বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ভার্লে ভাবছিলেন, এই লক্ষণগুলো আমার চেনা। এমনকি পৃথিবীর শেষ দিনগুলোতেও কিছু গবেষগুগারের পরিচালকরা তাদের সুন্দর যন্ত্রপাতি ঠিক কাজে ব্যবহার না করে সযত্নে রেখে দিতে চাইতেন।
–যতক্ষণ ক্র্যাকান অথবা ক্র্যাকানের বাচ্চা গোলমাল না করছে ততক্ষণ তো কোন সমস্যা নেই। এবং ভূতাত্ত্বিকেরা তো বলেছেনই যে আগামী পঞ্চাশ বছরে তার আর কোন সম্ভাবনা নেই।
-সে ব্যাপারে আমি তাদের সঙ্গে বাজী ধরতে রাজি আছি। কিন্তু আপনি এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন? কি সংকীর্ণ চিন্তা, ভার্লে ভাবল। যদিও সে, সমুদ্রপদার্থবিদ কিন্তু তারপরেও তো সামুদ্রিক প্রাণী সম্বন্ধে তার নূন্যতম আগ্রহ আশা করা যায়। তবে হয়তোবা আমি তাকে ভুল বুঝেছি। সে হয়তো কিছু বলতে চাইছে…
-কাঁকড়াগুলো আকর্ষণীয়। বহির্বিশ্বের যে কোন বুদ্ধিমত্তাই একদিন খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখা দিতে পারে। এবং আপনাদের জন্য সেটা আরো বেশী–কারণ ঘটনাটা আপনাদের দরজার সামনেই।
-আমি সেটা মানি। কিন্তু ভাগ্য ভালো যে আমরা দুই পরিবেশে আছি।
কিন্তু কত দিন? বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ভাবলেন। যদি মোজেস ক্যালডর ঠিক হয়…
-আমাকে একটু বলুনতো গোয়েন্দা গোলকটা কি জিনিস? একটা বেশ ষড়যন্ত্রের গন্ধ দিচ্ছে।
হাজার বছর আগে প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা বিভাগগুলো এটা বানিয়েছিল। কিন্তু এর আরো অনেক ব্যবহার আছে। কিছু আছে পিনের মাথার মতো আবার কিছু ফুটবলের মতো বড়। ভার্লে নকশাটা পরিচালকের টেবিলে বিছিয়ে দিলো। এটা হচ্ছে পানির নিচে ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে তৈরী। আমি অবাক হচ্ছি আপনি এটা সম্বন্ধে জানেন না দেখে। কারণ এর আবিষ্কারের সময়কাল দেয়া আছে ২০৪৫। আমরা প্রকৌশল স্মৃতিতে পুরোটা খুঁজে পেয়েছি এবং তৈরী করেছি। প্রথমটা কাজ করেনি। কেন তা আমরা এখনও জানি না। তবে দ্বিতীয়টা খুব ভালো কাজ করেছে।
এখানে আছে একটা শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্র, দশ মেগাহার্টজের সুতরাং আমরা মিলিমিটার পর্যন্ত বিবর্ধন পাব। ভিডিও মানসম্পন্ন না হলেও কাজের জন্য যথেষ্ঠ। সংকেত পাঠাবার জিনিসটা বেশ ভালো। যখন গোয়েন্দা গোলক চালু হবে এটা একটা সংকেত পাঠাবে যা বিশ থেকে ত্রিশ মিটারের মধ্যকার সব জিনিসের একটা শব্দের প্রতিচ্ছবি তৈরী করবে। দুইশ কিলোহার্টজের একটা তরঙ্গ এর সংকেত উপরে বয়ার কাছে পাঠাবে। সেটা আবার তা মূল কেন্দ্রে পাঠাবে। প্রথম ছবিটা পেতে দশ সেকেন্ডের মতো লাগবে। তারপর গোয়েন্দা গোলক আবার সংকেত পাঠাবে। যদি ছবিতে কোন পরিবর্তন না হয় এটা শূন্য সংকেত দেবে। কিন্তু কোন পরিবর্তন হলে নতুন ছবির জন্য এটা আবার সংকেত পাঠাবে। তার মানে আমরা প্রতি দশ সেকেন্ডে একটা ছবি পাচ্ছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা যথেষ্ঠ। যদি আবোরা দ্রুত ঘটনা ঘটতে থাকে তাহলে প্রতিচ্ছবিটা খারাপ হয়ে যাবে। তবে সবকিছুই একসঙ্গে আপনি চাইতে পারেন না। এটা যে কোন জায়গায় কাজ করে। অন্ধকারে এটা খুঁজে পাওয়াও কষ্টকর। আর খরচও বেশ কম।
পরিচালক যতটাই আগ্রহী লুকিয়ে রাখতেও সে ততটাই চেষ্টা করছে।
-বেশ চালাক খেলনা, হয়তোবা কাজ দেবে। আপনারা কি এর কয়েকটা দেবেন?
-হ্যাঁ অবশ্যই। আপনাদের রেপ্লিকেটারে যাতে আপনারা বানাতে পারেন, সেজন্যে আমরা দেখিয়ে দেবো। তবে প্রথম কয়েকটা আমরা কাঁকড়াদের বাসায় ফেলবো। এবং তারপর অপেক্ষা করবো কি ঘটে তা দেখার জন্যে।
৪৫. টোপ
ছবিগুলো ছিল ভাঙ্গা ভাঙ্গা। ভালোভাবে দেখার জন্যে কৃত্রিমভাবে রং দিয়েও মাঝেমাঝে বোঝা যাচ্ছিল না। সমুদ্রের তলদেশের ৩৬০ ডিগ্রী সমতল ভূমি চোখে পড়ছে। দূরে বামে কিছু সামুদ্রিক গুল, মাঝে কিছু পাথর। ডানেও গুল্ম। যদিও ছবিটা স্থির ছবির মতোই কিন্তু বামদিকের নীচে নম্বরের পরিবর্তন সময়ের পরিবর্তন বোঝাচ্ছিল। আর হঠাৎ ছবিটা ঝাঁকি দিয়ে পরিবর্তিত হচ্ছিল যখন কিছু নড়ে যাচ্ছিল। টেরা নোভার মিলনায়তনে আমন্ত্রিত অতিথিদের ড, ভার্লে বলেছিলেন,
–আপনারা দেখছেন কোন কাঁকড়া এখানে ছিল না। কিন্তু তারা আমাদের জিনিস ফেলাটা বুঝেছিল বা শুনেছিল। এক মিনিট বিশ সেকেন্ড পর প্রথম পরিদর্শক এসেছিল।
এখন ছবিটা দশ সেকেন্ড অন্তর অন্তর বদলাচ্ছে এবং প্রতি ছবিতে কাঁকড়ার সংখ্যা বাড়ছে। আমি এই ছবিটা ধরে রাখছি, যাতে আপনারা ভালো বুঝতে পারেন। ডান দিকের কাঁকড়াটা দেখেছেন? এর বাম দাঁড়ার দিকে দেখুন। প্রায় পাঁচটা ধাতুর রিং! এবং মনে হচ্ছে এই হচ্ছে কর্তৃস্থানীয়। পরের ছবিটায় দেখুন অন্য কাঁকড়াগুলো এর জন্য রাস্তা ছেড়ে দিচ্ছে–এখন সে রহস্যময় বস্তুটাকে পরীক্ষা করছে–এটা বেশ ভালো ছবি দেখুন সে কিভাবে দাঁড়া এবং মুখের আঙ্গুলগুলো ব্যবহার করছে–একটা শক্তির জন্য, অন্যটা সূক্ষ্মতার জন্য–এখন সে জিনিসটা টানছে-কিন্তু আমাদের উপহারটা তার জন্য বেশ ভারী–এর আচরণটা দেখুন–কসম করে বলছি এটা নির্দেশ দিচ্ছে, যদিও কোন সিগনাল আমরা পাইনি হয়তোবা তা শব্দ সীমার নীচে এখন আসছে আরেকটা বড়সড়
ছবিটা হঠাৎ কাত হয়ে গেল।
–এখন দেখুন তারা টেনে নিয়ে যাচ্ছে জিনিসটা এবং ড. ক্যালডর আপনিই ঠিক-তারা পাথরের পিরামিডের গর্তের দিকে এগুচ্ছে-কিন্তু জিনিসটা ভেতরে নিয়ে যাবার জন্য বেশ বড়, অবশ্য ইচ্ছেকৃতভাবেই এটা করা এবং এটা হচ্ছে আকর্ষণীয় একটা অংশ। কাকড়াদের বেশ ভালোই চিন্তা করতে হয়েছে। যদিও এটা মূলত আবর্জনার তৈরী, কিন্তু সেটা সুচিন্তিতভাবেই বাছাই করা। এখানে আছে স্টীলের, তামার, এলুমিনিয়ামের এবং সীসার পাত, কাঠের টুকরো, প্লস্টিকের পাত এবং টিউব, লোহার চেইনের অংশ, একটা ধাতব আয়না। পুরো স্তূপটার ওজন প্রায় একশ কেজি এবং এমনভাবে সাজানো যাতে কেবল একত্রেই পুরোটা নাড়ানো যায়। গোয়েন্দা গোলকটা এক কোণায় যত্নের সঙ্গে আটকে রাখা হয়েছে চারটা ছোট আলাদা চেইনের সঙ্গে। এবার দুটো বড় কাকড়া আবর্জনার স্তূপটাকে আক্রমণ করছে। বেশ দৃঢ়সংকল্প এবং বলা যায় সুচিন্তিতভাবেই। তাদের শক্তিশালী দাঁড়া পেচাননা তারগুলোকে ছিঁড়ে ফেলল। এবং তারা কাঠের আর প্লাস্টিকের টুকরোগুলোকেও সরিয়ে ফেলল। বোঝাই যাচ্ছে তারা শুধু ধাতুতে আগ্রহী। আয়নাটা তাদের থমকে দিল। তারা এটাকে তুলে নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখছে।