তব চরণ-প্রান্তে মরণ-বেলায় শরণ দিও
কীর্তন
তব চরণ-প্রান্তে মরণ-বেলায় শরণ দিও, হে প্রিয়।
তুমি মুছায়ে ক্লান্তি, ঘুচায়ে শ্রান্তি (প্রাণে) শান্তি বিছায়ে দিও।।
বরণের ডালা সাজায়ে, হে স্বামী,
সারাটি জীবন চেয়ে আছি আমি;
তুমি নিমেষের তরে মোর দ্বারে থামি’
সে ডালা চরণে নিও।।
তারপর আছে মোর চির-সাথী
অকূল আঁধার অনন্ত রাতি,
ক্ষোভ নাই, যদি নিভে যায় বাতি,
তুমি এসে জ্বালাইও।।
যে যাহা চেয়েছে, পেয়েছে সে কবে;
আশা ঝ’রে যায় নিরাশে নীরবে,
আঘাত-বেদনা, বঁধূ, সব স’বে (শুধু)
একবার দেখা দিও।।
তুমি অনেক দিলে খোদা
তুমি অনেক দিলে খোদা,
দিলে অশেষ নিয়ামত।
আমি লোভী, তাইতো আমার
মিটেনা হসরত।।
কেবলই পাপ করি আমি,
মাফ করিতে তাই, হে স্বামী!
দয়া করে শ্রেষ্ঠ নবীর করিলে উম্মত।
তুমি নানান ছলে করছ পূরণ ক্ষতির খেসারত।।
মায়ের বুকে স্তন্য দিলে, পিতার বুকে স্নেহ,
মাঠে শস্য- ফসল দিলে, আরাম লাগি গেহ।
কোরান দিলে পথ দেখাতে,
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেখাতে,
নামায দিয়ে দেখাইলে মসজিদেরই পথ।
তুমি কেয়ামতের শেষে দিবে বেহেশতী দৌলত।।
তুমি আশা পুরাও খোদা
হামদ
তুমি আশা পুরাও খোদা,
সবাই যখন নিরাশ করে।
সবাই যখন পায়ে ঠেলে,
সান্তনা পাই তোমায় ধরে।।
দ্বারে দ্বারে হাত পাতিয়া
ফিরি যখন শূন্য হাতে
তোমার দানের শিরনি তখন
আসে আমায় পথ দেখাতে।
দেখি হঠাৎ শূন্য
তোমার দানে গেছে ভরে।।
খোদা তোমার ভরসা করি
নামি যখন কোন কাজে,
সে কাজ হাসিল হয় সহজে
শত বিপদ-বাধার মাঝে।
(খোদা) তোমায় ছেড়ে অন্য জনে
শরণ নিলে, যায় সে সরে।।
মাঝ-দরিয়ায় ডুবলে জাহাজ
তোমায় যদি ডাকি,
তোমার রহম কোলে করি
তীরেতে যায় রাখি।
দুখের অনল কুসুম হয়ে
ফুটে ওঠে থরে থরে ।।
তুমি রহিমুর রহমান আমি গুনাহগার বান্দা
তুমি রহিমুর রহমান আমি গুনাহগার বান্দা।
হাত ধরে মোর পথ দেখাও, য়্যা আল্লাহ
আমি আন্ধা।।
(মোর) সারা জীবন গেল কেটে
পাঁচ ভুতেরই বেগার খেটে
(এখন) শেষের বেলা ঘুচাও আল্লাহ
এই দুনিয়ার ধান্দা
(আল্লাহ) আমি তোমার বনের পাখি,
কেন আমায় ধরে
রাখলে মায়ায় শিকলি বেঁধে
এই দেহ-পিঞ্জরে।
বলে এদের বাঁধা বুলি
আল্লাহ তোমায় গেছি ভুলে,
(এবার) শিকলি কেটে কাছে ডাকো,
শেষ করো এই কান্দা।।
তেপান্তরের মাঠে বঁধু হে একা বসে থাকি
সাঁওতালি সুর
তেপান্তরের মাঠে বঁধু হে একা বসে থাকি।
তুমি যে পথ দিয়ে গেছ চলে, তারি ধূলা মাখি’ হে।।
একা বসে থাকি।।
যেমন পা ফেলেছ গিরিমাটির রাঙা পথের ধূলাতে,
অমনি করে আমার বুকে চরণ যদি বুলাতে,
আমি খানিক জ্বালা ভুলতাম ঐ মানিক বুকে রাখি’ ।।
আমার খাওয়া পরার নাই রুচি, আর ঘুম আসে না চোখে
আমি আউরী হয়ে বেড়াই পথে, হাসে পাড়ার লোকে।
দেখে হাসে পাড়ার লোকে।
আমি তাল পুকুরে যেতে নারি, একি তোমার মায়া হে,
আমি কালো জলে দেখি তোমার কালো-রূপের ছায়া হে;
আমার কলঙ্কিনী নাম রটিয়ে তুমি দিলে ফাঁকি ।।
তোমার নামে একি নেশা হে প্রিয় হজরত
গজল নাতিয়া
তোমার নামে একি নেশা
হে প্রিয় হজরত!
যত ডাকি তত কাঁদি
মেটে না হস্রত।।
কোথায় আরব কোথায় এ হিন্দ্
নয়নে মোর নাই তবু নিন্দ
আমার প্রাণে শুধু জাগে তোমার
মদিনার ঐ পথ।।
কে বলে তুমি গেছ চলে হাজার বছর আগে
আছ লুকিয়ে তুমি প্রিয়তম আমার অনুরাগে।
মোর অন্তরের হেরা গুহায়
আজোও তোমার ডাক শোনা যায়
জাগে আমার প্রেমের ‘কাবা’ ঘরে
তোমারি সুরত।।
যারা দোজখ হতে ত্রাণের তরে তোমায় ভালোবাসে,
আমার এ প্রেম দেখে তারা কেউ কাঁদে কেউ হাসে।
তুমি জান, হে মোর স্বামী, শাফায়াৎ চাহি না আমি
আমি শুধু তোমায় চাহি তোমার হজরত তোমার মুহব্বত।।
তোমার দেওয়া ব্যথা সে যে তোমার হাতের দান
তোমার দেওয়া ব্যথা, সে যে
তোমার হাতের দান।
তাই ত সে-দান মাথায় তুলে
নিলাম, হে পাষাণ।।
তুমি কাঁদাও, তাই ত বঁধু,
বিরহ মোর হল মধু,
সে যে আমার গলার মালা
তোমার অপমান।।
আমি বেদীমূলে কাঁদি
তুমি পাষাণ অবিচল
জানি হে নাথ, সে যে তোমার
পূজা নেওয়ার ছল।
তোমার দেবালয়ে মোরে
রাখলে পূজারিণী করে,
সেই আনন্দে ভুলেছি নাথ
সকল অভিমান।।
তোমারি আঁখির মত আকাশের দুটি তারা
আধুনিক
তোমারি আঁখির মত আকাশের দুটি তারা
চেয়ে থাকে মোর পানে নিশীথে তন্দ্রাহারা।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?
ক্ষীণ আঁখি-দীপ জ্বালি বাতায়নে জাগি একা
অসীম অন্ধকারে খুঁজি তব পথ-রেখা
সহসা দখিনবায়ে চাঁপাবনে জাগে সাড়া।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?
তব স্মৃতি যদি ভুলি ক্ষণতরে আন-কাজে
কে যেন কাঁদিয়া ওঠে আমার বুকের মাঝে।
সে কি তুমি, সে কি তুমি?
বৈশাখী ঝড়ে রাতে চমকিয়া উঠি জেগে
বুঝি অশান্ত মম আসিলে ঝড়ের বেগে
ঝড় চলে যায় কেঁদে ঢালিয়া শ্রাবণধারা।
সে কি তুমি? সে কি তুমি?
ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়
ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ
এলো রে দুনিয়ায়।
আয় রে সাগর আকাশ বাতাস, দেখবি যদি আয়।।
ধূলির ধরা বেহেশ্তে আজ,
জয় করিল দিলরে লাজ;
আজকে খুশির ঢল নেমেছে ধূসর সাহারায়।।
দেখ্ আমিনা মায়ের কোলে
দোলে শিশু ইসলাম দোলে,
কচি মুখে শাহাদাতের বাণী সে শোনায়।।
আজকে যত পাপী ও তাপী
সব গুনাহের পেল মাফী,
দুনিয়া হতে বে-ইনসাফী
জুলুম নিল বিদায়।।
নিখিল দরুদ পড়ে লয়ে ও-নাম–
সাল্লাল্লাহু আলায়হি ও-সাল্লাম;
জীন পরী ফেরেশ্তা সালাম
জানায় নবীর পায়।।