২৪১ জনের মধ্যে ১০৫ জনের মতো সশরীরে মিলনায়তনে উপস্থিত আছেন আর ১১৬ জন তাদের যোগাযোগের যন্ত্রের সাহায্যে সংযোগে আছেন। এটা একটা রেকর্ড উপস্থিতি –ড, অ্যানি ভার্লে খুব পুলকিত হচ্ছিলেন। যদিও বাকি বিশ জনের অনুপুস্থিতির ব্যাপারে তার কৌতূহল ছিল।
আর পৃথিবীর একজন অন্যতম জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হতেও তার সামান্য অস্বস্তি লাগছিল যদিও ম্যাগেলানের পৃথিবী ত্যাগের পর কথাটা সত্যিই। প্রাক্তন স্কলোডস্কি লুনার মানমন্দিরের, প্রাক্তন পরিচালক হিসেবে কেবলমাত্র সময় ও সুযোগের কারণেই সে এরকম একটা সুযোগ পেয়েছে। সে খুব ভালো ভাবেই জানে সে আর্কলে বা চন্দ্রশেখর বা হার্শেলের মতো বিশালদের সঙ্গে তুলনা করার মতোই যযাগ্য নয় –গ্যালিলিও, কোপার্নিকাস বা টলেমীর কথাতো বাদই।
ম্যাপটা দেখুন, সে আরম্ভ করল। আমি নিশ্চিত যে, আপনারা সবাই সাগান-২ এর এই ম্যাপটা দেখেছেন। বেতার হলোগ্রাম আর বিকিরণ থেকে এপর্যন্ত করা গেছে। বিস্তারিত কিছুই নেই-বড়জোড় দশ কিলোমিটার পার্থক্য করা যায়। তবে আমাদের মূল তথ্যের জন্য এটাই যথেষ্ঠ।
এর ব্যাস হচ্ছে পনেরোশো কিলোমিটার–পৃথিবীর চেয়ে সামান্য বড়। নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ অত্যন্ত ঘন আবহাওয়ামন্ডল। এবং সৌভাগ্যই বলতে হবে যে। কোন অক্সিজেন নেই।
“সৌভাগ্য” কথাটা সব সময়ই মনোযোগ আকর্ষণ করে। শ্রোতারা একটু নড়ে চড়ে বসলেন।
আমি বুঝতে পারছি, আপনারা অবাক হয়েছেন। শ্বাস নেবার ব্যাপারে প্রতিটি মানুষেরই একটা পক্ষপাতিত্ব আছে। কিন্তু ধ্বংসের আগের দশকগুলোতে মহাবিশ্বের। প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ঘটনার কারণেই বদলে গিয়েছে।
বর্তমান এবং অতীতে যেহেতু কোন জীবিত প্রাণীর খোঁজ আমাদের সৌরজগতে পাওয়া যায়নি এবং ষোলটি দেশের “সেটি” (SETI) প্রোগ্রামের ব্যর্থতা প্রত্যেককে মানতে বাধ্য করল যে, মহাবিশ্বের অন্য কোথাও জীবন থাকার সম্ভাবনা খুবই কম, আর তাই জীবন অত্যন্ত মূল্যবান।
তাই বলা হলো যে, সব ধরনের জীবনকেই সম্মান করতে হবে এবং তাদের যত্ন নিতে হবে। অনেকে এমনও বললেন যে, ক্ষতিকর পরজীবি এবং অসুখের পোষকগুলোও ধ্বংস করা ঠিক না বরং তাদের কঠিন সতর্কতার মধ্যে রেখে দেয়া উচিত। “জীবনের প্রতি সম্মান শ্লোগানটি শেষের দিকে পৃথিবীতে একটা জনপ্রিয় শ্লোগান ছিল। এবং অনেকে বিশেষতঃ মানুষের ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগ করতেন।
জীবনের প্রতি হস্তক্ষেপ না করার ব্যাপারটি যখন একটি নীতিতে পরিণত হল, তখনই কিছু বাস্তব ঘটনার জন্ম হলো। সিদ্ধান্ত হলো, মানুষ কোন বুদ্ধিমান জগতে বসতি স্থাপন করবে না। নিজস্ব পৃথিবীতেই মানুষের অত্যন্ত খারাপ ইতিহাস আছে। সৌভাগ্যবশতই হোক আর দুর্ভাগ্যবশতই হোক সে অবস্থা অবশ্য আর হচ্ছে না।
কিন্তু তর্কটা এখানেই থামল না। ধরা যাক, মাত্র প্রাণীজগৎ হয়েছে, এমন একটা গ্রহ আমরা পেলাম। আমরা কি বিবর্তনকে তার নিজস্ব পথে এগুতে দেবো, যাতে বহুবছর পরে যদি বুদ্ধিমান জীব জন্মায়, সেই আশায়।
কিংবা আরও পেছনে যাই যেখানে কেবল উদ্ভিদ জগৎ বা শুধু আণুবীক্ষনিক জীব আছে। আপনাদের হয়তো অবাক লাগছে যে, যখন মানুষের নিজের জীবনই বিপন্ন তখনও মানুষ এধরণের বিমূর্ত আদর্শ আর দার্শনিক প্রশ্ন নিয়ে তর্ক করছিল। কিন্তু মৃত্যুই মনকে সত্যিকারের সব প্রশ্নের দিকে একত্রীভূত করে আমরা কেন এখানে আছি এবং আমাদের কি করা উচিত?
“সর্বোচ্চ আইন” আমার ধারণা আপনারা সবাই শব্দটা শুনেছেন –খুব জনপ্রিয় শব্দ ছিল। সমস্ত বুদ্ধিমান প্রাণীর জন্য কোন নৈতিক নির্দেশনা তৈরী করা সম্ভব, শুধুমাত্র পৃথিবী গ্রহে রাজত্ব করা দ্বিপদ, বায়ু গ্রহণকারী প্রাণীর জন্য যা প্রযোজ্য হবে না। ঘটনাক্রমে, ড. ক্যালডর ছিলেন এই বিতর্কের একজন নেতা। যারা ভাবত “হোমোস্যাপিয়েন” একমাত্র বুদ্ধিমান জীব হিসেবে গণ্য থাকায় তাদের বেঁচে থাকাটাই সবকিছুর ওপর প্রাধান্য পাওয়া উচিত, তাদের বিরুদ্ধাচারণ তাকে বেশ অজনপ্রিয় করে তুলেছিল। “মানুষ না নোংরা জেলি–আমরা মানুষের পক্ষে এধরনের শ্লোগানও তোলা হল। তবে সৌভাগ্যবশতঃ আমরা যতদুর জানি যে কোন সরাসরি সংঘাত হয়নি। সমস্ত বীজ বহনকারী মহাকাশযান হতে তথ্য পেতে আরও শতাব্দী লাগবে। আর যদি কেউ কোন সংবাদ নাই পাঠায় –বেশ, ধরে নেয়া হবে যে নোংরা জেলি ফিসগুলোই জিতে গেছে…
৩৫০৫ সালে, বিশ্ব সংসদের চূড়ান্ত অধিবেশনে কিছু মূলনীতি- যা জেনেভা ঘোষণা হিসেবে বিখ্যাত তাতে ভবিষ্যতে অন্য গ্রহে বসতি গড়ার ব্যাপারে কিছু নীতি গৃহীত হল। মনে হতে পারে এটা খুব বেশী মাত্রায় আদর্শিক, তবে আর কোন দিকে যাবার রাস্তা তাদের ছিল না। সেটা ছিল মহাবিশ্বের প্রতি মানুষের শেষ ভালোবাসার প্রকাশ, যা উপলব্ধির ক্ষমতা এর কোনদিনই হবে না। সেই নিদের্শনাগুলোর একটি নীতি আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। যদিও এটা সবচাইতে অভিনন্দিত আর বিতর্কিত তবে এটাই আমাদের আরও কয়েকটা সম্ভাবনাময় লক্ষ্য থেকে সরিয়ে দিয়েছে। কোন গ্রহের আবহাওয়া মন্ডলে কয়েক ভাগ অক্সিজেন, সে গ্রহে জীবনের নির্ভুল চিহ্ন। এ জিনিসটা এতো বেশী মাত্রায় বিক্রিয়াশীল যে এটাকে মুক্ত অবস্থায় পেতে হলে একে ক্রমাগত উদ্ভিদ বা ওই জাতীয় কোন উৎস হতে আসতে হবে। অবশ্যই অক্সিজেন মানে প্রাণী জগৎ নয়, তবে তার জন্য একটা ইশারা। এবং যদিও প্রাণী জগৎ খুব কমই বুদ্ধিমত্তার দিকে যায়, তবে অন্য কোন পদ্ধতি এখনও দেখা। যায়নি।