মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের গৌরব করার মতো বেশি কিছু নেই। স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবৎ যা ঘটেছে বাংলাদেশে, সবই ইসলামি মৌলবাদীদের পক্ষের ইতিহাস। সেকুলার সংবিধানের ইসলামিকরণ, সংবিধানে বিসমিল্লাহ বসানো, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আনা, দেশ জুড়ে অগুনতি মসজিদ মাদ্রাসা গড়ে তোলা, মাদ্রাসার ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দেওয়া, একশ পঞ্চাশ বছরের পুরোনো বাক স্বাধীনতা বিরোধী আইনকে ( বাংলাদেশ ফৌজদারি আইনের ২৯৫-ক খ ধারা) মুক্তচিন্তকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা, ইন্টারনেটেও যেন কেউ ইসলাম নিয়ে কোনও প্রশ্ন করতে না পারে সে জন্য আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বানানো, এবং ওই ধারায় আলোকিতদের ফাঁসানো, রেডিও টেলিভিশনে শীত গ্রীষ্ম বর্ষা ইসলামের গীত গেয়ে যাওয়া, দেশের সর্বত্র ইসলামী ওয়াজের ব্যবস্থা, দেশের সার্বিক ইসলামিকরণ, ইসলামী প্রতিষ্ঠানে দেশ ছেয়ে যাওয়া, এমনকী সেকুলার বিশ্ববিদ্যালয়েও লখিন্দরের বাসরঘরের মতো মৌলবাদী সাপের ঢুকে যাওয়া, তসলিমার মাথার মূল্য ঘোষণা করেও মৌলবাদীদের পার পেয়ে যাওয়া, আজাদ, হায়দার, এবং আরও অনেককে কুপিয়ে হত্যা করেও শাস্তি না পাওয়া..। মৌলবাদীদের ঝুড়িতে অসংখ্য বিজয়ের মুকুট। এই বিজয়ী দল ধর্মের পতাকা ওড়াতে ওড়াতে মানুষের শিরোচ্ছেদ করবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভিত্তিটা তো এতকাল ধরে তৈরিই করা হয়েছে ওদের যা খুশি তাই করার জন্য। অভিজিৎ রায় আমার অনেককালের বন্ধু, ও আমার ফেসবুক বন্ধুও ছিল। ওয়াশিকুর বাবুও আমার ফেসবুক বন্ধু ছিল। আমার প্রতিভাবান তরুণ বন্ধুরা এক এক করে চলে যাচ্ছে, যারা আর কোনওদিন ফেরত আসবে না। পড়ে থাকছে লাখো খুনী, তাদের আকাশে উড়ছে হাজারো শকুন। অভিজিতের মৃতদেহ দেখে আমি চিৎকার করেছি রাগে, ক্রোধে। আজও মানতে পারিনি ওর চলে যাওয়া। আজও খাঁ খাঁ করছে আমাদের মুক্তচিন্তার জগৎ। ওয়াশিকুর বাবুর মৃতদেহ দেখে আমি নিঃশব্দে কাঁদছি। আমার ভালো লাগছে না দেখতে আমার চোখের জল। আমি রাগে ক্রোধে আগের মত চিৎকার করতে চাই, চিৎকার করার আরো শক্তি চাই। একুশ বছর আগে আমাকে ওরা ওভাবেই মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আমি বেঁচে আছি। প্রতিভাবান তরুণদের একের পর এক হত্যা করে দেশটাকে ওরা কাদের জন্য বাসযোগ্য করছে! এত ক্ষতি আমি আর সইতে পারছি না।
ভারতে পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ
ভারত সরকার পর্নোগ্রাফির ৮৫৭টা সাইট নিষিদ্ধ করেছে। কোনও রকম আওয়াজ না দিয়েই ব্লক মারা যাকে বলে, সেটিই করেছে। কোনও রকম কারণ না দর্শিয়ে কম্মটি করেছে সরকার। ইন্টারনেটে পর্ন কারা সবচেয়ে বেশি দেখে? সবচেয়ে বেশি দেখার মধ্যে এক নম্বরে আছে পাকিস্তান, পাঁচ নম্বরে আছে ভারত। আমি জানি না কারা এই সাভেটা করেছে। আদতেই এর কোনও ভিত্তি আছে কি না। ভারতে এ সময় পর্ন বন্ধ করার কারণ কী, এটি একটি বড় প্রশ্ন। সুপ্রিম কোর্ট যেখানে কদিন আগেই পর্ন নিষিদ্ধ করার আবেদন নাকচ করে বলে দিয়েছে, প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের অধিকার আছে ঘরে বসে নিভৃতে পর্ন ছবি দেখার। এরপর তো আর কোনও ম্যাওমাও চলতে পারে না। কিন্তু আবেদনটি যিনি করেছেন, সেই কমলেশ বাসওয়ানী ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। এই বাসওয়ানী নিজেই খেটেখুটে ৮৫৭টা পর্ন সাইট বের করেছেন যেসব সাইট ভারতে খুব জনপ্রিয়। এই ৮৫৭টা সাইটকে ব্লক করার জন্যই তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন। বাসওয়ানী আবেগে ভরপুর। তিনি হয়তো মনে করছেন পর্নোগ্রাফি বলে যা কিছু আছে তা দুর হলেই ভারতের সমাজ গঙ্গাজলে চান করে শুদ্ধ হয়ে উঠবে। তিনি তাঁর আবেদনে লিখেছেন, পর্নোগ্রাফি হিটলারের চেয়েও, এইডসের চেয়েও, ক্যানসারের চেয়েও খারাপ, এটা নিউক্লিয়ার হলোকস্টের চেয়ে ভয়ংকর, সুতরাং একে বন্ধ করা ভীষণই দরকার। দিল্লির বাসে ফিজিওথেরাপির ছাত্রী জ্যোতি সিংএর নৃশংস গণধর্ষণের পর ৪৫ বছর বয়সী লইয়ার বাসওয়ানী পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তাঁর একার যুদ্ধ। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আবেদন বাতিল করে দেওয়ার পর তিনি মোদি সরকারের আইন বিশেষজ্ঞ পিংকি আনন্দকে দিয়েছিলেন ৮৫৭টি সাইটের তালিকা। পিংকি আনন্দ তালিকাটা সোজা পাঠিয়ে দিয়েছেন টেলি যোগাযোগ বিভাগে। টেলি যোগাযোগ বিভাগ যথারীতি পাঠিয়ে দিয়েছে ইন্টারনেট প্রোভাইডারের কাছে। ইন্টারনেট প্রোভাইডার মোদি পর্যন্ত যায় না, তাদের কাছে টেলি যোগাযোগ বিভাগই সরকার। সুতরাং তারা ব্লক করে দিয়েছে বাসওয়ানি নির্বাচিত ৮৫৭ পর্ন সাইট।
সরকারের মধ্যেই অনেকে পর্ন সাইট বন্ধ করার পক্ষপাতি। পর্ন দেখছে বলেই লোক ধর্ষণ করছে, এই বিশ্বাস অনেকের। সমাজে নারী পুরুষের বৈষম্য প্রকট হলে, নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্য প্রবল হলে নারী ধর্ষণ বাড়ে, এ সহজ সত্যটা অধিকাংশ লোকই জানে না, অথবা জানলেও কেউ স্বীকার করে না। এই প্রথম ভারত সরকার একসঙ্গে এতগুলো সাইট ব্লক করে দিলো। তবে কি উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের জয় হচ্ছে যারা শুধু প্রজননের প্রয়োজনেই সেক্সকে ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করে? এই নিষেধাজ্ঞজ্ঞা নিশ্চিতই মত প্রকাশের অধিকারের বিরুদ্ধে যায়। সরকার কি আবারও বাক স্বাধীনতার টুটি টিপে ধরলো! সেদিন না বিলুপ্ত হলো আইটি অ্যাক্ট ৬৬এ?