বিংশ শতাব্দীর বিশ প্রশ্নের ধাঁধার মতোই ছিল এই প্রশ্নোত্তর পর্ব। মোদ্দা ব্যাপারটাই হলো যে, যে কোন তথ্যই কিছু হা-না প্রশ্নের ছকে ভেঙ্গে ফেলা যায়। এবং আশ্চর্য হলো একটা এক্সপার্ট মেশিন ও এক্সপার্ট মানুষ বিশটা প্রশ্নের কমেই সব বের করে ফেলতে পারে।
ঠিক একঘন্টা পরে যখন হতবুদ্ধি ইয়েন ফ্লেচারকে চেয়ার থেকে টেনে তোলা হল তার কোন ধারণাই ছিল না যে তাকে কি জিজ্ঞেস করা হয়েছে এবং সে কি উত্তর দিয়েছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে সে কিছুই বলেনি। সে কিছুটা অবাকই হল যখন ড. স্টেইন ফুর্তির সঙ্গে বললেন, ঠিক আছে ইয়েন, তোমাকে আর লাগবে না। যদিও প্রফেসরের গর্ব ছিল যে তিনি কাউকে কখনো আঘাত করেন না, কিন্তু একজন ভালো জিজ্ঞাসাবাদকারীর ভেতরে কিছুটা স্যাডিস্ট মনোভাব থাকেই-সম্পূর্ণ মানসিকভাবে হলেও আর এটা তার মনোবল এবং সুনামও বাড়িয়ে দেয়, যা তার হয়ে অর্ধেক জয় করে। ইয়েন ফ্লেচার টাল সামলে তার ডিটেনশন রুমের দিকে রওয়ানা দেবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করলেন।–ও আচ্ছা ইয়েন, ভালো কথা-বরফের ঐ বুদ্ধিটা কখনোই কাজ করত না।
আসলে সম্ভবত তা ভালোই কাজ করত। তবে সেটা এখন কোন ব্যাপার নয়। লেঃ ফ্লেচারের মুখের ভাবটাই তার বুদ্ধির খেলার পুরস্কার।
তিনি আবার ঘুমুতে যাবেন সাগান-২ এ পৌঁছানো না পর্যন্ত। কিন্তু এখন তার বিশ্রামের সময়।
আগামীকাল তিনি থ্যালসায় নামবেন। হয়তো এর চমৎকার কোন সৈকতে সাঁতার কাটবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি তার এক বিশ্বস্ত, পুরানো বন্ধুর সান্নিধ্য চান।
বায়ুশূন্য প্রকোষ্ঠ থেকে তিনি যে বইটি বার করলেন তা শুধুমাত্র প্রথম সংস্করণ না বরং এখনকার একমাত্র সংস্করণ। তিনি হালকাভাবে পাতা উল্টাতে লাগলেন। কেননা, এর প্রতিটা পাতাই তার মুখস্ত। তিনি পড়তে শুরু করলেন। পৃথিবীর ধ্বংসের পঞ্চাশ আলোকবর্ষ পরে বেকার স্ট্রীটে আবার কুয়াশা গড়াতে শুরু করল।
-মাত্র চারজন স্যাব্রাই এর সঙ্গে জড়িত, ক্যাপ্টেন বে বলতেন। ভাগ্য ভালো আর কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা লাগেনি।
-আমি বুঝি না তারা কিভাবে আশা করেছিল যে এটা করে তারা পার পেয়ে যাবে, ডেপুটি ক্যাপ্টেন ম্যালিনা বিরস স্বরে বললেন।
–আমারও বিশ্বাস তারা তা পারত না। তবে ভাগ্য ভালো যে এর পরীক্ষা দিতে হয়নি। আর, তারাও কিছুটা দোদুল্যমান ছিল।
-পরিকল্পনা ‘ক’ ছিল বর্মটাকে ক্ষতিগ্রস্থ করা। জানোই তো ফ্লেচার একজন উত্তোলনকারী ক্রু এবং ব্যাপারটাকে রি-প্রোগ্রামিং এর কাজেও সে যুক্ত ছিল। যদি একটা বরফের টুকরোও কয়েক মিটার বেগে আছড়ে পড়ে কি হবে চিন্তা করতে পার?
একে একটা দুর্ঘটনার মতো সাজানো যায়। কিন্তু পরবর্তী অনুসন্ধানে বেরিয়ে যেতে পারে যে সবকিছুই ঠিক ছিল। আর বর্ম ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তা মেরামত সম্ভব। ফ্লেচারের আশা ছিল এই দেরী করে তার পক্ষে আর লোক জড়ো করবে। সে। হয়তো ঠিক। থ্যালসায় আরেকটা বছর থাকলে… ‘খ’ ছিল মহাকাশযানে জীবন ব্যবস্থা ক্ষত্মিস্থ করা। এবং এটারও সমস্যা ‘ক’ এর মতোই। পরিকল্পনা ‘গ’ ছিল সবচে চিন্তার কারণ যা এই যাত্রাকে শেষ করে দিত। ভাগ্য ভালো কোন স্যাব্রা ইঞ্জিন বিভাগে নেই। তাদের কাছে ড্রাইভের কাছে যাওয়াটা বেশ কঠিন ব্যাপার হতো…
প্রত্যেকেই থমকে গেল–যদিও কমান্ডার রবালিনের চাইতে বেশী কেউ না।
-এটা খুব কঠিন নয় স্যার। বিশেষত যদি কেউ দৃঢ় সংকল্প হয়। বড় সমস্যা হল চিরস্থায়ীভাবে ড্রাইভের ক্ষতি করতে হলে মহাকাশযানের ক্ষতি করতে হবে। সে পরিমাণ কারিগরী জ্ঞান তাদের আছে কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে।
-তারা এর ওপরে কাজ করছিল–ক্যাপ্টেন ঠান্ডা স্বরে উত্তর দিলেন। আমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে হবে। এখানে, দুপুরে সব সিনিয়র অফিসারদের মিটিং হবে।
এবং সার্জন কমান্ডার নিউটন সবার মনের প্রশ্নটা করে বসলেন,
-ক্যাপ্টেন তাদের কি কোর্ট মার্শাল হবে?
-তার দরকার হবে না। দোষ প্রমাণিত হয়েছে। মহাকাশযান নিয়ম অনুযায়ী এখন সমস্যা হচ্ছে শাস্তি নির্ধারণ।
প্রত্যেকেই অপেক্ষা করলেন, অপেক্ষা।
-সকলকে ধন্যবাদ, ক্যাপ্টেনের সমাপ্তিতে তার অফিসাররা নীরবে স্থান ত্যাগ করলেন।
রুমে একা বসে ক্যাপ্টেনের নিজেকে প্রতারিত মনে হচ্ছিল। যাকগে, তাও তো ব্যাপারটা চুকে গেছে। ম্যাগেলান মানুষ ঝড়ের হত থেকে রক্ষা পেয়েছে। অন্য তিন স্যাব্রা ঝামেলা না হলেও-ইয়েন ফ্লেচারকে নিয়ে কি করা যায়? তার সেলফের মারাত্মক খেলনার কথা তার মনে এল। তিনি ক্যাপ্টেন, একটা দুর্ঘটনা সাজানো তেমন ব্যাপার না…। তিনি তার কল্পনা সরিয়ে রাখলেন। কোনভাবেই তিনি তা করতে পারেন না। তিনি অবশ্য মনস্থির করে ফেলেছেন, এবং তা সবারই সমর্থন পাবে।
একবার একজন বলেছিলেন যে সব সমস্যার একটি সহজ, আকর্ষণীয় কিন্তু ভুল সমাধান রয়েছে। আর তার সমাধানটি নিশ্চিত, সাধারণ, আকর্ষণীয় কিন্তু একদম ঠিক। স্যাব্রারা থ্যালসায় থাকতে চায়। তারা থাকতে পারবে। তার কোনই সন্দেহ নেই যে তারা হবে মূল্যবান নাগরিক। সম্ভবত ঠিক যেমন আক্রমনাত্মক, শক্তিশালী চরিত্র এই সমাজের প্রয়োজন।
কি আশ্চর্য যে ইতিহাস নিজেরই পুনরাবৃত্তি করছে। ম্যাগেলানের মতো সে তার কিছু মানুষদের ত্যাগ করে যাচ্ছেন। তবে তিনি কি তাদের শাস্তি দিচ্ছেন না পুরস্কৃত করছেন তা তিন’শ বছরের আগে জানা যাবে না।
৪৪. সমুদ্র উদ্যান
সমুদ্র উদ্যান
৪৪. গোয়েন্দা গোলক
আমাদের আরো এক সপ্তাহ লাগবে ক্যালিপসোকে মেরামত করতে-ডিরেক্টর বলেছিলেন। এবং আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমরা জাহাজটা খুঁজে পেয়েছি। থ্যালসায় এটা মাত্র একটিই আছে। আমরা আবার এটাকে হারানোর ঝুঁকি নিতে পারিনা।