আমরা আশা করেছিলাম তারা আক্রমণ করবে। মাছেদের চৌবাচ্চায় আয়না দিলে বেশ ভালো যুদ্ধ শুরু হয়। সম্ভবতঃ তারা তাদের চিনেছে। এটা বুদ্ধিমত্তার বেশ ভালো চিহ্ন।
কাকড়াগুলো আয়না ফেলে বাকি আবর্জনা সমুদ্র সমতলে বিছাতে আরম্ভ করল। এর পরের ছবিগুলো হতাশাজনকভাবে ধোয়াটে। যখন আবার ছবি আসল তখন ছবিটা পুরো ভিন্ন।
আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমরা যেভাবে চেয়েছি ঠিক সেভাবে হয়েছে। তারা গোয়েন্দা-গোলকটাকে রক্ষী প্রহরারত গর্তের দিকে টেনে নিচ্ছে। তবে এটা তাদের রানীর ঘর নয়- রানী আছে কিনা আদৌ সেটাই বেশ তর্কের ব্যাপার…
দর্শকরা অদ্ভুত দৃশ্য থেকে বেশ কিছুক্ষণ থমকে রইল। তারপর কেউ একজন বলল, এটা একটা ভাগাড়।
-কিন্তু কোন একটা উদ্দেশ্য আছে…
-দেখ, ওটা একটা দশ কিলোওয়াটের মোটর –কেউ নিশ্চয়ই ফেলে দিয়েছে।
-আচ্ছা এখন বুঝলাম কারা আমাদের নোঙরের শেকল চুরি করে।
-কিন্তু কোন কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
-কিছু একটা তো ব্যাপার আছেই।
মোজেস ক্যালডর দৃষ্টি আকর্ষণকারী গলা খাকরানী দিলেন–যেটা অবশ্য প্রায়ই ব্যর্থ হয়।
-এটা একটা তত্ত্ব মাত্র। তবে দেখা যাচ্ছে নতুন তথ্যগুলো একেই সমর্থন করছে। আপনারা লক্ষ্য করুণ এখানে সবই ধাতু, সতর্কতার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়ো করা।
এখন একটা বুদ্ধিমান সামুদ্রিক প্রাণীর কাছে ধাতু হলো রহস্যময় একটা জিনিস। সমুদ্রের অন্যান্য যে কোন জিনিস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। দেখা যাচ্ছে তারা প্রস্তর যুগেই রয়ে গেছে এবং আমাদের পৃথিবীর স্থলচর প্রাণীদের মতো তারা সেখান থেকে এগুতে পারছে না। জলের ভিতর আগুন ছাড়া তারা একটা প্রাযুক্তিক কানা গলিতে পরে গেছে। আমার মনে হয় আমরা এখানে বহু আগের পৃথিবীরই পুরোনো একটা ঘটনা দেখতে পাচ্ছি। আপনারা কি জানেন আদিম মানুষ কোথায় তার প্রথম লোহা পেয়েছিল? আকাশ থেকে! আপনাদের আশ্চর্য হওয়াতে আমি অবাক হচ্ছি না। কিন্তু খাঁটি লোহা প্রকৃতিতে কখনো পাওয়া যায় না। খুব শিগগিরই মরিচা পড়ে যায়। প্রাচীন মানুষের এক মাত্র উৎস ছিল উল্কা। কোন অবাক ব্যাপার নয় যে সেগুলোর উপাসনা হতো। আশ্চর্যের নয় যে আমাদের পূর্বপুরুষরা আকাশের বাইরে দেবতায় বিশ্বাস করত। এখানেও কি সেই একই প্রক্রিয়া চলছে? আমি আপনাদের ব্যাপারটা সতর্কতার সঙ্গে ভাবতে বলি। আমরা এখনও জানিনা কাঁকড়াগুলো কি পরিমান বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী। এমনও হতে পারে তারা কেবল তাদের–কি বলব যাদুকরী সম্পদের লোভে ধাতু যোগাড় করে। কিন্তু তারা কি আবিষ্কার করতে পারবে কিভাবে এগুলো প্রদর্শনীর চাইতেও বেশী কাজ করতে পারে। তারা কতদূর এগুতে পারবে? তারা ঠিক ওখানেই বসে থাকবে সবসময়?
বন্ধুরা, আমার মনে হয় আপনাদের কাঁকড়া সম্বন্ধে যতটুকু জানা যায় জেনে রাখা ভালো। এমনও হতে পারে আপনারা আরেকটি বুদ্ধিমান প্রাণীর সঙ্গে এই গ্রহটি ভোগ করছেন।
আপনারা কি শান্তি অথবা যুদ্ধ বেছে নেবেন? এমনকি কাঁকড়াগুলো যদি খুব বুদ্ধিমান নাও হয় তাহলেও হতে পারে মারাত্মক হুমকি অথবা কার্যকর যন্ত্র। হয়তো আপনারা এর চাষ করবেন। আপনারা রেফারেন্সের জন্য কার্গো বিশ্বাস-এ দেখতে পারেন।
এই গল্পের পরবর্তী অধ্যায় জানতে পারলে আমি খুশি হতাম। সেখানে কি কাঁকড়া দার্শনিক আছে?
এমনকি এখন গুল্মের জঙ্গলে বসে তারা আমাদের সম্পর্কে কি করতে চাচ্ছে? সুতরাং দয়া করে ডিপ-স্পেস এন্টেনাটা ঠিক করবেন। ম্যাগেলানের কম্পিউটার আপনাদের তথ্যের জন্যে অপেক্ষা করবে যাতে সাগান-২ এ আমরা দেখতে পাই।
৪৬. ঈশ্বর যেখানেই থাক…
–ঈশ্বর কি? মিরিসা জিজ্ঞেস করল।
ক্যালডর শতাব্দীর প্রাচীন প্রদর্শনী থেকে ফিরে তাকাল।
–এহ হে, তুমি আবার এটা জিজ্ঞেস করছ কেন?
-কারণ লোরেন গতকাল বলছিল, “মমাজেস চিন্তা করছে কাঁকড়াগুলো ঈশ্বর খুঁজছে।”
-সে তাই বলেছে? আমি তার সঙ্গে কথা বলব পরে। এবং দ্র মহিলা তুমি আমাকে যা জিজ্ঞেস করেছ, তা মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে হাজার বছর ধরে আছন্ন করে রেখেছে এবং মানব ইতিহাসে যে কোন বিষয়ের চাইতে বেশী কথা লেখা হয়েছে। এই সকালে তোমার হাতে কতটুকু সময় আছে?
মিরিসা হাসল-অন্ততঃ এক ঘন্টা। তুমি একবার বলেছিলে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস একটি মাত্র বাক্যে বলা যায়।
–উমম্ হ্যাঁ। আমি বেশ বড়, প্যাচালো কিছু বাক্য জানি। এখন কোত্থেকে শুরু করি…
সে তার চোখ দুটো লাইব্রেরীর জানালা দিয়ে বাইরের প্রথম অবতরণের নিস্তব্ধতার দিকে মেলে দিল।
এখানে এই গ্রহের মানব জীবন শুরু হয়েছিল, এটাকে সে জন্যই আমার ইডেনের মতো লাগে। আর আমি কি সেই সাপ, যা এর সরলতা ভাঙ্গতে চলেছি?
কিন্তু মিরিসার মতো বুদ্ধিমান মেয়েকে তো আমি এমন কিছু বলিনি যা সে জানে বা অন্ততঃ আন্দাজ করে না। সে আস্তে আস্তে শুরু করল,
…ঈশ্বর শব্দটার সমস্যা হচ্ছে যে, এটা কখনোই দু’জন মানুষের কাছে এক অর্থ প্রকাশ করে না, অন্ততঃ দার্শনিকদের কাছে তো নয়ই। সেজন্য তৃতীয় সহস্রাব্দে কথাটা উঠেই যাচ্ছিল, কেবল হঠাৎ ব্যাথার প্রকাশ ভঙ্গি ছাড়া। কোন কোন সমাজে এটাকেও অসংস্কৃত হিসেবে ধরা হতো। তার বদলে এটা কিছু বিশেষ শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়ে গেল। এটায় লাভ হলো যে মানুষের এটাকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়াটা আগের মতো রইল না। ব্যক্তিগত ঈশ্বর যাকে কখনও এক ঈশ্বর বলে ডাকা হতে পরিণত হল আলফায়। এটা হচ্ছে একটা কল্পিত জিনিস যা প্রতিদিন প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি প্রাণীর উপর নজর রাখে। এবং ভাললাদের পুরস্কৃত এবং মন্দদের শাস্তি দেন, সাধারণত মিথ্যেমিথ্যি বর্ণিত মৃত্যুর পরের এক জীবনে। তুমি পূজা বা উপাসনা কর আলফার, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন কর, বিশাল মন্দির, মসজিদ তৈরী কর এর সম্মানে…