৩০০০ সালের দিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এটা বিশ্বাস করলেন যে, তাদের বিশাল টেলিস্কোপগুলো অন্তত সূর্যের চারপাশে পাঁচশ আলোক বর্ষের মধ্যে সমস্ত গ্রহগুলোকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। এরমধ্যে ডজন খানেক প্রায় পৃথিবীর সমান গ্রহও আবিস্কৃত হল। এমনকি কাছের কয়েকটার মোটাদাগের মানচিত্রও তৈরী করা গেল। এর মধ্যে কিছুর আবহাওয়ামন্ডলে জীবনের নির্ভুল চিহ্ন-উঁচুমাত্রায় অক্সিজেন দেখা গেল। মানুষের ভালো একটা সম্ভাবনা আছে সেখানে বেঁচে থাকার। অবশ্য যদি কেউ পৌঁছুতে পারে তবেই।
মানুষরা পারবেনা তবে মানুষ পারবে।
প্রথম বীজ বহনকারী মহাকাশযানটা ছিল আদিম ধরনের। যদিও তখনকার প্রযুক্তির সর্বোচ্চটাই ব্যবহার করা হয়েছিল। ২৫০০ সালের উড্ডয়নশক্তির সাহায্যে দু’শ বছরের মধ্যেই সবচে কাছের সৌরজগতে যাওয়া যাবে। নিয়ে যাওয়া যাবে হিমায়িত ভ্রুণ। তবে সেটা ছিল তাদের কাজের সামান্য অংশ। তাদের আরও নিতে হবে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি, যা কিনা ঐ সব সম্ভাবনাময় মানবকে সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিবেশে শিক্ষা দেবে এবং লালন পালন করবে। নিরীহ নগ্ন অবোধ শিশুদের সাহারা বা এন্টার্টিকার মতো একটা বিশ্বে ছেড়ে দেয়াটা হবে অর্থহীন নিষ্ঠুরতা। তাদেরকে শিক্ষা দিতে হবে, যন্ত্রপাতি দিতে হবে, দেখাতে হবে কিভাবে স্থানীয় সম্পদ খুঁজতে আর ব্যবহার করতে হয়। বীজ বহনকারী মহাকাশযানগুলো অবতরণের পরই বদলে যাবে পালক মহাকাশযানে। যা কিনা এর সন্তানদের প্রজন্মের জন্য লালন করবে। শুধু মানুষই নয় সমগ্র জীবজগৎ, উদ্ভিদ (যদিও তাদের জন্য মাটি পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ) গৃহপালিত পশু, বিশাল বৈচিত্রের প্রয়োজনীয় পতঙ্গ এবং আনুবিক্ষণীক জীবও নিতে হবে এই কারণে যে, কোন কারণে স্বাভাবিক খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়লে হয়তোবা মূল কৃষিতেই ফিরে যেতে হতে পারে।
তবে এ ধরনের নতুন আরম্ভের একটা সুবিধা আছে। সব অসুখ আর পরজীবিদের আগুনে পরিশুদ্ধ করার জন্য পৃথিবীতে রেখে যাওয়া যাবে।
ডাটা ব্যাঙ্ক “বিশেষ ব্যবস্থা” যা কিনা যে কোন অবস্থা মোকাবেলায় সক্ষম, এবং জরুরী ব্যবস্থা সবই ডিজাইন এবং তৈরী করতে হবে, যেটা কিনা ভালো সময় ধরে কাজ করবে।
এই কাজ যদিও মনে হচ্ছিল সম্ভব নয়। তবে এটা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক যে, সমগ্র মানবজাতি এ কাজের জন্যই ঐক্যবদ্ধ হল। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য, শেষ লক্ষ্য–যা কিনা জীবনের কোন মানে বহন করে। এমন কি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও।
২৫৫৩ সালে প্রথম বীজ বহনকারী মহাকাশযানটি সৌরজগৎ পেরুলো। লক্ষ্য সূর্যের কাছের যমজ–“আলফা সেঞ্চুরী-এ”। যদিও পৃথিবীর সমান প্যাসডেনা গ্রহটি চরমভাবাপন্ন তবু তারপরের বি এর তুলনায় এর দুরত্ব প্রায় অর্ধেক। সিরিয়াস-দশের পথের সময় প্রায় চারশ বছর। ততদিনে পৃথিবী হয়তো টিকবেও না।
কিন্তু প্যাসডেনাকে যদি ঠিকভাবে কলোনী করা যায়, তবে হয়তো সুখবরটা শোনার জন্য যথেষ্ঠ সময় থাকবে। দু’শ বছর লাগবে যাত্রার জন্য, পঞ্চাশ বছর একটা ছোট ট্রান্সমিটার বসানো ও তৈরীর জন্য, আরও চার বছর সেই সংকেত পৃথিবীতে পৌঁছাবার জন্য। ২৮০০ সালের দিকেই হয়তো রাস্তায় চিৎকার শোনা। যাবে… বাস্তবে ২৭৮৬ সালেই প্যাসডেনা ভবিষ্যৎবাণীর চাইতে ভালো করল। খবরগুলো ছিল সাংঘাতিক এবং পরিকল্পনাকে নতুন করে উৎসাহ দিল। এর মধ্যে অবশ্য একদল মহাকাশযানকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। প্রতিটি তার আগেরটার চাইতে উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ। শেষ মডেলগুলো আলোর বিশ শতাংশ গতিবেগে পৌঁছুতে পারে। আর হাতের মধ্যে অন্ততঃ পঞ্চাশটা লক্ষ্য আছে।
এমনকি যখন প্যাসডেনার সঙ্কেত প্রাথমিক অবতরণের পর আর কোন সংকেত পাঠাল না, তখনও হতাশাটা ছিল সাময়িক। যেটা একবার করা গেছে সেটা আবার করা যাবে, আবারও এবং অনেক বেশী সাফল্যের নিশ্চয়তা সহ।
২৭০০ সালে হিমায়িত ভ্রুণ নিয়ে যাবার স্থল পদ্ধতিটা বাতিল হয়ে গেল। ডি এন. এ. এর সর্পিল কাঠামোতে প্রকৃতি যে জেনেটিক তথ্যগুলো রেখে দেয়, শক্তিশালী কম্পিউটারের স্মৃতিতে অনেক বেশী সহজে, নিরাপদে এবং গুছিয়ে রাখা যায়। তাই লক্ষ জিনোটাইপ হাজার যাত্রীবহনকারী বিমানের সমান একটা মহাকাশযানেই রেখে দেয়া যায়। একটা সম্পূর্ণ সম্ভাব্য জাতি, নতুন সভ্যতার জন্য সমস্ত যন্ত্রপাতিসহ, কয়েকশ বর্গমিটার জায়গার মধ্যে জায়গা করে নক্ষত্রগুলোর দিকে পাঠিয়ে দেয়া যায়।
ব্র্যান্ট জানে, সাতশ বছর আগে থ্যালসায় তাই ঘটেছিল। যে রাস্তাটা এখন পাহাড়ের উপরে উঠছে এর পাশেই তাদের পূর্বপুরুষদের তৈরীর জন্য রোবট খননকারীরা কাঁচামাল জোগাড়ের জন্য যে গর্ত খুড়েছিল, তা পড়ে আছে। এক মুহূর্তের মধ্যে তারা বহু আগের পরিত্যক্ত প্রথম প্রজন্মকে তৈরীর কারখানাটা দেখতে পাবে।
কাউন্সিলর সিমন্স ফিসফিসিয়ে বলল–ওটা কি?
–থাম। মেয়র নির্দেশ দিলেন।
ব্র্যান্ট ইঞ্জিন বন্ধ করল। সে গাড়ীর মাইক্রোফোনের দিকে ঝুকল।
-মেয়র ওয়াডের্ন বলছি, আমরা সাত কিলোমিটারের চিহ্নে আছি। আমাদের সামনে একটা আলো আছে, আমরা গাছের মাধ্য দিয়ে দেখতে পাচ্ছি। আমি এটাও বলতে পারি যে ওটা ঠিক প্রথম অবতরণের জায়গা। কিছুই আমরা শুনছি না। আমরা আবার যাচ্ছি। ব্র্যান্ট নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করল না। স্পীড কন্ট্রোলকে আস্তে সামনে ঠেলে দিল। ৫৯ সালের হারিকেনের পর তার জীবনে এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোমাঞ্চকর ঘটনা।