দিন গেল মোর মায়ায় ভুলে মাটির পৃথিবীতে
দিন গেল মোর মায়ায় ভুলে মাটির পৃথিবীতে।
কে জানে কখন নিয়ে যাবে গোরে মাটি দিতে রে।।
পাঁচ ভূতে আর চোরে মিলে
রোজগার মোর কেড়ে নিলে;
এখন কেউ নাই রে পারে যাবার দুটো কড়ি দিতে রে।।
রাত্রে শুয়ে আবার যে ভাই উঠব সকাল বেলা —
বলতে কি কেউ পারি, তবু খেলি মোহের খেলা।
বাদশা আমীর ফকির কত
এলো আবার হল গত রে;
দেখেও বারেক আল্লার নাম জাগে নাকো চিতে।
এবার বসবি কবে ও ভোলা মন আল্লার তসবিতে রে।।
দীপ নিভিয়াছে ঝড়ে জেগে আছে মোর আঁখি
মর্ডান
দীপ নিভিয়াছে ঝড়ে
জেগে আছে মোর আঁখি।
কে যেন কহিছে কেঁদে
মোর বুকে মুখ রাখি’
‘পথিক এসেছ না কি’।।
হারায়ে গিয়াছে চাঁদ
জল-ভরা কালো মেঘে,
আঁচলে লুকায়ে ফুল
বাতায়নে আছি জেগে,
শূন্য গগনে দেয়া
কহিতেছে যেন ডাকি’
‘পথিক এসেছ না কি’।।
ভাঙিয়া দুয়ার মম
কাড়িয়া লইতে মোরে–
এলে কি ভিখারি ওগো
প্রলয়ের রূপ ধ’রে?
ফুরাইয়া যায় বঁধূ
শুভ-লগনের বেলা
আনো আনো ত্বরা করি’
ওপারে যাবার ভেলা।
‘পিয়া পিয়া’ ব’লে বনে
ঝুরিছে পাপিয়া পাখি
‘পথিক এসেছ না কি’।।
দুখের সাহারা পার হয়ে আমি
দুখের সাহারা পার হয়ে আমি
চলেছি কাবার পানে।
পড়িব নামাজ মারেফাতের
আরাফাত ময়দানে।।
খোদার ঘরের দীদার পাইব,
হজ্বের পথে জ্বালা জুড়াইব;
মোর মুূর্শিদ হয়ে হযরত পথ
দেখাও সুদূর পানে।।
রোজা রাখা মোর সফল হইবে,
পাব পিয়াসার পানি;
আবে-জমজম তৌহিদ পিয়ে
ঘুচাব পথের গ্লানি।।
আল্লাহর ঘর তওয়াফ করিয়া
কাঁদিব সেথায় পরাণ ভরিয়া;
ফিরিব না আর,কোরবানী দেবো
এই জান সেইখানে।।
দূর বনান্তের পথ ভুলি কোন বুলবুলি
গজল
দূর বনান্তের পথ ভুলি কোন্ বুলবুলি
বুকে মোর আসিলি, হায়!
হায় আনন্দের দূত যে তুই, তবু তোর চোখে
কেন জল কি ব্যথায়।।
কোথা দিই ঠাঁই তোরে ওরে ভীরু পাখি,
বেদনাময় আমার ও প্রাণ ,
এ মরুতে নাই তরু, নাই তোর তৃষ্ণার তরে
জল যে হেথায়।।
নিকুঞ্জে কার গাইতে গেলি গান,
বিঁধিল বুক কণ্টকে ;
হায় পুড়িয়া বৈশাখে এলি ভিজিতে
অশ্রুর বরষায়।।
দে জাকাত, দে জাকাত, তোরা দেরে জাকাত
দে জাকাত, দে জাকাত, তোরা দেরে জাকাত।
তোর দীল খুলবে পরে, ওরে আগে খুলুক হাত।।
দেখ পাক কোরান, শোন নবীজীর ফরমান–
ভোগের তরে আসেনিরে দুনিয়ায় মুসলমান
তোর একার তরে দেননি খোদা দৌলতের খেলাত।।
তোর দরদালানে কাঁদে ভুখা হাজারো মুসলিম,
আছে দৌলতে তোর তাদেরও ভাগ–বলেছেন রহিম,
বলেছেন রহমানুর রহিম, বলেছেন রসূলে করীম,
সঞ্চয় তোর সফল হবে, পাবিরে নাজাত।।
এই দৌলত বিভব -রতন যাবে না তোর সাথে,
হয়তো চেরাগ জ্বলবে না তোর গোরে শবে-রাতে ;
এই জাকাতের বদলাতে পাবি বেহেশ্তি সওগাত।
দেশে দেশে গেয়ে বেড়াই তোমার নামের গান
দেশে দেশে গেয়ে বেড়াই তোমার নামের গান
হে খোদা, এ যে তোমারই হুকুম, তোমারই ফরমান।।
এমনি তোমার নামের আছর –
নামাজ রোজার নাই অবসর,
তোমার নামের নেশায় সদা মশগুল মোর প্রাণ।
তকদিরে মোর এই লিখেছ
হাজার গানের সুরে
নিত্য দিব তোমার আজান
আঁধার মিনার-চূড়ে।
কাজের মাঝে হাটের পথে
রণ-ভূমে এবাদতে
আমি তোমার নাম শোনাব, করব শক্তি দান।।
নবীর মাঝে রবির সময় আমার মোহাম্মদ রসুল
নবীর মাঝে রবির সময়
আমার মোহাম্মদ রসুল।
খোতার হবিব নকিব
বিশ্বে নাই যার সমতুল।।
পাক আরশে পাশে খোদার
গৌরবময় আসন যাঁহার,
খোশ নসিব উম্মত আমি তাঁর
পেয়েছি অকূলে কূল।।
আনিলেন যিনি খোদার কালাম,
তাঁর কদমে হাজার সালাম;
ফকীর দরবেশ জপি সেই নাম
ঘর ছেড়ে হল বাউল।।
জানি, উম্মত আমি গুনাহগার,
হব তবু পুলসরাত পার;
আমার নবী হযরত আমার
কর মোনাজাত কবুল।।
না মিটিতে সাধ মোর নিশি পোহায়
না মিটিতে সাধ মোর নিশি পোহায়।
গভীর আঁধার ছেয়ে
আজো হিয়ায়।।
আমার নয়ন ভরে
এখনও শিশির ঝরে,
এখনো বাহুর পরে
বঁধু ঘুমায়।।
এখনো কবরী-মূলে
কুসুম পড়েনি ঢুলে,
এখনো পড়েনি খুলে
মালা খোঁপায়।।
নিভায়ে আমার বাতি
পোহালো সবার রাতি;
নিশি জেগে মালা গাঁথি
প্রাতে শুকায়
নাচের নেশার ঘোর লেগেছে নয়ন পড়ে ঢুলে লো
নাচের নেশার ঘোর লেগেছে
নয়ন পড়ে ঢু’লে লো–
নয়ন পড়ে ঢুলে।
বুনোফুল পড়লো ঝ’রে নাচের ঘোরে
দোলন-খোঁপা খুলে লো–
দোলন খোঁপা খুলে।।
শুনে এই মাদল-বাজা
নাচে চাঁদ রাতের রাজা নাচে লো নাচে –
শালুকের কাঁকাল ধ’রে
তাল-পুকুরের জলে হে’লে দু’লে (লো)–
জলে হেলে দুলে।
আঁউরে গেল ঝুমকো জবা
লেগে গরম গালের ছোঁয়া,
বাঁশি শুনে ঘুলায় মনে কয়লা-খাদের ধোঁওয়া ।
সই নাচ ফুরালে ফিরে’ ঘরে,
রাত কাটাব কেমন ক’রে
পড়বে মনে বাঁশুরিয়ার
চোখ দু’টি টুলটুলে লো–
চোখ দুটি টুলটুলে।।
নামাজ রোজা হজ্ব জাকাতের পসারিণী আমি
নামাজ রোজা হজ্ব জাকাতের পসারিণী আমি।
নবীর কলমা হেঁকে ফিরি পথে দিবস-যামী।।
আমার নবীজীর পিয়াসী
আয় রে ছুটে মুসলিম নারী,
দ্বীনের সওদা করবি কে আয় রে মুক্তিকামী।।
জন্ম আমার হাজার বছর আগে আরব দেশে,
সারা ভুবন ঠাঁই দিয়েছে আমায় ভালোবেসে।
আমার আজান-ধ্বনি বাজে
কুল মুমিনের বুকের মাঝে;
আমি নবীর মানস কন্যা আল্লাহ আমার স্বামী।।