গগনে খেলায় সাপ বরষা-বেদিনী
গগনে খেলায় সাপ বরষা-বেদিনী।
দূরে দাঁড়ায়ে দেখে ভয়-ভীতা মেদিনী।।
দেখায় মেঘের ঝাঁপি তুলিয়া,
ফনা তুলি’ বিদ্যুৎ-ফণি ওঠে দুলিয়া,
ঝড়ের বাঁশিতে বাজে তার
অশান্ত রাগিণী।।
মহাসাগরে লুটায় তার সর্পিল অঞ্চল,
দিগন্তে দুলে তার এলোকেশ পিঙ্গল,
ছিটায় মন্ত্রপূত ধারাজল অবিরল
তন্বী-মোহিনী।।
অশনি-ডমরু ওঠে দমকি’
পাতালে বাসুকি ওঠে চমকি’
তার ডাক শুনে ছুটে আসে নদীজল
(যেন) পাহাড়িয়া নাগিনী।।
চমকে চপলা মেঘে মগন গগন
চমকে চপলা, মেঘে মগন গগন।
গরজিছে রহি রহি অশনি সঘন।।
লুকায়েছে গ্রহতারা, দিবসে ঘনায় রাতি,
শূন্য কুটির কাঁদি, কোথায় ব্যথার সাথী,
ভীত চমকিত চিত সচকিত শ্রবণ।।
অবিরত বাদল বরষিছে ঝরঝর
বহিছে তরলতর পুবালী পবন।
বিজলি -জ্বালার মালা পরিয়া কে মেঘবালা
কাঁদিছে আমারি মত বিষাদ-মগন।।
ভীরু এ মন-মৃগ আলয় খুঁজিছে ফিরে,
জড়ায়ে ধরিছে লতা সভয়ে বনস্পতিরে,
গগনে মেলিয়া শাখা বন-উপবন।।
চল রে কাবার জেয়ারতে, চল নবীজীর দেশ
চল রে কাবার জেয়ারতে, চল নবীজীর দেশ।
দুনিয়াদারির লেবাস খুলে পর রে হাজীর বেশ।।
আওকাতে তোর থাকে যদি আরফাতের ময়দান,
চল আরফাতের ময়দান,
এক জামাত হয় যেখানে ভাই নিখিল মুসলমান–
মুসলিম গৌরব দেখার যদি থাকে তোর খায়েশ।।
যেথায় হজরত হলেন নাজেল মা আমিনার ঘরে
খেলেছেন যার পথে-ঘাটে মক্কার শহরে–
চল মক্কার শহরে –
সেই মাঠের ধূলা মাখবি যথা নবী চরাতেন মেষ।।
ক’রে হিজরত কায়েম হলেন মদিনায় হজরত–
যে মদিনায় হজরত,
সেই মদিনা দেখবি রে চল, মিটবে রে তোর প্রানের হসরত;
সেথা নবীজীর ঐ রওজাতে তোর আরজি করবি পেশ।।
চীন আরব হিন্দুস্থান, নিখিল ধরাধাম
চীন আরব হিন্দুস্থান, নিখিল ধরাধাম
জানে আমায়, চেনে আমার, মুসলিম আমার নাম।।
অন্ধকারে আজান দিয়ে ভাঙনু ঘুমঘোর,
আলোর অভিযান এনেছি, রাত করেছি ভোর,
এক সমান করেছি ভেঙ্গে উচ্চ-নীচ তামাম।।
চেনে মোরে সাহারা গোবি দুর্গম পর্বত,
মন্থন করেছি সাগর নহর সিন্ধু রথ;
বয়েছে আফ্রিকা ইউরোপে আমারই তাঞ্জাম।।
পাক মুলুকে বসিয়েছি খোদার মসজিদ,
জগৎ সাক্ষী পাপীদেরকে পিইয়েছি তৌহিদ;
বিরান-বনে রচেছি যে হাজার নগর গ্রাম।।
চোখে চোখে চাহ যখন তোমরা দুটি পাখি
চোখে চোখে চাহ যখন
তোমরা দুটি পাখি,
সেই চাহনি দেখি আমি
অন্তরালে থাকি’।।
মনে জাগে, অনেক আগে
এমনি গভীর অনুরাগে
আমার পানে চাইত কেহ
এমনি অরুণ-আঁখি।।
ঘুমাও যখন তোমরা দু’জন
পাখায় বেঁধে পাখা,
আমি দূরে জেগে থাকি,
যায় না কাঁদন রাখা।
পরশ যেন লেগে আছে
শূন্য আমার বুকের কাছে,
তোমার মতন ঘুমাত কেউ
এই বুকে মুখ রাখি’।।
জরীন হরফে লেখা রূপালি হরফে লেখা
জরীন হরফে লেখা রূপালি হরফে লেখা
আসমানের কোরআন–
(নীল)আসমানের কোরআন।
সেথা তারায় তারায় খোদার কালাম
(তোরা) পড়, রে মুসলমান।।
সেথা ঈদের চাঁদে লেখা
মোহাম্মদের ‘মীম’-এর রেখা,
সুরুযেরই বাতি জ্বেলে’ পড়ে রেজোয়ান।।
খোদার আরশ লুকিয়ে আছে ঐ কোরআনের মাঝে,
খোঁজে ফকির-দরবেশ সেই আরশ সকাল-সাঁঝে।
খোদার দীদার চাস রে, যদি
পড় এ কোরআন নিরবধি;
খোদার নুরের রওশনীতে রাঙ রে দেহ-প্রাণ।।
জাগো অমৃত-পিয়াসী চিত
জাগো অমৃত-পিয়াসী চিত
আত্মা অনিরুদ্ধ
কল্যাণ প্রবুদ্ধ।
জাগো শুভ্র জ্ঞান পরম
নব -প্রভাত পুষ্প সম
আলোক-স্নান-শুদ্ধ।।
সকল পাপ কলুষ তাপ
দু:খ গ্লানি ভোলো,
পুণ্য প্রাণ-প্রদীপ-শিখা
স্বর্গ-পানে তোলো।
বাহিরে আলো ডাকিছে জাগো
তিমির-কারারুদ্ধ।।
ফুলের সম আলোর সম
ফুটিয়া ওঠ হৃদয় মম
রূপ-রস-গন্ধে
অনায়াস আনন্দে
জাগো মায়া-বিমুগ্ধ।।
জাগো রে তরুণ জাগো রে ছাত্রদল
ছাত্র -সঙ্গিত
জাগো রে তরুণ জাগো রে ছাত্রদল
স্বতঃ-উৎসারিত ঝর্ণাধারায় প্রায়
জাগো প্রাণ-চঞ্চল।।
ভেদ-বিভেদের গ্লানির কারা-প্রাচীর
ধুলিসাৎ করি জাগো উন্নত শির
জবা-কুসুম-সঙ্কাশ জাগে বীর,
বিধি নিষেধের ভাঙ্গো ভাঙ্গো অর্গল।
ধর্ম-বর্ণ-জাতির ঊর্ধ্বে জাগো রে নবীন প্রাণ!
তোমার অভ্যুদয়ে হোক সব বিরোধের অবসান
সঙ্কীর্ণতা ক্ষুদ্রতা ভোলো ভোলো
সকল মানুষে ঊর্ধ্বে ধরিয়া তোলো!
তোমাদের চাহে আজ নিখিল জনসমাজ
আনো জ্ঞানদীপ এই তিমিরের মাঝ,
বিধাতার সম জাগো প্রেম-প্রোজ্জ্বল।
জানি আমার সাধনা নাই আছে তবু সাধ
জানি আমার সাধনা নাই আছে তবু সাধ,
তুমি আপনি এসে দেবে ধরা দূর-আকাশের চাঁদ।।
চকোর নহি মেঘও নহি
আপন ঘরে বন্দী রহি’
আমি শুধু মনকে কহি–
কাঁদ নিশি দিন কাঁদ।।
কূল-ডুবানো জোয়ার কোথা পাব হে সুন্দর?
হে চাঁদ, আমি সাগর নহি, পল্লী-সরোবর।
আমি পল্লী -সরোবর।
নিশীথ-রাতে আমার নীরে,
প্রেমের কুমুদ ফোটে ধীরে,
মোর ভীরু প্রেম যেতে নারে
ছাপিয়ে লাজের বাঁধ।।
ঝরল যে ফুল ফোটার আগেই
আশাবরী মিশ্র-লাউনী
ঝরল যে ফুল ফোটার আগেই
তারি তরে কাঁদি, হায়!
মুকুলে যার মুখের হাসি
চোখের জলে নিভে যায়।।
হায় যে বুলবুল গুল-বাগিচায়
গোলাপকুঁড়ির গাইত গান,
আকুল ঝড়ে আজ সে পড়ে
পথের ধূলায় মূরছায়।।
সুখ-নদীর উপকূলে
বাঁধিল সে সোনার ঘর।
আজ কাঁদে সে গৃহ-হারা
বালুচরে নিরাশায়।।
যাবার যারা, যায় না তারা
থাকে কাঁটা, ঝরে ফুল।
শুকায়ে নদী মরুর বুকে,
প্রভাত-আলো মেঘে ছায়।।