–বাজনাটা কি জন্যে? সে জিজ্ঞেস করল, এর কাজের সঙ্গে তো খাপ খায় না। সে যখন এটা নিয়ে ঠাট্টা করছে তখন যন্ত্রটা তাদের দিকে ঘুরে দাঁড়াল আর কয়েকবার বলল–আমার আশেপাশের একশ’ মিটারের সীমার মধ্যে রাস্তায় উঠবেন না। ওটা এখনো শক্ত হচ্ছে। আমার আশেপাশের একশ’ মিটারের সীমার মধ্যে রাস্তায় উঠবেন না। ওটা এখনো শক্ত হচ্ছে। ধন্যবাদ। মিরিসা হেসে উঠল তার অবাক হওয়া দেখে।
-তুমি ঠিকই বলেছ। এটা খুব বুদ্ধিমান নয়। সুরটা হচ্ছে রাস্তার অন্যদের সাবধান করার জন্য।
-এর জন্য সাইরেন কি আরও ভালো হতো না?
–হতো, কিন্তু ওটা কেমন অবন্ধুসুলভ মনে হয়।
তারা সাইকেল থামিয়ে সংযুক্ত ট্যাঙ্ক, কন্ট্রোল মেশিন, রাস্তা মসৃণ করার যন্ত্র চলে যাবার জন্য অপেক্ষা করল। লোরেন রাস্তাটা স্পর্শ না করে থাকতে পারল না। নতুন রাস্তাটা উষ্ণ, সামান্য ফুলে ওঠা এবং দেখতে ভেজা হলেও একদম শুকনো। অবশ্য সেকেন্ডের মধ্যে এটা পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেল। লোরেনের আঙ্গুলের ছাপ হালকা ভাবে ফুটে রইল রাস্তায়। তার মনে হঠাৎ একটা চিন্তা খেলে গেল–থ্যালসায় আমার চিহ্ন রয়ে গেল-যতদিন না রোবটটা আবার ফিরে আসে। রাস্তাটা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যাচ্ছিল। লোরেন তার উরু আর পায়ের অপরিচিত মাংসপেশীগুলোর আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছিল। এর জন্য বাড়তি শক্তির দরকার হলেও মিরিসা বৈদ্যুতিক শক্তি হিসেবে কাজ করল। মিরিসা যেহেতু গতি এতোটুকুও কমায়নি, লোরেন কিভাবে কমায়? সুতরাং জোরে শ্বাস নিয়ে লোরেন তাকে ধরে ফেলল।
সামনের হালকা গুঞ্জনটা কিসের? নিশ্চয়ই দক্ষিণ দ্বীপে কেউ কোন রকেট ইঞ্জিন পরীক্ষা করছে না। তারা সামনে প্যাডেল মারতেই আওয়াজটা আস্তে আস্তে বাড়তে লাগল। দেখার এক মুহূর্ত আগে লোরেন জিনিসটা বুঝতে পারল। পৃথিবীর মানদন্ডে জলপ্রপাতটা খুব আহামরি নয়-সম্ভবত একশ’ মিটার উঁচু আর বিশ মিটার চওড়া। এর শেষ মাথায় ঝকঝক করা একটা ধাতব ব্রীজ আছে।
মিরিসা সাইকেল দিয়ে নেমে তার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে বলল,
-অদ্ভুত কিছু দেখছ?
–কি অদ্ভুত? চারদিকে দেখতে দেখতে লোরেন উত্তর দিল। যা দেখা যাচ্ছে তা হলো গাছ আর গুল্মের ঘন জঙ্গল, আর রাস্তাটা জলপ্রপাতের অপর পাশে চলে গেছে।
-গাছ, গাছগুলো!
–কি তাতে? আমি উদ্ভিদ বিজ্ঞানী নই।
–আমিও না। কিন্তু ভালোভাবে দেখো-তাহলেই বুঝবে।
সে তবুও হতবুদ্ধি হয়েই তাকাল। আর হঠাৎই সে বুঝতে পারল–কারণ গাছগুলো প্রতিটি একটা প্রাকৃতিক প্রকৌশলের অংশ। আর সে নিজেও একজন প্রকৌশলী। জলপ্রপাতের এপাশে কোন অন্য প্রকৌশলী কাজ করেছে। সে যদিও গাছগুলোর নাম বলতে পারবেনা, কিন্তু সেগুলো চেনা চেনা লাগছে নিশ্চয়ই ওগুলো পৃথিবীর …হ্যাঁ নিশ্চয়ই ওটা ওক। আর বহু আগে কোন জায়গায় সে ওই ছোট ঝোঁপের চমৎকার হলুদ ফুলগুলো দেখেছিল।
কিন্তু ব্রীজের ওপাশে একটা আলাদা জগৎ। গাছগুলো ওগুলো কি সত্যিই গাছ?
কেমন অসম্পূর্ণ আর কদর্য। কিছু আছে খুব ছোট মোটা কান্ডবিশিষ্ট যা দিয়ে ছোট কিছু শাখা বের হয়েছে। অন্যগুলো বিশাল ফার্ণের মতো। অন্যগুলো দানব বিশেষ, কঙ্কালসার শাখার সংযোগে গর্ত আর কোন ফল নই…
-বুঝতে পেরেছি। থ্যালসার আসল উদ্ভিদ।
-হ্যাঁ, সমুদ্র থেকে মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছর হল এরা ডাঙায় এসেছে। আমরা এটাকে পার্থক্য রেখা বলি। কিন্তু আসলে এটা হল মুখোমুখি যুদ্ধরত দুটো সেনাবাহিনী। এবং কেউই জানে না, কে জিতবে। আমরাও সাহায্য করতে পারব না। পৃথিবীর উদ্ভিদগুলো উন্নত প্রজাতির। কিন্তু স্থানীয়গুলো গ্রহের আবহাওয়ার সঙ্গে ভালো পরিচিত। সময় সময় একদল আরেকটা গ্রাস করতে চায়। তবে তখন আমরা থামিয়ে দেই।
-কি অদ্ভুত, ছোট্ট ব্রীজটার ওপর দিয়ে সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে লোরেন ভাবল। থ্যালসায় নেমে আমার মনে হচ্ছে যে, সত্যি আমি এক ভিনগ্রহে এসেছি… এই অগোছাল গাছ আর বিকট ফার্ণগুলো কয়লা খনি তৈরী করে, যা মানব জাতিকে শিল্পবিপ্লবের শক্তি দিয়েছিল-তাই এক সময়ে মানবজাতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তার মনে হচ্ছিল যেন এখনই একটা ডাইনোসর এসে আক্রমণ করবে-অবশ্য তারপরই তার মনে পড়ল যে, ঐ ভয়ংকর সরীসৃপ আসতে আরও একশ’ মিলিয়ন বছর লাগবে যদি পৃথিবীর মতো এই গ্রহ ফুলে ফলে শোভিত হয়। ফিরে আসার সময় লোরেন বিরক্তি প্রকাশ করল-ধুত্তোর! ক্র্যাকান!
-কি হয়েছে?
লোরেন মসের মতো দেখতে একটা ঘন আস্তরে আটকা পড়েছে।
–উহ! দাঁতে দাঁত চেপে সে পায়ের পেশীগুলোকে চেপে ধরল।
–দেখি। মিরিসা আত্মবিশ্বাসী মনোযোগর সুরে বলল।
তার আরামদায়ক, অভিজ্ঞ যত্নে খিচ লাগাটা ছেড়ে গেল।
–ধন্যবাদ, লোরেন কিছুক্ষণ পর বলল-অনেকটা ভালো লাগছে। বন্ধ করো না।
–তোমার কি সত্যি তাই মনে হয়? মিরিসা ফিসফিসিয়ে বলল। এবং দুই বিশ্বের মাঝে তারা হঠাৎ এক হয়ে গেল।
২১. ক্র্যাকান
ক্র্যাকান
২১. একাডেমী
থ্যালসার একাডেমীর সদস্যপদ অত্যন্ত কঠোর ভাবে একটা সুন্দর বাইনারী নম্বর ১০০০০০০০০-বা আঙ্গুলে গুনলে ২৫৬-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। ম্যাগেলানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এই কড়াকড়িটাকে সমর্থন করেন। এটা মান বজায় রাখতে সাহায্য করে। একাডেমী তাদের দায়িত্বটাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। এবং প্রেসিডেন্ট তার কাছে স্বীকার করলেন যে এই মুহূর্তে মাত্র ২৪১ জন সদস্য আছে এবং শূন্য স্থানগুলোর জন্য উপযুক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন লোক পাওয়া যায়নি।