মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই
মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।।
আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে,
পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।
গোর-আজাব থেকে এ গুনাহগার পাইবে রেহাই।।
কত পরহেজগার খোদার ভক্ত নবীজীর উম্মত
ঐ মসজিদে করে রে ভাই, কোরান তেলাওয়াত।
সেই কোরান শুনে যেন আমি পরান জুড়াই।।
কত দরবেশ ফকির রে ভাই, মসজিদের আঙ্গিনাতে
আল্লার নাম জিকির করে লুকিয়ে গভীর রাতে,
আমি তাদের সাথে কেঁদে কেঁদে
(আল্লার নাম জপতে চাই)।।
মা গো আমায় কেন শিখাইলি কেন আল্লাহ নাম
মা গো আমায় কেন শিখাইলি কেন আল্লা নাম
নাম জপিতে আর হুঁশ থাকে না, ভুলি সকল কাম।।
লোকে বলে, আল্লাতালায় যায় না না-নাকি পাওয়া;
ও-নাম জপিলে প্রানে কেন বহে দখিন হাওয়া!
ও-নাম জপিলে হিয়ার মাঝে
কেন এত ব্যাথা বাজে,
কে তবে মা আমার বুকে কাঁদে অবিরাম।।
পুরুষরা সব মসজিদে যায়
আমি ঘরে কাঁদি;
কে যেন কয় কানের কাছে-তুই যে আমার বাঁদী
তাই ঘরে রাখি বাঁধি।
মাগো আমার নামাজ রোজা খোদায় ভালোবাসা,
ঐ নাম জপিলেই মিটে আমার বেহেশতের পিয়াসা!
শত ঈদের চাঁদও দিতে নারে আল্লাহ নামের দাম।।
মাদল বাজিয়ে এল বাদল মেঘ এলোমেলো
মাদল বাজিয়ে এল বাদল মেঘ এলোমেলো
মাতলা হাওয়া এল বনে।
ময়ুর-ময়ুরী নাচে কলো জামের গাছে
প্রিয়া পিয়া বন-পাপিয়া ডাকে আপন মনে।।
বেত -বনের আড়ালে ডাহুকী ডাকে
ডাকে না এমন দিনে কেহ আমাকে;
একলা মনে টেকে না ঘরের কোণে।।
জঙ্গল পাহাড় কাঁপে বাজের আওয়াজে,
বুকের মাঝে তবু নুপুর বাজে;
ঝিঁঝি তার ডাকে ভুলে
ঝিম্ ঝিম্ ঝিম্ বৃষ্টির বাজ্না শোনে।।
মালা গাঁথা শেষ না হতে তুমি এলে ঘরে
মালা গাঁথা শেষ না হতে তুমি এলে ঘরে,
শূন্য হাতে তোমায় বরণ করব কেমন ক’রে?
লজ্জা পাবার অবসর মোর
দিলে না হে চঞ্চল, চোর,
সজ্জা-বিহীন মলিন তনু দেখলে নয়ন ভরে।।
বিফল মালার ফুলগুলি হায় কোথায় এখন রাখি,
ক্ষণিক দাঁড়াও, ঐ কুসুমে (তোমার) চরণ দু’টি ঢাকি।
(তোমার) চরণ দুটি ঢাকি।
আকুল কেশে পা মুছিয়ে
করব বাতাস আঁচল দিয়ে,
মোর নয়ন হবে আরতি-দীপ তোমার পূজার তরে।।
মিটিল না সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়
মিটিল না সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়।
তাই আবার বাসিতে ভালো আসিব ধরায়।
আবার বিরহে তব কাঁদিব
আবার প্রণয়-ডোরে বাঁধিব
শুধু নিমেষেরি তরে আঁখি দুটি জলে ভ’রে
ঝ’রে যাব অবেলায়।।
যে গোধূলি-লগ্নে নববধূ হয় নারী
(সেই) গোধূলি-লগ্নে বঁধু দিল আমারে
গেরুয়া শাড়ি
বঁধু আমার বিরহ তব গানে
সুর হয়ে কাঁদে প্রাণে প্রাণে
আমি নিজে নাহি ধরা দিয়ে সকলের প্রেম নিয়ে
দিনু তব পায়।।
মেঘ-বরণ কন্যা থাকে মেঘলামতীর দেশে
মেঘ-বরণ কন্যা থাকে
মেঘলামতীর দেশে।
সেই দেশে মেঘ জল ঢালিও
তাহার আকুল কেশে।।
তাহার কালো চোখের কাজল
শাওন- মেঘের চেয়ে শ্যামল,
চাউনিতে তার বিজলি ছড়ায়,
চমক বেড়ায় ভেসে ।।
সে ব’সে থাকে পা ডুবিয়ে
ঘুমতী নদীর জলে;
সেু দাঁড়িয়ে থাকে ছবির মত
একলা তরু-তলে।
কদম ফুলের মালা গেঁথে
ছড়িয়ে সে দেয় ধানের ক্ষেতে;
তারে দেখতে পেলে আমার কথা
কইও ভালোবেসে।।
মেষ চারণে যায় নবী কিশোর রাখাল-বেশে
মেষ চারণে যায় নবী কিশোর রাখাল-বেশে
নীল রেশমি রুমাল বেঁধে তার চারু- চাঁচর কেশে।
তাঁর রাঙা পদতলে পুলকে ধরা টলে
তাঁর রূপ -লাবনির ঢলে মরুভূমি গেল ভেসে।।
তাঁর মুখে রহে চাহি মেষ-শিশু তৃণ ভুলি’,
বিশ্বের শাহানশাহ আজ মাখে গোঠের ধূলি,
তাঁর চরণ-নখরে কোটি চাঁদ কেঁদে মরে
তাঁর ছায়া ক’রে চলে আকাশে মেঘ এসে।।,
কিশোর নবী গোঠে চলে–
তাঁর চরণ-ছোঁয়ায় পথের পাথর
মোম হয়ে যায় গ’লে
তসলিম জানায় পাহাড়
চরণে ঝুঁকে তাঁহার।
নারঙ্গী আঙুর খর্রজু পায়ে নজরানা দেয় হেসে।।
মোর না মিটিতে আশা ভাঙিল খেলা
মোর না মিটিতে আশা ভাঙিল খেলা।
জীবন প্রভাতে এ লো বিদায়-বেলা।।
আঁচলের ফুলগুলি করুণ নয়ানে
নিরাশায় চেয়ে আছে মোর মুখপানে,
বাজিয়াছে বুকে যেন, কার অবহেলা।।
আঁধারের এলোকেশ দু’ হাতে জড়ায়ে
যেতে যেতে নিশীথিনী কাঁদে বন-ছায়ে।
বুঝি দুখ-নিশি মোর
হবে না হবে না ভোর;
ভিড়িবে না কূলে মোর বিরহের ভেলা।।
যখন আমার কুসুম ঝরার বেলা
যখন আমার কুসুম ঝরার বেলা,
তখন তুমি এলে
ভাটির স্রোতে ভাসলো যখন
ভেলা পারের পথিক এলে।।
আঁধার যখন ছাইল বনতল
পথ হারিয়ে এলে হে চঞ্চল
দীপ নিভাতে এলে হে বাদল
ঝড়ের পাখা মেলে।।
শূন্য যখন নিবেদনের থালা
তখন তুমি এলে
শুকিয়ে যখন ঝরল বরণ-মালা
তখন তুমি এলে।।
নিরশ্রু এই নয়ন-পাতে
শেষ পূজা মোর আজকে রাঁতে
নিবু নিবু প্রাণ-শিখাতে
আরতি-দীপ জ্বেলে।।
যাবার বেলায় সালাম লহো হে পাক রমজান
যাবার বেলায় সালাম লহো হে পাক রমজান।
তবু বিদায়-ব্যাথায় কাঁদিছে নিখিল মুসলিম জাহান।।
পাপীর তরে তুমি পারের তরী ছিলে দুনিয়ায়,
তোমারি গুণে দোজখের আগুন নিভে যায়;
তোমারি ভয়ে লুকিয়ে ছিল শয়তান।
ওগো রমজান, তোমারি তরে মুসলিম যত
রাখিয়া রোজা ছিল জাগিয়া চাহি তব পথ;
আনিয়াছিলে দুনিয়াতে তুমি পবিত্র কোরআন।।
পরহেজ্গারের তুমি যে প্রিয় প্রাণের সাথী,
মসজিদে প্রাণের তুমি যে জ্বালাও দ্বীনের বাতি,
উড়িয়ে গেলে যাবার বেলায় নূতন ঈদের চাঁদের নিশান।