বন-কুন্তল এলায়ে বন-শবরী ঝুরে সকরুণ সুরে
বন-কুন্তলা-তেতালা
বন-কুন্তল এলায়ে
বন-শবরী ঝুরে
সকরুণ সুরে।
বিষাদিত ছায়া তার
চৈতালি সন্ধ্যায়
চাঁদের মুকুরে।।
চপলতা বিসরি’ যেন বন-যৌবন
বিরহ-ক্ষীণ আজি উদাস উন্মন,
তোলে না ঝঙ্কার আর
ঝরা পাতার
মর্মর নূপুর।।
যে কুহু কুহরিত মধুর পঞ্চমে
বিভোর ভাবে,
ভগ্ন কন্ঠে তার থেমে যায় সুর
করুণ রেখাবে।
কোন বন-শিকারির অকরুণ তীর
আলো হরে নিল ওই উজল অাঁখির;
ফেলে-যাওয়া বাঁশি তার অঞ্চলে লুকায়ে–
গিরি-দরী-পান্তরে খোঁজে সে নিঠুরে।
বরণ করে নিও না গো আমারে নিয় হরণ করে
(মিশ্র) গান্ধারী-ত্রিতাল
বরণ করে নিও না গো
(আমারে) নিয় হরণ করে।
ভীরু আমায় জয় কর গো
তোমার মনের জোরে।।
পরাণ ব্যাকুল তোমার তরে
চরণ শুধু বারণ করে।
লুকিয়ে থাকি তোমার আশায়
রঙিন বসন পরে।।
লজ্জা আমার ননদিনী লতিকার-ই-প্রায়
যখনই যাই শ্যামের কাছে দাঁড়িয়ে আছে ঠায়।
চাইতে নারি চোখে চোখে
দেখে পাছে কোন লোকে,
নয়নকে তাই শাসন করি
অশ্রুজলে ভরে।।
রচনা-কাল-১৯৩৫
বর্ষা ঋতু এলো এল বিজয়ীর সাজে
বর্ষা ঋতু এলো এল বিজয়ীর সাজে।
বাজে গুরু গুরু আনন্দ-ডমরু অম্বর মাঝে।।
(বাঁকা) বিদ্যুৎ তরবারি ঘন ঘন চমকায়,–
শুনি রথচক্রের ধ্বনি অশনির রোল,
সিন্ধু-তরঙ্গে মঞ্জীর বাজে।।
ভীত বন উপবন লুটায়ে লুটায়ে
প্রণতি জানায় সেই বিজয়ীর পায়ো;
(তার) অশান্ত গতিবেগ শুনি পুব-হাওয়াতে
চলে মেঘ-কুঞ্জর-সেনা তার সাথে,
তূণীর কেতকী জল-ধনু হাতে
হের চঞ্চল দুরন্ত গগনে বিরাজে।।
বহে শোকের পাথার আজি সাহারায়
বহে শোকের পাথার আজি সাহারায়।
‘নবিজী নাই’–উঠলো মাতম মদিনায়।।
আঁখি-প্রদীপ এই ধরণীর
গেল নিভে, ঘিরিল তিমির;
দ্বীনের রবি মোদের নবী চায় বিদায়।
সইলো নারে বেহেশতি দান দুনিয়ার।।
না পুরিতে সাধ আশা,
না মিটিতে তৌহিদ-পিপাসা,
যায় চলে দ্বীনের শাহানশাহ, হায় রে হায়!
সেই শোকেরই তুফান বহে লু-হাওয়ায়।।
বেড়েছে আজ দ্বিগুণ পানি
দজলা ফোরাত নদীতে,
তুর ও হেরা হেরা পাহাড় ফেটে
অশ্রু-নিঝর বয়ে যায়।।
ধরার জ্যোতি হরণ করে
উজল হল ফের বেহেশত;
কাঁদে পশু-পাখি ও তরু-লতায়,
সেই কাঁদনের স্মৃতি দোলে দরিয়ায়।।
ভুল করিলে বনমালী এসে বনে ফুল ফোটাতে
ভুল করিলে বনমালী এসে বনে ফুল ফোটাতে।
বুলবুলি যে ফুলও ফোটায় বন-মাতানোর সাথে সাথে।।
আঘাত দিলে, দিলে বেদন,
রাঙাতে হায় পারলে না মন,
প্রেমের কুড়ি ফুটল না তাই,
পড়ল ঝরে নিরাশাতে।।
আমায় তুমি দেখলে না কো দেখলে
আমার রৃপের মেলা
হায় রে দেহের শ্মশান-চারী, শব নিয়ে মোর করলে খেলা।
শয়ন-সাথী হলে আমার, রইলে না কো নয়ন-পাতে।।
ফুল তুলে হায় ঘর সাজালে, করলে না কো গলার মালা,
ত্যজি সুধা পিয়ে সুরা হলে তুমি মাতোয়ালা।
নিশাস ফেলে নিভাইলে যে-দীপ আলো দিতে রাতে।।
ভেসে আসে সুদূর স্মৃতির সুরভি
ভেসে আসে সুদূর স্মৃতির সুরভি
হায় সন্ধ্যায়।
রহি’ রহি’ কাঁদি’ ওঠে সকরুণ
পূরবী, আমারে কাঁদায়।।
কা’রা যেন এসেছিল,
এসে ভালোবেসেছিল,
ম্লান হ’য়ে আসে মনে তাহাদের সে-ছবি
পথের ধুলায়।।
কেহ গেল দ’লি– কেহ ছ’লি, কেহ গলিয়া
নয়ন নীরে;
যে গেল সে জনমের মত গেল চলিয়া
এল না ফিরে।
কেহ দুখ দিয়া গেল
কেহ ব্যথা নিয়া গেল
কেহ সুধা পিয়া গেল
কেহ বিষ-করবী ;
তাহারা কোথায়, হায় তাহারা কোথায়।।
ভেসে যায় হৃদয় আমার মদিনা-পানে
ভেসে যায় হৃদয় আমার মদিনা-পানে।
আসিলেন রসুলে-খোদা প্রথম যেখানে।।
উঠিল যেখানে রণি’,
প্রথম তকবির ধ্বনি,
লভিনু মণির খনি যথায় কোরানে।
যথা হেরা গুহার আঁধারে প্রথম
ইসলামের জ্যোতি লভিল জনম,
ঝরে অঝোর ধারায় যথা খোদার রহম,
ভাসিল নিখিল ভুবন যাহার তুফানে।।
লাখো আউলিয়া আম্বিয়া বাদশা ফকির
যথা যুগে যুগে আসি’করিল ভিড়
তারি ধূলাতে লুটাবো আমি নোয়া’ব শির;
নিশিদিন শুনি তাঁরি ডাক আমার পরাণে।।
মম তনুর ময়ূর-সিংহাসনে
মম তনুর ময়ূর-সিংহাসনে
এস রূপ-কুমার ফরহাদ্।
(মোর)ঘুম যবে ভাঙিল, প্রিয়,
গগনে ঢলিয়া পড়িল চাঁদ।।
আমি শিঁরি–হেরেমের নন্দিনী গো
ছিনু অন্ধকারের কারা-বন্দিনী গো,
ভেবেছিনু তুমি শুধু রূপের পাগল —
বুঝি নাই কা’রে বলে প্রেম-উন্মাদ।।
গিরি-পাষাণে আঁকিলে তুমি যে ছবি মম,
দিলে যে মধু,
সেই মধু চেয়ে, সেই শিলা বুকে
ল’য়ে কাঁদি,ফিরে এস, ফিরে এস বঁধু।।
মোরে ল’য়ে যাও সেই প্রেম-লোকে,
বিরহী
কাঁদিছে যেথায় ‘শিরী শিরী কহি;
আজ ভরিয়াছে বিষাদের বিলাপে
গোলাপের সাধ।।
মরু সাহারা আজি মাতোয়ারা
মরু সাহারা আজি মাতোয়ারা।
হলেন নাজেল তাহার দেশে খোদার রসুল—
যাঁহার নামে যাঁহার ধ্যানে
সারা দুনিয়া দীওয়ানা প্রেমে মশগুল।।
যাঁহার আসার আশাতে অনুরাগে
নীরস খর্জুর তরুতে রস জাগে,
তপ্ত মরু, ‘পরে খোদার রহম ঝরে,
হাসে আকাশ পরিয়া চাঁদের দুল।।
ছিল ত্রিভুবন যাঁহার পথ চাহি,
এল রে সে নবী ‘ইয়া উম্মতি’ গাহি’
যতেক গুমরাহে নিতে খোদার রাহে
এল ফুটাতে দুনিয়াতে ইসলামী ফুল।।
মসজিদে ঐ শোন রে আজান, চল নামাজে চল
মসজিদে ঐ শোন্ রে আজান, চল নামাজে চল্ ।
দুঃখে পাবি সান্ত্বনা তুই বক্ষে পাবি বল।।
ওরে চল নামাজে চল।।
ময়লা-মাটি লাগবে যা তোর দেহ-মনের মাঝে —
সাফ হবে সব, দাঁড়াবি তুই যেম্নি জায়নামাজে;
রোজগার তুই করবি যদি আখেরের ফসল।।
ওরে চল নামাজে চল।।
তুই হাজার কাজের অছিলাতে নামাজ করিস কাজা,
খাজনা তারি দিলি না, যে দ্বীন-দুনিয়ার রাজা;
তাঁরে পাঁচ বার তুই করবি মনে, তাতেও এত ছল্।।
ওরে চল নামাজে চল।।
কার তরে তুই মরিস খেটে; কে হবে তোর সাথী;
বে-নামাজীর আঁধার গোরে কে জ্বালাবে বাতি;
খোদার নামে শির লুটায়ে জীবন কর্ সফল।
ওরে চল নামাজে চল।।