সেন্ট্রাল কম্পিউটারের তথ্য অনুযায়ী, নেটওয়ার্কটা এখন প্রায় পচানব্বইভাগ সেবা দিচ্ছে। এবং মেয়র ওয়াডের্ন এর পরিমান কম হলেই খুশী হতেন। গত আধ ঘন্টায় পুরো বসতিই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং অন্তত পঞ্চাশজন বয়স্ক আর শিশু কাউন্সিল চেম্বারের দিকে রওয়ানা দিয়েছে। সেখানে সবার দাঁড়াবার জায়গাই হবে না। আসনের কথাতো বাদই।
একটা সাধারণ মিটিং এর ফোরাম পূর্ণ করতে বারোজন লাগে এবং সে পরিমাণ মানুষ জোগাড় করতে প্রায়ই ঘাম ছুটে যায়। তারনার বাকী পাঁচশ ষাটজনের সে মিটিং দেখার কথা এবং ভোট দেয়ার কথা। অবশ্য যদি তারা আগ্রহী হয়।
প্রাদেশিক সরকার থেকেও দুটো বার্তা এসেছে। একটা প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে অন্যটা উত্তর দ্বীপের সংবাদ সংস্থা থেকে। প্রত্যেকেরই অপ্রয়োজনীয় অনুরোধ। এবং প্রত্যেকেই একই ছোট জবাব পেয়েছে- কিছু ঘটলে অবশ্যই আমরা তোমাদের জানাব-তোমাদের আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ।
মেয়র ওয়াডের্ন রোমাঞ্চ পছন্দ করেন না। আঞ্চলিক প্রশাসক হিসেবে তার মোটামুটি সাফল্যের চাবিকাঠি এটাই। তবে সব সময় তার ভেটো কাজ করে না। যেমন ৫৯ সালের হারিকেন–সেটা অবশ্য এ শতাব্দীর মানে আজ পর্যন্ত সব চাইতে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
তিনি চিৎকার করলেন,
–সবাই চুপ করুন। রিনা খোলশগুলো রেখে দাও। এগুলো আনতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তোমার বিছানায় যাবার সময় হয়েছে। বিলি টেবিল থেকে নাম, এক্ষুনি।
তার বিস্ময়কর দ্রুত নির্দেশ বোঝালো যে, বসতির লোকজন তার কথা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে আছে। তিনি তার হাত-ফোনের জ্বলতে থাকা সুইচটি চালু করলেন।
-সত্যি বলতে তোমরা যা জান তার চাইতে খুব বেশী আমিও জানি না। এবং কয়েক ঘন্টা ধরে আমরা কোন তথ্যও পাচ্ছি না। এটা অবশ্যই কোনো ধরনের মহাকাশযান। এবং এরই মধ্যে এটা ঢুকে পড়েছে থ্যালসায়। যেহেতু এখানে আর কোন জায়গা নেই তাই সম্ভবতঃ এটা আবার তিন দ্বীপের কাছেই ফিরবে। গ্রহকে পুরো ঘুরতে এর হয়তো ঘন্টা খানেক লাগবে।
-কোন রেডিও যোগাযোগ করার চেষ্টা? কেউ একজন বলল।
-হয়েছে। তবে কোন লাভ হয়নি।
-আমাদের কি চেষ্টা করা ঠিক? আরেক উদ্বিগ্ন কন্ঠস্বর।
পুরো সভায় লম্বা বিরতি পড়ে গেল। তারপর কাউন্সিলর সিমন্স (মেয়র ওয়াডেনের প্রধান অনুচর) বললেন,
-এটা ফালতু। যাই আমরা করি না কেন, তারা আমাদের দশ মিনিটের মধ্যে বের করে ফেলবে। আর মনে হয়, তারা জানেও ঠিক কোথায় আমরা আছি।
মেয়র বললেন।
-কাউন্সিলরের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। যে কোন কলোনিয়াল যানের কাছে থ্যালসার সম্পূর্ণ ম্যাপ আছে। যেটা হাজার বছরের পুরোনো হতে পারে কিন্তু তা প্রথম অবতরণকে দেখাবে।
-কিন্তু ধরো, মানে শুধুই কল্পনা করো-এরা ভিনগ্রহের জীব।
-কোন ভিনগ্রহের জীব নেই। অন্ততঃ মহাকাশ যাত্রার মতো বুদ্ধিমান। আমরা একশ ভাগ নিশ্চিত নই-কিন্তু পৃথিবী হাজার বছর ধরে তন্নতন্ন করে খুঁজেছে।
মিরিসা কুমার আর ব্র্যান্টের মাঝে দাঁড়িয়ে পিছন থেকে বলে উঠল।
–আরেকটা সম্ভাবনা আছে।
প্রত্যেকেই তার দিকে তাকাল। ব্র্যান্ট একটা বিরক্তি প্রকাশ করল। মিরিসাকে ভালোবাসলেও মাঝেমাঝে তার মনে হয় যে মিরিসার জ্ঞানজ্ঞম্যি ভালো নয়। আর মিরিসার পরিবার গত পাঁচ প্রজন্মে আর্কাইভের দায়িত্বও পায়নি।
-কি সেটা?
এবার মিরিসার পালা বিরক্ত হবার। যদিও সে তার বিরক্তিকে গিলে ফেলল। সে এমন কারও জন্য নীচুতে নামতে চায় না, যে কিনা খুব একটা বুদ্ধিমান নয় অথচ ধূর্ত। ঘটনাটা হচ্ছে মেয়র ব্র্যান্টের প্রতি কিছু পরিমানে আকৃষ্ট। মিরিসার অবশ্য বয়স্ক এক মহিলার প্রতি কিছুটা সহানুভূতিই জাগে।
-এটা তো রোবট চালিত বীজবহনকারী মহাকাশযান হতে পারে। যেমন একটা আমাদের পূর্বপুরুষদের জিন প্যাটার্ন নিয়ে এসেছিল।
-কিন্তু এখন, এতো পরে?
-কেন নয়? প্রথম দিকের বীজ বহনকারী মহাশযানগুলো কেবল আলোর বেগের কয়েক শতাংশ বেগে যেতে পারত। পৃথিবী সেগুলোর উন্নতি ঘটাতে লাগল একদম ধ্বংস পর্যন্ত। শেষ মডেলগুলো প্রায় দশগুন দ্রুত। সেগুলো প্রথম দিকেরগুলোকে এক শতাব্দীর মধ্যে অতিক্রম করে এগিয়ে গেল। এবং তাদের অনেকেই এখনও পথে আছে।
ব্র্যান্ট তুমি কি বল?
মিরিসা সবসময় সতর্কভাবে যে কোন আলোচনায় তাকে টেনে আনে, এবং যান সম্ভব হয়, চিন্তাটা তার মাথা দিয়ে এসেছে এমন ধারণা দেয়। ব্র্যান্টের হীনমন্যতা সম্বন্ধে সে ভালোই জানে এখানে কিছু যোগ করতে সে মোটেই চায় না। ব্র্যান্ট বলল,
-এটা একটা আকর্ষণীয় ধারণা। ঠিক হতেও পারে।
যদিও ইতিহাস খুব একটা শক্তিশালী যুক্তি নয়। ব্র্যান্ট ফ্যাকনরের একজন প্রযুক্তিবিদের জ্ঞান আছে। বিশেষতঃ থ্যালসাকে কলোনী করার জটিল পদ্ধতি সমন্ধে। সে যোগ করল, আমরা কি করব? যদি আরেকটা মহাকাশযান আমাদের এখানে আবার কলোনী করতে চায়। ধন্যবাদ, আজ নয় আরেকদিন।
কিছু নার্ভাস হাসির শব্দ শোনা গেল। কাউন্সিলর সিমন্স চিন্তাশীল ভাবে বললেন,
–আমার মনে হয় এ ধরনের কোন ব্যাপার আমরা ঠিক করতে পারব। রোবটগুলোর কি এতোটুকু বুদ্ধি হবে না যে প্রোগ্রামটা বাতিল করবে। যেহেতু তা আগেই হয়ে গেছে।
-সম্ভবত। কিন্তু চিন্তা কর, তারা আরও ভালো করবে। যাইহোক, পৃথিবী থেকে পরের মডেল হলেও কোন এক ধরনের রোবট হবে সেটা।