নিখিল ঘুমে অচেতন সহসা শুনিনু আজান
নিখিল ঘুমে অচেতন সহসা শুনিনু আজান;
শুনি’ সে তকবিরের ধ্বনি আকুল হল মন-প্রাণ;
বাহিরে হেরিনু আসি: বেহেশতী রৌশনীতে রে
ছেয়েছে জমিন ও আসমান;
আনন্দে গাহিয়া ফেরে ফেরেশ্তা হুর গেলেমান –
এলো কে, কে এলো ভুলোকে!
দুনিয়া দুলিয়া উঠিল পুলকে।।
তাপীর বন্ধু, পাপীর ত্রাতা,
ভয়-ভীত পীড়িতের শরণ-দাতা,
মুকের ভাষা নিরাশার আশা,
ব্যথার শান্তি, সান্ত্বনা শোকে
এলো কে ভোরের আলোকে।।
দরুদ পড় সবে : সাল্লে আলা,
মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা।
কেহ বলে, এলো মোর কমলিওয়ালা–
খোদার হাবীব কেহ কয় নিরালা
মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা!
কেহ বলে, আহমদ নাম মধু ঢালা–
মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা!
মজনুঁরও চেয়ে হল দীওয়ানা সবে,
নাচে গায় নামের নেশায় ঝোঁকে।
নিম ফুলের মউ পিয়ে
নিম ফুলের মউ পিয়ে
ঝিম হয়েছে ভোমরা।
মিঠে হাসির নূপূর বাজাও
ঝুমুর নাচো তোমরা।।
কভু কেয়া-কাঁটায়,
কভু বাবলা-আঠায়
বারে বারে ভোমরার পাখা জড়ায় গো–পাখা জড়ায়
দেখে হেসে লুটিয়ে পড়ে
ফুলের দেশের বউরা।।
নিশীথ রাতে ডাকলে আমায়
নিশীথ রাতে ডাকলে আমায়
কে গো তুমি কে?
কাঁদিয়ে গেলে আমার মনের
বননভূমিকে।।
কে গো তুমি?
তোমার আকুল করুণ স্বরে
আজকে তারেই মনে পড়ে—
এমনি রাতে হারিয়েছি যে
হৃদয়-মণিকে।।
দুয়ার খুলে চেয়ে আছি
তারার পানে দূরে;
আর একটি বার ডাকো ডাকো
তেমন করুন সুরে।
একটি কথা শুনব বলে
রাত কেটে যায় চোখের জলে;
দাও সাড়া দাও, জাগিয়ে তোলো
আঁধার-পুরীকে।।
পায়েল বোলে রিনিঝিনি
রূপমঞ্জরি তেতালা
পায়েল বোলে রিনিঝিনি।
নাচে রূপমঞ্জরী শ্রীরাধার সঙ্গিনী।।
ভাব-বিলাসে
চাঁদের পাশে
ছড়ায়ে চাঁদের ফুল নাচে যেন নিশীথিনী।।
নাচে উড়ায়ে নীলাম্বরী অঞ্চল ;
মৃদু মৃদু হাসে
আনন্দ-রাসে
শ্যামল চঞ্চল।
কভু মৃদু মন্দ
কভু ঝরে দ্রুত তালে সমধুর ছন্দ;
বিরহের বেদনা মিলন-আনন্দ
ফোটার তনুর ভঙ্গিমাতে
ছন্দ-বিলাসিনী।।
পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া
পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া।
যাও রে বইয়া এই গরীবের সালামখানি লইয়া।।
কাবার জিয়ারতের আমার নাই সম্বল ভাই,
সারা জনম সাধ ছিল যে, মদিনাতে যাই (রে ভাই)।
মিটল না সাধ, দিন গেল মোর দুনিয়ার বোঝা বইয়া।।
তোমার পানির সাথে লইয়া যাও রে আমার চোখের পানি,
লইয়া যাওরে এই নিরাশের দীর্ঘ নিশ্বাস খানি।
নবীজীর রওজায় কাঁদিও ভাই রে আমার হইয়া।।
মা ফাতেমা হযরত আলীর মাজার যেথায় আছে,
আমার সালাম দিয়া আইস(রে ভাই) তাঁদের পায়ের কাছে।
কাবায় মোজানাজাত করিও আমার কথা কইয়া।।
প্রিয় মুহরে-নবুয়ত-ধারী হে হজরত
প্রিয় মুহরে-নবুয়ত-ধারী হে হজরত
(প্রিয়) তারিতে উম্মত এলে ধরায়।
মোহাম্মদ মোস্তফা, আমহদ মুজতবা–
নাম জপিতে নয়নে আঁসু ঝরায়।।
দিলে মুখে তকবীর, দিলে বুকে তৌহিদ,
দিলে দুঃখেরই সান্ত্বনা খুশির ঈদ;
দিলে প্রাণে ঈমান, দিলে হাতে কোরআন,
দিলে শিরে শিরতাজ নাম মুসলিম আমায়।।
তব সব নসিহত মোরা গিয়াছি ভুলে
শুধু নাম তব আছে জেগে প্রাণের কূলে
ও-নামে এ প্রাণ-সিন্ধু তব দোলে
আমি ঐ নামে ত’রে যাব, আছি আশায়।।
ফুটলো সন্ধ্যামণির ফুল আমার মনের আঙিনায়
ফুটলো সন্ধ্যামণির ফুল
আমার মনের আঙিনায়।
ফুল-ফোটাতে কে এলে
ফুল-ঝরানো সাঁঝ-বেলায়।।
আজ কি মোর দিনের শেষে
উঠলো চাঁদ মধুর হেসে’
কৃষ্ণা-তিথির তৃষ্ণা মোর
মিটলো ওই জোছনায়।।
আজ যে আঁখি অশ্রু-হীন,
কি দিয়ে ধোয়াই চরণ’
সুন্দর বরের বেশে
এলে কি আমার মরণ’!
দেখ বসন্তের পাখি
কোয়েলা গেছে ডাকি
আনন্দের দূত তুমি
ডাকিয়া ফুল ফোটায়।
ফুলে পুছিনু, বল, বল ওরে ফুল
ফুলে পুছিনু, বল, বল ওরে ফুল!
কোথা পেলি এ সুরভি, রূপ এ অতুল?
“যার রূপে উজালা দুনিয়া, কহে গুল,
দিল সেই মোরে এই রূপ এই খোশবু।
আল্লাহু আল্লাহু।।”
“ওরে কোকিল, কে তোরে দিল এ সুর,
কোথা পেলি পাপিয়া এ কন্ঠ মধুর?”
কহে কোকিল পাপিয়া, “আল্লাহ গফুর,
তাঁরি নাম গাহি ‘পিউ পিউ’ কুহু কুহু-
আল্লাহু আল্লাহু।।”
“ওরে রবি-শশী, ওরে গ্রহ-তারা
কোথা পেলি এ রওশনী জ্যোতি ধারা?”
কহে, “আমরা তাহারি রূপের ইশারা
মুসা, বেহুঁশ হলো হেরি’ যে খুবরু
আল্লাহু আল্লাহু।।”
যারে আউলিয়া আম্বিয়া ধ্যানে না পায়
কূল-মখলুক যাঁহারি মহিমা গায়,
যে নাম নিয়ে এসেছি এইদুনিয়ায়,
নাম নিতে নিতে মরি এই আরজু
আল্লাহু আল্লাহু।।
ফোরাতের পানিতে নেমে ফাতেমা-দুলাল কাঁদে
ফোরাতের পানিতে নেমে ফাতেমা-দুলাল কাঁদে
অঝোর নয়নে রে।
দু’হাতে তুলিয়া পানি ফেলিয়া দিলেন অমনি
পড়িল কি মনে রে।।
দুধের ছাওয়াল আসগর এই পানি চাহিয়ে রে
দুশমনের তীর খেয়ে বুকে ঘুমাল খুন পিয়ে রে;
শাদীর নওশা কাসেম শহীদ এই পানি বিহনে রে।।
এই পানিতে মুছিল রে হাতের মেহেদী সকীনার,
এই পানিতে ঢেউয়ে ওঠে তারি মাতম হাহাকার,
শহীদানের খুন মিশে আছে এই পানিরই সনে রে।।
বীর আব্বাসের বাজু শহীদ হলো এরি তরে রে,
এই পানি বিহনে জয়নাল খিমায় তৃষ্ণায় মরে রে,
শোকে শহীদ হলেন হোসেন জয়ী হয়েও রণে রে।।