেড়ে যেতে পারিনি। তা ছাড়া মায়ের স্নেহ আর নিজের আলস্য ঔদাস্য তো আছেই। চট্টগ্রামে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কনফারেন্সে আসবেন নাকি? আমি যাব নিশ্চয়ই দেখতে। দুই কাজই হবে। নিজের শরীরও ভালো নয়। মনের অশান্তির আগুন দাবানলের মতো দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে। অবশ্য ‘আমি নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন’! হ্যাঁ আমায় আজই কুড়িটি টাকা টেলিগ্রাফ-মানিঅর্ডার করে পাঠাবেন kindly। বড্ড বিপদে পড়েছি। আর কারুর কাছে আমি যাই-ই হই, আপনার কাছেও আমি হয়তো ভালোতে-মন্দতে মিশে তেমনই আছি। এই অসময়ে আমার আর কেউ নেই দেখে আপনারই শরণ নিলুম। আশাকরি বঞ্চিত হব না, তা আপনি যত দুর্দশাগ্রস্ত হোন না কেন। টাকা চাই-ই-চাই, ভাই! নইলে যেতে পারব না! অনেক কষ্ট দিলুম – আরও দেব। ‘ব্যথার দান’ মোট নয়খানা পেয়েছি মাত্র ; আরও খান পনেরো আমার দরকার। যাক টাকা পাঠাবেনই যা করে হোক।
আমার লেখাটা তা হলে ‘উপাসনা’য় দিয়ে দেবেন যদি ‘মোসলেম ভারত’-এ না বেরোয়।
চির-স্নেহানুবদ্ধ
নজরুল