এখানে মশার ডিম ও বাচ্চার ছবি দিলাম। তোমরা এই রকম পোকা জলে কখনই দেখ নাই কি? গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে চৌবাচ্চা বা টবে কিছুদিন ধরিয়া জল পচিতে থাকিলে, তাহাতে এই রকম লম্বা পোকা অনেক দেখিতে পাওয়া যায়। মানুষের সাড়া পাইলে বা কোনো শব্দ শুনিলে সেগুলি শরীর ও লেজ নাড়িয়া এবং মুখ বাঁকাইয়া জলের মধ্যে ডুব-সাঁতার কাটে। এইগুলিই মশার বাচ্চা। যে জলে এই রকম মশার বাচ্চা থাকে, তাহাতে একটু কেরোসিন তেল ঢালিয়া দিলে সেগুলি মরিয়া যায়। জলের সঙ্গে কেরোসিন মেশে না। কাজেই জলে ঢালিয়া দিলে তাহা পাত্লা সরের মত হইয়া জলের উপরিভাগ ঢাকিয়া রাখে। তার পরে মশার বাচ্চারা বাতাস লইবার জন্য লেজ উপরে উঠাইলেই নিশ্বাস টানিবার নলে কেরোসিন ঢুকিয়া যায়। ইহাতে উহারা দম আট্কাইয়া মারা পড়ে।
মশার বাচ্চা প্রায় পনেরো দিন জলে বাস করে এবং এই সময়ের মধ্যে চারি বার খোলস ছাড়ে। তার পরে গোলাকার পিণ্ডের মত হইয়া পুত্তলি-অবস্থায় থাকার পরে খোলস ছাড়িয়া ডানা-ওয়ালা মশা হইয়া দাঁড়ায়। কিন্তু খোলস ছাড়িলেই উহারা উড়িতে পারে না। আমরা নৌকায় চড়িয়া যেমন জলের উপরে ভাসিয়া বেড়াই, নূতন মশারাও ঠিক্ সেই রকমে নিজের গায়ের খোলসের উপরে বসিয়া কিছুক্ষণ কাটাইয়া দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ডানা মেলিয়া গায়ের জল শুকাইতে থাকে। ইহার পরে তাহারা আহারের সন্ধানে উড়িতে সুরু করে।
ম্যালেরিয়ার মশা
তোমরা বোধ হয় শুনিয়াছ, মশারা ম্যালেরিয়া রোগীর রক্ত খাইলে, ম্যালেরিয়া জ্বরের বীজ রক্তের সঙ্গে তাহাদের পেটের ভিতরে যায়। তার পরে ঐ মশারাই যখন কোনো সুস্থ লোককে কামড়াইতে আরম্ভ করে, তখন তাহারা পেটের ভিতরকার ম্যালেরিয়ার বীজ সেই সুস্থ ব্যক্তির রক্তে মিশাইয়া দেয়। খোস-পাচড়ার বীজ সুস্থ লোকের গায়ে লাগিলে, তাহারো খোস-পাচড়া হয়। হাম বা বসন্তের বীজ কোনোগতিকে কাহারো রক্তের সঙ্গে মিশিলে তাহারো ঐ-সকল রোগ হয়। মশারা ম্যালেরিয়ার বীজ লইয়া সুস্থ লোকের রক্তে লাগাইলে, তাহারো ম্যালেরিয়া জ্বর হয়। ডাক্তাররা বলেন, আমাদের দেশের গ্রামে গ্রামে যে এত ম্যালেরিয়া, তাহা মশারাই ছড়াইয়া দেয়।
যেমন কুকুর বেড়ালের মধ্যে অনেক রকম জাতি থাকে, সেই রকম মশাদের মধ্যেও নানা জাতি আছে। নানা জাতি মশার মধ্যে কেবল এক জাতিই ম্যালেরিয়ার বীজ ছড়ায়। অপর মশারা ম্যালেরিয়া রোগীর রক্ত খাইলে, তাহা পেটের ভিতরে নষ্ট হইয়া যায়। কাজেই ইহারা সুস্থ লোককে কামড়াইলে, শরীরে ম্যালেরিয়া বীজ প্রবেশ করিতে পারে না। তাহা হইলে বুঝা যাইতেছে, ম্যালেরিয়া রোগের জন্য সকল মশার দোষ দেওয়া যায় না। শঞ্চাশ ষাট্ রকম মশার মধ্যে এক জাতিই ভয়ানক অপকারী। ইহারা রক্তের সঙ্গে ম্যালেরিয়ার বীজ খাইলে তাহা হজম করিতে পারে না। বরং পেটের ভিতরে বীজগুলিকে ভয়ানক জোরালো করিয়া তুলে।
তোমরা বোধ হয়, এই মশাদের নাম জান না। ইহাদিগকে ইংরাজিতে এনোফিল্ (Anophele) বলে। ইহাদের জীবনের ইতিহাস সাধারণ মশাদেরি মত। যে-সকল খুঁটিনাটি ব্যাপারে অন্য মশাদের সহিত ইহাদের অমিল আছে আমরা কেবল তোমাদিগকে তাহারি কথা বলিব।
পর পৃষ্ঠায় যে দুইটি মশার ছবি দিলাম, প্রথমটি এনোফিল্ অর্থাৎ ম্যালেরিয়া মশা এবং দ্বিতীয়টি সাধারণ মশার ছবি। ম্যালেরিয়া মশা লেজের দিক্টা উঁচু ও মাথাটা হেঁট করিয়া আছে। যখন গায়ের উপরে বা ডালপালায় বসে, তখন উহারা ঐ-রকমে লেজ উঁচু ও মাথা হেঁট করে। কিন্তু সাধারণ মশারা কখনই ঐ রকম-ভঙ্গীতে বসে না। তাহারা দ্বিতীয় ছবির মত মাথা ও লেজ মাটির সঙ্গে সর্ব্বদাই সমান্তরাল করিয়া রাখে। সুতরাং, মশারা যখন তোমাদের দেওয়ালের গায়ে বা বাগানের গাছের পাতায় বসিয়া থাকিবে, তথন বসিবার ভঙ্গী দেখিয়া কোন্টি কোন্ জাতি মশা, তাহা তোমরা অনায়াসে বুঝিয়া লইতে পারিবে।
নানা রকম মশা যখন বাচ্চা-অবস্থায় জলে ডুবিয়া থাকে, তখন কোন্ বাচ্চারা ম্যালেরিয়ার মশা, তাহাও বুঝা যায়। ইহারা কখনই জলে সম্পূর্ণ ডুবিয়া থাকিয়া বিশ্রাম করে না। যখন অন্য বাচ্চারা জলের গভীর অংশে চুপ করিয়া পড়িয়া থাকে, তখন ম্যালেরিয়া মশারা জলের ঠিক্ নীচেই দেহটাকে পাশাপাশিভাবে লম্বা করিয়া ভাসিতে থাকে। ইহা দেখিয়া তোমরা ম্যলেরিয়া মশাদের বাচ্চাকে চিনিয়া লইতে পারিবে। তা’ছাড়া লেজের ও গায়ের লোম দেখিয়াও ইহাদিগকে চিনিয়া লওয়া যায়। সাধারণ মশার বাচ্চাদের লেজে লোম থাকে বটে, কিন্তু তাহা পরিমাণে বেশি নয়। ম্যালেরিয়া মশার বাচ্চাদের লেজের শেষে এবং গায়ে এমন গোছা গোছা লোম থাকে যে, তাহা খালি-চোখেই নজরে পড়ে। ম্যালেরিয়া-মশাদের ডানায় যে ছিটে-ফোঁটা দাগ থাকে তাহা দেখিয়াও উহাদিগকে চিনিয়া লওয়া যায়।
৬.৭.০ গান্ধী পোকা
গান্ধী পোকা
(Rhynchota)
মশা মাছি ডাঁশ ইত্যাদি দ্বিপক্ষ পতঙ্গের কথা বলিলাম। এখন তোমাদিগকে গান্ধী পোকাদের পরিচয় দিব।
এই দলেও নানা আকৃতি ও নানা রকমের পতঙ্গ আছে। অনেকেরই দু’খানা করিয়া স্বচ্ছ ডানা থাকে এবং মুখে মশা-মাছিদের মত শুঁড় থাকে। ইহাদের কতকগুলির মুখের দাত লম্বা ছুঁচের মত ধারালো হয়। গাছপালার রস ও বড় প্রাণীদের রক্ত ইহাদেরো খাদ্য। ছারপোকারা এই দলের প্রাণী। ছারপোকার ডানা নাই, সুতরাং সকল গান্ধী পোকারই যে ডানা গজায়, তাহা বলা যায় না।