আরেক দলের ঈশ্বর ছিলেন, যিনি এই মহাবিশ্ব তৈরী করেছিলেন কিন্তু তারপর হয়তো কিছু করেছেন অথবা কিছু করেননি এই মহাবিশ্ব নিয়ে। ইনি হচ্ছেন ওমেগা।
ঈশ্বরের ব্যবচ্ছেদ করতে দার্শনিকরা গ্রীক বর্ণমালার বিশটা বা তারও বেশী বর্ণ ব্যবহার করেছিলেন। তবে আলফা আর ওমেগাই মনে হয় আজকের জন্য যথেষ্ঠ। আমার মনে হয় না দশ মিলিয়ন মানুষের বেশী এর সম্বন্ধে আলোচনা করেছে।
আলফা ধর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিল–সে জন্যই পরে সেটা ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ে। এটা অবশ্য পৃথিবী ধ্বংসের শেষ পর্যন্ত ভালোভাবেই টিকে থাকতো যদি বিভিন্ন প্রতিযোগী ধর্মানুসারীরা পরস্পরকে ছেড়ে দিত। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। কারণ প্রত্যেকেই দাবী করত তারাই একমাত্র সত্যকে ধারণ করে আছে। যার ফলে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ধর্মকে ধ্বংস করতে হবে। যার মানে হল শুধু অন্য ধর্মই নয় বরং নিজেদের মধ্যে উপদলগুলোকেও।
অবশ্য এটা একদম সরলীকৃত। ভালো মানুষও ছিল, যারা পরস্পরের প্রতি সহনশীল এবং বিশ্বাস বিনিময়ে বিশ্বাসী। এবং প্রাথমিক মানব সমাজে ধর্মের প্রয়োজনটা হয়তো অত্যাবশকীয় ছিল। অতিপ্রাকৃতিক বন্ধন ছাড়া হয়তো মানুষ কখনোই গোষ্ঠীসত্ত্বার ওপরে উঠতে পারত না। এবং ক্ষমতা আর সুবিধা দিয়ে নষ্ট হবার আগে এটা সমাজের বিরুদ্ধে যায়নি। কিন্তু এর অনেক ভাললাদিকই ঢেকে গেল বড় খারাপ দিকগুলো দিয়ে। তুমি নিশ্চয়ই কখনো শোননি রোমের-ধর্ম বিচার সভা, ডাইনী-হত্যা অথবা ক্রুসেড আর জিহাদের নাম। তুমি কি বিশ্বাস করবে, এমনকি মহাকাশ যুগেও এমন জাতি ছিল যেখানে বাবা-মা রাষ্ট্রিয় আলফার অনুসারী না হওয়ায় তাদের সন্তানদের সরকারীভাবে উৎসর্গ করা হতো। তুমি আহত হয়েছ, কিন্তু এরকম এবং এর চাইতেও জঘন্য ঘটনা ঘটেছে–যখন আমাদের পূর্ব পুরুষরা মাত্র সৌর জগতে পা ফেলছিল। তবে মানবজাতির সৌভাগ্য যে আলফা ২০০০ এর প্রথম দিকে ম্লান হয়ে আসছিল। এটা অবশ্য শেষ হয়ে গিয়েছিল সংখ্যাতাত্ত্বিক ধর্মতত্ত্বের দ্রুত বিকাশের ফলে। আর কতক্ষণ আছে? বুবি কি অসহিষ্ণু হয়ে ওঠেনি?
মিরিসা জানালা দিয়ে এক ঝলক তাকাল। ঘোড়াটা শান্তভাবে ঘাস খাচ্ছে।
-যতক্ষণ খাবার আছে ততক্ষণ এটা ঠিক আছে। সংখ্যাতাত্ত্বিক ধর্মতত্ত্বটা কি জিনিস?
-শয়তান ব্যাপারে এটাই শেষ আঘাত–যেটা একটা অস্বাভাবিক গোষ্ঠির জন্ম। দিয়েছিল। তারা নিজেদের বলত নব্য ক্ষ্যাপা, কেন বলতো সেটা জিজ্ঞেস করো না। এটা প্রায় ২০৫০ সালে। এবং ঘটনাক্রমে এটাই প্রথম মহাকাশ নির্ভর ধর্ম। যদিও অন্যান্য ধর্মও কৃত্রিম উপগ্রহ দিয়ে ধর্ম প্রচার চালাত কিন্তু এরা কেবলই উপগ্রহ নির্ভর ছিল।
টেলিভিশনের পর্দা ছাড়া তারা আর কোথাও মিলিত হতো না।
তবে প্রযুক্তি ছাড়া বাকীটা ছিল বহু পুরোনো ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা। তারাও বিশ্বাস করত আলফা আছে, কিন্তু সে সম্পূর্ণ অশুভ। এবং মানবজাতির চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে এর মুখোমুখি হয়ে একে ধ্বংস করা। তারা তাদের বিশ্বাসের স্বপক্ষে ইতিহাস। এবং জীববিদ্যা ঘেটে অসংখ্য প্রমাণ জোগাড় করত। আমার ধারণা তারা ছিল অসুস্থ–কারণ তার ঐ সব ভয়ংকর তথ্য জোগাড় করতে মজা পেত।
যেমন ধরো আলফার অস্তিত্বের এক প্রিয় প্রমাণ ছিল ‘পরিকল্পনার যুক্তি। আমরা এখন জানি যে পুরোটাই ফালতু, কিন্তু তারা এটাকে বেশ বিশ্বাসযোগ্য করে বলত। যদি তুমি একটা সুন্দর পরিকল্পনার ব্যবস্থা পাও, যেমন ডিজিটাল ঘড়ি তখন। তার পেছনে অবশ্যই একজন পরিকল্পনাকারী থাকবে, একজন সৃষ্টিশীল লোক থাকবে এর পেছনে। এখন তুমি তাকাও প্রকৃতির রাজ্যে–এবং তারা সেভাবেই দেখতো, অবশ্য এটা প্রতিহিংসার ভাব নিয়ে। পরজীবিবিদ্যা ছিল তাদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা-অবশ্য তোমরা জানই না যে, তোমরা থ্যালসানরা কতটা ভাগ্যবান। আমি অবশ্য তোমাকে সেই অসাধারণ সব পদ্ধতি যা দিয়ে বহু প্রাণী অন্য প্রাণীর ভেতরে বিশেষত মানুষের মধ্যে বাস করত, শোষণ করত ধ্বংশ হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তা বলে বিরক্ত করব না। শুধু তোমাকে তাদের একটা প্রিয় পোষ্য ইফনিউমোন মাছি সম্বন্ধে বলি।
এই চমৎকার পোকাটি অন্য পোকাদের অবশ করে তাদের ওপর ডিম পাড়ত যাতে তার ছানারা বেরিয়েই একদম তাজা, জ্যান্ত খাবার পায়।
তারা এভারে ঘন্টার পর ঘন্টা চালাতে পারত। প্রকৃতির বৈচিত্র্যকে আলফার প্রমাণ হিসেবে দেখিয়ে চূড়ান্ত অশুভ শক্তি হিসেবে দেখানো। যদি তাই নাই হবে, মানুষে মানুষে এতো পার্থক্য হল কিভাবে। আর একটা তাদের প্রিয় প্রমাণ ছিল, ধ্বংসের প্রমাণ। একটা পরিচিত উদাহরণ যা বহুবার হয়েছে, আলফার জন্য সমবেত প্রার্থনারত মানুষ বিপদের সময় বহুবার ভবন ধ্বসে মারা গেছে অথচ ঘরে বসে থাকা মানুষ রক্ষা পেয়েছে।
এরা প্রচুর ভয়ংকর ঘটনা সংগ্রহ করেছিল, হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম পুড়ে যাওয়া, ভূমিকম্পে শিশুদের স্কুল তলিয়ে যাওয়া, অগ্ন্যুৎপাত বা প্লাবনে শহর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার বিশাল সে তালিকা। অবশ্যই আলফার লোকজনও বসে ছিলনা। তারা সমান সংখ্যক উদাহরণ বিপরীতে সংগ্রহ করেছিল। বিশ্বাসীদের বাঁচাতে যে চমৎকার সব ঘটনা ঘটেছে তার তালিকা।
এভাবে বহু হাজার বছর এটা চলছিল। কিন্তু ২১ শতাব্দীতেই, নতুন তথ্য প্রযুক্তি এবং সংখ্যা তাত্ত্বিক গবেষণা আর বিস্তৃত অনুমানতত্ত্ব ব্যাপারটার ফয়সালা করে।