• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
রবিবার, মে 11, 2025
  • Login
BnBoi.Com
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

নারীর কোনও দেশ নেই – তসলিমা নাসরিন

Narir Kono Desh Nei by Taslima Nasrin

  • বইয়ের নামঃ নারীর কোনও দেশ নেই
  • লেখকের নামঃ তসলিমা নাসরিন
  • প্রকাশনাঃ পার্ল পাবলিকেশন
  • বিভাগসমূহঃ প্রবন্ধ

 ০১. পুরুষের বেলায় ‘অধিকার’, নারীর বেলায় ‘দায়িত্ব’

পুরুষেরা রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে যে মর্যাদা পায়, নারীরা তা পায় না। পায় না,কিন্তু পাওয়া উচিত। এটি নতুন কোনও কথা নয়, সমতায় এবং সততায় বিশ্বাস করাশুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বহুকাল ধরে বলছেন এ কথা। মুঠো মুঠো ইতিহাস তুলে, তত্ত্ব-তথ্য-দর্শন বর্ষণ করে তাঁরা দেখিয়েছেন একসময় নারীর অবস্থা কোথায় ছিল, বিবর্তনে কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং কতটা পথ এখনও বাকি আছে বুড়ি ছুঁতে।
মেয়েদের কি কেবল এই তৃতীয় বিশ্বই ঠকাচ্ছে! প্রথম বিশ্বেও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কোনও ধারণা ছিল না মেয়েরা মায়ের জাতের বাইরেও একটি জাত, সে জাতের নাম মানুষ-জাত। মেয়েরা চিরকালই নগণ্য হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে, নাগরিক হিসেবে নয়। নাগরিক শব্দটির উৎপত্তি নগর থেকে। একসময় এক একটি নগরই ছিল এক একটি রাষ্ট্র। ভূমধ্যসাগরের কিনারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পনেরোশ নগরই, প্ল্যাটো মজা করে বলতেন ‘পুকুরের চারধারে ব্যাঙের মতো’, ছিল সেকালের গ্রীস। গ্রীসে, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে প্রথম যেখানে গণতন্ত্র চালু হয়েছিল, সেই গণতন্ত্রে নাগরিকের মর্যাদা পেত যারা সরকার চালাতো, রাজনীতির জ্ঞান ছড়াতো, তারাই, হাতে গোনা কিছু গণ্যমান্য লোক। নাগরিকত্ব পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকতো বাচ্চাকাচ্চা, নারী আর ক্রীতদাস-দাসী।
নাগরিকত্ব, নাগরিক অধিকার—এসব ধারণার ধীরে ধীরে উত্তরণ হতে থাকে। রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে আরও বিস্তৃত হয়, আরও গভীর হয় নাগরিকত্বের বোধ। সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য এটির প্রয়োজন ছিল। নাগরিক নীতিবোধ গড়ে তুলে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষায় প্রতিশ্রুত হওয়া, স্ব স্ব কর্মে, শ্রমে, শৃঙ্খলায়, দেশাত্ববোধে-প্রেমে নিজেকে উৎসর্গ করা ছিল নাগরিক হওয়ার শর্ত। সাম্রাজ্যের সকলেই নাগরিকত্ব পেয়ে গেল। এটি কেবল মুখের কথা হয়ে রইল না, রীতিমত আইনী প্রতিষ্ঠা পেল। চমৎকার ব্যাপার। কিন্তু নাগরিক হওয়া থেকে বঞ্চিত এই রোমান সাম্রাজ্যেও রয়ে গেল দুটো জাত(!), নারীজাত আর নিচুজাত।
ষোড়শ শতাব্দী থেকে এক পক্ষের কাঁধের দায়িত্ব অপরপক্ষের কাঁধেও কিছু গড়িয়ে গেল। নাগরিককে একগাদা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পালন করার জন্য, কিন্তু নাগরিকের জন্য রাষ্ট্রের কি কোনও দায়িত্ব নেই ? নিশ্চয়ই থাকা উচিত, এখন থেকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল নাগরিকের শারীরিক, পারিবারিক, বৈষয়িক নিরাপত্তা বিধান করা। রাষ্ট্রের দায় দায়িত্ব এবং নাগরিকের অধিকার বিষয়ে ফরাসি দার্শনিকদের চিন্তাভাবনা সাধারণ জনগোষ্ঠীতে এমনই প্রভাব ফেলেছিল যে ফরাসি বিপ্লবের মতো বিস্ময়কর ঘটনাও একদিন ঘটে গেল। লেখা হয়ে গেল মানুষের অধিকারের আইন। ওদিকে আমেরিকার মতো নতুন দেশেও পরিবর্তনের জোয়ার উঠেছে। স্বাধীনতা আন্দোলন ঘটেছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সমানাধিকারের সংবিধানও রচিত হয়ে গেছে, গেছে বটে, কিন্তু ক্রীতদাস প্রথা, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, পুরুষতন্ত্র সবই বহাল তবিয়তেই বিরাজ করছে তখন, যেসব প্রথায়, বাদে, তন্ত্রে কালো মানুষ, দরিদ্র আর নারীর কোনও অধিকার স্বীকার করা হয়নি।
পুরুষেরা এভাবেই বিশ্ব জুড়ে নিজেদের অধিকারকে ‘মানুষের অধিকার’ বলে ঘোষণা করেছে। কোনও বিপ্লবই—কোনও সংবিধানই—কোনও আইনই নারীর পক্ষে কোনও টুঁ শব্দ করেনি। নারীকে আদৌ মানুষ ভাবার মন বড় বড় বরেণ্য বিপ্লবী বুদ্ধিজীবীরও ছিল না। পুরুষের জন্য ‘অধিকার’ এর ব্যবস্থা হয়েছে, পুরুষের কথা বলার, ভোট দেবার, ভোটে দাঁড়াবার, ভাবার, স্বাধীনতা পাবার অধিকার। নারীর জন্য হয়েছে দায়িত্বের ব্যবস্থা । ঘরসংসার সামলানো, পুরুষকে সুখ স্বস্তি দেওয়া, সন্তান উৎপাদন করা, সন্তানাদি লালন পালন করার ‘দায়িত্ব’। এক শতক দুই শতক করে সময় পার হচ্ছে, নারীকে যে কুয়োতে ফেলে রাখা হয়েছিল, সে কুয়োতেই আছে, ওদিকে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে তথাকথিত গণতন্ত্রের চমক বাড়ছে, রংঢং বাড়ছে, স্বাধীনতা এবং অধিকার পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু কী আশ্চর্য, নারীর অধিকারের কথা কোনও পুরুষ বা মহাপুরুষ উচ্চারণ করছেন না। দুএকজন বলেছেন বটে, কিন্তু নারীকেই দাঁড়াতে হয়েছে শেষ অবধি, রক্ত ঝরিয়ে নারীকেই লড়তে হয়েছে নিজের অধিকার আদায় করতে। ভোটের অধিকারের জন্য দীর্ঘ বছর ধরে আন্দোলন করে তবেই সফল হয়েছে পশ্চিমের নারীরা। কিন্তু পশ্চিমের নারীর সফলতার অর্থ কিন্তু ব্যাপক অর্থে নারীর সফল হওয়া নয়। এই একবিংশ শতাব্দীতেও পৃথিবীর অনেক দেশেই নারীর ভোটের অধিকার নেই। নারী এখনও রাজনীতি অর্থনীতি, শিক্ষা স্বাস্থ্য সর্বক্ষেত্রে ভয়ংকর বৈষম্যের শিকার। নিজের প্রাপ্য অধিকার থেকে অন্যায় ভাবে বঞ্চিত।

ঔপনিবেশিকতাবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রতিভূরা নারীকে ঠিক কী চোখে দেখেছেন, নারীর নাগরিকত্বের প্রশ্ন নিয়ে তাঁদের ভাবনা-চিন্তার রকমই বা কী ছিল! কী ছিল? ঔপনিবেশিক শক্তির সঙ্গে সংঘাত শুরু হলে ওই শক্তির ঐতিহ্যর চেয়ে ভারতীয় ঐতিহ্য যে কালি-কালিমা মুক্ত, গঙ্গাজলে স্নাত, শুদ্ধ—তা বোঝাতে ভারতীয় নারীকে আগের চেয়েও বেশি বন্দি হয়ে থাকতে হল ঘর গৃহস্থালির ক্ষুদ্র জগতে। ভারতীয় সংস্কৃতি, সে সংস্কৃতি নারীর স্বাধীনতাকে চূর্ণবিচূর্ণ করার সংস্কৃতি হলেও তা রক্ষা করার গুরু দায়িত্ব জাতীয়তাবাদীরা ভারতীয় নারীর ঘাড়েই চাপিয়েছিল। উনিশ শতকের শেষ থেকে বিশ শতকের প্রথম দিকে প্রচুর বইপত্র বেরিয়েছে নারীর স্থান যে ঘরে, স্থান যে বাইরে নয়, তা বোঝাতে। বাইরের জগত পুরুষের, নারীর নয়। বাইরের জগতে শক্তি সাহস দরকার, বাইরের জগত পরিশ্রমের, সংগ্রামের, বাইরের জগত যুদ্ধের, রাজনীতির, ওখানে পুরুষকে মানায়, নারীকে নয়। নারী নরম। নারী ভঙ্গুর। নারী ভীতু। নারী বুদ্ধু। ‘আত্মবিস্মৃতি’ এবং ‘আত্মত্যাগ’, এ দুটো জিনিস দিয়েই নারীকে সংসারধর্ম পালন করতে হবে। এ থেকে সামান্যও বিচ্যুতি চলবে না। এদিকে পুরুষের জন্য দুটো গুণ খুব প্রয়োজনীয়, ‘আত্মনির্ভরতা’ এবং ‘আত্ম গৌরব’। এ দুটো গুণ নারীর থাকলে ঘর সংসার ভেস্তে যাবে, সমাজ নষ্ট হবে, জাতির সর্বনাশ হবে।
নারীর জন্য শিক্ষার প্রয়োজনীতার কথা বলা হত, সে শিক্ষা আদর্শ স্ত্রী এবং আদর্শ মাতা হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষা। উনিশ’শ বিয়াল্লিশ সালে বের হওয়া ‘নারীধর্ম শিক্ষা’ বইটিতে নিয়মশৃঙ্খলা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নম্রতা, নতজানুতা এসব শিক্ষা পই পই করে নারীকে দেওয়া হয়েছে। বইটিতে আদর্শ গৃহিণীর ছবি আছে, প্রথম নারী চকচকে রান্নাঘরে বসে চরকা কাটছে, দ্বিতীয় নারী একটি গোছানো বৈঠক ঘরে বসে ‘নারীর কর্তব্য’ নামের বই পড়ছে, তৃতীয় নারী ওই একই ঘরে একটি মাদুরের ওপর বসে একটি শিশুর সঙ্গে খেলছে। মেনে চলার জন্য নারীর উদ্দেশে কিছু নিয়ম দেওয়া আছে বইটিতে। নিয়মগুলো এরকম। ১. সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমোতে যাবার সময় ভগবানের নাম নেবে। ২. সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠতে হবে, তা না করতে পারলে উপোস কর। ৩. স্নান করে এসে সূর্যের পুজো কর। ৪. এক হাজার পাঁচশ বারো বার হরে রাম মন্ত্র উচ্চারণ কর। ৫. ভগবানকে প্রতি ঘন্টায় কমপক্ষে একবার করে মনে কর। ৬. বয়স্কদের পা ছুঁয়ে প্রণাম কর। ৭. কখনও ক্রোধান্বিত হবে না। ৮. ভগবানের পুজো কর। ৯. কখনও অতৃপ্তি বা অসন্তুষ্টি দেখাবে না। ১০. যদি তোমার স্বামী ছাড়া অন্য কোনও পুরুষের ওপর তোমার চোখ পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে ভগবানের নাম নেবে। ১১. কখনও কোনও সমালোচনা করবে না। ১২.খাওয়ানোর সময় কাউকে ঠকাবে না। ১৩. কখনও নিষ্ঠুর হয়ো না। ১৪. কখনও কৌতুক কোরো না। ১৫. কখনও অন্যের মনে কষ্ট দিও না। ১৬. সদা সত্য কথা বল। ১৭. কখনও কিছু লুকিয়ো না। ১৮. যদি তুমি নিয়ম ভঙ্গ কর, তবে একশ আটবার হরে রাম মন্ত্র জপো।–ঘোর জাতীয়তাবাদী-ধার্মিক-পুরুষতান্ত্রিক আদর্শ থেকেই এই আদেশ । ভগবান-সেবায়, স্বামী-সেবায়, সংসার-সেবায় যেন মগ্ন হয় নারীকুল। ভারতীয় নারীকে হতে হবে ভারতীয় আদর্শের প্রতীক, কিন্তু ভারতের পূর্ণ নাগরিকত্ব পাবার যোগ্যতা তাদের থাকবে না। ভারতের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণকে প্রতিহত করা হবে। ঘটনা তো তাই ঘটেছে, ঘটিয়েছে পশ্চিমি শিক্ষায় শিক্ষিত পুরুষেরা, জ্ঞানে গুণে তারাই তখন সর্বেসর্বা। শাসকের ভাষা ও সংস্কৃতির পাঠ নিয়ে শাসকের তন্ত্র মন্ত্র শিখে শাসককেই আক্তমণ করেছে। ভালো কথা, কিন্তু কোথায় তারা সমতা আর সাম্যের স্বপ্ন নিয়ে অন্তঃপুর থেকে নারীকে উদ্ধার করবে, তা নয়ত করেছে উল্টোটি।
উনিশ’শ সতেরো থেকে উনিশ’শ চল্লিশ অবধি ভারতে নারীর ভোটের অধিকার নিয়ে ইওরোপ আমেরিকায় যে রকম আন্দোলন হয়েছিল, তা না হলেও, মৃদুকণ্ঠে তর্ক বিতর্ক চলেছে। ভোটের অধিকার একজন নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার, অথচ তার এই অধিকারকে অস্বীকার করেছে ভারতীয় হিন্দু মুসলিম দুই ধর্মেরই জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ। নারী ভোটের অধিকার পেলে সংসার উচ্ছন্নে যাবে, পর্দাপ্রথার ক্ষতি হবে।–সে কী ভয়ার্ত চিৎকার ভারতবর্ষ জুড়ে! নারীত্ব আর নাগরিকত্ব এ দুটোর মিলন কিছুতেই নাকি হতে পারে না।
নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন, নাকি সর্বজনীন ভোটাধিকার, কোনটা চাই? নারীদের একদল এই পক্ষে তো আরেকদল ওই পক্ষে। তিরিশের দশকে গোড়ার দিকটায় এ-ই ঘটে। রাজনীতিকদের মধ্যে এ নিয়ে বিতর্ক চলে দীর্ঘদিন। বিতর্ক চলছে, এর মধ্যে দুম করে একদিন, ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বরে, পুনা প্যাক্টে সায় দিয়ে দিলেন কংগ্রেসের কিছু নেতা, সঙ্গে গাঁধীজিও। হিন্দু এলাকায় নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করে এলেন তাঁরা। আপোস করলেন। ভোটাধিকারের জন্য বিভিন্ন-ধর্মবিশ্বাসী নারীর একজোট হয়ে যে আন্দোলন, সে আন্দোলনের কণ্ঠদেশ ঠান্ডা মাথায় কেটে দিয়ে এলেন।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের আগ পর্যন্ত ভারতীয় নারীবাদীরা ইংরেজ এবং আইরিশ নারীবাদীদের প্রেরণায় ভোটের দাবির জন্য পথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই নারীর দাবি-প্রসঙ্গ উবে গেল জাতীয়তাবাদের হাওয়ায়। সবার তখন স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার সাধ। নারীকে দাসী বাঁদি ভাবার প্রাচীন পুরোনো পুরুষতান্ত্রিক আদর্শ তখন জাতীয়তাবাদী চেতনার খোরাক। নারীসংস্থা-সংগঠন যদিও ছিল বেশ কিছু, সকলে, বুঝে না বুঝে, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে গেল। ভোটের প্রশ্ন উঠলে সরোজিনী নাইডু, বেগম শাহ নেওয়াজ, রাধাবাই সুব্বারিয়ান সকলে মিনমিন করে বলতে চেষ্টা করেছেন যে, ‘নারীরা সংসারধর্ম ঠিক ঠিক পালন করেও রাজনৈতিক অঙ্গনে পা ফেলতে পারে, ভোট দিতে পারে। এতে নারীর নারীত্ব, সতীত্ব কিছুই খোয়া যাবে না। রাজনৈতিক সচেতনতা এলে নিজের সন্তানকেও আদর্শবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।’ নারীনেত্রীরা, কারও যেন কোনও ভুল বোঝার অবকাশ না থাকে, বলে দিয়েছেন যে, ‘তাঁরা নারীবাদী নন। তাঁরা পশ্চিমের নারীদের মতো লিঙ্গযুদ্ধ চাচ্ছেন না। তাছাড়া, নারীবাদী আন্দোলনের কোনও প্রয়োজন ভারতবর্ষে নেই। কারণ এখানে যে কোনও কাজেই পুরুষ নারী পরস্পরকে সহযোগিতা করতেই অভ্যস্ত।’ কিছু উচ্চ-মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত, সচ্ছল, সুযোগ সুবিধে পাওয়া নারী কী ভয়ংকরভাবেই না ভুলে গিয়েছিলেন দেশের অধিকাংশ নারীর কথা, অধিকাংশ যারা বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, নিরক্ষর, নির্যাতিত, অবহেলিত এবং অসম্মানিত।
ভারত স্বাধীনতা পেল, বিভক্ত হল দেশ, বিভক্ত হয়ে গেল ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ রেখে দাঁড়ানো নারী। নারীর পরিচয় এখন আর ‘নারী’ নয়, তারা কেউ ‘সংখ্যাগুরু’, কেউ ‘সংখ্যালঘু’। তারা এখন ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায় টিকিয়ে রাখার যন্ত্র। নারী-স্বাধীনতার যে আন্দোলনটি ভারতবর্ষে হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তার বড় করুণ মৃত্যু হলো। ভারতীয় সংবিধান জোর দিয়েছে ধর্মের স্বাধীনতার। আর এই সুযোগে অশিক্ষিত অসহিষ্ণু মুসলমান-পুরুষেরা মুসলমান-নারীদের ভারতীয় গণতন্ত্রের মানবাধিকার, নিরাপত্তা আর ন্যায় বিচার থেকে বত্তিত হতে বাধ্য করছে। শাহবানু মামলাতে দেখা গেছে এ ক্ষেত্রে মদত দিচ্ছে সম্প্রদায়ে বিশ্বাসী সাম্প্রদায়িক রাজশক্তি।
উনিশ’শ চৌত্রিশ সালে সর্ব ভারতীয় নারী-সভায় দাবি উঠেছিল সমতার আইনের, উত্তরাধিকার, বিবাহ এবং সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য দূর করার দাবি, সেদিনের সেই দাবি আজও দাবি হিসেবেই রয়ে গেল। অবশ্য এই দাবি এখন অনেকটা অচ্ছুতের মতো। ‘মুসলিম পারিবারিক আইন’-এর সংস্কার বা এর বিলুপ্তি নিয়ে কথা উঠলেই হিন্দু-মৌলবাদী-দলের সমর্থক হিসেবে দুর্নাম কামাতে হবে, এই ভয় তথাকথিত সেকুলার নারী-পুরুষেরও। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, যে বিধিতে নারী পুরুষের মধ্যে সমতার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হয়, সেই বিধি কি গণতন্ত্রের প্রধান শর্ত নয়! ‘ধর্মীয় আইন’ যদি মানবাধিকারকে লঙ্ঘন করে, ব্যক্তিস্বাবাধীনতাকে ধ্বংস করে, তবে সেই আইন অক্ষত রেখে কার কী লাভ করছে ভারতবর্ষ? ধর্ম তো ক্ষণে ক্ষণে দেশটিকে ছোবল দিচ্ছে, তবু ধর্মকে দুধকলা খাইয়ে বড় করার অদম্য স্পৃহা দূর হয় না অদূরদর্শী স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদদের!

Page 1 of 75
12...75Next
Previous Post

ছোট ছোট দুঃখ কথা – তসলিমা নাসরিন

Next Post

লজ্জা – তসলিমা নাসরিন

Next Post

লজ্জা - তসলিমা নাসরিন

আমার প্রতিবাদের ভাষা - তসলিমা নাসরিন

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In