ওরে শুভ্রবসনা রজনীগন্ধা বনের বিধবা মেয়ে
ওরে শুভ্রবসনা রজনীগন্ধা
বনের বিধবা মেয়ে,
হারানো কাহারে খুঁজিস নিশীথ–
আকাশের পানে চেয়ে॥
ক্ষীণ তনু-লতা বেদনা-মলিন
উদাস মূরতি ভূষণ-বিহীন,
তোরে হেরি’ ঝরে কুসুম অশ্রু
বনের কপোল বেয়ে॥
তুই লুকায়ে কাঁদিস্ রজনী জাগিস্
সবাই ঘুমায় যবে,
বিধাতারে যেন বলিস, “দেবতা,
আমারে লইবে কবে”।
করুণ-শুভ্র-ভালোবাসা তোর
সুরভি ছড়ায় সারা নিশি ভোর,
প্রভাত বেলায় লুটাস্ ধুলায়
যেন কারে নাহি পেয়ে॥
কল-কল্লোলে ত্রিংশ কোটি-কণ্ঠে উঠেছে গান
কল-কল্লোলে ত্রিংশ কোটি-কণ্ঠে উঠেছে গান
জয় আর্যাবর্ত, জয় ভারত, জয় হিন্দুস্থান।।
শিরে হিমালয় প্রহরী, পদ বন্দে সাগর যার,
শ্যাম বনানী কুন্তলা রানী জন্মভূমি আমার।
ধূসর কভু উষর মরুতে,
কখনো কোমল লতায় তরুতে,
কখনো ঈশানে জলদ-মন্দ্রে বাজে মেঘ-বিষাণ।।
সকল জাতি সকল ধর্ম পেয়েছে হেথায় ঠাঁই
এসেছিল যারা শত্রুর রূপে, আজ সে স্বজন ভাই।
বিজয়ীর বেশে আসিল যাহারা,
আজি মা’র কোলে সন্তান তারা,
(তাই) মা’র কোল নিয়ে করে কাড়াকাড়ি হিন্দু-মুসলমান।।
জৈন পার্শী বৌদ্ধ শক্তি খ্রিস্টান বৈষ্ণব
মা’র মমতায় ভুলিয়া বিরোধ এক হয়ে গেছে সব।
ভুলি’ বিভিন্ন ভাষা আর বেশ
গাহিছে সকলে আমার স্বদেশ
শত দল মিলে’ শতদল হ’য়ে করিছে অর্ঘ্য দান।।
কলমা শাহাদতে আছে খোদার জ্যোতি
কলমা শাহাদতে আছে খোদার জ্যোতি।
ঝিনুকের বুকে লুকিয়ে থাকে যেমন মোতি।।
ঐ কলমা জপে যে ঘুমের আগে
ঐ কলমা জপিয়া যে প্রভাতে জাগে,
দুখের সংসার যার সুখময় হয়, তা’র-
তার মুসিবত আসে না কো, হয় না ক্ষতি।।
হরদম জপে মনে কলমা যে জন
খোদায়ী তত্ত্ব তা’র রহে না গোপন,
দীলের আয়না তার হয়ে যায় পাক সাফ,
সদা আল্লার রাহে তার রহে মতি।।
এসমে আজম হতে কদর ইহার
পায় ঘরে ব’সে খোদা রসুলের দিদার,
তাহারি হৃদয়াকাশে সাত বেহেশত নাচে
তার আল্লার আরশে হয় আখেরে গতি।।
কুহু কুহু কুহু বলে মহুয়া-বনে
কুহু কুহু কুহু বলে মহুয়া-বনে।
মাধবী চাঁদ এলে পূব গগনে।
দুলে ওঠে বনান্তে,
আসিলে কে পান্থ,
তব পদধ্বনি অশান্ত হে
শুনি মম মনে।।
বাতায়নে প্রদীপ জ্বালি’
আসা-পথ চাহি,
প্রহর গণি, গান গাহি।
এলে আজি নিশীথে
দেখা দিতে তৃষিতে,
শুনি দশদিশিতে
বাঁশি তব ক্ষণে ক্ষণে।।
কে হেলে দুলে চলে এলোচুলে
কে হেলে দুলে চলে এলোচুলে,
হেসে নদীকুলে এলো হেলে দুলে;
নূপুর রিনিকি ঝিনি বাজে রে
পথ-মাঝে রে, বাজেরে।।
দূরে মন উদাসি
বাজে বাঁশের বাঁশি,
বকুল-শাখে পাপিয়া ডাকে-
হেরিয়া বুঝি এই বন-বালিকায়
রঙিন সাজে রে, বাজে রে।।
এ বুঝি নদীর কেউ
তাই অধীর হলো জলে ঢেউ;
চন্দন-মাখা যেন চাঁদের পুতলি,
যত চলে তত রূপ ওঠে উথলি,
মেঘে লুকালো পরী লাজে রে, বাজে রে
পথ-মাঝে রে, বাজে রে।।
খাতুনে-জান্নাত ফাতেমা জননী
খাতুনে-জান্নাত ফাতেমা জননী
বিশ্ব-দুলালী নবী নন্দিনী।।
মদিনা বাসিনী পাপ-তাপ-নাশিনী
উম্মত-তারিণী আনন্দিনী।।
সাহারার বুকে মাগো তুমি মেঘ-মায়া,
তপ্ত মরুর প্রাণে স্নেহ-তরুছায়া;
মুক্তি লভিল মা গো তব শুভ পরশে
বিশ্বের যত নারী বন্দিনী।।
হাসান হোসেনে তব উম্মত তরে, মা গো!
কারবালা– প্রান্তরে দিলে বলিদান;
বদলাতে তার রোজ হাশরের দিনে
চাহিবে মা মোর মত পাপীদের ত্রাণ।
এলে পাষাণের বুক চিরে নির্ঝর-সম,
করুণার ক্ষীর-ধারা আবে-জমজম;
ফিরদৌস হ’তে রহমত বারি ঢালো
সাধ্বী মুসলিম গরবিনী।।
খেলা শেষ হল, শেষ হয় নাই বেলা
খেলা শেষ হল, শেষ হয় নাই বেলা।
কাঁদিও না কাঁদিও না —
তব তরে রেখে গেনু প্রেম-আনন্দ মেলা।।
খেলো খেলো তুমি আজো বেলা আছে,
খেলা শেষ হলে এসো মোর কাছে,
প্রেম-যমুনার তীরে বসে র’ব
লইয়া শূন্য ভেলা।।
যাহারা আমার বিচার করে’ছে —
ভুল করিয়াছে জানি;
তাহাদের তরে রেখে গেনু মোর
বিদায়ের গানখানি!
হই কলঙ্কী, হোক মোর ভুল,
বালুকার বুকে ফুটায়েছি ফুল;
তুমিও ভুলিতে নারিবে সে-কথা–
হানো যত অবহেলা।।
খেলে চঞ্চলা বরষা-বালিকা
খেলে চঞ্চলা বরষা-বালিকা
মেঘের এলোকেশে ওড়ে পুবালি বায়
দোলে গলায় বলাকার মালিকা।।
চপল বিদ্যুতে হেরি’ সে চপলার
ঝিলিক হানে কণ্ঠের মণিহার,
নীল আঁচল হতে তৃষিত ধরার পথে
ছুঁড়ে ফেলে মুঠি মুঠি বৃষ্টি শেফালিকা।।
কেয়া পাতার তরী ভাসায় কমল -ঝিলে
তরু-লতার শাখা সাজায় হরিৎ নীলে।
ছিটিয়ে মেঠো জল খেলে সে অবিরল
কাজলা দীঘির জলে ঢেউ তোলে
আনমনে ভাসায় পদ্ম-পাতার থালিকা।।
খোদায় পাইয়া বিশ্ববিজয়ী ছিল একদিন যারা
খোদায় পাইয়া বিশ্ববিজয়ী ছিল একদিন যারা।
খোদায় ভুলিয়া ভীত পরাজিত আজ দুনিয়ায় তারা।।
খোদার নামের আশ্রয় ছেড়ে
ভিখারির বেশে দেশে দেশে ফেরে,
ভোগ-বিলাসের মোহে ভুলে, হায়, নিল বন্ধন-কারা।।
খোদার সঙ্গে যুক্ত সদাই ছিল যাহাদের মন
দুখে রোগে শোকে অটল যাহারা রহিত সর্বক্ষণ—
এসে শয়তান ভোগ-বিলাসের
কাড়িয়া লয়েছে ঈমান তাদের;
খোদায় হারায়ে মুসলিম আজ হয়েছে সর্বহারা।।
খয়বর-জয়ী আলী হায়দর
খয়বর-জয়ী আলী হায়দর,
জাগো জাগো আরবার!
দাও দুশমন-দুর্গ-বিদারী
দুধারী জুলফিকার।।
এস শেরে-খোদা ফিরিয়া আরবে–
ডাকে মুসলিম ইয়া আলী রবে;
হায়দরি-হাকে তন্দ্রা-মগনে
করো করো হুঁশিয়ার।।
আলবোর্জের চূড়া গুঁড়া-করা
গোর্জ আবার হানো;
বেহেশতি সাকি,মৃত এ জাতিরে
আবে-কওসর দানো।
আজি বিশ্ব-বিজয়ী জাতি যে বেহুঁশ,
দাও তারে নব কুয়ত ও জোশ;
এস নিরাশার মরু-ধূলি উড়ায়ে
দুলদুল-আসওয়ার।।