যে দেশ দীর্ঘ ষাট বছর সময় নিয়েছে একজন নারীকে রাষ্ট্রপ্রধান বানাতে, সে দেশ আরও কত বছর নেবে দ্বিতীয় কোনও নারীকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত করতে, তা দেশই জানে। ‘পতি’দের দাপট এত বেশি যে পতি নামটি বর্জন করার বুকের পাটা কারও নেই। পতি পদের গদিতে বসতে পতিদের অর্থাৎ পুরুষদের খুব আরাম হয়। পতি পদটি সংসারে সবার ওপরে, পতিরা সমাজপতি হিসেবে সমাজেও সবকিছুর ওপরে, রাষ্ট্রের পতি হলে তো আর কথাই নেই। সবার ওপরে পতি সত্য, তাহার ওপরে নাই। কিন্তু, সতীরা না বুঝলেও পতিরা বোঝে যে, সতীদের পতি হতে বলার পেছনে যে রাজনীতি কাজ করছে, সেটি সতীদের অর্থাৎ নারীদের কোনও গতি করবে না, বরং ক্ষতিই করবে।
পুরুষের পদে লীন হয়ে যাওয়ার মধ্যে কোনও কৃতিত্ব নেই। বরং নিজের পদের নাম পুরুষ থেকে আলাদা করে আলাদা অস্তিত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়াটাই কাজের কাজ। নারীর পৃথক অস্তিত্ব স্বীকার করার চল এই সমাজে নেই। এই ‘নেই’টিকে চ্যালেঞ্জ করা উচিত। নামে কিছু আসে যায় না? নামে অনেক কিছু আসে যায়। নামের কারণে নিজের পৃথক অস্তিত্বকে জানান দেওয়ার মতো বিরাট ঘটনা ঘটে। এটি কি কম? যদি নারী নারী হয়ে এবং নারী-পদে অধিষ্ঠিত হয়ে সম্মান না পায়, সম্মান পেতে হলে যদি তাকে পুরুষের মতো হতে হয় বা পুরুষের পদে আরোহন করতে হয়, তবে সেটি নারীর জন্য সম্মান তো নয়ই, বরং ঘোর অপমান।
অনেকে বলছে ‘রাষ্ট্রনেত্রী’ শব্দটা নতুন, এটা লোকে নেবে না। ঠিক নয়। গার্লহুড বোঝাতে লিঙ্গ-নির্দিষ্ট কোনও শব্দ বাংলায় এতকাল ছিল না। ওটা বোঝাতে বয়হুড অর্থাৎ ‘ছেলেবেলা’র আশ্রয় নিতে হত। যেই না আশির দশকে ‘মেয়েবেলা’ শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করেছি, অমনি লুফে নিল মানুষ। পদ তৈরি করতে হলে পদ একটু বাড়াতে হয়। নতুন পদক্ষেপ রচিত না হলে নতুন পদ কী করে রচিত হবে! মানসিকতার বদল কী করে হবে! বদল না হলে পদের বদলও যে হয় না!
৪৪. লিঙ্গ-নিরপেক্ষ বাংলা ভাষার প্রয়োজন
বাংলা ভাষাকে দারিদ্র্যমুক্ত এবং বৈষম্যমুক্ত করে একে আরও সমৃদ্ধ করা যাঁদের দায়িত্ব তাঁরা নিশ্চয়ই খুব বিত্ত, অভিজ্ঞ, ত্তানী এবং গুণী মানুষ। আমি অনুমান করতে পারি, তাঁরা অধিকাংশই পুরুষ। পুরুষ হলেই যে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা বহন করবেন, তা আমি মনে করি না। তাঁদের এবং সাধারণ জনগণের কাছে লিঙ্গ নিরপেক্ষ ভাষার উদ্ভাবন এবং প্রচার শুরু করার অনুরোধ করছি। বিশ্বের সভ্য দেশগুলোয় যেখানে নারীকে ‘মানুষ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, সেসব দেশে ভাষাকেও করা হচ্ছে লিঙ্গ নিরপেক্ষ। এই বাংলায় যদি সেটির কোনও উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে বুঝতে হবে, বাঙালি নারী যেভাবে মার খেয়ে যাচ্ছে আদিকাল থেকে, আচার আচরণে আইনে ঐতিহ্যে ধর্মে সংস্কৃতিতে ভাবে ভাষায়, তেমন খেয়েই যাবে। ইংরেজি ভাষাকে লিঙ্গনিরপেক্ষ করার জন্য যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে বা হচ্ছে, সেসবের সামান্য কিছু উদাহরণ দিচ্ছি।
যা ছিল–যা হয়েছে/হচ্ছে
ম্যান — হিউম্যান বিং
ম্যানকাইন্ড — হিউম্যানকাইন্ড, হিউম্যানিটি
ম্যান্স অ্যাচিভমেন্ট — হিউম্যান অ্যাচিভমেন্ট
ম্যানফুলি — ভ্যালেন্টলি
ম্যানপাওয়ার — ওয়ার্কফোর্স, হিউম্যান এনার্জি,
হিউম্যান — রিসোর্সেস
ম্যান মেইড — হিউম্যান ইনডিউজড
ব্রাদারহুড অব ম্যান — হিউম্যান ফেলোশিপ, হিউম্যান কিনশিপ
ব্রাদারলি — ফ্রেঞ্চলি
ম্যান অ্যান্ড ওয়াইফ — হাজবেন্ড অ্যান্ড ওয়াইফ
বিজনেসম্যান — বিজনেস ম্যানেজার
ক্যামেরাম্যান — ফটোগ্রাফার, ক্যামেরা অপারেটর, ক্যামেরা ক্তু
ক্রাফটসম্যান — ক্রাফটওয়ার্কার, আর্টিসেন
ক্রাফটম্যানশিপ — ক্রাফট, ক্রাফট স্কিল্স
ফেলো কান্ট্রিম্যান — কমপ্যাট্রিয়ট
ফোরম্যান — সুপারভাইজার
জেন্টেলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্ট — অনারেবল অ্যাগ্রিমেন্ট
ল্যান্ডলর্ড — ওউনার, প্রোপ্রাইটর
লেম্যান — লেপারসন, নন প্রফেশনাল
অমবুডসম্যান — মেডিয়েটর
পুলিসম্যান — পুলিস, পুলিস অফিসার
সেল্সম্যান — সেল্স অ্যাসিসটেন্ট
স্পোর্টম্যান — স্পোর্টপারসন
স্পোর্টসম্যান — অ্যাথলেট, স্পোর্টসউওম্যান (প্রয়োজনে)
ওয়ার্কম্যান লাইক — ওয়েল একজেকিউটেড
জন অ্যান্ড মেরি হ্যাভ ফুল — জন অ্যান্ড মেরি হ্যাভ ফুল
টাইম জব্স, হি হেল্পস হার — টাইম জব্স, দে
উইদ দ্য হাউজওয়ার্ক — শেয়ার হাউজওয়ার্ক
ট্রান্সপোর্ট উইল বি প্রোভাইডেড — ট্রান্সপোর্ট উইল বি প্রোভাইডেড ফর
ফর ডেলেগেট্স এণ্ড দেয়ার — ডেলেগেট্স অ্যান্ড ফর দেয়ার
ওয়াইভস — স্পাউসেস অর পারসন্স, অ্যাকোমপ্যানিং দেম
দ্য ডকটর .. হি — ডকটরস… দে
দ্য নার্স.. শি — নার্সেস… দে
উওম্যান ডক্টর, মেইল নার্স — ডক্টর, নার্স
মাদারিং — প্যারেন্টিং, নার্চারিং, চাইল্ড রিয়ারিং
হাউজওয়াইফ — হোমমেকার
ফোরফাদার্স — অ্যানসেসটর্স
ফাউনিডং ফাদার্স — ফাউন্ডার্স
উওম্যান ড্রাইভার — ড্রাইভার
গানম্যান — শুটার
দ্য কমন ম্যান — দ্য অ্যাভারেজ পারসন, অরডিনারি পিপল
বাংলা ভাষাটিকে লিঙ্গ নিরপেক্ষ (এবং প্রয়োজনে লিঙ্গ-নির্দিষ্ট) করা হলে ভাষা একটি সভ্য ভাষা হবে, নয়তো এটি পুরুষতান্ত্রিকই রয়ে যাবে, যেমন আছে। অভিধান সংশোধন করতে হবে সবার আগে।