এলো বরষা শ্যাম সরসা প্রিয়-দরশা
সুরদাসী মল্লার -তেতালা
এলো বরষা শ্যাম সরসা প্রিয়-দরশা।
দাদুরী পাপিয়া চাতকী বোলে
নব-জলধারা-হরষা।।
নাচে বন-কুন্তলা যামিনী উতলা,
খুলে পড়ে গগনে দামিনী মেখলা,
চলে যেতে ঢলে পড়ে অভিসারে
চপলা-যৌবন-মদ-অলসা।।
একা কেতকী বনে কেকা কিহরে,
বহে পুব-হাওয়া কদম্ব শিহরে।
দুরন্ত ঝড়ে কোন অশান্ত চাহি রে
ঘরে নাহি রহে মন,যেতে চায় বাহিরে,
যত ভয় জাগে তত সুন্দর লাগে
শ্রাবণ-ঘন-তমসা।
এস ফিরে প্রিয়তম এস ফিরে
এস ফিরে প্রিয়তম এস ফিরে।
আঁখির আলোক হায় জীবনের সন্ধ্যায়
ডুবে যায় নিরাশা-তিমিরে।।
আসে যে-পথে প্রভাতী আলোর ধারা,
যে-পথে আসে চাঁদ, রাতের তারা
নিতি সেই পথে চাই, যদি তব দেখা পাই,
সুধাই তোমার কথা দক্ষিণ সমীরে।।
খুঁজে ফিরি ঝরা নদীর স্রোতে,
ঘর-ছাড়া পথিক ধায় যে পথে,
তব পথ, হে সুদূর,
কত দূর, কত দূর,
কোথা পাব তব দেখা
(কোন) কালের তীরে।।
ঐ হের রসুলে-খোদা এল ঐ
ঐ হের রসুলে-খোদা এল ঐ।
গেলেন মদিনা যবে হিজরতে হযরত
মদিনা হল যেন খুশিতে জিন্নত,
ছুটুয়া আসিল পথে মর্দ ও আওরত
লুটায়ে পায়ে নবীর, গাহে সব
(মোর) ঐ হের রসুলে-খোদা এল ঐ।।
হাজার সে কাফের সেনা বদরে,
তিন শত তের মোমিন এধারে ;
হযরতে দেখিল যেই, কাঁপিয়া ডরে
কহিল কাফের সব তাজিমের ভরে
ঐ হের রসুলে-খোদা এল ঐ।।
কাঁদিবে কেয়ামতে গুনাহগার সব,
নবীর কাছে শাফায়তি করিবেন তলব,
আসিবেন কাঁদন শুনি’ সেই শাহে-আরব
অমনি উঠিবে সেথা খুশির কলরব
ঐ হের রসুলে-খোদা এল ঐ।।
ওগো মা-ফাতেমা ছুটে আয়
ওগো মা-ফাতেমা ছুটে আয়–
তোর দুলালের বুকে হানে ছুরি।
দিনের শেষে বাতি নিভিয়া যায় মাগো,
বুঝি আঁধার হলো মদিনা-পুরী॥
কোথায় শেরে-খোদা, জুলফিকার কোথা–
কবর ফেঁড়ে এস কারবালা যথা;
তোমার আওলাদ বিরান হলো আজি,
নিখিল শোকে মরে ঝুরি॥
কোথায় আখেরী নবী, চুমা খেতে তুমি
যে গলে হোসেনের–
সহিছ কেমনে, সে গলে দুশমন
হানিছে শমসের!
রোজ হাশরে না-কি কওসরের পানি
পিয়াবে তোমরা গো গুনাহ্গারে আনি,
দেখ না কি চেয়ে, দুধের ছেলে-মেয়ে
পানি বিহনে মরে পুড়ি।।
ওগো মুর্শিদ বলো বলো রসুল কোথায় থাকে
গজল
ওগো মুর্শিদ! বলো বলো
রসুল কোথায় থাকে?
কোথায় গেলে কেমন করে
দেখতে পাব তাঁকে?
বেহেশত-পাবে দূর আকাশে
তাঁহার আসন খোদার পাশে,
সে এতই প্রিয়, আপনি খোদা
লুকিয়ে তারে রাখে।।
কোরান পড়ি, হাদিস শুনি,
সাধ মেটে না তাহে,
আতর পেয়ে মন যে আমার
ফুল দেখতে চাহে।
সবাই খুশি ঈদের চাঁদে,
আমার কেন পরান কাঁদে?
দেখব কখন, আমার ঈদের
চাঁদ-মোস্তফাকে।।
ওর নিশীথ-সমাধি ভাঙিও না
ওর নিশীথ-সমাধি ভাঙিও না।
মরা ফুলের সাথে ঝরিল যে ধূলি-পথে –
সে আর জাগিবে না, তারে ডাকিও না।।
তাপসিনী-সম তোমারি ধ্যানে
সে চেয়েছিল তব পথের পানে,
জীবনে যাহার মুছিলে না আঁখি ধার
আজি তাহার পাশে কাঁদিও না।।
মরণের কোলে সে গভীর শান্তিতে
পড়েছে ঘুমায়ে,
তোমারি তরে গাঁথা শুকানো মালিকা
বক্ষে জড়ায়ে
যে মরিয়া জুড়ায়েছে–
ঘুমাইতে দাও তারে জাগিও না।।
ওরে ও দরিয়ার মাঝি
ওরে ও দরিয়ার মাঝি! মোরে
নিয়ে যা রে মদিনা।
তুমি মুর্শিদ হয়ে পথ দেখাও ভাই
আমি যে পথ চিনি না।।
আমার প্রিয় হযরত যেথায়
আছেন নাকি ঘুমিয়ে, ভাই!
আমি প্রাণে যে আর বাঁচি না রে
আমার হযরতের দরশ বিনা।।
নদী নাকি নাই ও দেশে,
নাও না চলে যদি
আমি চোখের সাঁতার-পানি দিয়ে
বইয়ে দেব নদী।।
ঐ মদিনার ধুলি মেখে
কাঁদবো ‘ইয়া মোহাম্মদ’ ডেকে ডেকে রে,
কেঁদেছিল কারবালাতে
যেমন বিবি সকিনা।।
ওরে ও নতুন ঈদের চাঁদ
ওরে ও নতুন ঈদের চাঁদ
তোমার হেরে হৃদয় সাগর আনন্দে উন্মাদ।।
তোমার রাঙা তশতরিতে ফিরদৌসের পরী
খুশির শিরনি বিলায় রে ভাই নিখিল ভুবন ভরি
খোদার রহম পড়ছে তোমার চাঁদিননী রূপে ঝরি।
দুঃখ-শোক সব ভুলিয়ে দিতে তুমি মায়ার ফাঁদ।।
তুমি আসমানে কালাম
ইশারাতে লেখা যেন মোহাম্মাদের নাম।
খোদার আদেশ তুমি জান, স্মরণ করাও এসে;
যাকাত দিতে দৌলত সব দরিদ্রেরে হেসে
শত্রুরে আজি ধরিতে বুকে শেখাও ভালবেসে।
তোমায় দেখে টুটে গেছে অসীম প্রেমের বাঁধ।।
ওরে ও মদিনা, বলতে পারিস কোন সে পথে তোর
ওরে ও মদিনা, বলতে পারিস কোন সে পথে তোর
খেলতো ধূলা-মাটি নিয়ে মা ফাতেমা মোর।।
হাসান-হোসেন খেলতো কোথায় কোন সে খেজুর বনে–
পাথর-কুচি কাঁকর ল’য়ে দুম্বা শিশুর সনে
সেই মুখকে চাঁদ ভেবে রে উড়িত চকোর।।
মা আয়েশা মোর নবীজীর পা ধোয়াতেন যথা–
দেখিয়ে দে সে বেহেশত আমায়, রাখরে আমার কথা
তোর প্রথম কোথায় আজান-ধ্বনি ভাঙলো ঘুমের ঘোর।।
কোন পাহাড়ের ঝর্ণা-তীরে মেষ চরাতেন নবী
কোন পথ দিয়ে রে যেতেন হেরায় আমার আল-আরবী,
তুই কাঁদিস কোথায় বুকে ধ’রে সেই নবীজীর গোর।।
ওরে কে বলে আরবে নদী নাই
ওরে কে বলে আরবে নদী নাই।
যথা রহমতের ঢল বহে অবিরল
দেখি প্রেমে-দরিয়ার পানি, যেদিকে চাই।।
যাঁর কাবা ঘরের পাশে আবে-জমজম,
যথা আল্লা-নামের বাদল ঝরে হরদম,
যার জোয়ার এসে দুনিয়ার দেশে দেশে
পুণ্যের গুলিস্তান রচিল দেখিতে পাই।।
যার ফোরাতের পানি আজো ধরার পরে
নিখিল নর-নারীর চোখে ঝরে
(ওরে) শুকায় না যে নদী দুনিয়ায়।
যার শক্তির বন্যার তরঙ্গ-বেগে
যত বিষণ্ন-প্রাণ ওরে আনন্দে উঠল জেগে
যাঁর প্রেম-নদীতে,যাঁর পুণ্য-তরীতে
মোরা ত’রে যাই।।