এগুলো সবই এখন ইতিহাস। এখন কয়েকজনই মাত্র জানে এবং শিগগিরই সবাই সব ভুলে যাবে। এবং কি আশ্চর্য ম্যাগেলান আবার অন্তর্ঘাতের বিপদের সামনে।
ধর্মীয় গোষ্ঠীর তুলনায় স্যাব্রারা অনেক যোগ্যতর এবং ধর্মীয় মৌলবাদে আচ্ছন্ন নয়। তারা সেজন্যই আরও বড় সমস্যা হতে পারে। তবে ক্যাপ্টেন বে বিশ্বাস করেন তিনি ব্যাপারটাকে সামলাতে পারবেন।
-তুমি একজন ভালো মানুষ ইয়েন ফ্লেচার-তিক্ততায় বললেন তিনি। তোমার চাইতে ভালো মানুষকে আমি হত্যা করেছি। এবং যখন কোন উপায় থাকে না, আমি অত্যাচারই করি। তবে তিনি এ ব্যপারে গর্ব বোধ করেন যে, তিনি এটা মোটেই উপভোগ করেন না। এবং এখন আরও অনেক ভালো পদ্ধতি আছে এজন্য।
৪৩. জিজ্ঞাসাবাদ
এখন ম্যাগেলান একজন নতুন ক্রু পেয়েছে। এক বছর আগে যেমন ক্যালডরকে জাগিয়ে তোলা হয়েছিল তেমনি ভাবেই তাকেও অসময়ে জাগিয়ে তোলা হয়েছে। এবং তিনি এখন নতুন অবস্থায় খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন। একমাত্র জরুরী কোন অবস্থায়ই এ ধরনের কাজ ঘটে। কম্পিউটারের রেকর্ডে ড. মার্কাস স্টেইন, প্রাক্তন তেরান গোয়েন্দা ব্যুরোর প্রধান বিজ্ঞানীর জ্ঞান এবং কর্মদক্ষতা এখন প্রয়োজন।
পৃথিবীতে তার বন্ধুরা প্রায়ই জিজ্ঞেস করত কেন সে এতো কিছু থাকতে অপরাধতত্ত্বের প্রফেসর হল। এবং তারও একটাই উত্তর ছিল, এর একমাত্র বিকল্প ছিল একজন অপরাধী হওয়া। স্টেইনের এক সপ্তাহ লাগল ম্যাগেলানের হাসপাতালের সাধারণ মস্তিষ্কের গ্রাফ করার মেশিনটাকে পরিবর্তন করতে এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামকে পরীক্ষা করতে। ইতিমধ্যে চারজন স্যাব্রাকে তাদের রুমে আটকে রাখা হল এবং তারা দৃঢ়ভাবে কোন অপরাধ স্বীকার করল না। তার জন্য প্রস্তুতি দেখে ইয়েন ফ্লেচার খুব একটা ভালো বোধ করছিল না। বৈদ্যুতিক চেয়ার এবং অন্যান্য জিনিসগুলোর সঙ্গে পৃথিবীর রক্তাক্ত যুগের যন্ত্রের খুব বেশি মিল। ড. স্টেইন তাকে সহজ করে নিলেন একজন ভালো জিজ্ঞাসাবাদকারীর কৃত্রিম অন্ত রঙ্গতা দিয়ে।
-ইয়েন ঘাবড়াবার কিছু নেই। বিশ্বাস কর তুমি কিছুই বুঝবে না। এমনকি তুমি বুঝতেও পারবেনা যে তুমি আমাকে উত্তর দিচ্ছ–এবং তুমি কিছু লুকাতে পারবে না। তুমি যেহেতু বুদ্ধিমান, সেহেতু আমি তোমাকে সবকিছু খুলে বলব। আমি কি করব তা ঠিকঠিক তোমাকে বলছি। এবং আশ্চর্য হলেও এ জিনিসটা আমার কাজে সাহায্য করবে। তুমি চাও না চাও–তোমার অবচেতন মন আমাকে বিশ্বাস করবে এবং সাহায্য করবে। কি গাধা-ফ্লেচার ভাবল। এতো সহজে আমাকে বোকা বানানোর কথা চিন্তা করল কিভাবে? কিন্তু কিছু সে বলল, কারণ সাহায্যকারীরা ততক্ষণে তাকে ঢিলে বাধন দিয়ে চেয়ারের সঙ্গে আটকে দিয়েছে। সে বাধা দেয়ারও চেষ্টা করল না। কারণ তার দুই প্রাক্তন বিশালদেহী সহকর্মী সতর্কভাবেই চোখাচোখি এড়িয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
-তোমার যদি তৃষ্ণা পায় বা বাথরুমে যাবার দরকার হয় বলবে। এবারের অধিবেশন হবে ঠিক এক ঘন্টার। পরে আরও ছোটভাবে কয়েকবার বসতে হতে পারে। আমি চাই তুমি আরাম করে বস।
এ পরিস্থিতিতে শেষ মন্তব্যটা একটু বাড়াবাড়ি মনে হলেও কেউই সেটাকে হাস্যকর হিসেবে নিল না।
-দুঃখিত যে তোমার মাথা কামাতে হল। কিন্তু মাথার ইলেকট্রোডগুলো চুল মোটেও পছন্দ করে না। আর তোমার চোখও ঢেকে দিতে হবে, না হলে চোখের সংবেদনশীলতা আমাদের হিসেবে গন্ডগোল করে দেবে… এখন তোমাকে একগাদা প্রশ্ন করা হবে যা হ্যাঁ, না এবং জানি না এই তিন উত্তরে সীমাবদ্ধ। তোমাকে মুখে বলতে হবে না, তোমার মস্তিষ্কই সেই উত্তর দিয়ে দেবে এবং কম্পিউটারের ট্রাইনারী যুক্তি তা বুঝে নেবে।
এবং কোনভাবেই তুমি মিথ্যা বলতে পারবে না। ইচ্ছে হলে চেষ্টা করে দেখতে পার! বিশ্বাস কর, পৃথিবীর সেরা কিছু মস্তিষ্ক এই যন্ত্র তৈরী করেছে, এবং একে কেউ বোকা বানাতে পারেনি। তোমার মাথায় হেয়ালী উত্তর এলে কম্পিউটার শুধু তার প্রশ্নগুলোর ছক পাল্টে দেবে। তৈরী? বেশ… জোরে… রেকর্ডিং… চ্যানেল ৫ চেক… শুরু।
তোমার নাম ইয়েন ফ্লেচার… উত্তর হ্যাঁ… অথবা না
তোমার নাম স্মিথ… উত্তর হ্যাঁ… অথবা না তুমি মঙ্গলের লোয়েল শহরে জন্মেছ, উত্তর হ্যাঁ… অথবা না
তোমার নাম জন স্মিথ… উত্তর হ্যাঁ… অথবা না
তুমি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে জন্মেছ… উত্তর হ্যাঁ… অথবা না
তুমি ৩৫৮৫ এর ৩রা মার্চ জন্মেছ….
তুমি ৩৫৮৪ এর ৩১ শে ডিসেম্বর জন্মেছ…
প্রশ্নগুলো এতো দ্রুত আসতে শুরু করল যে সামান্য আচ্ছন্ন অবস্থায় না থাকলেও ফ্লেচার এর মিথ্যে উত্তর দিতে পারত না। আর দিলেও লাভ হতো না, জানা উত্তরগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে কম্পিউটার তা শুধরে নিত। কিছুক্ষণ পর পর। আবার তাই উত্তরগুলো ঝালিয়ে নেয়া হচ্ছিল (তোমার নাম ইয়েন ফ্লেচার… তুমি কেপটাউনের জুলুল্যান্ডে জন্মেছ…) এবং নিশ্চিত হওয়া উত্তরগুলোর প্রশ্নগুলোও মাঝে মাঝে পুনরাবৃত্তি হচ্ছিল। পুরো ব্যাপারটিই স্বয়ংক্রিয়, শুধুমাত্র শারীরবিদ্যার হা-না ব্যাপারটা স্থির করতে যা একটু সময় লাগে।
প্রাগৈতিহাসিক মিথ্যা ধরার যন্ত্রগুলো এ ব্যাপারে বেশ সফল হলেও পুরো নিশ্চয়তা ছিল অসম্ভব। প্রায় দু’শ বছর লেগেছিল এই ব্যবস্থাটাকে সম্পূর্ণ ত্রুটিহীন করতে। এবং তখন বিচার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিল। সিভিল এবং ক্রিমিনাল কোর্টে কোন বিচার ঘন্টাখানেকের বেশী চলত না।