সজল হাওয়া কেঁদে বেড়ায়
সজল হাওয়া কেঁদে বেড়ায়
কাজল আকাশ ঘিরে’,
তুমি এস ফিরো।
উঠছে কাঁদন ভাঙন-ধরা
নদীর তীরে তীরে।
তুমি এস ফিরে।।
বন্ধু তব বিরহেরি
অশ্রু ঝরে গগন ঘেরি’,
লুটিয়ে কাঁদে বনভূমি
অশান্ত সমীরে।।
আকাশ কাঁদে, আমি কাঁদি,
বাতাস কেঁদে সারা;
তুমি কোথায়, কোথায় তুমি
পথিক পথহারা।
দুয়ার খুলে নিরুদ্দেশে
চেয়ে আছি অনিমিষে,–
আঁচল ঢেকে রাখবো কত
আশার প্রদীপটিরে।।
ভারতবর্ষ
শ্রাবণ ১৩৪৩
সেদিন অভাব ঘুচবে কি মোর
সেদিন অভাব ঘুচবে কি মোর
যেদিন তুমি আমার হবে?
আমার ধ্যানে আমার জ্ঞানে
প্রাণ মন মোর ঘিরে রবে।।
রইবে তুমি প্রিয়তম
আমার দেহে আত্মা-সম,
জানি না সাধ মিটবে কি-না –
তেমন করেও পাব যবে।।
পাওয়ার আমার শেষ হবে না
পেয়েও তোমায় বক্ষতলে,
সাগর মাঝে মিশে গিয়েও
নদী যেমন ব’য়ে চলে।
চাঁদকে দেখে পরান জুড়ায়
তবু দেখার সাধ কি ফুরায়,
মিটেছেল সাধ কি রাধার
নিত্য পেয়েও নীল-মাধবে।।
সোজা পথে চল রে ভাই, ঈমান থেকো ধরে
সোজা পথে চল রে ভাই, ঈমান থেকো ধরে।
খোদার রহম মেঘের মতো ছায়া দেবে তোরে।।
তুমি বিচার করো না, কেউ করলে তোমার ক্ষতি;
এক সে বিচার-করনেওয়ালা ত্রিভুবনের পতি।
তোর ক্ষতির ডালে ধরবে মোতি তাঁর বিচারের জোরে।।
সকল সময় ধরে থেকো আল্লাহ নামের খুঁটি,
তিনি তোমার হেফাজতে দিবেন ক্ষুধার রুটি;
ইয়াকিন্-দীলে থেকো তুমি,দিবেন তোমায় তরে।।
হাওয়াতে নেচে নেচে যায় ঐ তটিনী
খাম্বাজ –কাওয়ালি
হাওয়াতে নেচে নেচে যায় ঐ তটিনী
পাহাড়ের পথ-ভোলা কিশোরী নটিনী।।
তরঙ্গ-আঁচল দুলায়ে,
বন-ভূমির মন ভুলায়ে,
চলেছে চপল পায়ে
একাকিনী উদাসিনী।।
এঁকেবেকে থমকে গিয়ে
হরিণীরে চমকে দিয়ে
ছুটিয়া যায় সুদূরে;
আয় আয় বলি ডাকে কে কুলের বধূরে।
কূলে কূলে ফুটিয়ে ফুল
টগর জবা পলাশ শিমুল,
নেচে চলে পথ বেভুল
ঘর-ছাড়া বিবাগিনী।।
হায় হায় উঠেছে মাতম
হায় হায় উঠেছে মাতম
আকাশ পবন ভুবন ভরি।
আখেরি নবী দ্বীনের রবি নিল বিদায়
বিশ্ব-নিখিল আঁধার করি।।
অসীম তিমিরে পুণ্যের আলো
অানিল যে চাঁদ, সে কোথায় লুকালো;
আকাশে ললাট হানি ‘কাঁদিছে মরুভূমি’
শোকে গ্রহ-তারকা পড়িছে ঝরি।।
তৃণ নাহি খায় উট, মেষ নাহি মাঠে যায়;
বিহগ-শাবক কাঁদে জননীরে ভুলি হায়!
বন্ধুর বিরহ কি সহিল না আল্লার,
তাই তাঁরে ডাকিয়া নিল কাছে আপনার;
হায় কাণ্ডারি গেল চলে’ রাখিয়া পারের তরী।।
হে প্রিয় নবী রসূল আমার
হে প্রিয় নবী রসূল আমার
প’রেছি আভরণ নামেরি তোমার।।
নয়নের কাজলে তব নাম,
ললাটের টীপে জ্বলে তব নাম;
গাঁথা মম কুন্তলে আহমদ—
বাঁধা মোর অঞ্চলে তব নাম।
দুলিছে গলে মোর তব নাম মণি-হার।।
তাবিজ অঙ্গুরী তব নাম,
বাজু ও পৈচী চুড়ি তব নাম;
ভয়ে ভয়ে পথে পথে ঘুরি যে—
পাছে কেউ করে চুরি তব নাম
ঐ নাম রূপ মোর ঐ নাম আঁখি ধার।।
বুকের বেদনা ঢাকা তব নাম;
ধ্যানে মোর জ্ঞানে মোর তুমি যে—
প্রেম-ও ভক্তি মাখা তব নাম
প্রিয় নাম আহমদ জপি আমি অনিবার।।
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধর হাত মম
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধর হাত মম।
জ্বলওয়া দেখালে দীল হরিলে শুধু হলে বেগানা;
হেসে হেসে সংসার কহে–দীওয়ানা এ দীওয়ানা॥
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধরো হাত মম।।
দুখের দোসর কেউ নাহি মোর নাই ব্যথিত ব্যথার,
তোমায় ভুলে ভাসি অকূলে, পার করো সরকার॥
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধরো হাত মম।।
বিরহের রাত একেলা কেঁদে হলো ভোর;
হৃদয়ে মোর শান্তি নাই, কাঁদে পরাণ মোর॥
হে মদিনাবাসী প্রেমিক, ধরো হাত মম।
হেরেমের বন্দিনী কাঁদিয়া ডাকে
হেরেমের বন্দিনী কাঁদিয়া ডাকে–
তুমি শুনিতে কি পাও?
আখেরি নবী প্রিয় আল-আরবি বারেক ফিরে চাও।।
পিঁজরার পাখি সম অন্ধকারায়
বন্ধ থাকি’ এ জীবন কেটে’ যায়;
কাঁদে প্রাণ ছুটে যেতে তব মদিনায়
মরণের এই জিঞ্জির খুলে’ দাও।।
ফতেমার মেয়েদের হেরি’ আঁখি-নীর
বেহেশতে কেমনে আছ তুমি থির!
যেতে নারি মসজিদে শুনিয়া আজান,
বাহিরে ওয়াজ হয়, ঘরে কাঁদে প্রাণ
ঝুটা এই বোরখার হোক অবসান–
আঁধারে হেরেমে আশা-আলোক দেখাও।।